জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে by গোলাম আকবর চৌধুরী
১৯৮১ সালের ৩০ মে ভোরে ড. কামাল হোসেন আমাকে টেলিফোনে জানালেন চট্টগ্রামে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নির্মম হত্যাকা-ের ও দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতির কথা। তাঁকে বললাম, ঘটনাপ্রবাহের দিকে লক্ষ্য রাখতে ও আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য।
তারপর আবদুল মালেক উকিল ও তৎকালীন সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা আসাদুজ্জামান খান টেলিফোনে একই সংবাদ জানালেন এবং জানতে চাইলেন, এ অবস্থায় আমাদের করণীয় কি? তাদের দু’জনকেও একই উত্তর দিলাম। এরপর চারদিক থেকে হত্যাকা-পরবর্তী ঘটনাসমূহের খবরাখবর পেতে লাগলাম। দুপুরের দিকে নগর আওয়ামী লীগের কয়েক শ’ কর্মী আমার ইস্কাটনের বাসায় সমবেত হলো এবং আমার কাছে দিক নির্দেশনা চাইল। দুপুর আনুমানিক দু’টার দিকে খবর পেলাম সভাপতিম-লীর সদস্য বেগম জোহরা তাজউদ্দীন, মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আইভী রহমান ও ঢাকা মহানগর সভাপতি মোহাম্মদ হানিফকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমার পাশের বাসায় থাকতেন বিএনপির তৎকালীন প্রভাবশালী মন্ত্রী শামসুল হুদা চৌধুরী। আমি তাঁর বাসায় গিয়ে নেতাদের গ্রেফতারের কারণ জানতে চাইলাম এবং বললাম দু’ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের মুক্তি না দিলে ও অন্যান্য নেতাকে গ্রেফতারের নির্দেশ প্রত্যাহার না করলে, আমি আওয়ামী লীগ কর্মীদের নিয়ে প্রতিবাদ মিছিল বের করব। শামসুল হুদা চৌধুরী আমার প্রতিটি কথা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিলেন এবং তৎক্ষণাৎ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে টেলিফোন করলেন ঘটনা জানার জন্য। কিছুক্ষণ পর খোঁজখবর নিয়ে সাত্তার সাহেব হুদা সাহেবকে জানালেন, সরকারের পক্ষ থেকে এ রকম গ্রেফতারের কোন নির্দেশ নেই। গ্রেফতার করেছেন সামরিক বাহিনীর সদস্যরা। আমি বললাম কার নির্দেশে গ্রেফতার হয়েছে তা আমি বুঝি না, বিকেল চারটার মধ্যে আমাদের নেতাদের মুক্তি না দিলে প্রতিবাদ মিছিল বের করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। উল্লেখ্য, সামরিক বাহিনীর ভয়ে তৎকালীন বিএনপি সরকার অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় ছিল। বিকেল চারটার মধ্যে আরও অনেক আওয়ামী লীগ কর্মী আমার বাসার সামনে জমায়েত হলো। চারটার দিকে শামসুল হুদা চৌধুরী আমাকে জানালেন, বেগম জোহরা তাজউদ্দীন, আইভী রহমান ও মোহাম্মদ হানিফকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। আরও জানালেন যে, আমাদের কোন নেতাকে গ্রেফতার করা হবে না। আমি খবরটির সত্যতা যাচাই করে নিলাম। আলোচনা ও সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এটা প্রতীয়মান হলো যে, তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল এরশাদ জিয়াউর রহমানের হত্যাকা-ের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ভারতের সম্পৃক্ততার কথা প্রচার করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এবং এই গ্রেফতার সে প্রচেষ্টার অংশবিশেষ। হুদা সাহেব আমাকে বিশেষ করে অনুরোধ জানালেন যাতে সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখার জন্য আওয়ামী লীগ সহায়তা করে। এ বিষয়ে দলের নেতাদের সঙ্গে আলাপ- আলোচনার করলাম এবং ৩১ মে সকালে বিরোধীদলীয় নেতা আসাদুজ্জামান খানের বাসায় বৈঠকের সিদ্ধান্ত হলো। ঢাকাসহ সারা দেশের অবস্থা তখন থমথমে। সবার মধ্যে উৎকণ্ঠাÑকিভাবে এ ভয়াবহ সঙ্কট থেকে উত্তরণ ঘটবে। এ লক্ষ্যে আমরা চিন্তাভাবনা করতে লাগলাম। সিডিউল অনুযায়ী সেদিন আনুমানিক রাত আটটায় ট্রেনে নেতাদেরসহ শেখ হাসিনার ঢাকায় আসার কথা।
