বেতারের অবস্থা বেতাল
চট্টগ্রাম বেতারে দীর্ঘদিন ধরেই যন্ত্রপাতি, যানবাহন ও লোকবলের সংকট চলছে। বাজেট-স্বল্পতার কারণে অনুষ্ঠান, বার্তা ও প্রকৌশল বিভাগের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। পাশাপাশি প্রচারক্ষমতা ও মানোন্নয়নের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়ছে ঐতিহ্যবাহী গণমাধ্যমটি।
এ নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন নিজাম সিদ্দিকী
প্রায় অর্ধশত বছরের পুরোনো চট্টগ্রাম বেতারে দীর্ঘদিন ধরেই যন্ত্রপাতি, যানবাহন ও লোকবল-সংকটের মধ্য দিয়ে চলছে চট্টগ্রাম বেতারকেন্দ্র। বেতারের অনুষ্ঠান, বার্তা ও প্রকৌশল বিভাগেও রয়েছে নানা অব্যবস্থাপনা। এ ছাড়া গত দুই যুগেও এ কেন্দ্রের প্রচার ক্ষমতা বাড়েনি। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, এ নিয়ে ঊর্ধ্বতন মহলে অনেকবার লেখালেখি হলেও কোনো সমাধান হচ্ছে না। ফলে দেশের ঐতিহ্যবাহী সরকারি এ গণমাধ্যমটি ক্রমেই জনবিচ্ছিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
জানা যায়, নগরের আগ্রাবাদ এলাকায় চট্টগ্রাম বেতারকেন্দ্র স্থাপন করা হয় ১৯৫৪ সালের ২২ জুন। পরীক্ষামূলক অনুষ্ঠান সমপ্রচার শুরু হয় ১৯৬২ সালে। এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় ১৯৬৩ সালের ১ মার্চ।
বর্তমানে এ কেন্দ্র থেকে সংবাদ, গান, কথিকা, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানসহ প্রতিদিন প্রায় ২৪ ঘণ্টার অনুষ্ঠান প্রচার হয়। এর মধ্যে ১৪ ঘণ্টা ৪০ মিনিটের অনুষ্ঠান প্রচার হয় মধ্যম বেতার তরঙ্গে (এএম-অ্যাপ্লিচিউড মডিউলেশন)। বাকি নয় ঘণ্টার অনুষ্ঠান প্রচার হয় এফএম (ফ্রিকোয়েন্সি মডিউলেশন) বেতার তরঙ্গে। বেতারের প্রচার পরিধি চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলা পর্যন্ত বিস্তৃত।
জানা যায়, ১০০ কিলোওয়াট প্রচার ক্ষমতার এ বেতারকেন্দ্রে ৫০ কিলোওয়াট করে চালানো হয়। ফলে নির্ধারিত অঞ্চলের সব শ্রোতা এ কেন্দ্রের অনুষ্ঠান শুনতে পান না।
এ ব্যাপারে বেতারের আঞ্চলিক প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ঝুঁকি এড়াতে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ৫০ কিলোওয়াট করে চালাতে হয় যাতে ৫০ কিলোওয়াটের একটি প্রচারযন্ত্র বিকল হলে অপরটি দিয়ে কাজ চালানো যায়। এ ক্ষেত্রে ১০০ কিলোওয়াটের দুটি যন্ত্র থাকলে সুবিধা হতো।’
সম্মানী ও প্রচার মান
বেতারের তিন বিভাগের শিল্পীদের সম্মানী অত্যন্ত কম। অনুষ্ঠানের মান নিয়েও শ্রোতাদের অভিযোগ রয়েছে।
বেতারের সাবেক মুখ্য উপস্থাপক ফজল হোসেন বলেন, ‘বেতারে শিল্পীদের যে সম্মানী দেওয়া হয় তা অসম্মানজনক। অনুষ্ঠানের মান ও প্রচারের ব্যাপারে আরও যত্নবান হওয়া দরকার।’
প্রসাধনকক্ষের বেহাল দশা
বেতারের পুরুষ ও মহিলা প্রসাধনের অবস্থা খুবই নাজুক। এখানে বেসিনে পানির টেপ নেই, বাথরুমের দরজা ভাঙা দেখা যায়। ফলে বেতারের নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি অতিথিদেরও ভোগান্তি পোহাতে হয়।
প্রকৌশল বিভাগের হতশ্রী অবস্থা
