রাজশাহীতে আ.লীগের বৈঠক- সাংসদের ছেলেকে দিয়ে টিআর-কাবিখা বণ্টনের অভিযোগ

রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সভায় গতকাল শনিবার রাজশাহী-৩ আসনের সাংসদের বিরুদ্ধে নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে নিজের ছেলে ও শ্যালককে দিয়ে টিআর, কাবিখা বণ্টন ও থানা প্রশাসনের কাজ দখলে নেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। সভায় জেলার সাতটি মেয়াদোত্তীর্ণ সাংগঠনিক কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে।


নগরের একটি রেস্তোরাঁয় দিনব্যাপী ওই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুুব উল আলম হানিফ। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আখতার জাহান। বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক চৌধুরী, সাংসদ শাহরিয়ার আলম, কাজী আবদুল ওয়াদুদ, এনামুল হক প্রমুখ। সভায় জেলা কমিটির সদস্য ও অন্যান্য কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বক্তব্য দেন।
দলীয় সূত্র জানায়, সভায় মেয়াদোত্তীর্ণ বাঘা, চারঘাট, পুঠিয়া, পবা উপজেলা এবং গোদাগাড়ী, তাহেরপুর ও নওহাটা পৌরসভার কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। গত ২২ ও ২৩ আগস্ট বাঘা, চারঘাট, পুঠিয়া, পবা উপজেলার সাংগঠনিক সমস্যা নিরসনের জন্য জেলা আওয়ামী লীগের বৈঠক হয়। গতকাল ছিল এর শেষ দিন।
সূত্র আরও জানায়, সভায় রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লার বিরুদ্ধে মোহনপুর উপজেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুস সালাম, পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইয়াসিন আলী, বাঘা-চারঘাটের ব্যাপারে জেলা কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য দেন।
আবদুস সালাম তাঁর বক্তব্যের পাশাপাশি একটি লিখিত অভিযোগ প্রধান অতিথির হাতে তুলে দেন। এতে মেরাজ উদ্দিন মোল্লার বিরুদ্ধে ১০ দফা অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মেরাজ উদ্দিন মোল্লা নির্বাচনের সময় হলফনামায় তাঁর বার্ষিক আয় এক লাখ টাকা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে বিলাসবহুল গাড়ি কিনেছেন ও ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে বাড়ি করেছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের কর্মী ফারুক হত্যা মামলার আসামি পবা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জামায়াতের নেতা মকবুল হোসাইন গ্রেপ্তার হওয়ার পর পুলিশ কমিশনারসহ বিভিন্ন জায়গায় সাংসদ তদবির করেন। দলের নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে এলাকায় কর্মসূচি দেন। তাতে জামায়াত-বিএনপির কর্মীরা অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে গম, টিন, জাকাতের শাড়ি, সারের ডিলার, ওএমএস ডিলার, ভর্তুকির সার, ভিজিএফ কার্ড, স্কুল-কলেজের সভাপতি মনোনয়ন, শিক্ষক নিয়োগ, টিআর কাবিখা বণ্টন করেছেন সাংসদের নিজের চার ছেলে, শ্যালক ও তাঁর নিজস্ব দুই-একজন চেয়ারম্যান। একইভাবে খাস পুকুর ও জলমহাল ইজারা দিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে তাঁরা অর্থ আত্মসাৎ করছেন। ছেলে ও শ্যালকের বিরুদ্ধে স্কুল-কলেজ এমপিওর নামে প্রায় দুই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তাঁর ছেলে এবং শ্যালক অবৈধভাবে পবা ও মোহনপুর থানা ও প্রশাসনে সব কাজের দায়িত্ব নিয়ে নেন।
মাহবুুব উল আলম হানিফ বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে। সেই প্রস্তুতির জন্য আগামী দুই মাসের মধ্যে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটিগুলো গঠন করে দলকে সুসংগঠিত করা হবে।
আবু সাঈদ আল মাহমুদ সাংসদ মেরাজ উদ্দিন মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, তাঁরা (সাংসদ) যদি নিজেদের রাজা বা সম্রাট এবং দলের কর্মীদের ভৃত্য মনে করেন, তা হলে ভুল করবেন।
মেরাজ উদ্দিন মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, অভিযোগ তো নয়, কিছু ভুল বোঝাবুঝি ছিল। সেগুলো নিরসন করে সংগঠনকে গতিশীল করতে পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেসব কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে, তিন দিনের মধ্যে তাদের ২১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে মেরাজ উদ্দিন মোল্লার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। তবে তাঁর ছেলে আজাদ মোল্লা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভাই, আমি এসব বলতে পারব না।’

No comments

Powered by Blogger.