ডা. নিতাইয়ের মূল ঘাতক গ্রেপ্তার, চালকও জড়িত

রাজধানীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক নারায়ণ চন্দ্র নিতাই হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা মাসুম ওরফে মিন্টুকে (৩০) গত শুক্রবার রাতে সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল শনিবার বিকেলে মিন্টুকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের জনসংযোগ দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে হাজির করা হয়।


এ সময় মিন্টু চিকিৎসককে ছুরিকাঘাতের দায় স্বীকার করে সাংবাদিকদের বলে, নিতাইয়ের গাড়িচালকও হত্যার পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত।
মিন্টু সংবাদ সম্মেলনে বলে, 'ডাকাতির উদ্দেশ্যে গভীর রাতে ডা. নিতাইয়ের বাসায় ঢোকার পর তিনি (নিতাই) ঘুম থেকে জেগে ওঠেন ও চিৎকার করতে থাকেন। তখন আমি তাঁর বুকে ছুরি মারি।' ডিবি সূত্রে জানা যায়, মূলত মিন্টুই চিকিৎসক নিতাইকে ছুরি মেরে হত্যা করেছে।
এদিকে চিকিৎসক নিতাই হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত পাঁচজন গ্রেপ্তার হলো। মিন্টুর আগে ফয়সাল (৩২), পেদা মাসুদ (২৮), সাইদুল (৩৮) ও পিচ্চি কালামকে (৩৫) গ্রেপ্তার করে ডিবি।
সংবাদ সম্মেলনে ডিবির উপকমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, নিতাই হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা মিন্টু। এর আগে আলোচিত এই হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া চারজনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর মিন্টুকে গত শুক্রবার রাতে সিলেটের সেতু বন্ধন এলাকার ৩৮/৪ নম্বর বাদামবাগিচার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিবি ডিসি নজরুল আরো জানান, এ ঘটনায় চিকিৎসক নিতাইয়ের গাড়িচালক কামরুল হাসান অরুণও জড়িত রয়েছে। মূলত, গাড়ি চালকের তথ্যের ভিত্তিতেই চিকিৎসক নিতাইয়ের বাসায় ডাকাতির পরিকল্পনা করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মিন্টু ডিবিকে জানায়, চিকিৎসকের বাসায় জমি বিক্রির ২০ লাখ টাকা ও ১০০ ভরি স্বর্ণালংকার রয়েছে বলে গাড়িচালক অরুণ তাকে প্রথমে জানায়। মিন্টু এরপর পেদা মাসুম, ফয়সাল, পিচ্চি কালাম ও সাইদুলসহ কয়েকজনকে নিয়ে ওই বাসায় ডাকাতির পরিকল্পনা করে। সে অনুযায়ী দ্বিতীয় তলার গ্রিল কেটে বাসার ভেতরে তারা ঢোকে। এর কিছুক্ষণের মধ্যে চিকিৎসক নিতাইয়ের ঘুম ভাঙে। চিকিৎসক নিতাই তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে বাধা দিলে প্রথমে তাঁকে বেঁধে ফেলার চেষ্টা করা হয়। ফলে চিকিৎসকের সঙ্গে তাদের কিছু সময় ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে চিকিৎসকের বুকে ছুরি মেরে তারা বিভিন্ন দিক দিয়ে পালিয়ে যায়।
ডিবি সূত্রে জানা যায়, চুরির দায়ে এর আগেও কয়েকবার পুলিশের হাতে ধরা পড়ার কথা স্বীকার করে মিন্টু। পেশাদার চোর হলেও ঢাকার চাঁদনীচকে ওড়না হাউস নামের একটি দোকানে চাকরি করত মিন্টু। এদিকে গাড়িচালক কামরুল হাসান অরুণ হত্যাকাণ্ডের পরদিন থেকে লাপাত্তা রয়েছে। চিকিৎসক নিতাইয়ের স্ত্রী লাকী দত্ত ডিবিকে জানান, গত বছরের ১১ নভেম্বর অরুণকে চাকরি দেওয়া হয়। ঈদের আগে অরুণ বাড়ি যাওয়ার কথা বলে ছুটি নেয়। তবে হত্যাকাণ্ডের দিন ঢাকায় ছিল। নিতাইয়ের লাশের সঙ্গে গাড়ি চালিয়ে অরুণ চট্টগ্রামও গিয়েছিল। চট্টগ্রামে গাড়ি রেখে সে ঢাকায় আসার পর আর তাকে পাওয়া যায়নি। মিন্টুর বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার গয়েশপুর গ্রামে।
গত ২৩ অগাস্ট ভোর রাতে মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের আবাসিক ভবনে খুন হন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পর্ষদের সদস্য নারায়ণ চন্দ্র নিতাই।

No comments

Powered by Blogger.