অভিযোগ রয়েছে বেতারের স্টুডিও ও দরজা-জানালার অবস্থা জরাজীর্ণ। মাইক্রোফোন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা যখন-তখন বিকল হয়ে পড়ে। মাইক্রোফোন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে স্টুডিওতে বসে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
জানা গেছে, বেতারকেন্দ্রের প্রকৌশল শাখায়ও লোকবল-সংকট প্রকট। উপ-আঞ্চলিক প্রকৌশলীর ১০ জনের মধ্যে আটটি, উপ-সহকারী প্রকৌশলীর ছয়টির মধ্যে পাঁচটি ও টেকনিশিয়ানের ১১টির মধ্যে তিনটি পদ খালি রয়েছে। উচ্চমান সহকারীর দুটি, নিম্নমান সহকারীর চারটি ও হিসাব রক্ষকের একটি পদও খালি।
এদিকে স্টুডিও-সংকটের কারণে অনুষ্ঠান ধারণে সমস্যা হয়। যন্ত্রপাতি-সংকটের কারণে ডাবিং-এডিটিংয়ের কাজে সমস্যা হয়।
এসব সমস্যার কথা স্বীকার করে বেতারের আঞ্চলিক প্রকৌশলী বলেন, ‘সব রকম সমস্যার বিষয়ে আমরা সদর দপ্তরে জানিয়েছি। আশা করি ক্রমান্বয়ে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
বার্তা বিভাগে কম্পিউটার-সংকট
জানা যায়, বেতারের বার্তা বিভাগে একটিমাত্র কম্পিউটার দিয়ে চলছে সংবাদ তৈরির কাজ। সরকারিভাবে এখানে ইন্টারনেট সংযোগের সুবিধা নেই। এমনকি বরাদ্দ স্বল্পতার কারণে কাগজ-কালি কেনা নিয়েও সমস্যায় পড়তে হয় বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে আঞ্চলিক বার্তা নিয়ন্ত্রক মুহাম্মদ শরীফুল কাদের বলেন, ‘আমাদের বাজেট স্বল্পতার কারণে আনুষঙ্গিক খরচ জোগানো সম্ভব হয় না। ব্যক্তিগতভাবে ইন্টারনেট সংযোগের খরচ দিই। এতে দাপ্তরিক কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা যায় না।’ এ বিভাগে উপবার্তা নিয়ন্ত্রকের পদটি দীর্ঘদিন থেকে খালি বলে জানান তিনি।
সংবাদ পাঠকদের সম্মানীও খুব কম। সংবাদ পাঠক জামিল আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা যে সম্মানী পাই তা টেলিভিশনের তুলনায় নগণ্য।
এটা কাউকে বলার মতো নয়।’ এখানে বাংলা, ইংরেজি ও উপজাতীয় ভাষা মিলে ৬৩ জন সংবাদ পাঠক রয়েছেন।
অনুষ্ঠান বিভাগে যানবাহন ও লোকবল-সংকট
চট্টগ্রাম বেতারের অনুষ্ঠান বিভাগে লোকবল ও যানবাহন-সংকট দীর্ঘদিনের। এ বিভাগে রাজস্ব খাতে উপ-আঞ্চলিক পরিচালকের আটটির মধ্যে চারটি ও সহকারী পরিচালকের ১১টির মধ্যে সাতটি পদ শূন্য রয়েছে। জনসংখ্যা সেলের একজন উপ-আঞ্চলিক পরিচালক ও একজন সহকারী পরিচালকের পদ খালি রয়েছে।
এ ছাড়া প্রশাসনিক শাখায় প্রশাসনিক ও সহকারী নিরাপত্তা কর্মকর্তা, অনুষ্ঠান সচিবের সাতটি পদের মধ্যে ছয়টি, অফিস সহকারী কাম টাইপিস্টের নয়টি, হিসাব সহকারী ও গুদাম রক্ষকের একটি, স্টুডিও কমিশনারের দুটি এবং এমএলএসএসের ১৬টি পদ শূন্য রয়েছে।
অনুষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তাদের পরিবহনের জন্য একটিমাত্র মাইক্রোবাস রয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত পুরোনো হওয়ায় এটি প্রায়ই বিকল থাকে। ফলে অনুষ্ঠান ঘোষক-ঘোষিকাদের পরিবহনে সমস্যা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে রেডিও অ্যানাউন্সারস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কাজী হাসানুজ্জামান বলেন, ‘ভোরের অধিবেশনে ঘোষক-ঘোষিকাদের গাড়িতে করে বেতার ভবনে আনা ও রাতের অধিবেশন শেষে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু যানবাহন সমস্যার কারণে তা ব্যাহত হচ্ছে। এতে ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে তাঁদের।’ কিছুদিন আগে রাতের বেলা হেঁটে বাড়ি ফেরার সময় একজন ঘোষক ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন বলে তিনি জানান।
এদিকে সংগীত বিভাগেও রয়েছে লোকবল ও যন্ত্রপাতির সংকট। এখানে উপমুখ্য সংগীত প্রযোজক, গিটার, এস্রাজ, তানপুরা, কি-বোর্ড ও ক্ল্যারিওনেট বাদকের পদ খালি রয়েছে দীর্ঘদিন থেকে।
নাটক বিভাগে মুখ্য ও উপমুখ্য নাটক প্রযোজক, উপস্থাপনা শাখায় মুখ্য উপস্থাপক ও একজন উপস্থাপকের পদ খালি রয়েছে।
জানা যায়, অর্থসংকটের কারণে বছরের অর্ধেক সময় নতুন অনুষ্ঠানে শিল্পীদের অনুষ্ঠান দেওয়া যায় না।
এসব সমস্যার কথা স্বীকার করে আঞ্চলিক পরিচালক শাম্মী আরা চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বেতারের সদর দপ্তরে যানবাহন ও লোকবল-সংকটের বিষয়ে লিখিতভাবে জানিয়েছি।’
নেই আর্কাইভ ও আধুনিক মিলনায়তন
বেতারে কোনো আর্কাইভের ব্যবস্থা নেই। এখনো টেপেই সংরক্ষণ করা আছে বেশির ভাগ গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। এর মধ্যে কিছু কিছু অনুষ্ঠান কম্পিউটারে স্থানান্তর করা হলেও বিভিন্ন সময়ে যান্ত্রিক সমস্যা ও ভাইরাস সংক্রমণের কারণে তাতেও সমস্যা দেখা দিচ্ছে বলে জানা গেছে।
বেতারে কোনো আধুনিক মানের মিলনায়তন নেই। ফলে স্টুডিও থেকে দর্শক-শ্রোতার উপস্থিতিতে অনুষ্ঠান করা যায় না। ছোটখাটো অনুষ্ঠানগুলো বেতারে চার নম্বর স্টুডিওতে আয়োজন করা হয়।
প্রায় অর্ধশত বছরের পুরোনো চট্টগ্রাম বেতারে দীর্ঘদিন ধরেই যন্ত্রপাতি, যানবাহন ও লোকবল-সংকটের মধ্য দিয়ে চলছে চট্টগ্রাম বেতারকেন্দ্র। বেতারের অনুষ্ঠান, বার্তা ও প্রকৌশল বিভাগেও রয়েছে নানা অব্যবস্থাপনা। এ ছাড়া গত দুই যুগেও এ কেন্দ্রের প্রচার ক্ষমতা বাড়েনি। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, এ নিয়ে ঊর্ধ্বতন মহলে অনেকবার লেখালেখি হলেও কোনো সমাধান হচ্ছে না। ফলে দেশের ঐতিহ্যবাহী সরকারি এ গণমাধ্যমটি ক্রমেই জনবিচ্ছিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
জানা যায়, নগরের আগ্রাবাদ এলাকায় চট্টগ্রাম বেতারকেন্দ্র স্থাপন করা হয় ১৯৫৪ সালের ২২ জুন। পরীক্ষামূলক অনুষ্ঠান সমপ্রচার শুরু হয় ১৯৬২ সালে। এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় ১৯৬৩ সালের ১ মার্চ।
বর্তমানে এ কেন্দ্র থেকে সংবাদ, গান, কথিকা, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানসহ প্রতিদিন প্রায় ২৪ ঘণ্টার অনুষ্ঠান প্রচার হয়। এর মধ্যে ১৪ ঘণ্টা ৪০ মিনিটের অনুষ্ঠান প্রচার হয় মধ্যম বেতার তরঙ্গে (এএম-অ্যাপ্লিচিউড মডিউলেশন)। বাকি নয় ঘণ্টার অনুষ্ঠান প্রচার হয় এফএম (ফ্রিকোয়েন্সি মডিউলেশন) বেতার তরঙ্গে। বেতারের প্রচার পরিধি চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলা পর্যন্ত বিস্তৃত।
