কন্যাশিশু পাচার-মানবরূপী পশুদের দমন করুন
গত ৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫ লাখ কন্যাশিশু পাচার হয়ে যাওয়ার তথ্যটি আতঙ্কজনক। বিশেষ করে এসব শিশুর ঠিকানা হয় যখন ভারত ও পাকিস্তানের যৌনপল্লীতে, তখন আমরা বিবেকের দংশনেও নীল হই। এসব শিশুর তো স্কুলে যাওয়ার কথা। তাদের হাসিমাখা মুখ দেখে আমাদের আগামী দিন নিয়ে স্বপ্ন দেখার কথা।
অথচ সেই শিশুরা, বিশেষত কন্যাশিশুরা একদল মানবরূপী পশুর লাভ ও লোভের বলি হয়ে যৌনপল্লীর যন্ত্রণাকর জীবনকে ভবিতব্য হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে। কেন এমন হয় বা হচ্ছে? নারী ও শিশু পাচার রোধের জন্য দেশে কঠোর আইন করার দাবি ছিল। সরকার সে দাবি অনেকটা পূরণও করেছে। কিন্তু তার কোনো যথার্থ প্রয়োগ নেই। এই আইন বাস্তবায়নের জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও মানবাধিকার বিষয়ে পর্যাপ্ত ধারণার অধিকারী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যও তেমন নেই। তাছাড়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো কোনো অসাধু সদস্যের এক পর্যায়ে সহযোগিতা নিয়েই এই মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়ে চলেছে। সে কারণেই এবং এর সঙ্গে অবুঝ শিশুদের পিতা-মাতা ও অভিভাবকদের অসচেতনতা ও দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে এই হীন অপরাধ সংঘটিত হতে পারছে এবং এর সঙ্গে জড়িতরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। শনিবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আয়োজিত শিশুশ্রম ও পাচারের ওপর সেমিনারে উত্থাপিত এক প্রতিবেদনে কন্যাশিশুদের বিদেশে, বিশেষ করে ভারত ও পাকিস্তানের যৌনপল্লীতে পাচার করার তথ্য দেওয়া হয়েছে। সরকার এবং বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর উচিত, বাংলাদেশের শিশুদের যেন আর পাচারের শিকার না হতে হয় তার জন্য যথাযথ উপায় খুঁজে বের করা। এ ধরনের পাচারের সঙ্গে যে বা যারাই জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এই জঘন্য কাজের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের চেষ্টা রোধে ফল দিতে পারে। শিশুদের পিতা-মাতা ও অভিভাবকদের সচেতন করার জন্য প্রচারমূলক ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারে। এমনকি এ ব্যাপারে কার্টুন ছবি বা ডকুমেন্টারি তৈরি করে টিভিতে প্রদর্শন করা যেতে পারে। পত্রিকাগুলোকেও নিজ উদ্যোগে এ ব্যাপারে ভূমিকা পালনে আগ্রহী হওয়া দরকার। মোদ্দা কথা, শিশু পাচার রোধে জাতীয় সমন্বিত ব্যাপক ও কার্যকর উদ্যোগ আজ সময়ের দাবি।
No comments