আমানত শাহ্ লুঙ্গি অলিম্পিক আপডেট-আবার দুনিয়া কাঁপল বোল্ট-বিস্ফোরণে by মাসুদ পারভেজ

তাঁর জীবনে বন্ধুদের বেশ ভালো প্রভাবই আছে বলতে হবে। দুই হাতের তর্জনী আর মধ্যমা দিয়ে 'বানি ইয়ারস' বা খরগোশের কানের নড়াচড়ার যে ভঙ্গিটা করেন, সেটা নাকি কোনো কিছু ভেবে নয়। স্রেফ কয়েকজন বন্ধু এমনটা করতে বলে দিয়েছিলেন, তাই করছেন।


আর ছোট করে ছাঁটা চুলে ঘন ঘন দুই হাত বোলানোর ভঙ্গিটাও এক বন্ধুর জন্য। জ্যামাইকার কিংস্টনে পাঁচ বেডরুমের যে অ্যাপার্টমেন্টে ভাই আর বন্ধুদের নিয়ে থাকেন তাঁদের একজনের নাম মরিস স্মিথ। এ বন্ধু আবার উসাইন বোল্টের নাপিতও! নিয়ম করে চুল-টুল কেটে দেন বলে দৌড় শুরুর আগে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেই নাকি মাথায় হাত!
ইতিহাসের দ্বিতীয় দ্রুততম দৌড়টা দিয়ে এসে তাঁর জন্য নির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনে নানা অঙ্গভঙ্গির পেছনের গল্প হাসতে হাসতেই বলছিলেন বোল্ট। বললেন না শুধু একজন বক্সারের পাঞ্চ মারার ভঙ্গিটার কথা। অথচ স্ট্র্যাটফোর্ডের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ১০০ মিটার স্প্রিন্টের ফাইনালের আগে তাঁর নাম ঘোষণা হতেই করা অঙ্গভঙ্গির মধ্যে ছিল এটাও। কে জানে, হয়তো তাঁকে নিয়ে সন্দেহবাদীদের ওভাবেই উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন। বক্সিং কিংবদন্তি মোহাম্মদ আলীর প্রভাবও থাকতে পারে ওই ভঙ্গিতে। এ অনুমানের ভিতটা আরো জোরালো না হয়ে পারে না যখন মোহাম্মদ আলীর মতো করেই বলে ওঠেন, 'আই অ্যাম দ্য বেস্ট'।
বলার জন্য এমন এক দৌড়ের অপেক্ষাতেই হয়তো ছিলেন বোল্ট, যে দৌড় দিয়ে লিখে ফেলা যাবে ইতিহাসের নতুন এক পাতা। লিখলেনও। বেইজিং অলিম্পিকে ৯.৬৯ সেকেন্ডে ১০০ মিটার স্প্রিন্টের সোনা জিতে তাক লাগিয়ে দেওয়া বোল্ট এবার আরেক নতুন অলিম্পিক রেকর্ড গড়ে জিতলেন ৯.৬৩ সেকেন্ডে। এক অর্থে ইতিহাসের প্রথম অ্যাথলেট হিসেবে জিতলেন পরপর দুটো অলিম্পিকে ১০০ মিটার স্প্রিন্টের সোনা। হ্যাঁ, যুক্তরাষ্ট্রের কার্ল লুইসেরও এমন কীর্তি আছে। তবে সেটা নিতান্তই ঘটনাচক্রে। ১৯৮৪ সালের লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে সোনাজয়ী লুইস দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে হওয়া পরের অলিম্পিকের সোনাটা পেয়েছিলেন কানাডার বেন জনসনের ডোপপাপের কারণে। পারফরম্যান্স-বর্ধক ড্রাগ নেওয়ার অভিযোগে জনসনের কেড়ে নেওয়া সোনাটাই দেওয়া হয়েছিল রুপাজয়ী লুইসকে।
