আইন আলোচনা : অগ্রক্রয়ের অধিকার প্রসঙ্গে by এ্যাডভোকেট মোহাম্মদ খলিলুর রহমান

অগ্রক্রয়ের অধিকার কি সে সম্পর্কে আমাদের দেশের শিক্ষিত অশিক্ষিত প্রায় মানুষই কম বেশি ধারণা রাখেন। অগ্রক্রয়ের অধিকারকে ইংরেজীতে ‘প্রিয়েমশান’ বলে, যার আরবি পরিভাষা হচ্ছে ‘হকশূফা’। অংশীদার ও প্রতিবেশীর কিংবা একই দাগ খতিয়ানের জমি খরিদের অগ্রাধিকার কে শূফার দাবি বলে।


অর্থাৎ ‘‘অগ্রক্রয়াধিকার’’ (রাইট অব প্রিয়েমশান) দ্বারা কোন ব্যক্তি অন্যের ক্রয়কৃত সম্পত্তি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ক্রয় করার বিশেষ সুবিধা লাভ করে। কোন ক্রেতার নিকট থেকে পুনঃক্রয়ের এ অধিকারকেই বলা হয় ‘অগ্রক্রয়াধিকার’। অগ্রক্রয়ের এ অধিকার প্রয়োগ করে কোন স্থাবর সম্পত্তির মালিক অন্য একজনের বিক্রীত অপর একটি স্থাবর সম্পত্তি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ক্রয় করার সুযোগ লাভ করে। এভাবে কোন স্থাবর সম্পত্তির মালিক কর্তৃক অন্য কোন স্থাবর সম্পত্তির বিক্রয়মূল্য ওই সম্পত্তির মালিককে প্রদান করে ক্রেতার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার অধিকারকে বলা হয় রাইট অব প্রিয়েমশান বা অগ্রক্রয়াধিকার।’ আমাদের দেশে ৪ ধরনের প্রিয়েমশান হয়ে থাকেÑ (১) এস্টেট একুইজিশনাল এ্যান্ড টেনেন্সি (এমেন্ডমেন্ড) এ্যাক্ট, ২০০৬ এর ৯৬ ধারায়, (২) নন-এগ্রিকালচারাল টেনেন্সি এ্যাক্ট এর ২৪ ধারায়, (৩) মুসলিম আইনের বিধানমতে ‘হক আদায়’; মুসলিম আইনের বিধানমতে প্রিয়েমশান আবার ৩ ধরনের লোক করতে পারেÑ শফিই শরিক, শফিই খালিত, শফিই জার। (৪) পার্টিশনাল মামলায় কোন বিবাদী বা বাদী যদি কোন ক্রয় বিক্রয়ের কথা জানতে পারেন তাহলে ওই মামলায় প্রিয়েমশান চাইতে পারেন; এটাকে বলে ‘বাই-আপ’। অগ্রক্রয়ের এ অধিকার আইনগত প্রক্রিয়ার ভিত্তিতে বলবৎ হওয়া মাত্রই অগ্রক্রেতা অতঃপর সর্বোতভাবে ক্রেতার স্থলাভিষিক্ত হবেন। অগ্রক্রয়ের অধিকার সম্পর্কে ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ৯৬(১) ধারায় বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, যদি কোন রায়তের জমার কোন খ- বা অংশ হস্তান্তর করা হয়, তবে ওই জমার এক বা একাধিক শরিক প্রজা ওই খ- বা অংশ তার বা তাদের নিকট হস্তান্তর করার জন্য এই আইনের ৮৯ ধারার অধীনে জারি না হয়ে থাকে, তবে সেক্ষেত্রে এই রূপ হস্তান্তর সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়ার তারিখ হতে চার মাসের মধ্যে আদালতের নিকট আবেদন করতে পারবেন। যদি কোন জমা অথবা কোন জমার খ- বা অংশ হস্তান্তর করা হয়, তবে হস্তান্তরিত জমি সংলগ্ন ভূমির অধিকারী প্রজা বা প্রজাগণ ওই জমা বা খ- বা অংশ তার কিংবা তাদের নিকট হস্তান্তর করার জন্য, ওই হস্তান্তর সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়ার তারিখ হতে চার মাসের মধ্যে, আদালতের নিকট আবেদন করতে পারবেন। তবে শর্ত হলো যে, কোন সহ-অংশীদার অর্থাৎ শরিক প্রজা কিংবা হস্তান্তরিত ভূমি সংলগ্ন জমিটির প্রজা যদি এরূপ ব্যক্তি না হয়, যার নিকট এই আইনের ৯০ ধারার অধীনে ক্ষেত্রমতো, জমা কিংবা উহার খ- বা অংশ হস্তান্তর করা যায়, তবে এই ধারার অধীনে তার ক্রয় করার অধিকার থাকবে না। ৯৬(২) ধারায় বলা হয়েছে যে, এই ধারার (১) উপধারার অধীনে দাখিলকৃত শরিক প্রজাদের আবেদনক্রমে জমার অন্যান্য শরিক প্রজা এবং হস্তান্তর গ্রহীতাকে পক্ষ করতে হবে এবং হস্তান্তরিত জমি, জমি সংলগ্ন জমির অধিকারী প্রজার দলিলকৃত অনুরূপ আবেদনে জমার সকল শরিক প্রজা ও হস্তান্তরিত জমির অধিকারী সকল প্রজা ও হস্তান্তর গ্রহীতাকে পক্ষ করতে হবে। ৯৬(৩) ধারায় অগ্রক্রয়ের পদ্ধতিগত বিধান সম্পর্কে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, যদি আবেদনকারী কিংবা আবেদনকারীগণ আবেদন করার সময় আদালতে পণের অর্থ অথবা হস্তান্তরিত জমার বা জমার খ- কিংবা অংশের যে মূল্য ক্ষেত্রমতো, এ আইনের ৮৯ ধারার অধীনে নোটিসে কিংবা হস্তান্তর দলিলে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তা তার শতকরা দশভাগ হারে ক্ষতিপূরণসহ জমা না দেয়, তবে সেক্ষেত্রে এই ধারার (১) উপধারার অধীনে দাখিলকৃত আবেদন খারিজ হয়ে যাবে। এই ধারার (৩) উপধারার বিধান মতে, আদালত আবেদন প্রাপ্তির ভিত্তিতে অনুরূপ জমাসহ হস্তান্তর গ্রহীতা এবং (২) উপধারার অধীনে কৃত পক্ষগণের অন্যান্য ব্যক্তিগণকে তিনি যে সময় নির্ধারণ করবেন সে সময়ের মধ্যে হাজির হবার নোটিস প্রদান করবেন এবং হস্তান্তরের জন্য প্রকৃতরূপে যে পণ্য দেওয়া হয়েছে তা বলতে ওই সব ব্যক্তিকে নির্দেশ দান করবেন এবং হস্তান্তরের তারিখ হতে কর বাবদ হস্তান্তর গ্রহীতা অন্যান্য কি কি অর্থ প্রদান করেছে এবং হস্তান্তরিত জমা কিংবা খ- অথবা অংশের দায় বিমোচনের জন্য অথবা তার উন্নয়নের জন্য হস্তান্তর গ্রহীতার কি ব্যয় হয়েছে তা বলতে হস্তান্তর গ্রহীতাকে নির্দেশ করবেন এবং আদালত অতঃপর প্রকৃত পরিমাণ ও হস্তান্তর গ্রহীতার প্রদত্ত কর এবং হস্তান্তরিত জমির দায় বিমোচনে বা তার উন্নয়নে হস্তান্তর গ্রহীতার ব্যয় সম্পর্কে তদন্ত অনুষ্ঠানের পর সব পক্ষকে বক্তব্য পেশ করার সুযোগ দানের পর, আবেদনকারী বা আবেদনকারীগণকে প্রয়োজনবোধে, আরও অর্থ তিনি যে সময় যুক্তিসঙ্গত বলে মনে করবেন, সে সময়ের মধ্যে জমা দিতে নির্দেশ দান করবেন। তবে শর্ত হলো এই যে, হস্তান্তর গ্রহীতা কোন অবস্থাতেই হস্তান্তর দলিলে উল্লিখিত অর্থের অতিরিক্ত পণ্য দাবি করতে পারবে না। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, অগ্রক্রয়ের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে যদি কোন আবেদনকারী দলিলগত সাক্ষ্যের ভিত্তিতে এটা প্রমাণ করতে সক্ষম হয় যে, হস্তান্তর গ্রহীতা অগ্রক্রয়ের দাবিটি প্রতিহত করার অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে হস্তান্তরদাতার যোগসাজশে কবলার প্রকৃত মূল্যের চাইতে অধিক মূল্য উল্লেখ করে দলিলটি সম্পাদন করেছেন, তবে সেক্ষেত্রে আবেদনকারী দাখিলী টাকা হতে প্রকৃত মূল্যের অতিরিক্ত টাকা এবং তৎবাবদ হারাহারি ক্ষতিপূরণসহ ফেরত পাওয়ার অধিকার লাভ করবেন। ৯৬(৪) যখন (১) উপধারা অনুযায়ী যখন আবেদন করা হয় তখন অবশিষ্ট যে কোন সহ-অংশীদার প্রজাসহ হস্তান্তর গ্রহীতা যদি সে তাদের একজন হয়, এবং হস্তান্তরিত জমির পার্শ্ববর্তী জমির অধিকারী প্রজা (১) উপধারায় বর্ণিত তারিখের মধ্যে বা (৩) উপধারার (খ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আবেদনের নোটিস জারির তারিখের দুই মাসের মধ্যে, যা আগে সংঘটিত হয়, ওই আবেদন অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য আবেদন জানাতে পারে; কোন অংশীদারি প্রজা বা হস্তান্তরিত জমির পার্শ্ববর্তী জমির অধিকারী প্রজা যে (১) উপধারা অনুযায়ী বা এই উপধারা অনুযায়ী আবেদন করেনি, তার এই উপধারা অনুযায়ী আর ক্রয় করার কোন অধিকার থাকবে না। ৯৫(৫) (ক) (র) যদি একজন সহ-অংশীদার যার স্বার্থ উত্তরাধিকার সূত্রে অর্জিত হয়, (রর) একজন সহ-অংশীদার যার স্বার্থ ক্রয়সূত্রে অর্জিত হয়, ও (ররর) হস্তান্তরিত জমির পার্শ্ববর্তী জমির অধিকারী এই ধারা অনুযায়ী আবেদন পেশ করে এবং এতে বিধৃত যাবতীয় বিধানবলী যথাযথভাবে পালন করে, সেক্ষেত্রে এরূপ যে কোন আবেদনকারী কিংবা আবেদনকারীগণ এই ধারার অধীনে অগ্রক্রয়াধিকার প্রয়োগ করার বিশেষ অধিকার লাভ করবে। একই ধারার (৫) উপধারার (খ) দফায় বলা হয়েছে যে, হস্তান্তরিত জমি সংলগ্ন জমির অধিকারী একাধিক প্রজা যদি এই ধারার অধীনে আবেদন করে, তবে সেক্ষেত্রে আদালত সংশ্লিষ্ট প্রজাগণের মধ্যে অগ্রাধিকারের ক্রয় নির্ধারণ করার উদ্দেশ্যে যেসব বিষয়ের ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করবেন তাহলো নিম্নরূপ। যথাÑ (১) অগ্রক্রয়ের অধিকার প্রয়োগ করতে ইচ্ছুক, এরূপ প্রত্যেক প্রজার দখলভুক্ত জমির মোট পরিমাণ; (২) সংশ্লিষ্ট প্রজার জমিটি তার বসতবাড়ির অন্তর্ভুক্ত কিনা, অথবা অন্য কোন প্রকারের জমির পর্যায়ে পড়ে কি না; (৩) সংলগ্নতার পরিমাণ; (৪) আবেদনকারীর জন্য সংলগ্ন জমিটির