কথা সামান্যই-রাষ্ট্র ও সরকারের অঙ্গীকার এবং জনগণ by ফজলুল আলম
রাষ্ট্র ও সরকার- এই দুটি ধারণা খুবই কাছাকাছি অবস্থান করলেও দুটির মধ্যকার সম্পর্ক সব সময় পরিষ্কারভাবে সবার কাছে প্রতীয়মান হয় না। সরকার একটা মূর্ত ধারণা, এটার একটা সংবিধান অনুমোদিত গঠন আছে এবং এই গঠনে কী উপাদান থাকবে, কোন উপাদান কিভাবে আসবে, এর গতিপ্রকৃতি কী হবে- সবই ধরাছোঁয়ার মধ্যে।
অন্যপক্ষে রাষ্ট্র মূর্ত ও বিমূর্ত- দুয়েরই সমন্বয়ে গড়ে ওঠে; এর একটা ভৌগোলিক অবস্থান (মূর্ত) থাকে এবং এর প্রকৃতি অনেক মূর্ত ও বিমূর্ত উপাদান, যেমন জনগোষ্ঠী (মূর্ত), ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি (বিমূর্ত), ইতিহাস (মূর্ত ও বিমূর্ত), ভাষা (মূর্ত), ধর্ম (বিমূর্ত) ইত্যাদি নিয়ে গঠিত।
সরকার একটা ব্যবস্থাপনা পরিষদের মতো, তারা রাষ্ট্র বা দেশ চালায়; কিভাবে চালাবে তা নির্ভর করে জনগণের কাছে যে ম্যান্ডেট তারা দিয়েছে তার ওপর। শুধু যে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আসা সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ হয় তা নয়, সব ধরনের সরকারই কোনো না কোনো ম্যান্ডেট দেয়- এমনকি জোরপূর্বক ক্ষমতা দখলকারী (সামরিকসহ) স্বৈরাচার, রাজতন্ত্র, গোষ্ঠীতন্ত্র ইত্যাদি সবাই ক্ষমতায় আসার আগে বা পরে জনগণকে বলে যে আমরা দেশের ও জনগণের জন্য এসব করব। করতে যে পারবে না, তেমন কথাও অনেকে বলে- জনসমর্থনের আশায়। সবারই এক কথা- দেশের সমস্যা দূর করবে। সমস্যা কী সেটা নিয়েও মতদ্বৈধ বা মতানৈক্য থাকতে পারে, তবে বাংলাদেশের মতো দেশে সাধারণ সমস্যা কী তা রাজনৈতিক দল ও জনসাধারণ ঠিকই জানে।
তবে এসব অঙ্গীকারের পরও আরো অঙ্গীকার থেকে যায়, সেটা রাষ্ট্রের অঙ্গীকার। যে কারণে একটা রাষ্ট্র স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব লাভ করে সেই কারণগুলোও অঙ্গীকার বটে। আমি মনে করি, যে সরকার গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসবে তাকে শুরুতেই মেনে নিতে হবে যে তার প্রধান দায়িত্ব হবে রাষ্ট্রের অঙ্গীকারগুলো সমুন্নত রাখা, কোনোভাবেই সেসব থেকে বিচ্যুত না হওয়া।
বাংলাদেশের বর্তমান সরকার তাদের নির্বাচনী অঙ্গীকারের মধ্যে সাধারণ অনেক সমস্যা ছাড়া আরো কয়েকটি সমস্যার সমাধান করার অঙ্গীকার করেছে, সেসবের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটা হচ্ছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা এবং অন্যটি সংবিধান সশোধন করা। এ দুটি কাজই রাষ্ট্র-সংক্রান্ত। সরকার এ ক্ষেত্রে অঙ্গীকার করেছে যে রাষ্ট্রের ইতিহাসে কলঙ্কময় অপরাধের বিচার করবে। এ দুই কাজেই বর্তমান সরকার বিরোধী দলগুলোর কাছ থেকে প্রচণ্ড বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। কেন? এর কারণ কোথায়?
রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিমালায় কোনো ধরনের পরিবর্তন হলে একটি বা অনেক রাজনৈতিক দল সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে? সমস্যা পরিবর্তনে নয়, সমস্যা সেসব দলের চরিত্রে।
প্রধান বিরোধী দলের জোট বলেই দিয়েছে যে আগামী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে না হলে তারা অংশ নেবে না। তবে তাদের অনেকে ভুলে গেছেন যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলে দেশের অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বসহ ব্যবসায়ী ও ঋণখেলাপি এমনকি আমলা পর্যন্ত গ্রেপ্তার এড়াতে দেশ ছেড়ে পালাবেন, অনেকে অন্তরীণ হবেন ইত্যাদি। এখন জাতীয় জীবনে কলঙ্কময় আরেক অধ্যায় থেকে রাষ্ট্রকে মুক্ত করার সচেতন প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে- যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মধ্য দিয়ে। এটাকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করা যায় না, তাই বিরোধী দলগুলো দ্রুত বর্তমান সরকারের পতন ঘটাতে চায় অন্য কিছুর উসিলায়। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে বর্তমান সরকার অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে যে নির্বাচনী অঙ্গীকার করেছিল, সেসব বাস্তবায়নে নির্ভীকভাবে এগোচ্ছে। কিন্তু এসব প্রচেষ্টার সফলতা নির্ভর করবে একটা শর্ত পূরণ হলে। শর্তটা হচ্ছে, যদি তারা জনগণকে সঙ্গে পায়। জনগণকে সঙ্গে পেতে হলে জনগণের সমস্যার দিকে নজর দিতে হবে অকুণ্ঠচিত্তে এবং সে জন্য প্রয়োজন হবে অর্থের ও বাজেটে জনগণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। জনগণকে সঙ্গে পাওয়ার এই হিসাবটা অতি সহজ হলেও কেউই সে পথে এগোয় না।
মূর্ত যেটা সরকার করলেও করতে পারত তা হচ্ছে, অনুৎপাদন সেক্টরের খরচ কমিয়ে বাজেট প্রণয়ন। আমাদের সেনাবাহিনী, সীমান্ত রক্ষীবাহিনী যে চরমভাবে ব্যর্থ তা বলতে গেলে অনেক স্থানের প্রয়োজন। এই সেনাবাহিনীর পেছনে বাজেটের সবচেয়ে বড় অংশটি দিয়ে কী লাভ? জনগণের টাকায় এত বড় সেনাবাহিনী পুষে কী লাভ?
সাধারণ মানুষের জন্য 'পাবলিক এক্সপেন্ডিচারে' বা জনগণের অবস্থার উন্নতির জন্য অর্থায়ন বাজেটে অনুল্লেখযোগ্য (১৩৫৩ বিলিয়ন টাকার নন-ডেভেলপমেন্ট বাজেটে সুদ ও বিবিধই নিচ্ছে প্রায় ৩৪ শতাংশ এবং স্বাস্থ্য খাতে মাত্র .০৮ শতাংশ; ৫৬৪ বিলিয়ন টাকার ডেভেলপমেন্ট বাজেটে যানবাহন বা যোগাযোগ এবং এনার্জি বা পাওয়ারে যায় ৩৩ শতাংশ, অথচ সোশ্যাল সিকিউরিটি ও ওয়েলফেয়ারে মাত্র ৪.৫ শতাংশ)। যদি যথাযথভাবে বাংলাদেশের 'জনগণের বাজেট' প্রণয়ন করা হতো, তাহলে রাস্তাঘাট, নিম্নবিত্তের জন্য বাড়িঘর, দোকানপাট, পয়োপ্রণালি, পরিষ্কার পানি বিতরণ, বিদ্যুৎ ও গ্যাস ঘাটতি, কড়াকড়িভাবে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, বেকারভাতা, বয়স্কভাতা, গণপরিবহনের আইনকানুন যথাযথভাবে প্রয়োগ ইত্যাদির জন্য যে অর্থের প্রয়োজন, তা সহজেই মিলে যেত।
বাজেটে যা দেখানো হচ্ছে তা আসলেই মনগড়া কি না সে সম্পর্কে কারো সন্দেহ থাকলে তা অমূলক বলা যাবে না। আসলে আমাদের কোনো সরকারই পুরোপুরি জনগণের জন্য নিবেদিত নয়।
লেখক-অর্থনীতিবিদরা বিভিন্ন সময় আমাদের জাতীয় কতগুলো বিষয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরেন; কিন্তু সেসব শেষ পর্যন্ত 'একাডেমিক এক্সারসাইজে' পরিণত হয়। আসলে এ বাজেটে কোনো ক্ষেত্রেই স্বনির্ভরতার কোনো পরিকল্পনা নেই। ঘাটতি বাজেট ও বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের কাছে হাত পাতার ফন্দি করা বাজেট- ঋণ শোধ করতেই সব রাজস্ব শেষ হওয়ার কথা। এর পরও ক্ষমতায় থাকা দল ও বিরোধী দলের রাজকীয় চলন-বলনে কোনো খরচ কমানোর কথা আমরা আজ পর্যন্ত শুনেছি কি?
