ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক- যৌথতার কোনো বিকল্প নেই by কুলদীপ নায়ার
পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ইসলামাবাদ সফরে যাওয়ার বিষয়টিকে ক্রমেই আরও বেশি কঠিন করে তুলছে। তিনি তাঁর সফরের আগ্রহ চেপে রাখার চেষ্টা করছেন না; সম্প্রতি তিনি বলেছেন যে, তিনি পাকিস্তান সফরে যাওয়ার জন্য সাগ্রহে অপেক্ষা করছেন; তবে আশা করছেন, তার আগে বিভিন্ন পর্যায়ের যেসব সংলাপ হচ্ছে সেগুলোর কিছু ফলও তিনি প্রত্যাশা করছেন।
এমনকি তিনি আশা করছেন, সুনির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য দুই পক্ষের মধ্যে সংলাপ আরও জোরালো হবে। এ রকম অবস্থায় খবর এল, মুম্বাই হামলা (২৬ নভেম্বর ২০০৮) সম্পর্কে ইসলামাবাদের বিচার বিভাগীয় কমিশনের প্রতিবেদনটি পাকিস্তানের আদালত “অবৈধ” বলে বাতিল করে দিয়েছে। মনমোহন সিংয়ের কাছে এটি একটি অপ্রত্যাশিত দুঃসংবাদ।
এটা ঠিক যে, প্রতিবেদনটিতে কতগুলো মৌলিক ত্রুটি রয়েছে, কারণ বিচার বিভাগীয় কমিশনটি ভারতে এলেও সাক্ষীদের কখনো সওয়াল-জওয়াব করেনি। ব্রিটিশদের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে যে আইনশাস্ত্র ভারত ও পাকিস্তান পেয়েছে, তাতে বলা আছে, সওয়াল-জওয়াব ছাড়া কোনো সাক্ষ্যই গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু পুরো বিষয়টি অদ্ভুত লাগছে এ কারণে যে, এ ব্যাপারে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে আগেই একটা সমঝোতা হয়েছিল। পাকিস্তান আগেই বলেছিল, তাদের বিচার বিভাগীয় কমিশন সাক্ষীদের সওয়াল-জওয়াব করবে না। উভয় পক্ষই জানত যে তারা আইনকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে, তবু এ বিষয়ে তারা সামনে এগিয়ে গেছে। এখন পাকিস্তান পেছনে ফিরে গিয়ে বলতে পারে না যে, সাক্ষীদের অবশ্যই সওয়াল-জওয়াব করতে হবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এভাবে আমরা কোন দিকে যাচ্ছি? পাকিস্তানের আদালতের রায়ে প্রতিবেদনটি বাতিল ঘোষিত হওয়ার খবরে ভারতের জনগণের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। পাকিস্তানের ১১ সদস্যবিশিষ্ট বিচার বিভাগীয় কমিশনের একটা ব্যাখ্যা দেওয়া কর্তব্য। হয় তারা নিখরচা একটা সংক্ষিপ্ত আনন্দভ্রমণে এসেছিল অথবা ভারত ও আমেরিকার চাপের মুখে ইসলামাবাদ তাদের অনুরোধ করেছিল বলে তারা স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা রক্ষা করতে চেয়েছিল।
তাৎক্ষণিক ফলটা হলো, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং সম্ভবত এ বছর আর পাকিস্তান সফরে যাচ্ছেন না। এমনকি সামনের বছরও যে যাবেন, সেটাও ভাবাও বেশ কঠিন। কারণ ২০১৪ সালের মার্চ-এপ্রিলে সাধারণ নির্বাচন, তার আগে প্রধানমন্ত্রীর হাতে সময় থাকবে অল্পই। তারপর যখন নতুন সরকার আসবে, তখন কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে তা এখন বলা আরও কঠিন। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত যে, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে আগ্রহী মনমোহন সিং তখন আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন না।