জানা যায়, ১০০ কিলোওয়াট প্রচার ক্ষমতার এ বেতারকেন্দ্রে ৫০ কিলোওয়াট করে চালানো হয়। ফলে নির্ধারিত অঞ্চলের সব শ্রোতা এ কেন্দ্রের অনুষ্ঠান শুনতে পান না।
এ ব্যাপারে বেতারের আঞ্চলিক প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ঝুঁকি এড়াতে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ৫০ কিলোওয়াট করে চালাতে হয় যাতে ৫০ কিলোওয়াটের একটি প্রচারযন্ত্র বিকল হলে অপরটি দিয়ে কাজ চালানো যায়। এ ক্ষেত্রে ১০০ কিলোওয়াটের দুটি যন্ত্র থাকলে সুবিধা হতো।’
সম্মানী ও প্রচার মান
বেতারের তিন বিভাগের শিল্পীদের সম্মানী অত্যন্ত কম। অনুষ্ঠানের মান নিয়েও শ্রোতাদের অভিযোগ রয়েছে।
বেতারের সাবেক মুখ্য উপস্থাপক ফজল হোসেন বলেন, ‘বেতারে শিল্পীদের যে সম্মানী দেওয়া হয় তা অসম্মানজনক। অনুষ্ঠানের মান ও প্রচারের ব্যাপারে আরও যত্নবান হওয়া দরকার।’
প্রসাধনকক্ষের বেহাল দশা
বেতারের পুরুষ ও মহিলা প্রসাধনের অবস্থা খুবই নাজুক। এখানে বেসিনে পানির টেপ নেই, বাথরুমের দরজা ভাঙা দেখা যায়। ফলে বেতারের নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি অতিথিদেরও ভোগান্তি পোহাতে হয়।
প্রকৌশল বিভাগের হতশ্রী অবস্থা
অভিযোগ রয়েছে বেতারের স্টুডিও ও দরজা-জানালার অবস্থা জরাজীর্ণ। মাইক্রোফোন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা যখন-তখন বিকল হয়ে পড়ে। মাইক্রোফোন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে স্টুডিওতে বসে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
জানা গেছে, বেতারকেন্দ্রের প্রকৌশল শাখায়ও লোকবল-সংকট প্রকট। উপ-আঞ্চলিক প্রকৌশলীর ১০ জনের মধ্যে আটটি, উপ-সহকারী প্রকৌশলীর ছয়টির মধ্যে পাঁচটি ও টেকনিশিয়ানের ১১টির মধ্যে তিনটি পদ খালি রয়েছে। উচ্চমান সহকারীর দুটি, নিম্নমান সহকারীর চারটি ও হিসাব রক্ষকের একটি পদও খালি।
এদিকে স্টুডিও-সংকটের কারণে অনুষ্ঠান ধারণে সমস্যা হয়। যন্ত্রপাতি-সংকটের কারণে ডাবিং-এডিটিংয়ের কাজে সমস্যা হয়।
এসব সমস্যার কথা স্বীকার করে বেতারের আঞ্চলিক প্রকৌশলী বলেন, ‘সব রকম সমস্যার বিষয়ে আমরা সদর দপ্তরে জানিয়েছি। আশা করি ক্রমান্বয়ে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
বার্তা বিভাগে কম্পিউটার-সংকট
জানা যায়, বেতারের বার্তা বিভাগে একটিমাত্র কম্পিউটার দিয়ে চলছে সংবাদ তৈরির কাজ। সরকারিভাবে এখানে ইন্টারনেট সংযোগের সুবিধা নেই। এমনকি বরাদ্দ স্বল্পতার কারণে কাগজ-কালি কেনা নিয়েও সমস্যায় পড়তে হয় বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে আঞ্চলিক বার্তা নিয়ন্ত্রক মুহাম্মদ শরীফুল কাদের বলেন, ‘আমাদের বাজেট স্বল্পতার কারণে আনুষঙ্গিক খরচ জোগানো সম্ভব হয় না। ব্যক্তিগতভাবে ইন্টারনেট সংযোগের খরচ দিই। এতে দাপ্তরিক কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা যায় না।’ এ বিভাগে উপবার্তা নিয়ন্ত্রকের পদটি দীর্ঘদিন থেকে খালি বলে জানান তিনি।
