মেডিক্যালে ভর্তি ॥ হাইকোর্টে দ্বিধাবিভক্ত রায়, জটিলতা কাটছে না- প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি ॥ শিক্ষার্থীদের সমাবেশের চেষ্টা, আটক পরে মুক্তি

মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়া নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা কিছুতেই কাটছে না। রবিবার সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের ঘোষণা দেয়ার পর সোমবার ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার দাবিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।


ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে ওই স্মারকলিপি দেন। একই দাবিতে চট্টগ্রামেও অবস্থান কর্মসূচী পালন করছে ভর্তিচ্ছুরা। শিক্ষার্থীরা নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে জিইসি মোড়ে অবস্থান নিলে সারা শহরে যানজট সৃষ্টি হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হলেও নিজেদের দাবিতে অনড় থাকে আন্দোলনকারীরা। দুপুর একটার পরে পরিস্থিতি আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়। এদিকে ভর্তি পরীক্ষা শুরুর নির্দেশনা চেয়ে দায়ের করা আবেদনে দ্বিধাবিভক্ত আদেশ দিয়েছে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। অপরদিকে একই বেঞ্চ ঐকমত্যে নতুন একটি রুল জারি করেছে।
এর আগে রবিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মেডিক্যাল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী মঞ্চের ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করে দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় আন্দোলনকারীরা। ঘোষণা অনুসারে সোমবার মেডিক্যালের ভর্তি পদ্ধতি পরিবর্তনের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা সকালে সমাবেশ করার জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয় এবং ওই আটজনকে আটক করে। পুলিশের বাধার মুখে শহীদ মিনার থেকে সরে গিয়ে আন্দোলনকারীরা সকাল ১০টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের সামনে অবস্থান নেয়। কিন্তু কিছুক্ষণ পর পুলিশ সেখান থেকেও তাদের তুলে দেয়। এ সময় আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে ঢাকা মেডিক্যালসহ আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। পরে অবশ্য আটককৃতদের ছেড়ে দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন রাজু ভাস্কর্যের সামনে শিক্ষার্থীরা সমাবেশ করে। সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে শাহবাগ মোড়ে তাদের আটকে দেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশের সঙ্গে কথা বলে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যায়। দলের সদস্য অনন্যা বণিক ফিরে এসে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আমাদের স্মারকলিপি গ্রহণ করা হয়েছে। সেখান থেকে একটি ফোন নম্বর দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাইলে ওই নম্বরে ফোন করে আগে থেকে সাক্ষাতের সময় ঠিক করতে বলা হয়েছে। মেডিক্যালে ভর্তিচ্ছু সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা বিশৃঙ্খলা করতে আসিনি। ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানাতে এসেছি। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী। তিনি বলেন, রাষ্ট্র যদি আগে থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে সময় মতো জানাত, তাহলে আর এই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতো না। তাছাড়া ভর্তি পদ্ধতি বাতিলের মতো একটি বিষয় অন্তত দুই বছর আগে শিক্ষার্থীদের জানানো প্রয়োজন। তাহলে তাদের প্রস্তুতি নিতে সুবিধা হয়। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া স্মারকলিপিতে জিপিএর ভিত্তিতে ভর্তির সিদ্ধান্ত বাতিল করে পরীক্ষা পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবির পক্ষে ১৪টি যুক্তি তুলে ধরেছেন আন্দোলনকারীরা। আজ মঙ্গলবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আবার তারা সমবেত হবেন এবং ১০টা থেকে সেখানে মানববন্ধন করবেন। অন্যদিকে পুরনো পদ্ধতিতে অর্থাৎ ভর্তি পরীক্ষা শুরুর নির্দেশনা চেয়ে দায়ের করা আবেদনে দ্বিধাবিভক্ত আদেশ সোমবার দিয়েছে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। অপরদিকে একই বেঞ্চ ঐকমত্যে নতুন একটি রুল জারি করেছে। সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী ড. ইউনুস আলী আকন্দের দায়ের করা ওই আবেদনের শুনানি করে সোমবার বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী তা মঞ্জুর করেন। অন্যদিকে কনিষ্ঠ বিচারপতি মোঃ আশরাফুল কামাল তা খারিজ করে দেন।
এ বিষয়ে ইউনুস আলী আকন্দ সাংবাদিকদের বলেন, এখন আবেদনটি প্রধান বিচারপতির কাছে যাবে। তিনি তৃতীয় বেঞ্চ গঠন করবেন। সেখানে আবেদনটির নিষ্পত্তি হবে। আগামী এক সপ্তাহের অবকাশের মধ্যেই তা হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। এর আগে ড. ইউনুস আলী আকন্দের রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল করে জিপিএর ভিত্তিতে মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না-তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিল হাইকোর্ট। চার সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্য সচিব, শিক্ষা সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল আদালতের আদেশে। অপরদিকে জুনায়েদ রহমান ইয়াম নামে এক মেডিক্যাল ভর্তিচ্ছুকের পিতা ডা. একে মিজানুর রহমান নতুন রিট আবেদনটি দায়ের করেছেন। সোমবার ওই রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে অবকাশকালীন এই বেঞ্চ ঐকমত্যে একই ধরনের রুল জারি করেছে। একই বিবাদীদের এক সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। আদালতে রিটকারীদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, এ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন এবং মোঃ নজরুল ইসলাম রাজন। উভয় রিটে সরকার পক্ষে শুনানি করেন, এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তাঁকে সহায়তা করেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল মোঃ ইকরামুল হক টুটুল। ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল মোঃ ইকরামুল হক টুটুল সাংবাদিকদের বলেন, আদালত এই রিটে রুল দিয়েছে। উভয় রুলের শুনানি একত্রে হবে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
উল্লেখ্য, এতদিন মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তিতে পরীক্ষা নেয়া হলেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক অধ্যক্ষদের সুপারিশ অনুসারে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে জানান, এবার থেকে আর ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে না। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জিপিএর ভিত্তিতেই এমবিবিএস ও ডেন্টাল বা বিডিএস কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে সে সময় থেকেই ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। তবে সরকারের সিদ্ধান্তের পক্ষেও বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচী পালন করে কিছু শিক্ষার্থী। অভিযোগ উঠেছে, ভর্তি পরীক্ষার পক্ষে যে আন্দোলন চলছে তার পেছনে আছে বিভিন্ন কোচিং সেন্টার।

No comments

Powered by Blogger.