‘আমরা কোন দেশের মানুষ!’ by আব্দুল কুদ্দুস
চোখের কোণে একরাশ হতাশা, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনিশ্চয়তা। পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন রোহিঙ্গা নারী মবিয়া খাতুন (৪৮)। আলাপের শুরুতে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় যেন নিজেকেই শুনিয়ে বলেন ‘আমরা কোন দেশের মানুষ?’
প্রশ্নটা করে আবার বিমূঢ় হয়ে বসে থাকেন কিছুক্ষণ।
উত্তরের অপেক্ষা না করে বলতে থাকেন, ‘বার্মার (মিয়ানমার) সরকার রোহিঙ্গাদের কোনো কাজকর্ম করতে দিচ্ছে না। তারা চায় রাখাইন প্রদেশকে রোহিঙ্গামুক্ত করতে। পুরুষেরা ঘরের বাইরে গেলে ধরে নিয়ে যায়। এ কারণে ঘরে ঘরে অভাব-অনটন চলছে। ফলে বাধ্য হয়ে রোহিঙ্গারা দেশ ত্যাগ করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে। কিন্তু এখানেও তাঁদের স্থান হচ্ছে না।’
গত সোমবার বিকেলে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং গ্রামের একটি পাহাড়ি বস্তিতে কথা হচ্ছিল রোহিঙ্গা নারী মবিয়ার সঙ্গে। নিজের কষ্টের কথা বলতে গিয়ে নিজ সম্প্রদায়ের মানুষের দুর্দশার কথাও বলতে ভোলেননি তিনি।
মিয়ানমারের দাঙ্গাপীড়িত রাখাইন প্রদেশ থেকে পাঁচ মাস আগে পরিবার-পরিজন নিয়ে মবিয়া খাতুন পালিয়ে আসেন টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে। সেখানে কয়েক দিন থাকার পর টেকনাফ পৌরসভা এলাকার একটি ঘরে ২১ দিন বসবাস করেন। তারপর সেখান থেকে এই পাহাড়ি বস্তিতে আশ্রয় নেন। কেবল মবিয়া খাতুন নন। এই পাহাড়ি এলাকায় অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমারের আরও অন্তত ৭০ হাজার রোহিঙ্গা লোকজন বসবাস করছে। বন বিভাগের কয়েক শ একর বনভূমি দখল করে রোহিঙ্গারা আট হাজারের বেশি ঝুপড়িঘর তৈরি করলেও এখন পর্যন্ত কেউ উচ্ছেদ করতে যায়নি। বসতি স্থাপনকারী রোহিঙ্গা লোকজন জানান, মিয়ানমার সরকারের বৈষম্যমূলক নীতির কারণে রোহিঙ্গারা দেশ ত্যাগ করে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। কিন্তু অনেকেই ধরা পড়ে আবার ফিরে যাচ্ছে মিয়ানমারে। কেউ কেউ দুর্গম সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমাতে জীবনের ঝুঁকিও নিচ্ছে।
ওই এলাকায় বসবাসকারী রোহিঙ্গা হাফেজ আহমদ (৫৫) বলেন, গত ৮ জুন মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে রাখাইন ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে দাঙ্গা শুরু হয়। এরপর থেকে সেখানে রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চলছে। সে দেশের সরকার রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি তো দেয়ইনি বরং তারা বিদেশি বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
উখিয়ার কুতুপালং শিবিরে শরণার্থী দিল মোহাম্মদ (৪৩) বলেন, ‘১৯৯১ সালে শরণার্থী হয়ে আমরা সাতজন এখানে আশ্রয় নিয়েছিলাম। ইতিমধ্যে মা-বাবাসহ চারজন মিয়ানমারে ফিরে গেলেও গত সাত বছর ধরে আমরা যেতে পারছি না। কারণ ২০০৫ সালের মে মাস থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বন্ধ রয়েছে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৯১ সালে নাফ নদী অতিক্রম করে মিয়ানমারের দুই লাখ ৫০ হাজার ৮৭৭ জন রোহিঙ্গা কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়। ২০০৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত অধিকাংশ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো হলেও এখনো টেকনাফ ও উখিয়ার দুটি শিবিরে প্রায় ২৮ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী অবস্থান করছেন। তবে এর বাইরেও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা অবৈধভাবে এ দেশে আছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ অবৈধভাবে বসবাসকারী রোহিঙ্গা লোকজনকে আশ্রয় দিতে রাজি নয়। তাদের কথা হলো, কক্সবাজার এলাকার আর্থ-সামাজিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে রোহিঙ্গারা। বাড়ছে মাদক চোরাচালানসহ নানা অসামাজিক কর্মকাণ্ড। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের কারণে শ্রমিক ও দিনমজুরদের মজুরিও কমে গেছে বলে তাঁরা মনে করেন।
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ ও প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ও উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, দুটি শিবিরে অবস্থানরত ২৮ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী ছাড়াও জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসবাস করছেন আরও চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এদের ফেরত না নিয়ে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা উল্টো আরও কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশে বাধ্য করছে।
‘কক্সবাজার বাঁচাও’ আন্দোলনের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, ‘নানা অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে মিয়ানমারের আট লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই কারণে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক মহলের উচিত, মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা।’
কক্সবাজারের ১৭-বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. খালেকুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় প্রায় প্রতিদিন রোহিঙ্গারা ধরা পড়ছে। পরবর্তী সময়ে তাদের পুনরায় মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পুরো সীমান্ত এলাকায় বিজিবি সদস্যদের সতর্ক রাখা হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা দরকার।’
উত্তরের অপেক্ষা না করে বলতে থাকেন, ‘বার্মার (মিয়ানমার) সরকার রোহিঙ্গাদের কোনো কাজকর্ম করতে দিচ্ছে না। তারা চায় রাখাইন প্রদেশকে রোহিঙ্গামুক্ত করতে। পুরুষেরা ঘরের বাইরে গেলে ধরে নিয়ে যায়। এ কারণে ঘরে ঘরে অভাব-অনটন চলছে। ফলে বাধ্য হয়ে রোহিঙ্গারা দেশ ত্যাগ করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে। কিন্তু এখানেও তাঁদের স্থান হচ্ছে না।’
গত সোমবার বিকেলে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং গ্রামের একটি পাহাড়ি বস্তিতে কথা হচ্ছিল রোহিঙ্গা নারী মবিয়ার সঙ্গে। নিজের কষ্টের কথা বলতে গিয়ে নিজ সম্প্রদায়ের মানুষের দুর্দশার কথাও বলতে ভোলেননি তিনি।
মিয়ানমারের দাঙ্গাপীড়িত রাখাইন প্রদেশ থেকে পাঁচ মাস আগে পরিবার-পরিজন নিয়ে মবিয়া খাতুন পালিয়ে আসেন টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে। সেখানে কয়েক দিন থাকার পর টেকনাফ পৌরসভা এলাকার একটি ঘরে ২১ দিন বসবাস করেন। তারপর সেখান থেকে এই পাহাড়ি বস্তিতে আশ্রয় নেন। কেবল মবিয়া খাতুন নন। এই পাহাড়ি এলাকায় অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমারের আরও অন্তত ৭০ হাজার রোহিঙ্গা লোকজন বসবাস করছে। বন বিভাগের কয়েক শ একর বনভূমি দখল করে রোহিঙ্গারা আট হাজারের বেশি ঝুপড়িঘর তৈরি করলেও এখন পর্যন্ত কেউ উচ্ছেদ করতে যায়নি। বসতি স্থাপনকারী রোহিঙ্গা লোকজন জানান, মিয়ানমার সরকারের বৈষম্যমূলক নীতির কারণে রোহিঙ্গারা দেশ ত্যাগ করে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। কিন্তু অনেকেই ধরা পড়ে আবার ফিরে যাচ্ছে মিয়ানমারে। কেউ কেউ দুর্গম সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমাতে জীবনের ঝুঁকিও নিচ্ছে।
ওই এলাকায় বসবাসকারী রোহিঙ্গা হাফেজ আহমদ (৫৫) বলেন, গত ৮ জুন মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে রাখাইন ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে দাঙ্গা শুরু হয়। এরপর থেকে সেখানে রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চলছে। সে দেশের সরকার রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি তো দেয়ইনি বরং তারা বিদেশি বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
উখিয়ার কুতুপালং শিবিরে শরণার্থী দিল মোহাম্মদ (৪৩) বলেন, ‘১৯৯১ সালে শরণার্থী হয়ে আমরা সাতজন এখানে আশ্রয় নিয়েছিলাম। ইতিমধ্যে মা-বাবাসহ চারজন মিয়ানমারে ফিরে গেলেও গত সাত বছর ধরে আমরা যেতে পারছি না। কারণ ২০০৫ সালের মে মাস থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বন্ধ রয়েছে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৯১ সালে নাফ নদী অতিক্রম করে মিয়ানমারের দুই লাখ ৫০ হাজার ৮৭৭ জন রোহিঙ্গা কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়। ২০০৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত অধিকাংশ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো হলেও এখনো টেকনাফ ও উখিয়ার দুটি শিবিরে প্রায় ২৮ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী অবস্থান করছেন। তবে এর বাইরেও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা অবৈধভাবে এ দেশে আছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ অবৈধভাবে বসবাসকারী রোহিঙ্গা লোকজনকে আশ্রয় দিতে রাজি নয়। তাদের কথা হলো, কক্সবাজার এলাকার আর্থ-সামাজিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে রোহিঙ্গারা। বাড়ছে মাদক চোরাচালানসহ নানা অসামাজিক কর্মকাণ্ড। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের কারণে শ্রমিক ও দিনমজুরদের মজুরিও কমে গেছে বলে তাঁরা মনে করেন।
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ ও প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ও উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, দুটি শিবিরে অবস্থানরত ২৮ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী ছাড়াও জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসবাস করছেন আরও চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এদের ফেরত না নিয়ে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা উল্টো আরও কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশে বাধ্য করছে।
‘কক্সবাজার বাঁচাও’ আন্দোলনের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, ‘নানা অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে মিয়ানমারের আট লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই কারণে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক মহলের উচিত, মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা।’
কক্সবাজারের ১৭-বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. খালেকুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় প্রায় প্রতিদিন রোহিঙ্গারা ধরা পড়ছে। পরবর্তী সময়ে তাদের পুনরায় মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পুরো সীমান্ত এলাকায় বিজিবি সদস্যদের সতর্ক রাখা হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা দরকার।’
No comments