বিশেষ সাক্ষাৎকার : খন্দকার মাহবুব হোসেন-সংসদের দৈনন্দিন কার্যাবলিতে সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করতে পারেন না

সমকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি, জাতীয় সংসদের স্পিকার ও উচ্চ আদালত প্রসঙ্গে চলমান কিছু বিতর্ক নিয়ে কালের কণ্ঠের সঙ্গে কথা বলেছেন বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও বিএনপি নেতা খন্দকার মাহবুব হোসেন।


সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন মোস্তফা হোসেইন
কালের কণ্ঠ : সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারপতির একটি উক্তির পরিপ্রেক্ষিতে স্পিকারের দেওয়া রুলিং এবং পরবর্তীকালে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের আপিলের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কী?
খন্দকার মাহবুব হোসেন : বিচার বিভাগ, আইন ও প্রশাসন বিভাগ রাষ্ট্রের অঙ্গ। আমাদের সংবিধান তিনটি অঙ্গেরই ক্ষমতার পরিধি নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। গণতন্ত্র সুরক্ষিত করার জন্য তিনটি বিভাগকে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে পরিচালিত হতে হবে। কেউ যদি সীমা লঙ্ঘন করে, তাহলেই সংকট সৃষ্টি হবে। ইদানীং একজন বিচারপতির ব্যক্তিগত আচরণ ও বক্তব্য নিয়ে আমাদের জাতীয় সংসদে উত্তেজনামূলক আলোচনা হয়েছে। কেননা ওই বিচারক জাতীয় সংসদের সার্বভৌমত্বের প্রতীক স্পিকার সম্পর্কে যে অশালীন বক্তব্য দিয়েছেন, তা শুধু স্পিকারেরই অমর্যাদা ঘটায়নি, আমাদের সংসদকেও অপমানিত করেছে। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত।
কালের কণ্ঠ : এই পরিপ্রেক্ষিতে স্পিকার ও প্রধান বিচারপতির ভূমিকা কী হওয়া উচিত?
খন্দকার মাহবুব হোসেন : সংসদে উত্তেজনাপূর্ণ আলোচনার পরও স্পিকার সহনশীল মনোভাব নিয়ে গুরুত্বসহ রুলিং দিয়ে বিষয়টি প্রায় সমাপ্তি টেনে প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠিয়েছিলেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। কেননা একজন বিচারকের অসদাচরণ, অসমর্থতা কিংবা বিচারিক মনোভাবের বিপরীতে কিছু যদি তিনি করে থাকেন, তাহলে সেই বিষয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলই কিছু করার অধিকার রাখে। প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের প্রধান। আমরা আশা করেছিলাম তিনি স্পিকারের মতো সহনশীল হবেন। তিনি বিষয়টি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে পাঠানোর মাধ্যমে বিষয়টির ইতি টানতে পারতেন। দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, তিনি তা না করায় কিংবা বিলম্ব করায় বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হয়ে পড়েছে। আজকে সংসদের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নটি দেখা দিয়েছে। সংসদের কার্যাবলির ব্যাপারে বিচার বিভাগ কতটা হস্তক্ষেপ করতে পারে, তা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের অভিভাবক। সংসদ যদি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক আইন পাস করে, সুপ্রিম কোর্ট সেই আইন বাতিল করতে পারেন। তবে সংসদের দৈনন্দিন কার্যাবলিতে হস্তক্ষেপ করতে পারেন না সুপ্রিম কোর্ট।
কালের কণ্ঠ : এ ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
খন্দকার মাহবুব হোসেন : হাইকোর্ট স্পিকারের রুলিং সম্পর্কে পর্যবেক্ষণ করেছেন। সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। সরকারি নেতারা এ বিষয়ে মতামতও প্রকাশ করেছেন, যা ইতিমধ্যে প্রকাশিতও হয়েছে। বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, আইনমন্ত্রী সাংবিধানিক ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। এটা প্রশংসনীয় বলে আমি মনে করি।
কালের কণ্ঠ : এর সমাধান কিভাবে হতে পারে?