মুম্বাই হামলার সঙ্গে পাকিস্তান সরকারের সংশ্লিষ্টতা ছিল কি না, অথবা পুরো হামলাটি পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন আইএসআই করেছিল কি না, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার আমি কেউ নই। কিন্তু একদম শুরু থেকেই বিষয়টি নিয়ে ইসলামাবাদ যা করেছে, তাতে অনেক সন্দেহের উদ্রেগ ঘটে। এমনকি, হামলাটি যে পাকিস্তানের মাটি থেকেই পরিচালনা করা হয়েছিল—এই সত্যটাও অস্বীকার করা হয়েছে। আরও অজস্র বিষয় পাকিস্তান অস্বীকার করেছে, যার ফলে ভারতীয় লোকজনের মধ্যে ক্ষোভ কেবলই বেড়েছে এবং দুই দেশের সম্পর্ক আরও জট পাকিয়ে গেছে।
আর নয়াদিল্লি যে ব্যক্তিকে মুম্বাই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী বলে মনে করে, সেই হাফিজ সাইদ ভারতের বিরুদ্ধে জিহাদের ঘোষণা দিয়ে সারা পাকিস্তান দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। ইসলামাবাদ যত তাঁর বাগাড়ম্বর বন্ধ করার উদ্যোগ নেবে, মুম্বাই হামলার মামলার অগ্রগতির ক্ষেত্রে ততই সুবিধা হবে। একদম শুরুতেই হামলার ব্যাপারে একটা যৌথ তদন্ত উদ্যোগের ঘোষণা দেওয়া হতো, তাহলে ভারতীয় লোকজনের মধ্যে ক্ষোভ অনেকটাই প্রশমিত হতে পারত। এখনো পাকিস্তান সরকারের উচিত তার সাধ্য অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া, কারণ দুই দেশের মধ্যকার সুসম্পর্কের ক্ষেত্রে আস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মুম্বাই হামলার ব্যাপারে পাকিস্তান সরকার যদি গড়িমসি করেই চলে, তাহলে সেই আস্থা গড়ে উঠবে না।
তবে অতীত ও বর্তমানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য আছে; দুই দেশের মধ্যকার বৈরিতা এখন আর আগের মতো তীব্র নেই। ১৯৪৭ সালের আগস্টে ভারত বিভাগের সেই মুহূর্ত পেরিয়ে আমরা অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি। তাই বিচার বিভাগীয় কমিশনের ব্যর্থতার মতো কিছু সমস্যা থাকা সত্ত্বেও দুই দেশের সম্পর্ক বিষাক্ত হয়নি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণা ইসলামাবাদের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথাটি রক্ষা করেছেন।
উভয় দেশের জনগণই সম্পর্ক স্বাভাবিক করার দাবি জানাচ্ছে; যদিও কেউ কেউ অতীতের ক্ষোভ বয়ে চলেছে। ক্রিকেট সিরিজ আবার শুরু হওয়া থেকে এই ইঙ্গিতই পাওয়া যায় যে, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে এ পর্যন্ত যেটুকু অগ্রগতিই হয়ে থাকুক না কেন, নয়াদিল্লি তা হারাতে চায় না। সুনীল গাভাস্কারের মতো ক্রীড়া ব্যক্তিত্বসহ খেলোয়াড়েরা ক্রিকেট সিরিজ বাতিল করার দাবি জানিয়েছিলেন, কিন্তু নয়াদিল্লি প্রমাণ করেছে যে, পথের এসব ছোটখাটো বাধায় সে হতাশ নয়। দুই দেশের পরররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকের কথাই ধরা যাক। যদিও বৈঠকে অগ্রগতি হয়েছে সামান্যই, তবু তাঁরা সব বিষয়েই আলোচনা করেছেন, এমনকি আলোচ্যসূচিতে ছিল না এমন বিষয়ও তাঁদের আলোচনায় এসেছে।