লুইসের সাফল্যে তাই 'কিন্তু' আছে। বোল্টের কৃতিত্বে একটুও নয়। দুই অলিম্পিকের মাঝখানে ২০০৯ সালে বার্লিনে অ্যাথলেটিকসের যে বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ হয়েছিল, সেখানেও ইতিহাসের সবচেয়ে দ্রুতগতির দৌড়টা দিয়েছিলেন বোল্ট। ৯.৫৮ সেকেন্ডের সেই দৌড়টাই এখনো শেষ কথা হয়ে আছে। পরশু অতটা জোরে দৌড়ালেন না ঠিক, কিন্তু ১০০ মিটার স্প্রিন্টের এ ফাইনাল সশরীরে দেখার জন্য বিশ্বজুড়ে উন্মাদনার কমতি ছিল না কোনো। অনলাইনে আবেদনই জমা পড়েছিল ২০ লাখের বেশি। সপ্তাহখানেক আগেই বিক্রি হয়ে যাওয়া টিকিটের দাম উঠেছিল দুই হাজার ২০০ পাউন্ড পর্যন্ত! বিশ্বজুড়ে এ ইভেন্টের ফাইনালের টিভি দর্শক ছিলেন দুই বিলিয়ন।
ফাইনালে তাঁকে চ্যালেঞ্জ জানাতে ছিলেন নিজ দেশেরই আরো দুই প্রতিযোগী ইয়োহান ব্লেক ও আসাফা পাওয়েল। ২০০৪-এর এথেন্স অলিম্পিকে সোনাজয়ী জাস্টিন গ্যাটলিনও ডোপপাপের শাস্তি ভোগ করে এসে নেমেছিলেন জেতার স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু বোল্ট এভাবে দৌড়ালে অন্যরা পেরে উঠবেন কিভাবে! দেখা গেল ৯.৬৩ সেকেন্ডে দৌড় শেষ করা বোল্টের টাইমিংয়ের বেশ খানিকটা পেছনে থেকে রুপা জিতেছেন ব্লেক (৯.৭৫)। আর সেমিফাইনালে সবচেয়ে দ্রুতগতির (৯.৮২) দৌড় দেওয়া গ্যাটলিনকে ৯.৭৯ সেকেন্ডে শেষ করে ব্রোঞ্জ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হলো। আর ইতিহাসের দ্বিতীয় দ্রুতগতির দৌড় দেওয়া বোল্ট ততক্ষণে উৎসবে মাতোয়ারা। একবার তো ট্র্যাকের ওপর ডিগবাজিই দিয়ে ফেললেন। তবে এ আনন্দের মাঝেও গত কিছুদিন ধরে তাঁকে নিয়ে যে কত রকমের আলোচনা হচ্ছিল ভুলে যাননি সে কথা। ইতিহাস সেরা টাইমিংয়ের প্রথম তিনটিই (৯.৫৮, ৯.৬৩ ও ৯.৬৯) যাঁর পায়ে চেপে আসা, সেই বোল্ট তাই নিজের শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা দিলেন মোহাম্মদ আলীর মতো করেই, 'আই অ্যাম স্টিল দ্য নাম্বার ওয়ান। আই অ্যাম স্টিল দ্য বেস্ট। আই অ্যাম স্টিল ইন দ্য মুন।'
অন্যদের সঙ্গে যেন তাঁর দূর নক্ষত্রের ব্যবধান। মেনে নিতে দ্বিধাও করলেন না কেউ। এ লড়াইয়ে তাঁর অন্যতম চ্যালেঞ্জার ইয়োহান ব্লেকও না, 'উসাইন বিশ্বের দ্রুততম মানব। তাঁর সঙ্গে দৌড়ে আমি রুপা পেয়েছি, এর চেয়ে বেশি আর কী চাইতে পারতাম?' বোল্টের শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নেওয়ার ঘোষণা এলো গ্যাটলিনের কাছ থেকেও, 'ও হচ্ছে আমাদের খেলার (অ্যাথলেটিকস) মাইকেল ফেলপস। আমি বোল্ট আর ব্লেককে হারাতে চেয়েছিলাম, কিন্তু যে সেরা সে-ই জেতে।'

No comments

Powered by Blogger.