গাড়ি পোড়ানো মামলা-১৮ দলীয় জোট নেতাদের বিচার কাজ স্থগিত

ঢাকা মহানগর দ্রুত বিচার আদালত-৫-এর সব কার্যক্রম আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। ফলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পাশে গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগে ওই আদালতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার বিচার কার্যক্রমও স্থগিত হয়ে গেল।


এ কারণে দ্রুত বিচার আইনে করা মামলায় আজ মঙ্গলবার সাক্ষ্যগ্রহণ হচ্ছে না।
এ ছাড়া ঢাকা মহানগর ৫ নম্বর দ্রুত বিচার আদালত গঠন এবং এ আদালতের বিচারক হিসেবে মহানগর হাকিম হারুন অর রশিদকে দায়িত্ব দেওয়া কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তার কারণ জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। দুই সপ্তাহের মধ্যে আইন, মন্ত্রিপরিষদ, জনপ্রশাসন সচিব, আইজিপি, সিএমএম ও হারুন অর রশিদকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। বিচারপতি নাঈমা হায়দারের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল সোমবার এ রুল জারি করেন।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ওই মামলার আসামি হিসেবে রিট আবেদন করেন।
এ আদেশের পর রিট আবেদনকারীর আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক সাংবাদিকদের বলেন, আদালতের এ আদেশের পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরদের বিরুদ্ধে মামলার বিচার কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। রিট আবেদনকারীপক্ষের আরেক আইনজীবী অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম বলেন, ৫ নম্বর দ্রুত বিচার আদালতের কার্যক্রম স্থগিত করেছেন আদালত।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, ৫ নম্বর দ্রুত বিচার আদালতের বিচার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। ফলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরদের মামলা কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। তিনি বলেন, 'এ আদেশের কারণে আগামীকাল (মঙ্গলবার) ওই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ হবে না।'
এক বেঞ্চের এক বিচারপতি বিব্রত : গতকাল সকালে বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের বেঞ্চে রিট আবেদনটির ওপর শুনানির জন্য ব্যারিস্টার রফিক-উল হকসহ আইনজীবীরা উপস্থিত হন। তখন সংশ্লিষ্ট আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আলামীন সরকার বলেন, 'এ মামলায় অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানি করবেন। দুপুর ১২টায় শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ করার জন্য আবেদন করছি।' ব্যারিস্টার রফিক-উল হক এ সময় আবেদনের বিরোধিতা করেন। এরপর আদালত বলেন, 'আমাদের একজন শুনানিতে বিব্রতবোধ করছেন। আমরা এটা প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি।' ওই সময় রফিক-উল হক বলেন, 'আমরা অন্য বেঞ্চে নিতে চাই।'
এরপর আদালত মামলাটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়ার আদেশ দিয়ে বলেন, অন্য কোনো বেঞ্চে নেওয়ার স্বাধীনতা পাবেন রিট আবেদনকারী। পরে রিট আবেদনটি বিচারপতি নাঈমা হায়দারের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে নেওয়া হয়।
পরে অন্য বেঞ্চে শুনানি : গতকাল বিচারপতি নাঈমা হায়দারের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে শুনানিতে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেন, আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী (দ্রুত বিচার) আইন, ২০০২ (সংশোধিত ২০১০)-এর ৮(১) ধারা অনুযায়ী গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি করে সরকার যেকোনো জেলায় এক বা একাধিক দ্রুত বিচার আদালত গঠন করতে পারবে এবং অধিক্ষেত্র নির্ধারণ করবে সরকার। একই সঙ্গে ৮(২) ধারা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট আদালতে একজন প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেবে সরকার। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আইনের এ ধারা লঙ্ঘন করে মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) বিকাশ কুমার সাহা গত ৯ মে এক আদেশ দিয়ে মহানগর হাকিম মোহাম্মদ এরফান উল্লাহকে দ্রুত বিচার আদালতের বিচারক নিয়োগ দিয়েছেন। একই সঙ্গে তাঁর অধিক্ষেত্র নির্ধারণ কমরছেন, যা বেআইনি।
