বিদ্যুতের দাম আবার বাড়ল
দৈনিক জনকণ্ঠসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে যে, সরকার ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর সাপেক্ষে পাইকারি ও সাধারণ গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই বৃদ্ধি পাইকারি পর্যায়ে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ এবং সাধারণ গ্রাহক পর্যায়ে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ হবে বলে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) সূত্র জানিয়েছে।
এছাড়া, আগের বিল কাঠামো বা বিলের ধাপও (সøাব) পরিবর্তিত হবে, যার সংখ্যা হতে পারে ছয় থেকে নয়টি। উল্লেখ করা যেতে পারে, বর্তমান সরকারের আমলে ইতোপূর্বে পাঁচবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এখন ষষ্ঠ বারের মতো বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হলো। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন হবেন, বিরোধী রাজনীতিবিদরা কিংবা সুশীল সমাজের অনেকেই এই দাম বৃদ্ধির সমালোচনায় সোচ্চার হবেন এটা স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেয়া যায়। তবে দাম বৃদ্ধির পেছনে জনগণকে কষ্ট দেয়ার কোন উদ্দেশ্য যে সরকারের নেই তা নিশ্চিত করে বলা যায়। পত্রিকার রিপোর্ট থেকে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি নির্দেশনায় মূল্য বৃদ্ধির এই হার চূড়ান্ত হয়েছে। বিশ্ববাজারসহ দেশের প্রতিটি সেক্টরে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং আনুষঙ্গিক খরচ আগের চেয়ে অনেক উর্ধমুখী হওয়ায় সর্বক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধির চাপ মোকাবেলা করতে হচ্ছে দেশের সব পর্যায়ের মানুষকে। বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ যদি বৃদ্ধি পায় এবং তা থেকে প্রাপ্ত আয় যদি ক্রমাগত লোকসানমুখী হয়, তাহলে মূল্যবৃদ্ধি ছাড়া আর কোন বিকল্প থাকে না এমন যুক্তি অত্যন্ত পুরনো। বর্তমানে মূল্যবৃদ্ধিতে যে লোকসান পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। তবে যে কারণেই হোক, দেশে বিদ্যুতের দাম আবার বাড়ানো হয়েছে এটাই বাস্তবতা। বিল কাঠামোয় অনেক স্তর রাখার ফলে কোন পর্যায়ের গ্রাহক কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত বা লাভবান হবেন সে বিষয়ে এখনও নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না। কারণ স্তর বা সøাবগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত রূপরেখা এখনও ঘোষণা করা হয়নি। আগামী ৭ থেকে ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তা জানা যাবে বলে বিইআরসি সূত্র জানিয়েছে। দাম বৃদ্ধির নীতিমালা কিংবা বিল কাঠামোর স্তর সম্পর্কে বিস্তারিত জানা না গেলেও আমরা সরকারের প্রতি অনুরোধ করব, এই মূল্য বৃদ্ধির ফলে দেশের সাধারণ মানুষ যেন কোনভাবেই ভোগান্তির শিকার না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। বিল কাঠামোর নতুন ধাপসমূহ চূড়ান্ত করার সময় সাধারণ মানুষের আর্থিক সামর্থ্য যেন গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়। এ কথা ঠিক যে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে দেশের নাজুক বিদ্যুত ব্যবস্থাকে ক্রমে ক্রমে সচল করতে শুরু করে। বর্তমানে দেশের বিদ্যুত ব্যবস্থা যে একটা সহনীয় পর্যায়ে এসেছে, এটা সরকারেরই কৃতিত্ব। কুইক রেন্টাল নিয়ে যত সমালোচনাই হোক না কেন এর ফলে দেশের বিদ্যুত পরিস্থিতির যে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে এবং এর সুফল আমরা সবাই ভোগ করছি এটাই স্বস্তি। এবারের দাম বৃদ্ধি নিয়েও আগের মতো সমালোচনা ও বিতর্ক হবে এটা নিশ্চিত। তবে সরকার যদি পাইকারি ও সাধারণ গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুত সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে পারে; জনগণকে অধিকতর স্বস্তি দিতে পারে তাহলে দেশের মানুষের ব্যক্তিগত জীবনযাপন ও উৎপাদন পর্যায়ে ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা যায়। তাই মূল্যবৃদ্ধিই চূড়ান্ত কথা নয়; সার্ভিস উন্নত করাই আসল কথা।
আর একটি কথা, বিদ্যুত সেক্টরে সিস্টেমলসের ছদ্মাবরণে ব্যাপক দুর্নীতি চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। মিটার টেম্পারিং, অবৈধ সংযোগ ইত্যাদি নানা অপকৌশলের আশ্রয় নিয়ে বিদ্যুত বিভাগের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেন।
এর ফলে সরকারের যেমন বড় অঙ্কের রাজস্ব হাতছাড়া হয়, তেমনি বিদ্যুত বিভাগ অসহনীয় লোকসানের মুখোমুখি হয়ে ঘন ঘন বিদ্যুতের দাম বাড়াতে মরিয়া হয়ে ওঠে। তাই সিস্টেমলস তথা বিদ্যুত চুরির ফ্রিস্টাইল তৎপরতা ঠেকাতে হবে। এ লক্ষ্যে সরকারের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কোন বিকল্প নেই। ব্যাপক বিদ্যুত চুরিসহ এই খাতে বিরাজমান অন্য অব্যবস্থাগুলো নিয়ন্ত্রণ করা গেলে এত ঘন ঘন বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রয়োজন হবে না।
আর একটি কথা, বিদ্যুত সেক্টরে সিস্টেমলসের ছদ্মাবরণে ব্যাপক দুর্নীতি চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। মিটার টেম্পারিং, অবৈধ সংযোগ ইত্যাদি নানা অপকৌশলের আশ্রয় নিয়ে বিদ্যুত বিভাগের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেন।
এর ফলে সরকারের যেমন বড় অঙ্কের রাজস্ব হাতছাড়া হয়, তেমনি বিদ্যুত বিভাগ অসহনীয় লোকসানের মুখোমুখি হয়ে ঘন ঘন বিদ্যুতের দাম বাড়াতে মরিয়া হয়ে ওঠে। তাই সিস্টেমলস তথা বিদ্যুত চুরির ফ্রিস্টাইল তৎপরতা ঠেকাতে হবে। এ লক্ষ্যে সরকারের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কোন বিকল্প নেই। ব্যাপক বিদ্যুত চুরিসহ এই খাতে বিরাজমান অন্য অব্যবস্থাগুলো নিয়ন্ত্রণ করা গেলে এত ঘন ঘন বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রয়োজন হবে না।
No comments