খন্দকার মাহবুব হোসেন : আশা করব, বিষয়টি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে পাঠানো হবে। স্পিকার সম্পর্কে বিচারক যে অশালীন বক্তব্য প্রদান করেছেন এবং স্পিকার বলেছেন বিচারক সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন, এর একটা সুষ্ঠু সমাধান হবে। এর সমাধান দিতে পারে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল। বিলম্বিত না করে বিষয়টির গুরুত্বসহ সম্মানজনক সমাপ্তি হওয়া দরকার। মনে রাখতে হবে, একজন বিচারকের বক্তব্য বা আচরণ নিয়ে যদি সংসদে আলোচনা হয়, তাহলে এটা ব্যক্তিগত পর্যায়ে থাকে। বিচার বিভাগ কিংবা সংসদ এ ব্যাপারে জড়িত নয়। রাষ্ট্রের দুটি অঙ্গকে এখানে যুক্ত করা উচিত নয়। আমাদের কিছু সংবাদপত্র বিষয়টিকে বিচার বিভাগ ও সংসদের মধ্যে বিতর্ক টেনে আনছে। এটা ঠিক নয়।
কালের কণ্ঠ : পাকিস্তানে এখন বিচার বিভাগ আর সংসদের মধ্যে টানাপড়েন চলছে। এখানে সে রকম কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটবে বলে মনে করেন?
খন্দকার মাহবুব হোসেন : পাকিস্তানের ঘটনা আর বাংলাদেশের ঘটনার মধ্যে মৌলিক পার্থক্য আছে। পাকিস্তানের ঘটনা সামগ্রিক বিচার বিভাগ ও সরকারের মধ্যে। রাষ্ট্রের দুটি অঙ্গই সেখানে পরস্পর মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। আমাদের এখানে তেমন নয়। এখানে একজন বিচারক স্পিকার সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, সংসদও ওই একজনেরই বিচার চেয়েছে। স্পিকার বিধান মোতাবেক যে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে, সেখানেই তিনি তা পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশে কোনোভাবেই বিচার বিভাগ আর সংসদ মুখোমুখি অবস্থানে নেই।
কালের কণ্ঠ : প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগকে পৃথক করার ক্ষেত্রে কতটা সফল হয়েছে বলে মনে করেন?
খন্দকার মাহবুব হোসেন : দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বিচার বিভাগকে প্রশাসন থেকে পৃথক করা হয়েছিল। আমরা আশা করেছিলাম বিচার বিভাগ আগের সব প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে পারবে। অন্তত রাষ্ট্র সেই ব্যবস্থা করে দেবে। আমরা আশা করেছিলাম রাজনৈতিক কিংবা প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের বাইরে থেকে সব রকম ভয়ভীতির উর্ধ্বে থেকে ন্যায়বিচার করতে পারবে; কিন্তু বিচার বিভাগকে আইনগতভাবে পৃথক করা হলেও এটা মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করার জন্য সরকারের যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত ছিল, এখন পর্যন্ত তা করা হয়নি। বর্তমান সংবিধানের আলোকে সুপ্রিম কোর্ট নিম্ন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদায়ন ও পদোন্নতির ব্যবস্থা গ্রহণের অধিকারী। এই অধিকার কার্যক্ষেত্রে বাস্তবায়নের জন্য যে জনবলের প্রয়োজন, এর জন্য যে আর্থিক শক্তি থাকার কথা, তা এখনো প্রদান করা হয়নি। সুপ্রিম কোর্ট থেকে বারবার নির্দেশনা প্রদানের পরও পৃথক সচিবালয় করা হয়নি। সচিবালয়ের মাধ্যমেই তো সারা দেশের নিম্ন আদালতের বিচারকদের কার্যাবলি, বিচারকাজে তাঁদের দক্ষতা সামগ্রিকভাবে নজরদারি করতে পারে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে; কিন্তু সেই অবস্থা আজও তৈরি হয়নি। ফলে এখনো নিম্ন আদালতের বিচারকরা আইন মন্ত্রণালয়ের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হন। তাঁরাই তাঁদের বদলি, পদোন্নয়ন ও শৃঙ্খলা বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে প্রধান বিচারপতির কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠান। এই পরিস্থিতিতে গোটা বিষয়টা দায়সারা হয়ে যায়। সরকার সেই সুযোগটি গ্রহণ করছে।
কালের কণ্ঠ : এ ক্ষেত্রে ১৯৭২ সালের সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ রক্ষাকবচ হতে পারে কি?
