রাজশাহী আওয়ামী লীগ-ভেঙে দেওয়া হলো চার উপজেলা ও তিন পৌর কমিটি
রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের চার উপজেলা ও তিন পৌরসভা শাখা কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় তিনজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে দলের স্থানীয় নেতাদের করা কোন্দল ও ভাঙন সৃষ্টি অভিযোগ শোনার পর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এই ব্যবস্থা নেন।
গতকাল শনিবার রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের কার্য নির্বাহী সভায় তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি আগামী তিন দিনের মধ্যে ওই সব শাখার আহ্বায়ক কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন।
রাজশাহীর চার উপজেলায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে গত ২২ ও ২৩ আগস্ট সভায় দলীয় ওই তিনজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে স্থানীয় নেতারা অভিযোগ করেছিলেন। গতকালের কার্য নির্বাহী কমিটির সভায় মাহবুব-উল-আলম হানিফের কাছে সেসব অভিযোগ তুলে ধরা হয় বলে দলীয় সূত্রে জানা যায়। ভেঙে দেওয়া উপজেলা কমিটিগুলো হলো পবা, পুঠিয়া, বাঘা ও চারঘাট এবং পৌর কমিটিগুলো হলো গোদাগাড়ী, নওহাটা ও তাহেরপুর। কমিটি ভেঙে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। নগরীর সিঅ্যান্ডবি মোড়ের একটি কমিউনিটি সেন্টারে জেলা আওয়ামী লীগের কার্য নির্বাহী কমিটির সভা শুরু হয় দুপুর ১২টার দিকে। শেষ হয় সন্ধ্যায়। সভায় কোনো সাংবাদিককে থাকতে দেওয়া হয়নি। সভা শেষ কোনো প্রেসব্রিফিংও হয়নি।
দলের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লার বিরুদ্ধে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফের সামনে গতকাল আবারও নানা অভিযোগ তুলে ধরেন পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইয়াছিন আলী এবং মোহনপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুস সালাম। দৈনিক কালের কণ্ঠসহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত মেরাজ উদ্দিন মোল্লার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের সংবাদের কাটিংও জমা দেন সালাম। ২২ ও ২৩ আগস্টের বৈঠকে ওঠা রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সংসদ সদস্য কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারা ও রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলমের বিরুদ্ধে স্থানীয় নেতাদের করা বিভিন্ন অভিযোগ হানিফের কাছে তুলে ধরা হয়। এ ছাড়া নতুন করে অভিযোগ করা হয় রাজশাহী-১ আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য লুৎফর রহমান বলেন, সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কোনো মূল্যায়ন করেন না। তিনি জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে ওঠাবসা করেন। কার্য নির্বাহী কমিটির সভায় জেলার আটটি উপজেলার নেতারা বক্তব্য দেন।
সভার শুরুতেই প্রধান অতিথি হিসেবে সূচনা বক্তব্য দেন হানিফ। তিনি বলেন, 'স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের দূরত্ব থাকার কারণেই সরকারের সাফল্য মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। সরকারের সাফল্যগুলো ম্লান হয়ে যাচ্ছে শুধু এই কারণেই। সরকারের সাড়ে তিন বছরে অনেক সাফল্য রয়েছে; কিন্তু সেগুলো সঠিকভাবে প্রচার-প্রচারণা পাচ্ছে না।'
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আখতার জাহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী, শাহরিয়ার আলম, এনামুল হক, আবদুল ওয়াদুদ দারা, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ প্রমুখ।
No comments