পবিত্র কোরআনের আলো-নবী শোয়ায়েবের কওম ভূমিকম্পে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে গেল
৮৯. ক্বাদিফ্তারাইনা আ'লাল্লাহি কাযিবান ইন উ'দনা ফী মিল্লাতিকুম বা'দা ইয্ নাজ্জা-নাল্লা-হু মিনহা; ওয়া মা ইয়াকূনু লানা আন্ নাঊদা ফীহা ইল্লা আন ইয়্যাশা আল্লাহু রাব্বুনা; ওয়া ছিআ' রাব্বুনা কুল্লা শাইয়িন ই'লমা আ'লাল্লা-হি তাওয়াক্কালনা; রাব্বা-না ফ্তাহ্ বাইনানা ওয়া বাইনা ক্বাওমিনা বিলহাক্কি ওয়াআনতা খাইরুল ফা-তিহীন।
৯০. ওয়াক্বা-লাল মালাউ ল্লাযীনা কাফারূ মিন ক্বাওমিহী লায়িনি ত্তাবা'তুম শুআ'ইবান ইন্নাকুম ইযা ল্লাখা-ছিরূন। ৯১। ফাআখাত্হুমুর্ রাজফাতু ফাআসবাহূ ফী দা-রিহিম জা-ছিমীন। ৯২. আল্লাযীনা কায্যাবূ শুআ'ইবান কা-আ ল্লাম ইয়াগ্নাও ফীহা; আল্লাযী কায্যাবূ শুআ'ইবান কা-নূ হুমুল খা-ছিরীন। [সুরা : আল-আ'রাফ, আয়াত : ৮৯-৯২]
অনুবাদ : ৮৯. (শোয়ায়েব বললেন) আমরা যদি তোমাদের ধর্মে অর্থাৎ অন্যান্য জীবনব্যবস্থায় ফিরে যাই, তবে তো আমরা আল্লাহর ওপর অতি বড় মিথ্যা আরোপ করব। এ অবস্থায় যে আল্লাহ আমাদের মুক্তি দিয়েছেন সেই ভ্রান্ত পথ থেকে। আসলে সেই ভ্রান্ত ধর্মে ফিরে যাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়; তবে হ্যাঁ, আমাদের প্রভু যদি সে ইচ্ছা করেন সেটা ভিন্ন কথা। আমাদের প্রভু নিজ জ্ঞান দ্বারা সব কিছুই বেষ্টন করে রেখেছেন। আমরা আল্লাহর প্রতিই নির্ভর করছি। হে প্রভু, আমাদের ও আমাদের কওমের মধ্যে তুমি ন্যায্যভাবে ফয়সালা করে দাও। তুমি সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ফয়সালাকারী।
৯০. তার সম্প্রদায়ের সরদাররা, যারা কুফরির মধ্যে লিপ্ত ছিল তারা (কওমের সাধারণ লোকদের) বলল, তোমরা যদি শোয়ায়েবের অনুসরণ করো, তবে জেনে রেখো তোমরা ভীষণ বিপদের মুখে পড়বে। ৯১. অতঃপর তারা ভূমিকম্পে আক্রান্ত হলো এবং (প্রাণ হারিয়ে) নিজেদের বাড়িঘরে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকল।
৯২. যারা নবী শোয়ায়েবকে প্রত্যাখ্যান করেছিল তারা এমনভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল, যেন তারা কখনো সেখানে বসবাসই করেনি। যারা শোয়ায়েবকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, তারাই তো শেষ পর্যন্ত বিপদগ্রস্ত হলো।
ব্যাখ্যা : ৮৯ নম্বর আয়াতে আগের আয়াতগুলোর আলোচ্য বিষয়ের ধারাবাহিকতায় আরো কিছু কথোপকথন বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে শোয়ায়েব (আ.) তাঁর কওমের কাফের নেতাদের হুমকির জবাব দিচ্ছেন। তিনি তাঁর আগের জাহেলিয়াত যুগের ধর্মে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট অস্বীকৃতি জানিয়েছেন এবং তাঁর নিজের অবস্থানের পক্ষে কিছু যুক্তিও উত্থাপন করছেন। এখানে একটা প্রশ্ন জাগে, শোয়ায়েব (আ.) নিজে কি জাহেলিয়াত যুগের ধর্মের অনুসারী ছিলেন? এখানে উভয় পক্ষের বক্তব্য থেকেই কিন্তু শব্দটি এভাবে আসছে। অর্থাৎ আগের ধর্মে ফিরে যাওয়া। এর উত্তর এই যে তার অনুসারীরা তো আগে সেই ধর্মেরই ছিল, আর নবুয়তপ্রাপ্তির পূর্বে শোয়ায়েব (আ.) নিজেও পূর্বপুরুষের ধর্মের বিরুদ্ধে তেমন কিছু বলেননি। সুতরাং তাঁর কওমের লোকেরা মনে করত, তিনি তাদেরই ধর্মের 'অনুসারী'। এ কারণেই তারা তার জন্যও এ শব্দ ব্যবহার করেছিল। নবী শোয়ায়েব (আ.)