জনগণের কথা ভেবেই সরকার নির্বাচনী অঙ্গীকার করে, এর ওপর তাদের মাথায় আছে রাষ্ট্রের অঙ্গীকারগুলো। দুটো অঙ্গীকারই এক জায়গায় মিলতে হয়। এই মেলানো সম্ভব হয় যদি সরকার জনগণের স্বার্থকে সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দেয়। জনগণকে গুরুত্ব না দিলে ও তাদের স্বার্থ রক্ষাকে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ না মনে করলে গণতান্ত্রিক সরকার এসে অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডই করতে থাকবে।
লেখক : কথাসাহিত্যিক ও সংস্কৃতিবিষয়ক গবেষক
সরকার একটা ব্যবস্থাপনা পরিষদের মতো, তারা রাষ্ট্র বা দেশ চালায়; কিভাবে চালাবে তা নির্ভর করে জনগণের কাছে যে ম্যান্ডেট তারা দিয়েছে তার ওপর। শুধু যে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আসা সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ হয় তা নয়, সব ধরনের সরকারই কোনো না কোনো ম্যান্ডেট দেয়- এমনকি জোরপূর্বক ক্ষমতা দখলকারী (সামরিকসহ) স্বৈরাচার, রাজতন্ত্র, গোষ্ঠীতন্ত্র ইত্যাদি সবাই ক্ষমতায় আসার আগে বা পরে জনগণকে বলে যে আমরা দেশের ও জনগণের জন্য এসব করব। করতে যে পারবে না, তেমন কথাও অনেকে বলে- জনসমর্থনের আশায়। সবারই এক কথা- দেশের সমস্যা দূর করবে। সমস্যা কী সেটা নিয়েও মতদ্বৈধ বা মতানৈক্য থাকতে পারে, তবে বাংলাদেশের মতো দেশে সাধারণ সমস্যা কী তা রাজনৈতিক দল ও জনসাধারণ ঠিকই জানে।
তবে এসব অঙ্গীকারের পরও আরো অঙ্গীকার থেকে যায়, সেটা রাষ্ট্রের অঙ্গীকার। যে কারণে একটা রাষ্ট্র স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব লাভ করে সেই কারণগুলোও অঙ্গীকার বটে। আমি মনে করি, যে সরকার গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসবে তাকে শুরুতেই মেনে নিতে হবে যে তার প্রধান দায়িত্ব হবে রাষ্ট্রের অঙ্গীকারগুলো সমুন্নত রাখা, কোনোভাবেই সেসব থেকে বিচ্যুত না হওয়া।
বাংলাদেশের বর্তমান সরকার তাদের নির্বাচনী অঙ্গীকারের মধ্যে সাধারণ অনেক সমস্যা ছাড়া আরো কয়েকটি সমস্যার সমাধান করার অঙ্গীকার করেছে, সেসবের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটা হচ্ছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা এবং অন্যটি সংবিধান সশোধন করা। এ দুটি কাজই রাষ্ট্র-সংক্রান্ত। সরকার এ ক্ষেত্রে অঙ্গীকার করেছে যে রাষ্ট্রের ইতিহাসে কলঙ্কময় অপরাধের বিচার করবে। এ দুই কাজেই বর্তমান সরকার বিরোধী দলগুলোর কাছ থেকে প্রচণ্ড বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। কেন? এর কারণ কোথায়?
রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিমালায় কোনো ধরনের পরিবর্তন হলে একটি বা অনেক রাজনৈতিক দল সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে? সমস্যা পরিবর্তনে নয়, সমস্যা সেসব দলের চরিত্রে।
প্রধান বিরোধী দলের জোট বলেই দিয়েছে যে আগামী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে না হলে তারা অংশ নেবে না। তবে তাদের অনেকে ভুলে গেছেন যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলে দেশের অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বসহ ব্যবসায়ী ও ঋণখেলাপি এমনকি আমলা পর্যন্ত গ্রেপ্তার এড়াতে দেশ ছেড়ে পালাবেন, অনেকে অন্তরীণ হবেন ইত্যাদি। এখন জাতীয় জীবনে কলঙ্কময় আরেক অধ্যায় থেকে রাষ্ট্রকে মুক্ত করার সচেতন প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে- যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মধ্য দিয়ে। এটাকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করা যায় না, তাই বিরোধী দলগুলো দ্রুত বর্তমান সরকারের পতন ঘটাতে চায় অন্য কিছুর উসিলায়। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে বর্তমান সরকার অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে যে নির্বাচনী অঙ্গীকার করেছিল, সেসব বাস্তবায়নে নির্ভীকভাবে এগোচ্ছে। কিন্তু এসব প্রচেষ্টার সফলতা নির্ভর করবে একটা শর্ত পূরণ হলে। শর্তটা হচ্ছে, যদি তারা জনগণকে সঙ্গে পায়। জনগণকে সঙ্গে পেতে হলে জনগণের সমস্যার দিকে নজর দিতে হবে অকুণ্ঠচিত্তে এবং সে জন্য প্রয়োজন হবে অর্থের ও বাজেটে জনগণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। জনগণকে সঙ্গে পাওয়ার এই হিসাবটা অতি সহজ হলেও কেউই সে পথে এগোয় না।
মূর্ত যেটা সরকার করলেও করতে পারত তা হচ্ছে, অনুৎপাদন সেক্টরের খরচ কমিয়ে বাজেট প্রণয়ন। আমাদের সেনাবাহিনী, সীমান্ত রক্ষীবাহিনী যে চরমভাবে ব্যর্থ তা বলতে গেলে অনেক স্থানের প্রয়োজন। এই সেনাবাহিনীর পেছনে বাজেটের সবচেয়ে বড় অংশটি দিয়ে কী লাভ? জনগণের টাকায় এত বড় সেনাবাহিনী পুষে কী লাভ?
