মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি কমছে
বাংলাদেশে শিল্প স্থাপনের যন্ত্রপাতির আমদানি কমে যাচ্ছে। বিগত তিন মাসে শিল্প স্থাপনের যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলার আশ্চর্যজনকভাবে কম গেছে প্রায় ২৫ দশমিক ৮২ শতাংশ। অথচ গত বছর এই সময়ে মূলধনী যন্ত্রপাতির ওপর এলসি খোলার পরিমাণ বেড়েছিল ৬০ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
ব্যবসায়ীদের আস্থার অভাব এবং গ্যাস ও বিদ্যুত সমস্যার কারণে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্কোচনমূলক মুদ্রানীতি এবং ক্রমান্বয়ে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণেও মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি কমছে। এর ফলে দেশে শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে অদূর ভবিষ্যতে মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি আরও কমে যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী বিগত অর্থবছরে ১৭৯ কোটি ৬১ লাখ ডলারের এলসি খোলা হয়েছে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য। কিন্তু ২০১০-১১ অর্থবছরে মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছিল ২৪২ কোটি ১৪ লাখ ডলার। আর এই চলমান অর্থবছরের এই সময়টাতেও যন্ত্রপাতির আমদানি বাড়ছে না। তাছাড়া বিগত অর্থবছরে শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমেছে ৮ দশমিক ০৫ শতাংশ। বিগত অর্থবছরে শিল্পের কাঁচামাল বাবদ আমদানি ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা। আর ২০১০-১১ সালে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২৮৭ কোটি ডলার। মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি কমে যাওয়া, শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমে যাওয়া তখনই ইতিবাচক হয় যখন আমরাই এই সকল জিনিস নিজেরাই উৎপাদন করতে পারব। কিন্তু আমরা এখনও এই সব মূলধনী যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামাল তৈরি করার সামর্থ্য অর্জন করতে সক্ষম হইনি। যা প্রমাণ করে যে, আমাদের দেশে উৎপাদন খাতে বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে। যন্ত্রপাতি আমদানি না হলে উৎপাদন ব্যাহত হবে এটাই স্বাভাবিক। আর উৎপাদন কমে যাওয়া মানেই হচ্ছে প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া। দেশে যদি উৎপাদন কাক্সিক্ষত মাত্রায় করা সম্ভব না হয় তবে জিডিপির সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের যে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে তা অধরা থেকে যাবে। তবে শুধু যে মূলধনী ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমেছে তা নয়, খাদ্যশস্য আমদানিও কমেছে। খাদ্যশস্য আমদানি কমে যাওয়া আমাদের জন্য ইতিবাচক দিক। এটা প্রমাণ করে যে, আমরা খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে যাচ্ছি।কিন্তু শিল্প উৎপাদন হ্রাস পাওয়া আমাদের অর্থনীতির জন্য সুখকর হবে না। তাই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহসহ যে সকল কারণে শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে সে সকল কিছুর সমাধানের জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। আর তা না হলে বাজেটে ঘোষিত আশাবাদ পরবর্তী বছরগুলোর জন্য আশাবাদ হিসেবেই থেকে যাবে।
অর্থনৈতিক ডেস্ক
অর্থনৈতিক ডেস্ক
No comments