জামায়াতের আসল চেহারা

একাত্তরে পাক হানাদার বাহিনীর সহযোগী জামায়াত যে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে সে কথা জাতি এখনও বিস্মৃত হয়নি। জামায়াতের সেই আসল চেহারা সম্প্রতি আবার উন্মোচিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার একটি মসজিদ নির্মাণকে কেন্দ্র করে জামায়াতের ইন্ধনে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলা পল্লীতে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালানো


হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে। হামলাকালে মারপিট, লুটপাত, অগ্নিসংযোগ ও শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে। জামায়াত নেতার সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের উস্কানিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর এই হামলাকে অনেকেই মুক্তিযুদ্ধকালে হানাদার বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এসব ঘটনায় ১৬ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জানা গেছে, জেলা জামায়াতের সাবেক আমির ও চিরিরবন্দর উপজেলা চেয়ারম্যানের উস্কানিমূলক বক্তব্যের পর সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরের ওপর হামলা চালানো হয়। হামলাকারীর মধ্যে অনেকে সরাসরি জামায়াত ও শিবিরের সঙ্গে জড়িত। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ১৪৪ ধারা জারি করে। এ ছাড়া বিপুলসংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যকে মোতায়েন করা হয়। কিন্তু এরপরও ওই সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর কয়েক দফা হামলা চালানো হয়। প্রশাসন শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে এলাকায় নির্মাণ কাজ আপাতত বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করেছে। এছাড়া নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা হিসাবে সংশ্লিষ্ট এলাকায় একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়েছে।
এখন দেশে একাত্তরের কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া এগিয়ে চলেছে। ৭৫ পরবর্তী সামরিক স্বৈরাচারীদের পৃষ্ঠপোষকতায় জামায়াত বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুুনর্বাসিত হয়েছে। এরা সাম্প্রদায়িক রাজনীতির মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চাই। এছাড়া কট্টরপন্থী সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে এদের ঘনিষ্ঠ সংযোগের কথা বহুবার প্রমাণিত হয়েছে। পত্রপত্রিকায় এ নিয়ে বহুবার রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।
একাত্তরের সেই পরাজিত শক্তি জামায়াত যেন এখন পুনরায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এদের মূল উদ্দেশ্য একাত্তরের ঘাতক দালালদের বিচার প্রক্রিয়া নস্যাত করা। দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে জামায়াতের উস্কানিতে সংখ্যালঘুদের ওপর যে বর্বরোচিত হামলা চালানো হয়েছেÑ একে ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। অনেকেরই ধারণা, এর মধ্য দিয়ে জামায়াত দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক শান্তি বিনষ্ট করতে চায়। সেই সঙ্গে দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করাও তাদের অন্যতম লক্ষ্য। দেশের সর্বত্র জামায়াতের অপতৎপরতা মোকাবিলায় সতর্কাবস্থা অপরিহার্য। জামায়াতের আসল চেহারা বেরিয়ে পড়েছে। এখন দরকার এদের অপতৎপরতা রোধ করা। দেশের শান্তি ও স্বাধীনতার স্বার্থে তা করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.