এরপর আদালত রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য জানতে চান। এ সময় সংশ্লিষ্ট আদালতে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ড. বশিরউল্লাহ বলেন, এ রিট আবেদনের ওপর অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানি করবেন। তিনি আসছেন। কিন্তু আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেল, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল বা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হাজির না থাকায় আদালত ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আদালত বলেন, 'দুই ঘণ্টা আগে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। কেউ নেই। আমরা কি সব কাজ ফেলে রেখে তাদের জন্য বসে থাকব?' এর কয়েক মিনিট পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতে হাজির হন।
অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানিতে বলেন, ২০০৮ সালে সিএমএম এনামুল হক দ্রুত বিচার আইনের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বিচারকদের নাম উল্লেখ করে তাঁদের জন্য দ্রুত বিচার আদালত গঠনের অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। এরপর সরকার সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি সাপেক্ষে তা অনুমোদন করে। এটা গেজেট আকারে প্রকাশের জন্য বিজি প্রেসে পাঠায়।
ওই সময় আদালত বলেন, সরকার কি গেজেট জারি করেছে? কারণ তাদের মামলাই এখানে। জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, না, ছাপানোর জন্য পাঠানো হয়েছে।
এ পর্যায়ে আদালত বলেন, '২০০৮ সালে পাঠানো হলো। এখনো ছাপা হয়নি? এতে তো সরকারই বিপদে পড়বে।' জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সরকার অনুমতি দিয়েছে। এরপর বিজি প্রেসে গেছে। সেখানে হাজার হাজার সার্কুলেশন, নোটিশ, গেজেট ইত্যাদি ছাপানোর জন্য পাঠানো হয়। পর্যায়ক্রমে সব ছাপা হয়। তিনি ওই সময় ২০০৯ সালের একটি প্রজ্ঞাপন দেখিয়ে বলেন, সরকার দ্রুত বিচার আইনের মামলার বিচার করতে বিচারক নিয়োগের জন্য সিএমএম বা তার মনোনীত কোনো সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে ক্ষমতা দিয়েছে। এতে সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদন আছে।
এরপর রিট আবেদনের পক্ষে শুনানিতে অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম বলেন, এ মামলায় খুবই সাধারণ একটি প্রশ্ন জড়িত- আলোচিত আদালতে বিচার করার এখতিয়ার আছে কি না। যদি এ আদালতের বিচার করার এখতিয়ার না থাকে তবে মামলার সব বিচার কার্যক্রম অবৈধ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, আইন অনুসারে সরকার সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিয়োগ করবে এবং বিচারকের বিচারিক অধিক্ষেত্র নির্ধারণ করবে। কিন্তু ঢাকার ৫ ও ৭ নম্বর দ্রুত বিচার আদালত গঠনের ক্ষেত্রে সরকার কোনো গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি করেনি। এরপর আদালত দুপুর ২টায় আদেশের জন্য সময় নির্ধারণ করেন। দুপুর ২টায় আদালত বসার পর আদেশ দেন।
এ আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতে বলেন, আদালতের কার্যক্রম স্থগিত করা যথাযথ হয়নি। প্রক্রিয়াগত ভুলের কারণে একজন অপরাধী সুযোগ পেতে পারে না। এ মামলার কার্যক্রম স্থগিত করলে অন্যরাও সুযোগ পেয়ে যাবে। জবাবে আদালত বলেন, 'আমরা মামলার কার্যক্রম স্থগিত করছি না। আদালতের ওপর স্থগিতাদেশ দিচ্ছি।'
গত ২৯ এপ্রিল তেজগাঁও থানায় মির্জা ফখরুল ইসলামসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়। গত ১০ মে মামলার সব আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। এরপর ২৭ মে ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক আবদুল জব্বারকে আসামি করে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করা হয়। মামলায় ৩১ জুলাই অভিযোগ গঠন করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.