খন্দকার মাহবুব হোসেন : সেই অনুচ্ছেদই তো এখন বদলে ফেলা হয়েছে। আমি মনে করি, নিম্ন আদালতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করার ক্ষেত্রে ১৯৭২ সালের সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদটি পুনর্বহাল করা জরুরি। বর্তমান যে বিধান রাখা হয়েছে, তাতে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে নিম্ন আদালতকে প্রভাবমুক্ত রাখতে পারবে না। সংবিধান অনুযায়ী আমাদের রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনবিহীন কোনো কার্যক্রম করতে পারেন না। তাই বিচারকদের বিষয়টিও সর্বোচ্চ প্রশাসনিক ক্ষমতার অধিকারী প্রধানমন্ত্রীর মতামতের ভিত্তিতেই হয়ে থাকে। তাই আমি মনে করি, ১৯৭২ সালের সংবিধানে উল্লিখিত ১১৬ অনুচ্ছেদটি হুবহু পুনর্বহাল করা জরুরি।
কালের কণ্ঠ : তাহলে কি উচ্চ আদালতের বিচারকরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন না?
খন্দকার মাহবুব হোসেন : উচ্চ আদালতের বিচারকরা সাংবিধানিকভাবে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন; কিন্তু সংবিধানে যে বিধান রাখা হয়েছে, সেই বিধান অনুযায়ী দলীয়করণের সুযোগ রয়েছে। তাই বিচারক নিয়োগের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করতে আমাদের উচ্চ আদালত থেকে যে মতামত দেওয়া হয়েছে, এর আলোকে একটি বিধিমালা দরকার; যেখানে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতি সুপারিশ করার আগে ওই ব্যক্তির শিক্ষাগত যোগ্যতা, উৎকর্ষ, দক্ষতা, চারিত্রিক গুণাবলিসহ যোগ্য বিচারক হওয়ার ক্ষমতা আছে কি না তা নিশ্চিত করার সুযোগ থাকবে। নতুবা বিচার বিভাগে দলীয়করণ, সেখানে অযোগ্য ও উচ্চ বিবেকসম্পন্ন ব্যক্তির অভাব দেখা দেবে। বিচার বিভাগ চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। এ ক্ষেত্রে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থার সংকট তৈরি হবে। মানুষ সুবিচার না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত হবে। সে ক্ষেত্রে উচ্ছৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হবে। মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ায় উদ্বুদ্ধ হবে।
কালের কণ্ঠ : সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাঠামোগত দিক যথাযথ বলে মনে করেন কি?
খন্দকার মাহবুব হোসেন : আমি মনে করি, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাঠামোগত পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। কেননা বর্তমানে যে কাঠামোতে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠিত, তাতে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ পালন করতে পারছে কি না তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিতে পারে। তাই আমি মনে করি, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ঢেলে সাজানো দরকার।
কালের কণ্ঠ : সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাঠামোগত অবস্থা কেমন হওয়া দরকার বলে আপনি মনে করেন?
খন্দকার মাহবুব হোসেন : বর্তমানে প্রধান বিচারপতি এবং পরবর্তী দুজন সিনিয়র বিচারপতির সমন্বয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠিত হয়ে থাকে। তাঁদের মতামতের ওপর ভিত্তি করে রাষ্ট্রপতি বিচারকদের অযোগ্যতা এবং অক্ষমতার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকেন। আমি মনে করি, জুডিশিয়াল কাউন্সিলে সরকারি দল, বিরোধী দল ও প্রবীণ আইনজীবীদের প্রতিনিধিত্ব থাকা উচিত। তাঁরা অনেক বেশি ওয়াকিবহাল থাকেন।
কালের কণ্ঠ : দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুপরিবর্তনের জন্য দুই নেত্রীর সংলাপের প্রয়োজন। এর গুরুত্ব কতটা বলে আপনি মনে করেন?
