বাজার আবার অস্থির
ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সরকারের নজরদারি কঠোর হোক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্যের দাম আবার ঊর্ধ্বমুখী। ভোজ্য তেল, মসুর ডাল, পিয়াজ, রসুন, আটা, মাংসসহ প্রায় সব কিছুর দামই বেড়েছে আরেক দফা। শীত বিদায় নিতে না নিতেই সবজি ব্যবসায়ীরা সবজির দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু বাজারে এখনো সবজির সরবরাহ যথেষ্ট।
সম্প্রতি আরেক দফা পণ্যমূল্যের উত্থানের ফলে সাধারণ ও স্বল্প আয়ের মানুষের দৈনন্দিন জীবনে যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে, এর নতুন করে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নিষ্প্রয়োজন। পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে ব্যবসায়ীদের নানারকম অজুহাতেরও অন্ত নেই। এর মধ্যে অসাধু চক্র কিংবা সিন্ডিকেটের কারসাজি তো আছেই। লিটারে ভোজ্য তেল বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও এই নীতি মানা হচ্ছে না! সরকারের তরফে ইতিমধ্যে বহুবার বলা হয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য চাহিদার তুলনায় বেশি আমদানি করা হয়েছে। নিশ্চয়ই এসব পণ্য এরই মাঝে শেষ হয়ে যায়নি।
পণ্যসংকট সৃষ্টি না হলে হুটহাট দাম বাড়ার কোনো কারণ না থাকলেও পণ্যদ্রব্যের দাম বাড়ছেই। বাজার যেন একটি অশুভ চক্রের মুঠোয় বন্দী হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে পণ্যদ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে দৃশ্যত নানারকম পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বটে, কিন্তু ফল বলতে গেলে শূন্য। আমদানি করতে হয় না এমন পণ্যদ্রব্যের দামও বাড়িয়ে দেওয়া হয় আন্তর্জাতিক বাজারে ঊর্ধ্বগতির ধুয়া তুলে। এমন কাণ্ডকীর্তি ইতিমধ্যে কম হয়নি। অনেক পণ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে গেছে কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা করে, যা একেবারেই অযৌক্তিক। ২৬ ফেব্রুয়ারি সহযোগী একটি দৈনিকে প্রকাশ, উচ্চমূল্য তো আছেই, পাশাপাশি রয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার তীব্র সংকট। দুষ্প্রাপ্য ডলার দিয়েই চিনি আমদানি করতে যাচ্ছে সরকার। অথচ দেশীয় পরিশোধন কারখানাগুলোর কাছে বর্তমানে পাঁচ লাখ টন চিনির মজুদ রয়েছে। অভ্যন্তরীণ বাজারের চেয়ে বেশি দাম দিয়ে চিনি আমদানি করার এই চিন্তা কেন মাথায় এলো- এটি জরুরি প্রশ্ন। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের নানারকম কৌশল নিয়েও বিস্তর কথা আছে। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর পক্ষ থেকেও বাজার নিয়ন্ত্রণে ইতিমধ্যে নানারকম আশ্বাস-প্রতিশ্রুতি-অঙ্গীকার ব্যক্ত হয়েছে বটে, কিন্তু এরও কোনো সুফল ভোক্তারা পাচ্ছেন না। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকারের যত উদ্যোগ-আয়োজনই দৃশ্যত পরিলক্ষিত হোক না কেন, এসব যে ত্রুটিমুক্ত নয় বিদ্যমান পরিস্থিতি এরই সাক্ষ্যবহ।
এককালে যে প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা ছিল খুব উজ্জ্বল, সেই টিসিবি এখন যেন সাইনবোর্ডসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটিকে অধিকতর কার্যকর ও গতিশীল করার পাশাপাশি ঢেলে সাজানোর তাগিদ নানা মহল থেকে বারবার দেওয়া হচ্ছে বটে, কিন্তু তাও আমলে নেওয়া হচ্ছে না। টিসিবি কাঙ্ক্ষিত রূপ পেলে অসাধু ব্যবসায়ীদের যাচ্ছেতাই কাণ্ডকীর্তি এমনিতেই অনেকটা হ্রাস পেত। তাই বলা যায়, বাজারে আবারও যে উত্তাপ পরিলক্ষিত হচ্ছে, এর পেছনে নীতিনির্ধারকদের ব্যর্থতাসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি বহুলাংশেই দায়ী। ব্যবস্থার পরিবর্তন না করে অবস্থার পরিবর্তন আশা করা দুরাশারই নামান্তর। বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নয়নসহ বাজারের ওপর সরকারের নজরদারি কঠোর করতেই হবে। একই সঙ্গে অসাধু চক্রের মূলোৎপাটনও জরুরি।
No comments