যুদ্ধবিরোধী অনুষ্ঠানমালার মধ্য দিয়ে শেষ হলো স্বপ্নদলের নাট্যোৎসব-সংস্কৃতি সংবাদ

পথচলার একযুগ পূর্ণ করল নাটকের দল স্বপ্নদল। এ উপলক্ষে বুধবার থেকে শুরু হয় ছয় দিনের নাট্যোৎসব। শিল্পের মানবিক ছায়াসম্পাতে মহাজীবন বন্দনা করি সেগানে উৎসবের শিরোনাম ছিল যুগসন্ধির অরুণ আলোয় রবীন্দ্রনাথ-সেলিম আল দীন-বাদল সরকার নাট্যোৎসব ।


এ নাট্যোৎসব উৎসর্গ করা হয় সদ্যপ্রয়াত নন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের পুণ্য স্মৃতির উদ্দেশ্যে। সোমবার ছিল এ উৎসবের সমাপনী দিন। এ দিন হিরোশিমা দিবসের নানা অনুষ্ঠানমালা দিয়ে সাজানো ছিল উৎসব। গত ১১ বছর ধরে স্বপ্নদল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ৬ আগস্ট আণবিক বোমা ফেলে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করার দিনটি বিশেষভাবে স্মরণ করছে। শিল্পকলার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে অনুষ্ঠিত সমাপনী আয়োজনের শুরুতেই প্রদর্শিত হয় হিরোশিমা-নাগাসাকির ঘটনানির্ভর প্রামাণ্যচিত্র। এরপর ছিল যুদ্ধবিরোধী আলোচনা অনুষ্ঠান। এ পর্বে আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশস্থ জাপানের রাষ্ট্রদূত শিরো সিদোশিমা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আনোয়ার হোসেন। সভাপতিত্ব করেন শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। আলোচনা শুরুর আগে অতিথিরা হিরোশিমা-নাগাসাকিতে নিহতদের স্মরণে প্রদীপ প্রজ্বলন করেন। আর আলোচনা চলাকালে পিপলস থিয়েটার এ্যাসোসিয়েশনের ক্ষুদে সদস্যরা হিরোশিমার যুদ্ধযন্ত্রণা প্রতীক শিশু সাদাকো সাসাকি স্মরণে কাগজের সারস তৈরি করে তা অতিথিদের হাতে তুলে দেয়।
সভাপতির বক্তব্যে লিয়াকত আলী লাকী বলেন, আজ একইসঙ্গে হিরোশিমা দিবস ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবস। এ দুই দিবসের মধ্যে একটি বিশেষ সম্পর্ক আছে। রবীন্দ্রনাথ যখন প্রথম জাপান সফরে তখন তিনি সেখানকার শিল্পীদের শান্তি নিকেতনে আসার আমন্ত্রণ জানান। আর অন্যদিকে জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে দর্শনগত ক্ষেত্রে একটি মিল রয়েছে। সেটা হলো, এই দুই দেশই কখনও আণবিক বোমা তৈরি করবে নাÑ এই দর্শনে বিশ্বাসী। আর এই দর্শনের সঙ্গে একাত্ম হয়ে পৃথিবীকে বাসযোগ্য করার জন্য বোমাবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার। সেক্ষেত্রে স্বপ্নদলের এই আয়োজনটি ছোট হলেও চেতনাগতভাবে অনেক বড়। এ আয়োজনের মাধ্যমে যুদ্ধবিরোধী বার্তা তুলে ধরা হয়েছে।
আলোচনা শেষে ছিল সাংস্কৃতিক পর্ব। এতে পিপলস থিয়েটারের শিশুশিল্পীরা জাপানী সঙ্গীতের পাশাপাশি শিশুতোষ সঙ্গীত পরিবেশন করে। ক্ষুদে শিশুশিল্পীদের এই পরিবেশনা শেষে উপস্থাপিত হয় সেলিম আল দীনের আণবিক বোমার প্রভাব নিয়ে নির্মিত নাটক নিমজ্জনের অংশ বিশেষ। আর সব শেষে সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হয় যুদ্ধোন্মাদনার বিরুদ্ধে শৈল্পিক প্রতিবাদী প্রযোজনা ত্রিংশ শতাব্দী। বাদল সরকারের রচনায় স্বপ্নদলের এ প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন জাহিদ রিপন।
এদিকে উৎসবের সমাপ্তির আয়োজনে এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলের পুরো লবি সাজানো হয় হিরোশিমা ও নাগাসাকির ঘটনানির্ভর যুদ্ধবিরোধী আলোকচিত্র দিয়ে। জাপান-বাংলাদেশ পিস ফাউন্ডেশনের সৌজন্যে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এসব আলোকচিত্রে উঠে আসে মার্কিনীদের দ্য লিটল বয় ও ফ্যাটম্যান নামের দুটি আণবিক বোমা ফেলার পরবর্তী বীভৎসতা ও ভয়াবহতার নানা চিত্র। একটি ছবিতে বন্দী হয়েছে ৬ আগস্ট সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে হিরোশিমা শহরে বোমা পড়ার মুহূর্তটি। হেলিকপ্টার থেকে তোলা ওই ছবিতে দেখা যায়, ভয়ঙ্কর বোমা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে ব্যাঙের ছাতার মতো। নিমিষেই একটি সুসজ্জিত শহর যেন পরিণত হলো ধ্বংসপুরীতে। বোমায় প্রাণ হারানো অসংখ্য মানুষ ছড়িয়ে আছে চারপাশে। লাখ লাখ মানুষের সারি সারি লাশ। আবার কেউবা ওই ভয়ঙ্কর বোমার তেজষ্ক্রিয়তায় পুড়ে যন্ত্রণাদগ্ধ হয়ে চিৎকার করছে। এমন সব ছবির সঙ্গে রয়েছে বোমার আঘাত কাটিয়ে আবারও সচল হওয়া হিরোশিমা ও নাগাসাকির শহরের চিত্রও।

No comments

Powered by Blogger.