খন্দকার মাহবুব হোসেন : আমাদের রাজনীতিতে যে অসহিষ্ণু পরিস্থিতি বিরাজ করছে, গণতন্ত্রের জন্য তা শুভ নয়। রাজনীতিতে সহিষ্ণুতা প্রয়োজন। এটা সরকারি দল ও বিরোধী দলের শীর্ষ নেতৃত্ব পর্যায়েও থাকা দরকার। ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রাখার জন্য যদি অগণতান্ত্রিক পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবে গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়বে। সরকারি দলের প্রতি বিরোধী দলের যে আস্থার অভাব, তা কাটানোর দায়িত্ব সরকারি দলের। সেই আস্থা ফিরিয়ে আনতে না পারলে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তা থেকে উত্তরণের জন্য বিশেষ করে আমাদের আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠান যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হওয়া উচিত, এ ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আলোচনা-সংলাপ প্রয়োজন। তাদের মনে রাখা প্রয়োজন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য বর্তমান সরকারি দলই আন্দোলন করেছে। তাদের চাওয়াই পূরণ করেছিল তৎকালীন বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকার। আজকে তাদের ভিন্ন ধারায় যাওয়ার যুক্তি নেই। সব বিষয়েই সংলাপ হওয়া প্রয়োজন। দেশকে সংঘাতময় পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করতে হলে সরকারি দলের উচিত হবে আলোচনায় বসা। জনগণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতিকে গ্রহণ করে নিয়েছে। তাকে বাতিল করা ঠিক হয়নি। এ প্রসঙ্গে বিদেশের একটি উদাহরণ দিতে পারি। গণতন্ত্রের সূতিকাগার গ্রিসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় নির্বাচন হচ্ছে। পাকিস্তানও একই পদ্ধতি গ্রহণের পদক্ষেপ নিচ্ছে। এসব কিন্তু আমাদের বিবেচনায় আনতে হবে।
কালের কণ্ঠ : ড. ইউনূস ও সরকারের অবস্থানকে কিভাবে দেখছেন?
খন্দকার মাহবুব হোসেন : ড. ইউনূস আমাদের বাঙালি জাতির গর্ব। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল বিজয়ের মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে বিশ্বে পরিচিত করেছেন, আর ড. ইউনূস নোবেল বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশকে পরিচিত করেছেন বিশ্বের দরবারে। ড. ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংক সেই সাফল্যের সূত্র। তার পরও গ্রামীণ ব্যাংকে কোনো ত্রুটি নেই তা বলা যাবে না। কারো কারো ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প বিষয়ে দ্বিমতও থাকতে পারে। তবে এই ব্যাংক বাংলাদেশের গ্রামীণ মহিলাদের জীবনে বিশাল অবদান রেখেছে, তা কিন্তু স্বীকার করতে হবে। মহিলাদের আত্মনির্ভরশীল হতে প্রত্যয়ী করেছে, যা আমাদের দেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে অকল্পনীয়। তাঁর এই প্রকল্প সাফল্য বয়ে আনতে পারে বলেই বিশ্বের বেশ কিছু দেশও ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তাই ড. ইউনূসকে হেয় করা হলে গোটা বাঙালি জাতিকেই হেয় করা হয়। এটা আমাদের জন্য কোনো কৃতিত্বের ব্যাপার নয়। আমি মনে করি, ড. ইউনূসের ব্যাপারে আমাদের কম কথা বলাই ভালো। সমালোচনা করার ইচ্ছা যদি আমার থাকে, তাহলে ইস্যু খুঁজে বের করা কোনো ব্যাপারই নয়।
কালের কণ্ঠ : বিশ্বব্যাংক বিষয়ে সরকারের অবস্থানকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
খন্দকার মাহবুব হোসেন : বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। আমাদের প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে; কিন্তু কারিগরি সীমাবদ্ধতা এবং আর্থিক অসংগতিও রয়েছে আমাদের। আমাদের সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে আমাদের উন্নয়নে বিশ্বব্যাংকসহ কিছু দাতা সংস্থা সহযোগিতা করে আসছে। আমাদের সীমিত সম্পদ দিয়ে আমরা বৃহৎ কোনো প্রকল্প গ্রহণ করতে পারব না। তাই আমি মনে করি, পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতা নেওয়ার বিকল্প নেই। কিছু দুর্নীতিপ্রবণকে সরিয়ে দেওয়াতে ক্ষতি কী। এখন যদি চিৎকার করা হয় যে সরকারে দুর্নীতি নেই, তাহলেও জনগণ আর বিশ্বাস করবে না। আমাদের উচিত ছিল বিশ্বব্যাংক যখন দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল, তখনই বিষয়টির সুরাহা করে ফেলা। নিজেদের সাফাই গাইতে গিয়ে আজকে পদ্মা সেতু ঝুলে গেল। আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে বিষয়টি আঘাত হিসেবে গণ্য। দুর্নীতিবাজদের আগলে রেখে কোনো উন্নয়নই সম্ভব নয়- এটা আমাদের মনে রাখতে হবে।
কালের কণ্ঠ : আপনাকে ধন্যবাদ।
খন্দকার মাহবুব হোসেন : আপনাদেরও ধন্যবাদ।

No comments

Powered by Blogger.