চরাচর-লাঠি খেলা by ফখরে আলম

যশোরের অভয়নগর উপজেলার শংকরপাশা হাই স্কুল মাঠে লোকে লোকারণ্য। রস মেলার লাঠি খেলা দেখার জন্য এসেছে সব বয়সের নারী-পুরুষ। ঢোল, বাঁশি, কাঁসর বাজছে। বাজছে লাঠিয়ালের পায়ের ঘুঙুর। পাশাপাশি চোখ রক্তজবা করে রাগি লাঠিয়াল চিৎকার করে বলছেন, সাবধান, খবরদার।


বিভিন্ন পালা-পার্বণে এই লাঠিয়ালরা নেচে নেচে মাঠের ধুলো উড়িয়ে লাঠির নানা রকম খেলা দেখিয়ে আজও দর্শকদের মনের খোরাক জোগান। এলাকার গাজীপুর গ্রামের ২০ জন লাঠিয়াল ও তাঁদের সর্দার মিজানুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলাকে সর্বস্ব করে নিয়েছেন। তাঁরা কুচি দিয়ে শাড়ি পরে পায়ে ঘুঙুর বেঁধে ঢালি ও লাঠি খেলা দেখিয়ে অন্য রকম উত্তেজনার সৃষ্টি করেন। আমিন বিশ্বাস (৫০), দুই ছেলে হাসান আলী (২৫), মিঠু বিশ্বাস (২০)-এর সঙ্গে লাঠি খেললেন। বজলু সর্দার (৪৫) শিশু বয়স থেকে লাঠি খেলছেন। তিনি দাদা বারিক সর্দারের কাছ থেকে এ খেলা শিখেছেন। তিনি পাঁচ বছরের ছেলে সালাউদ্দিনের সঙ্গেও লাঠি খেলেছেন। দুজন মিলে প্রতিপক্ষকে লাঠি দিয়ে জব্দ করে মেডেল জিতে নিয়েছেন। নবান্নে, বাংলা নববর্ষে কিংবা অন্য কোনো পালা-পার্বণে আজও দেশের কোনো কোনো এলাকায় লাঠিতে সরিষার তেল মালিশ করে লাঠিয়ালরা বাঙালির সাহসকেই তুলে ধরেন। সর্দার মিজানুর রহমান বললেন, লাঠি খেলা আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্য। যশোর, খুলনা, নড়াইল, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জেলায় আমরা লাঠি খেলেছি। টাকা আমাদের কাছে বড় নয়, লাঠি খেলার আনন্দ উত্তেজনাকেই আমরা বড় করে দেখি। আমরা সাহস নিয়ে লাঠি চালিয়ে শত্রুকে পরাজিত করে তৃপ্তি পাই।
ফখরে আলম

No comments

Powered by Blogger.