ও উত্তর দিয়েছেন তাঁরই ভাষায়। এই আয়াতের বক্তব্যে অপর যে প্রশ্নটি উত্থাপিত হতে পারে তা হলো, 'ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন তবে অন্য কথা'- সেই বাক্যাংশটি। এখানে জাহেলিয়াতে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে কোনো নমনীয়তার ইঙ্গিত দেওয়া হয়নি। এখানে নবুয়তের প্রতি অঙ্গীকারের দৃঢ়তাই ব্যক্ত করা হয়েছে। এটা উচ্চ স্তরের আবদিয়াত বা সত্যের প্রতি আনুগত্যের চূড়ান্ত অভিব্যক্তিমূলক বাক্য। এর অর্থ হলো, আল্লাহর প্রতি আনুগত্য সব কিছুর ঊর্ধ্বে। ইসলামের সঙ্গে সত্যনিষ্ঠতা, দায়িত্বনিষ্ঠতা এবং জাগ্রত বিবেক-বুদ্ধি কাজে লাগানোর পরও আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা থাকা উচিত। যাবতীয় সৎকর্ম ও ইবাদতের আসল লক্ষ্যটা হতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ। এখানে এই বাক্যাংশের মাধ্যমে এই শিক্ষা তুলে ধরা হয়েছে যে যেকোনো নেক কাজ বা ইবাদত করার সময় বা সরাসরি আল্লাহর হুকুম পালন করার সময় নিজ সংকল্প, সাধনা ও আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান থাকা অবস্থায়ও আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা থাকা উচিত। মানুষ নীতি-নৈতিকতার অনুশীলন করবে। সত্য ধর্মের অনুশীলন করবে, তবে আল্লাহর প্রতি, আল্লাহর ইচ্ছার প্রতি আত্মসমর্পিত থাকার বিষয়টা হতে হবে চূড়ান্ত। আল্লাহ যা চান, তার মর্ম বা তাৎপর্য সম্পূর্ণ বোধগম্য না হলেও তা মেনে চলার অঙ্গীকার মুমিনের শ্রেষ্ঠ আলামত।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
অনুবাদ : ৮৯. (শোয়ায়েব বললেন) আমরা যদি তোমাদের ধর্মে অর্থাৎ অন্যান্য জীবনব্যবস্থায় ফিরে যাই, তবে তো আমরা আল্লাহর ওপর অতি বড় মিথ্যা আরোপ করব। এ অবস্থায় যে আল্লাহ আমাদের মুক্তি দিয়েছেন সেই ভ্রান্ত পথ থেকে। আসলে সেই ভ্রান্ত ধর্মে ফিরে যাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়; তবে হ্যাঁ, আমাদের প্রভু যদি সে ইচ্ছা করেন সেটা ভিন্ন কথা। আমাদের প্রভু নিজ জ্ঞান দ্বারা সব কিছুই বেষ্টন করে রেখেছেন। আমরা আল্লাহর প্রতিই নির্ভর করছি। হে প্রভু, আমাদের ও আমাদের কওমের মধ্যে তুমি ন্যায্যভাবে ফয়সালা করে দাও। তুমি সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ফয়সালাকারী।
৯০. তার সম্প্রদায়ের সরদাররা, যারা কুফরির মধ্যে লিপ্ত ছিল তারা (কওমের সাধারণ লোকদের) বলল, তোমরা যদি শোয়ায়েবের অনুসরণ করো, তবে জেনে রেখো তোমরা ভীষণ বিপদের মুখে পড়বে। ৯১. অতঃপর তারা ভূমিকম্পে আক্রান্ত হলো এবং (প্রাণ হারিয়ে) নিজেদের বাড়িঘরে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকল।
