গানে নাটকে আলোচনায় পালিত হলো বাইশে শ্রাবণ

বাংলা পঞ্জিকার হিসেবে সোমবার বাইশে শ্রাবণ ছিল বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবস। আর তাই তো সব বাঙালীর কাছে দিনটির ছিল বিশেষ গুরুত্ব। কোন না কোনভাবে বাঙালী স্মরণ করেছে তাদের মননের এই সঙ্গীকে। ব্যক্তিগতভাবে কেউ তাঁর গান শুনে কিংবা কবিতা পড়ে স্মরণ করেছে বিশ্বকবিকে।


দিনটিতে বাংলা ভাষী জনগোষ্ঠীর শিল্প ও সংস্কৃতির বাতিঘর কবিগুরুর ৭১তম মৃত্যুবার্ষিকী নানাভাবে উদ্যাপিত হয়েছে। তবে এবার রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুবার্ষিকীর দিনটি রোজার মধ্যে হওয়ায় সাংগঠনিক আয়োজনের ব্যাপকতা তেমন একটা ছিল না। পত্রপত্রিকা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কবিগুরুর মৃত্যুবার্ষিকীর সংবাদ ছেপেছে। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে দিনভর ছিল রবীন্দ্রনাথের গান কিংবা নাটক নিয়ে নানা আয়োজন। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কবিগুরুর প্রয়াণ দিবসে বাংলা একাডেমী একক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আগামী শুক্রবার সকালে কবিকে স্মরণ করতে ছায়ানটের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। বাংলা একাডেমীর পক্ষ থেকে সোমবার বিকেলে একাডেমীর সেমিনার কক্ষে একক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে রবীন্দ্রনাথের নাটকে তিন নারী শীর্ষক বক্তৃতা করেন পররাষ্ট্র সচিব ও শিল্প-সমালোচক মিজারুল কায়েস। স্বাগত ভাষণ দেন একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমীর সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
একক বক্তৃতায় মিজারুল কায়েস বলেন, নারী-অধিকার তথা মানবাধিকারের মৌল প্রত্যয়সমূহ রবীন্দ্রসৃষ্টিতে ভিন্ন মাত্রায় প্রতিভাসিত। নারীকে তিনি স্বাধিকার প্রমত্ততার কেন্দ্রে প্রতিস্থাপন করেছেন পাশ্চাত্যে নারী অধিকার স্বীকৃতির বহু আগেই। শ্যামা, চিত্রাঙ্গদা ও চ-ালিকা শীর্ষক তিনটি নৃত্যনাট্যে তিনি নারীমুক্তির ক্ষেত্রে নতুন বিপ্লব সাধন করেছেন। নারীকে তিনি অধিষ্ঠিত করেছেন লিঙ্গনিরপেক্ষ নায়কের আসনে। ঘোষিত নারীবাদী না হয়েও নাটক ও অন্যান্য রচনায় নারীর যে মূল্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন তার দৃষ্টান্ত সমকালেও বিরল। প্রেম ও কর্মশক্তির সমন্বয়ে নারীর ভেতর কল্যাণী রূপের সন্ধান করেছেন রবীন্দ্রনাথ। আর রবীন্দ্র নৃত্যনাট্যে আমরা প্রকৃতির সমান্তরালে নারী মুক্তির নব আবাহন খুঁজে পাই। প্রকৃতির প্রশস্ত বিস্তারের ভেতর তিনি নারীর মহিমা অনুধাবন করতে চাইলেও সমাজ-রাজনৈতিক প্রেক্ষিতবিবর্জিত নয় তাঁর নারী ভাবনা। তিনি বলেন, অস্পৃশ্যতা ও জাত-পাতের ভেদকে রবীন্দ্র-নায়িকারা তুচ্ছ জ্ঞান করে মহামানবিকতার বৈজয়ন্তী উড়িয়েছে।
সভাপতির ভাষণে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, জীবনের নানা প্রান্তে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নারীভাবনা বিবর্তিত হয়েছে তবে সবসময়ই নারীর ভেতরে তিনি অজেয় মানব সম্ভাবনার সৌন্দর্য অন্বেষণ করেছেন। প্রাগ্রসর নারী-ভাবনার জন্য সমকালে তাঁকে অবমাননার স্বীকার হতে হয়েছে। তবু তিনি একের পর এক সৃষ্টিতে নারী তথা বৃহৎ বিশ্বমানবেরই বিজয় গান গেয়ে গেছেন।
স্বাগত বক্তব্যে শামসুজ্জামান খান বলেন, বাংলা একাডেমী রবীন্দ্রচর্চার নতুন ক্ষেত্র তৈরি করছে। সার্ধশততম রবীন্দ্র জন্মবর্ষ উপলক্ষে এ-বছরের সেপ্টেম্বর নাগাদ রবীন্দ্র-বিষয়ক তিরিশটি বই প্রকাশিত হতে চলেছে। একটি প্রামাণ্য রবীন্দ্রজীবনী প্রকাশের উদ্যোগও আমরা গ্রহণ করেছি। যার মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথের জীবন ও সৃষ্টির বিচিত্র মাত্রা আবিষ্কার করা সম্ভব হবে।
আলোচনার পর ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে একক কণ্ঠে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী সাদী মহম্মদ, মানসী সাধু প্রমুখ। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন ইফতেখার আলম প্রধান, আলমাস আলী, গাজী আবদুল হাকিম ও নাজমুল আলম খান।

No comments

Powered by Blogger.