দখল লাভ করার প্রয়োজন কতটুকু এবং (৫) অগ্রক্রয়ের অধিকার প্রয়োগ করতে ইচ্ছুক এরূপ আবেদনকারীদের কোন প্রকারের ব্যবহারজনিত অধিকার বা ইজমেন্ট সংক্রান্ত প্রয়োগ করার সুযোগ রয়েছে কিনা। ৯৬(৬)(ক)(৪) উপধারা অনুযায়ী যে সময়ের মধ্যে আবেদন করা যেতে পারে তার পরিসমাপ্তি ঘটানোর পর আদালত এ ধারার বিধান অনুযায়ী নির্ধারণ করবে (১) উপধারা বা (৪) উপধারা অনুযায়ী পেশকৃত আবেদনগুলোর মধ্যে কোন কোন আবেদন মঞ্জুর করা হবে। (খ) যদি আদালত দেখে যে, এই ধারা অনুযায়ী আবেদনগুলো মঞ্জুর করার জন্য আদেশ একাধিক ব্যক্তির অনুকূলে দিতে হবে, তাহলে আদালত ওই আবেদনকারীর প্রত্যেকে কি পরিমাণ অর্থ প্রদান করবে তা নির্ধারণ করবে ও ওই অর্থ নির্ধারণ করার পর (৪) উপধারা অনুযায়ী মূল আবেদনে যে আবেদনকারী বা আবেদনকারীরা অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল তাকে বা তাদের আদালত কর্তৃক নির্ধারিত বিবেচনাসঙ্গত সময়ে তাদের দ্বারা প্রদানযোগ্য অর্থ জমা দেয়ার জন্য আদেশ দান করবে; এবং যদি অর্থ ওই সময়ের মধ্যে আবেদনকারী কর্তৃক জমা না দেয়া হয় তাহলে তার আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হবে। ৯৬ (৭)(ক) যে সময়ের মধ্যে (৬) উপধারার (খ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অর্থ জমা দিতে হবে তার পরিসমাপ্তির পর আদালত যে আবেদনকারী বা যে সকল আবেদনকারী এই ধারা অনুযায়ী ও এই ধারার শর্ত পূরণ করে ক্রয় করার অধিকারী হয়েছে সেই আবেদনকারী বা সেসব আবেদনকারীর আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দান করবে এবং যখন একাধিক আবেদনকারীর অনুকূলে প্রদান করা হয় তখন জোত বা তার অংশ বিশেষ বা শেয়ার তাদের মধ্যে যা ন্যায়সঙ্গত মনে করবে সেই পদ্ধতিতে বণ্টন করবে; এবং (১) উপধারা অনুযায়ী আবেদনকারী বা আবেদনকারীরা যদি কোন অর্থ ফেরত পাওয়ার অধিকারী হয়, তাহলে (৬) উপধারার (খ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আবেদনকারী বা আবেদনকারীদের দ্বারা জমাকৃত অর্থ হতে তাদের অর্থ ফেরত পাবে। ৫ (ক) ও (খ) উপধারায় বর্ণিত শর্তাবলী অগ্রক্রয়ের আবেদন মঞ্জুর হলে, আদালত অতঃপর এই আইনের ৯৬ ধারার ৭(খ) উপধারা মতে ক্রেতা প্রতিপক্ষকে আদালতে জমা অর্থ হতে নিম্নলিখিত অর্থগুলো প্রদানের জন্য আদেশ দান করবেন। এই ধারার ৭(খ) উপধারা মতে আদালত একই সময়ে অগ্রক্রেতাকে এই মর্মে আদেশ দান করবেন যে, হস্তান্তরের জন্য তৎকর্তৃক প্রদত্ত পণ্য, ওই পণ্যের শতকরা দশ ভাগ হারে ক্ষতিপূরণ, হস্তান্তরের তারিখ হতে অগ্রক্রেতা কর্তৃক খাজনা; কিংবা হস্তান্তরিত জমা, খ- বা অংশের কর বাবদ তৎকর্তৃক অর্থ প্রদত্ত হয়ে থাকলে এবং