ভর্তি পরীক্ষা প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে by ইমাদুল হক প্রিন্স
নিজের মেধা, আগ্রহ, পূর্ববর্তী রেজাল্ট ইত্যাদি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে বিষয় নির্বাচন করা উচিত। আর দেরি না করে আজই শুরু করুন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধে প্রস্তুতি। বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবিক, কৃষি, চিকিৎসা, প্রকৌশল-প্রযুক্তি ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চতর ডিগ্রী এবং কয়েকটি পাবলিক মেডিক্যাল
কলেজে চিকিৎসার উপরে এমবিবিএস ডিগ্রী অর্জনের সুযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়াও কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলোÑ হাজী দানেশ (বিপ্রবি), কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী (বিপ্রবি), ঢাকার জগন্নাথ, বেগম রোকেয়া, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাওলানা ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়। বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা নৈব্যর্ত্তিক পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তবে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা পদ্ধতি লিখিত। পরীক্ষার বিষয়বস্তু বাংলা, ইংরেজী, সাধারণ জ্ঞান ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে গঠিত বিষয়াবলী। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বীপূর্ণ, তাই সব বিষয়ের ওপর সমান গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। ভর্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে যে সমস্ত বিষয়ের ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে, সেগুলো হলো।
ইংরেজী : ভর্তি পরীক্ষায় ইংরেজী একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইংরেজীতে ভাল করার উপরে নির্ভর করে ঢাবি, রাবি, বুয়েট, বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল, জাবি, চবি, ইবি, পবিপ্রবিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাল বিষয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ। তাছাড়াও সব বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি ইংরেজীতেও ভাল করতে হবে। ইংরেজীর মৌলিক বিষয়ের ওপর গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। যেমন : Parts of speech, Sentence, Gender, Number, Articles, Tense, Voice, Transformation of sentence, Narration, Preposition, Tag question, Conditional sentence, Right form of verb. GQvovI Spelling, Synonyms and antonyms, Correction, Vocabulary, Analogy, এর ওপর ভাল ধারণা থাকতে হবে।
বাংলা : বাংলা ব্যাকরণ অংশে ভাষা, বাংলা ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয়, ধ্বনি ও ধ্বনির পরিবর্তন, উপসর্গ, অনুসর্গ, সন্ধি, নত্ব বিধান ও ষত্ব বিধান, যতি চিহ্ন, পদাশ্রিত নির্দেশক, প্রকৃতি, প্রত্যয়, সমাস, কারক, বাংলা বানান, দ্বিরুক্ত শব্দ, সমোচ্চারিত শব্দ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে চর্চা করতে হবে। দেশী-বিদেশী শব্দ, বিপরীতার্থক শব্দ, লিঙ্গ, বচন, বাগধারা, প্রবাদ-প্রবচন, পারিভাষিক শব্দ মুখস্থ করতে হবে। কবি সাহিত্যিকদের জীবনী ও তাদের রচনাবলী এবং বোর্ড বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলী সঠিকভাবে আয়ত্ত করতে হবে। যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য একটি বইয়ের ওপর নির্ভর না করে একাধিক বইয়ের ওপর নির্ভর করতে হবে। এক্ষেত্রে নবম, দশম শ্রেণীর বাংলাভাষার ব্যাকরণ, ড. সৌমিত্র শেখরের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা, ড. হায়াত মামুদের ভাষাশিক্ষা বইগুলো যথেষ্ট সহায়ক।
সাধারণ জ্ঞান : সাধারণ জ্ঞানে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়ের ওপরে দুটি অংশ থাকে যার পরিধি অত্যন্ত বিস্তৃত। তবে নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ের ওপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করে অধিক নম্বর অর্জন করা যায়। বাংলাদেশ অংশে বাংলাদেশের ভৌগোলিক বিষয়াবলী, প্রাকৃতিক সম্পদ, জনসংখ্যা, উপজাতি, শিক্ষা, রাজনীতি, বাংলাদেশের অর্থনীতি, সংবিধান ও এর সংশোধনী, পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, পত্রপত্রিকা, স্থাপত্য ও ভাস্কর্য, ঐতিহাসিক স্থান, চুক্তি, বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ, খেলাধুলা ও অননৎবারধঃরড়হ বেশি করে মুখস্থ করতে হবে। আন্তর্জাতিক অংশে ভাল করার জন্য সর্বপ্রথম ২০০টি দেশের রাজধানী ও মুদ্রার নাম মুখস্থ করতে হবে। পৃথিবীর মানচিত্রের ওপর ভাল ধারণা নেয়ার চেষ্টা করবে। তাছাড়া পৃথিবী পরিচিতি, মহাদেশীয় অঞ্চল, সীমারেখা, প্রণালী, নদ-নদী, ভৌগোলিক উপনাম, পার্লামেন্ট, বিশ্ব রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ কিছু দেশ, জোট ও সংগঠন, বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ, বিখ্যাত গ্রন্থ ও লেখকের নাম, চুক্তি, যুদ্ধ, বিখ্যাত স্থান, পুরস্কার, খেলাধুলা ও অননৎবারধঃরড়হ গুরুত্বসহকারে পড়তে হবে। সাধারণ জ্ঞানে ভাল করার জন্য বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন বইয়ের পাশাপাশি বাংলাপিডিয়া, বাংলাদেশের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই, এনসাইক্লোপিডিয়া ও উইকিপিডিয়ার সহায়তা নেয়া যেতে পারে। দৈনন্দিন বিষয়বলীতে ভাল করার জন্য জাতীয় পত্রিকার আন্তর্জাতিক অংশ ও সম্পাদকীয় কলমসহ খুঁটিনাটি বিষয়গুলো নোট আকারে পড়তে হবে।
দৃঢ় মানসিকতা : এ কথা ধ্রুব সত্য মানসিকভাবে যারা দৃঢ় তাদের জন্য জয়ের পথ উন্মুক্ত। অনেকে ১ম বর্ষে চান্স না পাওয়ার কারণে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। মানসিকভাবে কোন অবস্থাতেই দুর্বল হলে চলবে না। আর যারা প্রথমবার পরীক্ষা দিবে, তাদের পরীক্ষার্থীর দীর্ঘ লাইন দেখে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। কখনই হতাশ হবে না, পরিশ্রম করলে অবশ্যই সফল হবে।
No comments