সংবাদ পাঠকদের সম্মানীও খুব কম। সংবাদ পাঠক জামিল আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা যে সম্মানী পাই তা টেলিভিশনের তুলনায় নগণ্য।
এটা কাউকে বলার মতো নয়।’ এখানে বাংলা, ইংরেজি ও উপজাতীয় ভাষা মিলে ৬৩ জন সংবাদ পাঠক রয়েছেন।
অনুষ্ঠান বিভাগে যানবাহন ও লোকবল-সংকট
চট্টগ্রাম বেতারের অনুষ্ঠান বিভাগে লোকবল ও যানবাহন-সংকট দীর্ঘদিনের। এ বিভাগে রাজস্ব খাতে উপ-আঞ্চলিক পরিচালকের আটটির মধ্যে চারটি ও সহকারী পরিচালকের ১১টির মধ্যে সাতটি পদ শূন্য রয়েছে। জনসংখ্যা সেলের একজন উপ-আঞ্চলিক পরিচালক ও একজন সহকারী পরিচালকের পদ খালি রয়েছে।
এ ছাড়া প্রশাসনিক শাখায় প্রশাসনিক ও সহকারী নিরাপত্তা কর্মকর্তা, অনুষ্ঠান সচিবের সাতটি পদের মধ্যে ছয়টি, অফিস সহকারী কাম টাইপিস্টের নয়টি, হিসাব সহকারী ও গুদাম রক্ষকের একটি, স্টুডিও কমিশনারের দুটি এবং এমএলএসএসের ১৬টি পদ শূন্য রয়েছে।
অনুষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তাদের পরিবহনের জন্য একটিমাত্র মাইক্রোবাস রয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত পুরোনো হওয়ায় এটি প্রায়ই বিকল থাকে। ফলে অনুষ্ঠান ঘোষক-ঘোষিকাদের পরিবহনে সমস্যা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে রেডিও অ্যানাউন্সারস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কাজী হাসানুজ্জামান বলেন, ‘ভোরের অধিবেশনে ঘোষক-ঘোষিকাদের গাড়িতে করে বেতার ভবনে আনা ও রাতের অধিবেশন শেষে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু যানবাহন সমস্যার কারণে তা ব্যাহত হচ্ছে। এতে ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে তাঁদের।’ কিছুদিন আগে রাতের বেলা হেঁটে বাড়ি ফেরার সময় একজন ঘোষক ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন বলে তিনি জানান।
এদিকে সংগীত বিভাগেও রয়েছে লোকবল ও যন্ত্রপাতির সংকট। এখানে উপমুখ্য সংগীত প্রযোজক, গিটার, এস্রাজ, তানপুরা, কি-বোর্ড ও ক্ল্যারিওনেট বাদকের পদ খালি রয়েছে দীর্ঘদিন থেকে।
নাটক বিভাগে মুখ্য ও উপমুখ্য নাটক প্রযোজক, উপস্থাপনা শাখায় মুখ্য উপস্থাপক ও একজন উপস্থাপকের পদ খালি রয়েছে।
জানা যায়, অর্থসংকটের কারণে বছরের অর্ধেক সময় নতুন অনুষ্ঠানে শিল্পীদের অনুষ্ঠান দেওয়া যায় না।
এসব সমস্যার কথা স্বীকার করে আঞ্চলিক পরিচালক শাম্মী আরা চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বেতারের সদর দপ্তরে যানবাহন ও লোকবল-সংকটের বিষয়ে লিখিতভাবে জানিয়েছি।’
নেই আর্কাইভ ও আধুনিক মিলনায়তন
বেতারে কোনো আর্কাইভের ব্যবস্থা নেই। এখনো টেপেই সংরক্ষণ করা আছে বেশির ভাগ গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। এর মধ্যে কিছু কিছু অনুষ্ঠান কম্পিউটারে স্থানান্তর করা হলেও বিভিন্ন সময়ে যান্ত্রিক সমস্যা ও ভাইরাস সংক্রমণের কারণে তাতেও সমস্যা দেখা দিচ্ছে বলে জানা গেছে।
বেতারে কোনো আধুনিক মানের মিলনায়তন নেই। ফলে স্টুডিও থেকে দর্শক-শ্রোতার উপস্থিতিতে অনুষ্ঠান করা যায় না। ছোটখাটো অনুষ্ঠানগুলো বেতারে চার নম্বর স্টুডিওতে আয়োজন করা হয়।
No comments