ওই জমা, খ- বা অংশের দায় বিমোচনে অর্থাৎ ওই জমির দায়মুক্তির জন্য কোনরূপ অর্থ ব্যয় হয়ে থাকলে, অথবা ওই জমির উৎকর্ষ সাধনের উদ্দেশ্যে কোন অর্থ ব্যয় হয়ে থাকলে তা এই আইনের ৯৬(৩) ধারার অধীনে জমাকৃত অর্থ হতে প্রদান করা হোক। উল্লিখিত শর্ত সাপেক্ষে, মহিলারাও অগ্রক্রয়ের অধিকার প্রয়োগ করতে পারে। এই আইনের ৯৬(৭) ধারার অধীনে কোন অগ্রক্রেতার অনুকূলে আদালত কর্তৃক কোন আদেশ জারি করা হলে, তবে সেক্ষেত্রে ওই রূপ আদেশের আইনগত ফলাফল নিম্নরূপ হবে। যেমন- (ক) সংশ্লিষ্ট দলিলের কবলা মূলে ক্রেতা প্রতিপক্ষের সকল স্বত্ব এবং অধিকার আবেদনকারীর ওপর বর্তাবে। (খ) অগ্রক্রয়ের আবেদনকারী সংশ্লিষ্ট জামিতে আদালতের মাধ্যমে দখল লাভ করার অধিকারী হবে। এভাবে, উপরে উল্লিখিত বিধান সাপেক্ষে, অগ্রক্রয়ের অধিকার প্রয়োগ করা যেতে পারে। ৯৬(৮)(৭) উপধারা অনুযায়ী বিভক্তির আদেশ দ্বারা জোতের খ-ন হবে না। ৯৬(৯)(৭) উপধারা অনুযায়ী আদেশ জারির তারিখ হতে (ক) হস্তান্তর গ্রহীতার নিকট অর্পিত জোত, তার অংশ বিশেষ বা শেয়ারে নিহিত অধিকার স্বত্ব ও স্বার্থ হস্তান্তরের পর হতে সকল দায়, যেগুলো হস্তান্তরের তারিখ হতে সৃষ্টি করা হয়েছে সে সকল দায়মুক্ত অবস্থায় ক্রয় করার আবেদন (৭) উপধারা অনুযায়ী মঞ্জুর হয়েছে সেই সহ-অংশীদার প্রজার বা হস্তান্তরিত জমির পার্শ¦বর্তী জমির অধিকারী প্রজা, যে যেখানে প্রযোজ্য হয়, তার ওপর ন্যস্ত হয়েছে বলে ধরে নেয়া হবে; (খ) হস্তান্তরের তারিখ হতে জোত বা তার অংশ বিশেষ বা শেয়ারের খাজনার জন্য হস্তান্তর গ্রহীতার দায়ের পরিসমাপ্তি ঘটবে এবং সহ-অংশীদার প্রজা বা হস্তান্তরিত জমির পার্শ্ববর্তী জমির অধিকারী প্রজা যাহাদের ক্রয় করার আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে, হস্তান্তর গ্রহীতার নিকট পাওনা খাজনার জন্য দায়ী থাকবে; (গ) আদালত ওই আবেদনকারীর বা আবেদনকারীদের পরবর্তী আবেদন ক্রমে তার বা তাদের নিকট ন্যস্ত সম্পত্তিতে তাকে বা তাদের দখল প্রদান করবে। ৯৬(১০) এই ধারার কোন কিছুই যে ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না- (ক) সহ-অংশীদারের নিকট প্রজাস্বত্বের হস্তান্তর যার স্বার্থ ক্রয় ব্যতীত অন্যভাবে অর্পিত হয়েছে; বা (খ) বদল বা বাটোয়ারার দ্বারা হস্তান্তর; বা (গ) উইলদাতা বা দাতার স্বামী বা স্ত্রী বা উইলদাতা বা দাতার তিন ডিক্রির মধ্যে রক্তের সম্বন্ধে আত্মীয়ের অনুকূলে সৃষ্টি উইল বা দান (হিসাবসহ তবে অর্থের বিনিময়ে সৃষ্টি হিবা-বিল-এওয়াজ অন্তর্ভুক্ত নয়); বা (ঘ) সাধারণ বা সম্পূর্ণ খাইখালাসী বন্ধক বা চূড়ান্ত পরিসমাপ্তির জন্য আদেশ বা ডিক্রি না দেয়া হলে বিক্রয়ের শর্তে বন্ধক; (ঙ) মুসলিম আইনের বিধান মোতাবেক সৃষ্টি ওয়াক্ফ; (চ) কোন ব্যক্তির আর্থিক সুবিধা সংরক্ষণ ব্যতীত ধর্মীয় ও দাতব্য উদ্দেশ্যে উৎসর্গ। ব্যাখ্যা : এই ধারার উদ্দেশ্যে রক্তের সম্পর্কে আত্মীয় হিন্দু আইন অনুযায়ী দত্তক পুত্রকে অন্তর্ভুক্ত করে।