ভবিষ্যতের অনেক কিছুই নির্ভর করছে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে কী ঘটে তার ওপর। একটি পরিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হয়ে উঠতে পাকিস্তানকে এখনো অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। দেশটির সামরিক বাহিনীর প্রতাপ কিছু কমেছে, কিন্তু এখনো তারাই অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ করে। সরকার ও বিচার বিভাগ যেন যুদ্ধক্ষেত্রে পরস্পরের মুখোমুখি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তাঁর পদে কতদিন টিকবেন কেউ জানে না। সামনে কয়েক মাস পরই নির্বাচন, তারপর কী ধরনের জাতীয় পরিষদ আসবে তা নির্ভর করছে সামরিক বাহিনীর ইচ্ছার ওপর। ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিক হয়ে ওঠা ইমরান খানের আকস্মিক জনপ্রিয়তা এখন মিইয়ে এসেছে; তার পরও তিনি বড় নেতা হয়ে বেরিয়ে আসবেন কি না, সেটাও নির্ভর করবে সামরিক বাহিনীর ওপরই।
পাকিস্তানের জন্য তালেবান ততটা বিপজ্জনক নয়, যতটা বিপজ্জনক সেসব ইসলামি জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী, যারা দেশটির অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত দুরবস্থায় পর্যুদস্ত মানুষের মগজ ধোলাই করছে, যেসব মানুষ তাদের মধ্যে ত্রাণকর্তাদের দেখতে পাচ্ছে। তালেবানদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সম্মিলিত বাহিনী যে হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসলীলা চালিয়েছে, সেই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে যেতে তালেবান কিছু শিক্ষাও নিয়েছে। তালেবান এখন নিজের ভাবমূর্তিরও পরিবর্তন চায়, কারণ ২০১৪ সালে আফগানিস্তান থেকে বিদেশি বাহিনী প্রত্যাহার শুরু হওয়ার সেই দেশে তারা রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদকে ভাবতে হবে যৌথভাবে। আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব ও স্থিতিশীলতায় উভয় দেশেরই স্বার্থ রয়েছে। আফগানিস্তান নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন শক্তি দেনদরবার করে, সম্মেলন ডাকে, আর সেসব সম্মেলনে যোগ দেয় ভারত ও পাকিস্তান। অথচ ভারত আর পাকিস্তানই এ ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা পালন করতে পারত, তারাই যৌথভাবে হতে পারত প্রধান উদ্যোক্তা। এটা একটা দুঃখের বিষয় যে, ভারত ও পাকিস্তান আফগানিস্তান নিয়ে অন্যান্য শক্তির ডাকা সম্মেলনে যোগ দেয়, কিন্তু নিজেরা আলাদাভাবে আলোচনায় বসে না।
ইংরেজি থেকে অনূদিত
কুলদীপ নায়ার: ভারতের সাংবাদিক।
এটা ঠিক যে, প্রতিবেদনটিতে কতগুলো মৌলিক ত্রুটি রয়েছে, কারণ বিচার বিভাগীয় কমিশনটি ভারতে এলেও সাক্ষীদের কখনো সওয়াল-জওয়াব করেনি। ব্রিটিশদের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে যে আইনশাস্ত্র ভারত ও পাকিস্তান পেয়েছে, তাতে বলা আছে, সওয়াল-জওয়াব ছাড়া কোনো সাক্ষ্যই গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু পুরো বিষয়টি অদ্ভুত লাগছে এ কারণে যে, এ ব্যাপারে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে আগেই একটা সমঝোতা হয়েছিল। পাকিস্তান আগেই বলেছিল, তাদের বিচার বিভাগীয় কমিশন সাক্ষীদের সওয়াল-জওয়াব করবে না। উভয় পক্ষই জানত যে তারা আইনকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে, তবু এ বিষয়ে তারা সামনে এগিয়ে গেছে। এখন পাকিস্তান পেছনে ফিরে গিয়ে বলতে পারে না যে, সাক্ষীদের অবশ্যই সওয়াল-জওয়াব করতে হবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এভাবে আমরা কোন দিকে যাচ্ছি? পাকিস্তানের আদালতের রায়ে প্রতিবেদনটি বাতিল ঘোষিত হওয়ার খবরে ভারতের জনগণের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। পাকিস্তানের ১১ সদস্যবিশিষ্ট বিচার বিভাগীয় কমিশনের একটা ব্যাখ্যা দেওয়া কর্তব্য। হয় তারা নিখরচা একটা সংক্ষিপ্ত আনন্দভ্রমণে এসেছিল অথবা ভারত ও আমেরিকার চাপের মুখে ইসলামাবাদ তাদের অনুরোধ করেছিল বলে তারা স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা রক্ষা করতে চেয়েছিল।