৯২. যারা নবী শোয়ায়েবকে প্রত্যাখ্যান করেছিল তারা এমনভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল, যেন তারা কখনো সেখানে বসবাসই করেনি। যারা শোয়ায়েবকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, তারাই তো শেষ পর্যন্ত বিপদগ্রস্ত হলো।
ব্যাখ্যা : ৮৯ নম্বর আয়াতে আগের আয়াতগুলোর আলোচ্য বিষয়ের ধারাবাহিকতায় আরো কিছু কথোপকথন বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে শোয়ায়েব (আ.) তাঁর কওমের কাফের নেতাদের হুমকির জবাব দিচ্ছেন। তিনি তাঁর আগের জাহেলিয়াত যুগের ধর্মে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট অস্বীকৃতি জানিয়েছেন এবং তাঁর নিজের অবস্থানের পক্ষে কিছু যুক্তিও উত্থাপন করছেন। এখানে একটা প্রশ্ন জাগে, শোয়ায়েব (আ.) নিজে কি জাহেলিয়াত যুগের ধর্মের অনুসারী ছিলেন? এখানে উভয় পক্ষের বক্তব্য থেকেই কিন্তু শব্দটি এভাবে আসছে। অর্থাৎ আগের ধর্মে ফিরে যাওয়া। এর উত্তর এই যে তার অনুসারীরা তো আগে সেই ধর্মেরই ছিল, আর নবুয়তপ্রাপ্তির পূর্বে শোয়ায়েব (আ.) নিজেও পূর্বপুরুষের ধর্মের বিরুদ্ধে তেমন কিছু বলেননি। সুতরাং তাঁর কওমের লোকেরা মনে করত, তিনি তাদেরই ধর্মের 'অনুসারী'। এ কারণেই তারা তার জন্যও এ শব্দ ব্যবহার করেছিল। নবী শোয়ায়েব (আ.)ও উত্তর দিয়েছেন তাঁরই ভাষায়। এই আয়াতের বক্তব্যে অপর যে প্রশ্নটি উত্থাপিত হতে পারে তা হলো, 'ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন তবে অন্য কথা'- সেই বাক্যাংশটি। এখানে জাহেলিয়াতে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে কোনো নমনীয়তার ইঙ্গিত দেওয়া হয়নি। এখানে নবুয়তের প্রতি অঙ্গীকারের দৃঢ়তাই ব্যক্ত করা হয়েছে। এটা উচ্চ স্তরের আবদিয়াত বা সত্যের প্রতি আনুগত্যের চূড়ান্ত অভিব্যক্তিমূলক বাক্য। এর অর্থ হলো, আল্লাহর প্রতি আনুগত্য সব কিছুর ঊর্ধ্বে। ইসলামের সঙ্গে সত্যনিষ্ঠতা, দায়িত্বনিষ্ঠতা এবং জাগ্রত বিবেক-বুদ্ধি কাজে লাগানোর পরও আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা থাকা উচিত। যাবতীয় সৎকর্ম ও ইবাদতের আসল লক্ষ্যটা হতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ। এখানে এই বাক্যাংশের মাধ্যমে এই শিক্ষা তুলে ধরা হয়েছে যে যেকোনো নেক কাজ বা ইবাদত করার সময় বা সরাসরি আল্লাহর হুকুম পালন করার সময় নিজ সংকল্প, সাধনা ও আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান থাকা অবস্থায়ও আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা থাকা উচিত। মানুষ নীতি-নৈতিকতার অনুশীলন করবে। সত্য ধর্মের অনুশীলন করবে, তবে আল্লাহর প্রতি, আল্লাহর ইচ্ছার প্রতি আত্মসমর্পিত থাকার বিষয়টা হতে হবে চূড়ান্ত। আল্লাহ যা চান, তার মর্ম বা তাৎপর্য সম্পূর্ণ বোধগম্য না হলেও তা মেনে চলার অঙ্গীকার মুমিনের শ্রেষ্ঠ আলামত।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments