চরাঞ্চলে মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নিন- ‘কোথায় পড়ব, স্কুল নাই’
সরকার যখন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে, তখন কুড়িগ্রামের ৪০৭টি চরে কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকা দুঃসংবাদই বলতে হবে। কুড়িগ্রামের মানুষ একসময় মঙ্গার কবলে বিপন্ন ছিল, এখন মঙ্গার প্রকোপ অনেকটা কমলেও শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সেখানকার চরাঞ্চলের মানুষ।
গতকাল প্রথম আলোর পঞ্চম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, কুড়িগ্রামের ৪০৭টি চরে কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই। যদিও ওই এলাকায় ২৩৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এসব বিদ্যালয় থেকে প্রতিবছর কয়েক হাজার শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে। কিন্তু মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় তাদের মনে প্রশ্ন ‘কোথায় পড়ব, স্কুল নাই।’
চরাঞ্চলের ৪১০টি চরের মধ্যে মাত্র তিনটিতে তিনটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি দাখিল মাদ্রাসা আছে। বাকি ৪০৭টি চরের ছেলেমেয়েরা মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়াশোনার সুযোগ পায় না। ফলে ছেলেরা বাবার সঙ্গে কৃষিকাজ ও মেয়েরা মায়ের সঙ্গে ঘরকন্নার কাজ করতে বাধ্য হয়। অকালে শিক্ষাজীবন শেষ হওয়ায় অনেকের বাল্য বয়সে বিয়ে হয়ে যায়।
এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কী? সরকার প্রতিবছর বাজেটে শিক্ষা খাতে ব্যয় বরাদ্দ বাড়িয়ে চলেছে এবং দেশে শিক্ষার ব্যাপক উন্নতি হচ্ছে বলেও দাবি করছে। কিন্তু কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলের চিত্র সেই দাবি সমর্থন করে না। এই এলাকায় প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পরিসংখ্যান নিলে দেখা যাবে, ৬০ হাজারেরও বেশি ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করছে। কিন্তু মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে মাত্র কয়েক হাজার।
এই যে চরাঞ্চলের বিপুলসংখ্যক ছেলেমেয়ের শিক্ষাজীবন মাঝপথে থেমে যায়, তাদের ব্যাপারে কি সরকার ও সমাজপতিদের কোনোই দায়িত্ব নেই? কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলের মানুষ গরিব। তাই বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কিংবা সেখানকার সাংসদ নিশ্চয়ই গরিব নন। চরাঞ্চলে কাজ করে এমন বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কম নয়।
কুড়িগ্রামের যেসব চরে মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই, সেই সব এলাকায় মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের উচিত অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া। যেসব শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেছে, তাদের সবাইকে মাধ্যমিক স্তরে পড়াশোনার সুযোগ করে দেওয়া সরকারেরই দায়িত্ব। এগিয়ে আসতে পারে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোরও।
No comments