তাৎক্ষণিক ফলটা হলো, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং সম্ভবত এ বছর আর পাকিস্তান সফরে যাচ্ছেন না। এমনকি সামনের বছরও যে যাবেন, সেটাও ভাবাও বেশ কঠিন। কারণ ২০১৪ সালের মার্চ-এপ্রিলে সাধারণ নির্বাচন, তার আগে প্রধানমন্ত্রীর হাতে সময় থাকবে অল্পই। তারপর যখন নতুন সরকার আসবে, তখন কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে তা এখন বলা আরও কঠিন। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত যে, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে আগ্রহী মনমোহন সিং তখন আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন না।
মুম্বাই হামলার সঙ্গে পাকিস্তান সরকারের সংশ্লিষ্টতা ছিল কি না, অথবা পুরো হামলাটি পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন আইএসআই করেছিল কি না, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার আমি কেউ নই। কিন্তু একদম শুরু থেকেই বিষয়টি নিয়ে ইসলামাবাদ যা করেছে, তাতে অনেক সন্দেহের উদ্রেগ ঘটে। এমনকি, হামলাটি যে পাকিস্তানের মাটি থেকেই পরিচালনা করা হয়েছিল—এই সত্যটাও অস্বীকার করা হয়েছে। আরও অজস্র বিষয় পাকিস্তান অস্বীকার করেছে, যার ফলে ভারতীয় লোকজনের মধ্যে ক্ষোভ কেবলই বেড়েছে এবং দুই দেশের সম্পর্ক আরও জট পাকিয়ে গেছে।
আর নয়াদিল্লি যে ব্যক্তিকে মুম্বাই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী বলে মনে করে, সেই হাফিজ সাইদ ভারতের বিরুদ্ধে জিহাদের ঘোষণা দিয়ে সারা পাকিস্তান দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। ইসলামাবাদ যত তাঁর বাগাড়ম্বর বন্ধ করার উদ্যোগ নেবে, মুম্বাই হামলার মামলার অগ্রগতির ক্ষেত্রে ততই সুবিধা হবে। একদম শুরুতেই হামলার ব্যাপারে একটা যৌথ তদন্ত উদ্যোগের ঘোষণা দেওয়া হতো, তাহলে ভারতীয় লোকজনের মধ্যে ক্ষোভ অনেকটাই প্রশমিত হতে পারত। এখনো পাকিস্তান সরকারের উচিত তার সাধ্য অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া, কারণ দুই দেশের মধ্যকার সুসম্পর্কের ক্ষেত্রে আস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মুম্বাই হামলার ব্যাপারে পাকিস্তান সরকার যদি গড়িমসি করেই চলে, তাহলে সেই আস্থা গড়ে উঠবে না।
তবে অতীত ও বর্তমানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য আছে; দুই দেশের মধ্যকার বৈরিতা এখন আর আগের মতো তীব্র নেই। ১৯৪৭ সালের আগস্টে ভারত বিভাগের সেই মুহূর্ত পেরিয়ে আমরা অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি। তাই বিচার বিভাগীয় কমিশনের ব্যর্থতার মতো কিছু সমস্যা থাকা সত্ত্বেও দুই দেশের সম্পর্ক বিষাক্ত হয়নি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণা ইসলামাবাদের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথাটি রক্ষা করেছেন।
