লাকসামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবার প্রশ্নপত্র ছাড়া পরীক্ষা!
লাকসাম উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘ছুটির দিনেও পরীক্ষা’ নেওয়ার পর এবার শিক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র না দিয়ে ব্ল্যাকবোর্ডে প্রশ্ন লিখে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয়গুলো হলো কৃষ্ণপুর, দৌলতগঞ্জ, মোহামঞ্চদপুর, নুরপুর, ফুলগাঁও, গাজিমুড়া, নশরতপুুর, নরপাটি ও ইছাপুরা কেন্দ্রীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
ওই সব বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর (প্রতিটি শ্রেণীর) চারটি বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় থেকে ওই তিন শ্রেণীর জন্য প্রতি বিষয়ে মাত্র একটি করে প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা হয়। তাই শিক্ষর্থীদের প্রশ্নপত্র দেওয়া সম্ভব হয়নি। শ্রেণীকক্ষের ব্ল্যাকবোর্ডে প্রশ্ন লিখে পরীক্ষা নেওয়া হয়।
গত বৃহস্পতিবার পৌর এলাকার গাজিমুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম শ্রেণীর মোট ২৭৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। কিন্তু তাদের প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়নি। শিক্ষক শ্রেণীকক্ষের ব্ল্যাকবোর্ডে প্রশ্ন লিখে দিচ্ছেন। আর শিক্ষার্থীরা বোর্ডে লেখা প্রশ্ন দেখে উত্তরপত্রে লিখছে। একই দৃশ্য দেখা যায় উপজেলার কৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। গাজিমুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র নাইমুল হাসান, পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী সুমাইয়া তাবাস্সুম এবং তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী মায়মুনা আক্তার জানায়, তাদের প্রশ্নপত্র না দিয়ে ব্ল্যাকবোর্ডে লিখে দেওয়ায় তারা বিভ্রান্তিতে পড়েছে। প্রশ্নগুলো ঠিকভাবে বুঝতে না পারায় পরীক্ষায় ভালো করতে পারেনি তারা।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার ফি নেওয়ার পরও শিক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র সরবরাহ না করায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। গাজিমুড়া বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক মোবারক হোসেন, ওয়াহিদুর রহমান, আবদুল মালেক এবং সামছুল আলম ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিক শাহ আলম মুনির জানান, উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় থেকে ওই তিন শ্রেণীর জন্য প্রতি বিষয়ে মাত্র একটি করে প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা হয়েছে। ফলে শিক্ষর্থীদের প্রশ্নপত্র দেওয়া সম্ভব হয়নি। তাই শ্রেণীকক্ষের ব্ল্যাকবোর্ডে প্রশ্ন লিখে পরীক্ষা নিতে হয়েছে।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে লাকসাম উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আগের সময়সূচি অনুযায়ী আগস্ট মাসে অধিকাংশ বিদ্যালয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাই অভিন্ন প্রশ্নপত্রের গোপনীয়তা রক্ষায় ব্ল্যাকবোর্ডে প্রশ্ন লিখে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে।’
উপজেলার একাধিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বলেন, সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক নির্দেশনায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চলতি শিক্ষাবর্ষের ছুটির তালিকায় ১০ দিন ছুটি সংযোজন করতে বলা হয়। ওই নির্দেশনা অনুসারে ৪, ৫ ও ৬ আগস্ট, ২০ সেপ্টেম্বর এবং নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠেয় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার সময় ছয় দিনসহ মোট ১০ দিন ছুটি ঘোষণা করা হয়। অথচ ওই নির্দেশনা উপেক্ষা করে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সরকারি ছুটির দিনেও পরীক্ষা নেওয়ার জন্য উপজেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের নির্দেশ দেন। ওই সময় উপজেলার ৭৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে অধিকাংশ বিদ্যালয়ে ছুটির দিনেও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। অবশিষ্ট বিদ্যালয়গুলোতে সেই পরীক্ষা এখন নেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রেও সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্নপত্র না দিয়ে ব্ল্যাকবোর্ডে প্রশ্ন লিখে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি বিকাশ সিন্হা বলেন, ওই সময় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা উপেক্ষা করে সরকারি ছুটির দিনেও পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ায় এখন এই জটিলতা দেখা দিয়েছে।
গত ৭ আগস্ট প্রথম আলোতে ‘ছুটির দিনেও পরীক্ষা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
No comments