৯৬(১১) এই ধারার কোন কিছুই ইসলামী আইন দ্বারা কোন ব্যক্তির ওপর অর্পিত অগ্রক্রয়ের নিরঙ্কুশ অধিকার হরণ করবে না।
বর্তমানে অগ্রক্রয়ের ৯৬ ধারায় যে পরিবর্তন হয়েছে, তা আলোচনা করা হলো- (১) পুরনো ৯৬ ধারায় প্রিয়েমশন মিস কেইস দায়ের করার তামাদির সময়সীমা চার মাস ছিল; বর্তমানে পরিবর্তিত ৯৬ ধারায় তামাদির সময়সীমা দুই মাস। (২) পূর্বের ৯৬ ধারায় উত্তরাধিকার সূত্রে সহ-শরিক, ক্রয় সূত্রে সহশরিক এবং পার্শ্ববর্তী জমির মালিক প্রিয়েমশন মিস কেইস দায়ের করতে পারত; বর্তমানে পরিবর্তিত ৯৬ ধারায় শুধুমাত্র উত্তরাধিকার সূত্রে সহশরিক প্রিয়েমশন মিস কেইস দায়ের করতে পারবে। (৩) পূর্বের ৯৬ ধারা মতে বিক্রয় মূল্যের ওপর ১০% ক্ষতিপূরণ জমা দিতে হতো; বর্তমানে পরিবর্তিত ৯৬ ধারায় ২৫% ক্ষতিপূরণ জমা দিতে হবে। (৪) আগের ৯৬ ধারায় বিক্রয় মূল্যের ওপর কোন সুদ প্রদান করতে হতো না; বর্তমানে পরিবর্তিত ৯৬ ধারা মতে ক্রেতাকে দরখাস্তকারী বরাবরে সাফ কবলা দলিল রেজিস্ট্রি করে দিতে হয়। ক্রেতা দরখাস্তকারী বরাবরে সাফ কবলা দলিল রেজিস্ট্রি করে না দিলে আদালত নিজেই দরখাস্তকারী বরাবরে সাফ কবলা দলিল রেজিস্ট্রি করে দেন।
অগ্রক্রয় আদেশের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় আপীল :
এ আইনের ৯৬ ধারার (১২) উপধারার বিধান মতে, অগ্রক্রয়ের আদেশের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় আপীল করা যায় না। এই আইনের ৯৬(১২) ধারায় বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই ধারার অধীনে আদালতের কোন আদেশের বিরুদ্ধে সাধারণ দেওয়ানি আপীল ধারার অধীনে আদালতে কোন আদেশের বিরুদ্ধে সাধারণ দেওয়ানি আপীল আদালতে আপীল করা যাবে এবং আপাতত বলবৎ অন্য কোন আইনে যা বলা হয়েছে তা সত্ত্বেও, প্রথম আপীল-আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় আপীল করা যাবে না।
ব্যতিক্রম : কখন প্রিয়েমশান বা অগ্রক্রয় চলে না : সিটি কর্পোরেশন বা পৌর এলাকায় ভূমি যদি বিক্রেতার নামে আলাদা খতিয়ান বা নামজারি খতিয়ান সৃজিত হয় তবে সেক্ষেত্রে প্রিয়ামশান এর অধিকার চলে না। উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা অগ্রক্রয় সম্পর্কে মোটামুটি একটি ধারণা অর্জন করতে পারি।
লেখক : আইনজীবী, কলামিস্ট, সুশাসন ও মানবাধিকারকর্মী

No comments

Powered by Blogger.