উভয় দেশের জনগণই সম্পর্ক স্বাভাবিক করার দাবি জানাচ্ছে; যদিও কেউ কেউ অতীতের ক্ষোভ বয়ে চলেছে। ক্রিকেট সিরিজ আবার শুরু হওয়া থেকে এই ইঙ্গিতই পাওয়া যায় যে, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে এ পর্যন্ত যেটুকু অগ্রগতিই হয়ে থাকুক না কেন, নয়াদিল্লি তা হারাতে চায় না। সুনীল গাভাস্কারের মতো ক্রীড়া ব্যক্তিত্বসহ খেলোয়াড়েরা ক্রিকেট সিরিজ বাতিল করার দাবি জানিয়েছিলেন, কিন্তু নয়াদিল্লি প্রমাণ করেছে যে, পথের এসব ছোটখাটো বাধায় সে হতাশ নয়। দুই দেশের পরররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকের কথাই ধরা যাক। যদিও বৈঠকে অগ্রগতি হয়েছে সামান্যই, তবু তাঁরা সব বিষয়েই আলোচনা করেছেন, এমনকি আলোচ্যসূচিতে ছিল না এমন বিষয়ও তাঁদের আলোচনায় এসেছে।
ভবিষ্যতের অনেক কিছুই নির্ভর করছে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে কী ঘটে তার ওপর। একটি পরিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হয়ে উঠতে পাকিস্তানকে এখনো অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। দেশটির সামরিক বাহিনীর প্রতাপ কিছু কমেছে, কিন্তু এখনো তারাই অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ করে। সরকার ও বিচার বিভাগ যেন যুদ্ধক্ষেত্রে পরস্পরের মুখোমুখি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তাঁর পদে কতদিন টিকবেন কেউ জানে না। সামনে কয়েক মাস পরই নির্বাচন, তারপর কী ধরনের জাতীয় পরিষদ আসবে তা নির্ভর করছে সামরিক বাহিনীর ইচ্ছার ওপর। ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিক হয়ে ওঠা ইমরান খানের আকস্মিক জনপ্রিয়তা এখন মিইয়ে এসেছে; তার পরও তিনি বড় নেতা হয়ে বেরিয়ে আসবেন কি না, সেটাও নির্ভর করবে সামরিক বাহিনীর ওপরই।
পাকিস্তানের জন্য তালেবান ততটা বিপজ্জনক নয়, যতটা বিপজ্জনক সেসব ইসলামি জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী, যারা দেশটির অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত দুরবস্থায় পর্যুদস্ত মানুষের মগজ ধোলাই করছে, যেসব মানুষ তাদের মধ্যে ত্রাণকর্তাদের দেখতে পাচ্ছে। তালেবানদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সম্মিলিত বাহিনী যে হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসলীলা চালিয়েছে, সেই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে যেতে তালেবান কিছু শিক্ষাও নিয়েছে। তালেবান এখন নিজের ভাবমূর্তিরও পরিবর্তন চায়, কারণ ২০১৪ সালে আফগানিস্তান থেকে বিদেশি বাহিনী প্রত্যাহার শুরু হওয়ার সেই দেশে তারা রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদকে ভাবতে হবে যৌথভাবে। আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব ও স্থিতিশীলতায় উভয় দেশেরই স্বার্থ রয়েছে। আফগানিস্তান নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন শক্তি দেনদরবার করে, সম্মেলন ডাকে, আর সেসব সম্মেলনে যোগ দেয় ভারত ও পাকিস্তান। অথচ ভারত আর পাকিস্তানই এ ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা পালন করতে পারত, তারাই যৌথভাবে হতে পারত প্রধান উদ্যোক্তা। এটা একটা দুঃখের বিষয় যে, ভারত ও পাকিস্তান আফগানিস্তান নিয়ে অন্যান্য শক্তির ডাকা সম্মেলনে যোগ দেয়, কিন্তু নিজেরা আলাদাভাবে আলোচনায় বসে না।
ইংরেজি থেকে অনূদিত
কুলদীপ নায়ার: ভারতের সাংবাদিক।
No comments