সাধারণ মানুষের জন্য 'পাবলিক এক্সপেন্ডিচারে' বা জনগণের অবস্থার উন্নতির জন্য অর্থায়ন বাজেটে অনুল্লেখযোগ্য (১৩৫৩ বিলিয়ন টাকার নন-ডেভেলপমেন্ট বাজেটে সুদ ও বিবিধই নিচ্ছে প্রায় ৩৪ শতাংশ এবং স্বাস্থ্য খাতে মাত্র .০৮ শতাংশ; ৫৬৪ বিলিয়ন টাকার ডেভেলপমেন্ট বাজেটে যানবাহন বা যোগাযোগ এবং এনার্জি বা পাওয়ারে যায় ৩৩ শতাংশ, অথচ সোশ্যাল সিকিউরিটি ও ওয়েলফেয়ারে মাত্র ৪.৫ শতাংশ)। যদি যথাযথভাবে বাংলাদেশের 'জনগণের বাজেট' প্রণয়ন করা হতো, তাহলে রাস্তাঘাট, নিম্নবিত্তের জন্য বাড়িঘর, দোকানপাট, পয়োপ্রণালি, পরিষ্কার পানি বিতরণ, বিদ্যুৎ ও গ্যাস ঘাটতি, কড়াকড়িভাবে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, বেকারভাতা, বয়স্কভাতা, গণপরিবহনের আইনকানুন যথাযথভাবে প্রয়োগ ইত্যাদির জন্য যে অর্থের প্রয়োজন, তা সহজেই মিলে যেত।
বাজেটে যা দেখানো হচ্ছে তা আসলেই মনগড়া কি না সে সম্পর্কে কারো সন্দেহ থাকলে তা অমূলক বলা যাবে না। আসলে আমাদের কোনো সরকারই পুরোপুরি জনগণের জন্য নিবেদিত নয়।
লেখক-অর্থনীতিবিদরা বিভিন্ন সময় আমাদের জাতীয় কতগুলো বিষয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরেন; কিন্তু সেসব শেষ পর্যন্ত 'একাডেমিক এক্সারসাইজে' পরিণত হয়। আসলে এ বাজেটে কোনো ক্ষেত্রেই স্বনির্ভরতার কোনো পরিকল্পনা নেই। ঘাটতি বাজেট ও বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের কাছে হাত পাতার ফন্দি করা বাজেট- ঋণ শোধ করতেই সব রাজস্ব শেষ হওয়ার কথা। এর পরও ক্ষমতায় থাকা দল ও বিরোধী দলের রাজকীয় চলন-বলনে কোনো খরচ কমানোর কথা আমরা আজ পর্যন্ত শুনেছি কি?
জনগণের কথা ভেবেই সরকার নির্বাচনী অঙ্গীকার করে, এর ওপর তাদের মাথায় আছে রাষ্ট্রের অঙ্গীকারগুলো। দুটো অঙ্গীকারই এক জায়গায় মিলতে হয়। এই মেলানো সম্ভব হয় যদি সরকার জনগণের স্বার্থকে সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দেয়। জনগণকে গুরুত্ব না দিলে ও তাদের স্বার্থ রক্ষাকে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ না মনে করলে গণতান্ত্রিক সরকার এসে অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডই করতে থাকবে।
লেখক : কথাসাহিত্যিক ও সংস্কৃতিবিষয়ক গবেষক
No comments