রাস্তায় গাড়িঘোড়া, লোকজনের চলাচল নেই বললেই চলে। আমরা যদি স্টেশনে না যাই, তবে নেতারা স্টেশনে আটকা পড়বে। এমনকি বিরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীনও হতে পারে। তখন আমি কর্মী বাহিনী ও কয়েকটা গাড়ি নিয়ে স্টেশনে যাই; কিন্তু সে ট্রেনে নেতারা কেউ আসেননি। জানতে পারলাম নেতারা গ্রেফতার এড়ানোর জন্য মধ্যপথে ট্রেন থেকে নেমে বিভিন্ন গন্তব্যে চলে গেছেন। পরদিন ভোরে আমরা আসাদুজ্জামান খানের বাসায় মিলিত হই। সেখানে ড. কামাল হোসেন, মালেক উকিলসহ অন্য কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। জানতে পারলাম শেখ হাসিনা ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ট্রেন থেকে নেমে ভৈরবের দিকে গেছেন। তাই আমি দু’টা গাড়ি পাঠালাম তাঁদের আনার জন্যে। ইতোমধ্যে আলোচনায় সিদ্ধান্ত হলো যে, আমরা কিছুতেই সামরিক শাসন আসতে দিতে পারি না এবং আমরা সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখার জন্য তৎকালীন বিএনপি সরকারকে সহায়তা দেব। সবাই আমাকে অনুরোধ করল, আমি যেন তদানীন্তন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিরাজমান পরিস্থিতি আলোচনা করে সরকারকে আমাদের সহযোগিতার কথা জানিয়ে দেই। আমি বললাম, আসাদুজ্জামান খান, সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা এবং রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তাঁর আলোচনা করাই হবে সমীচীন। সবাই আমার বক্তব্য মেনে নিলেন। আসাদুজ্জামান খানকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা করার দায়িত্ব দেয়া হলো। দুপুরের দিকে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী অনেক ঝুঁকি নিয়ে বোরখা পরে বাসে করে ভৈরব থেকে ঢাকায় এসে আসাদুজ্জামান খানের বাসায় উপস্থিত হলেন এবং আমাদের জানালেন যে, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর একটি লিখিত বক্তব্য পাঠিয়েছেন যাতে সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। উপস্থিত সাংবাদিকদের সেই পত্রটি দেখানো হলো। এভাবে আমরা সঙ্কট কাটিয়ে উঠি এবং দেশ সম্ভাব্য সামরিক শাসনের হাত থেকে রক্ষা পায়।
রাস্তায় গাড়িঘোড়া, লোকজনের চলাচল নেই বললেই চলে। আমরা যদি স্টেশনে না যাই, তবে নেতারা স্টেশনে আটকা পড়বে। এমনকি বিরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীনও হতে পারে। তখন আমি কর্মী বাহিনী ও কয়েকটা গাড়ি নিয়ে স্টেশনে যাই; কিন্তু সে ট্রেনে নেতারা কেউ আসেননি। জানতে পারলাম নেতারা গ্রেফতার এড়ানোর জন্য মধ্যপথে ট্রেন থেকে নেমে বিভিন্ন গন্তব্যে চলে গেছেন। পরদিন ভোরে আমরা আসাদুজ্জামান খানের বাসায় মিলিত হই। সেখানে ড. কামাল হোসেন, মালেক উকিলসহ অন্য কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। জানতে পারলাম শেখ হাসিনা ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ট্রেন থেকে নেমে ভৈরবের দিকে গেছেন। তাই আমি দু’টা গাড়ি পাঠালাম তাঁদের আনার জন্যে। ইতোমধ্যে আলোচনায় সিদ্ধান্ত হলো যে, আমরা কিছুতেই সামরিক শাসন আসতে দিতে পারি না এবং আমরা সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখার জন্য তৎকালীন বিএনপি সরকারকে সহায়তা দেব। সবাই আমাকে অনুরোধ করল, আমি যেন তদানীন্তন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিরাজমান পরিস্থিতি আলোচনা করে সরকারকে আমাদের সহযোগিতার কথা জানিয়ে দেই। আমি বললাম, আসাদুজ্জামান খান, সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা এবং রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তাঁর আলোচনা করাই হবে সমীচীন। সবাই আমার বক্তব্য মেনে নিলেন। আসাদুজ্জামান খানকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা করার দায়িত্ব দেয়া হলো। দুপুরের দিকে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী অনেক ঝুঁকি নিয়ে বোরখা পরে বাসে করে ভৈরব থেকে ঢাকায় এসে আসাদুজ্জামান খানের বাসায় উপস্থিত হলেন এবং আমাদের জানালেন যে, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর একটি লিখিত বক্তব্য পাঠিয়েছেন যাতে সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। উপস্থিত সাংবাদিকদের সেই পত্রটি দেখানো হলো। এভাবে আমরা সঙ্কট কাটিয়ে উঠি এবং দেশ সম্ভাব্য সামরিক শাসনের হাত থেকে রক্ষা পায়।
No comments