শ্রাবণেও বৃষ্টিহীন বেড়া বিপাকে মৎস্যচাষিরা by বরুন রায়

চলতি বর্ষাকালে পাবনার বেড়া উপজেলায় বৃষ্টির দেখা নেই। উপজেলার বিভিন্ন পুকুর ও জলাশয় পানিশূন্য। পানির অভাবে মাছ মারা যাচ্ছে এবং স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন উপজেলার মৎস্য ব্যবসায়ীরা।


উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এবং মৎস্যচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃষ্টির অভাবে বেশির ভাগ পুকুরেই পানি নেই। কোনো কোনো পুকুরে পানি যেটুকু রয়েছে তা মৎস্য চাষের জন্য পর্যাপ্ত নয়। কিছুদিন আগে সামান্য বৃষ্টির দেখা পেয়ে কিছু পুকুরে পোনা ছাড়া হয়েছিল। কিন্তু এরপর আর বৃষ্টি না হওয়ায় সেসব পুকুরের পানি শুকিয়ে গেছে। এরই মধ্যে পুকুরগুলোর কিছু পোনা মারা গেছে। যেগুলো বেঁচে আছে সেগুলোর বৃদ্ধিও স্বাভাবিক নয়। অনেক মৎস্যচাষি সেচযন্ত্রের মাধ্যমে পুকুরে পানি সরবরাহ করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে খরচ বাড়লেও কার্যকর ফল পাওয়া যাচ্ছে না।
উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বেড়ায় দুই হাজার ৯৭০টি পুকুর রয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে পুকুরগুলো শুকিয়ে যায়। সাধারণত মে মাস থেকে এসব পুকুরে পোনা মাছ ছাড়া শুরু হয়। কিন্তু চলতি বর্ষাকালে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বেশ কিছু পুকুরে এখনো পোনা ছাড়া হয়নি।
বেড়া পৌর এলাকার মৈত্রবাঁধা মহল্লার মৎস্যচাষি শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘মাসখানেক আগে সামান্য বৃষ্টিপাত হয়। পুকুরে অল্প পরিমাণে পানি জমলে আশা নিয়ে কিছু পোনা ছেড়েছিলাম। কিন্তু পরে আর আশানুরূপ বৃষ্টি হয়নি। পুকুরের পানি শুকিয়ে গেছে। এ অবস্থায় পোনাগুলো বাড়ছে না, এরই মধ্যে বেশ কিছু পোনা মরে গেছে।’
দক্ষিণপাড়া মহল্লার মৎস্যচাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, আড়াই লাখ টাকায় তিনটি পুকুর ইজারা নিয়ে তাতে প্রায় আড়াই লাখ টাকার পোনা ছেড়েছিলেন তিনি। পানির অভাবে বেশির ভাগ পোনা এরই মধ্যে মারা গেছে। বাকি মাছের অবস্থাও ভালো না। এবার লাভ তো দূরের কথা, কমপক্ষে তিন লাখ টাকা লোকসান হবে বলে মনে হচ্ছে।
সুজানগর উপজেলার নাজিরগঞ্জ গ্রামের হ্যাচারি মালিক মানিক হোসেন বেড়া ও সুজানগর উপজেলার বিভিন্ন পুকুরে পোনা সরবরাহ করেন। তিনি বলেন, পুকুরে সেচ দিয়ে কোনো রকমে পোনা উৎপাদন করে যাচ্ছেন। কিন্তু বেড়া-সুজানগরের পুকুরগুলোতে পানি না থাকায় এবার পোনার চাহিদা কম। পানির অভাবে তিনি তাঁর নিজের দুটি পুকুরেও মাছ ছাড়তে পারেননি।
বেড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টি না হওয়ায় উপজেলার মৎস্যচাষিরা চরম দুরবস্থার মধ্যে রয়েছেন। বিশেষ করে হ্যাচারিগুলোতে পানির অভাবে রেণুপোনা উৎপাদন করা যাচ্ছে না। এ অবস্থা আর কিছুদিন অব্যাহত থাকলে পুকুরগুলো থেকে স্বাভাবিক উৎপাদনের অর্ধেক মাছও মিলবে না।

No comments

Powered by Blogger.