নতুন বার্তা নিয়ে সিমিন হোসেন রিমি by কেয়া চৌধুরী
এটি একটি চমৎকার দৃশ্য! বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীন পরিবারের সদস্যদের একত্রে একই ছবির ফ্রেমে দেখে মনে হয়েছিল একটা জীবন্ত ইতিহাসের ক্যানভাস! বাংলার স্বাধীনতা চেতনায় বিশ্বাসী প্রত্যেকটি মানুষের এমন দৃশ্য দেখে পরম তৃপ্তি অনুভব হবারই কথা।
বাংলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কিংবা রাজনৈতিক ইতিহাস পাঠে বোঝা যায়, কত সমৃদ্ধ জাতি আমরা। এমন দেশ বিশ্বে বিরল যেখানে দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন সংগ্রামে, গণমানুষের রাজনৈতিক দল সৃষ্টি হয়। এমন নেতা বিশ্বে দ্বিতীয়টি নেই যেখানে দলের স্বার্থে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিত মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেন। এ তো আমাদের বাংলার নেতা বঙ্গবন্ধুর পক্ষেই সম্ভব। আমরা ইতিহাস জেনে গর্ববোধ করি। যখন দেখি, আমাদের জন্য বাংলাদেশ নামক স্বাধীন দেশটি নির্মাণ করেছেন আমাদের দেশের সাহসী বীররা। তবে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ব্যতীত বা বঙ্গবন্ধু বিহীন বাংলাদেশ সৃষ্টি যেমন অসম্ভব ছিল তেমনি বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া আদর্শ ও চেতনাবিহীন বাংলাদেশের অস্তিত্ব সর্বকালেই শূন্য। কেননা তাঁর সমস্ত জীবনের সংগ্রাম ছিল বাংলার খেটেখাওয়া সাধারণ মানুষের মুক্তি ও উন্নয়নের জন্য। তাই বাংলাদেশের পরিচয়ের সঙ্গে বিশ্বসমাজ অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে শেখ মুজিবুর রহমানকে। শেখ মুজিবুরের জন্য বাংলাদেশ, বীরের দেশ হিসেবে গর্ব করতে পারে। বঙ্গবন্ধু বাঙালী জাতীয়তাবোধের স্রষ্টা। তাই তিনি আমাদের জাতির জনক। ইতিহাস হতে আমরা আরও জেনেছি, মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু আজন্ম দেখেছিলেন, তাঁর গ্রেফতার হবার পর তা বাস্তবায়ন করাকেই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন বঙ্গবন্ধুর অনুসারী, শুদ্ধ রাজনৈতিক নেতা, তাজউদ্দীন আহমেদ।
সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, মনসুর আলী ও কামরুজ্জামান বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে শত প্রতিকূলতার মাঝে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে দেয়া দিকনির্দেশনাকে তুলে ধরতে পেরেছিলেন যথার্থভাবে। প্রতিটি বাঙালীর হৃদয়ের দ্বারপ্রান্তে হাজির করতে পেরেছিলেন প্রিয় নেতার আদর্শ। তাই মুক্তিকামী বাংলার সাধারণ মানুষ নিজের জীবন বাজি দিয়ে প্রমাণ করেছে তারা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের জন্য কত কি না ত্যাগ করতে পারে। ইতিহাস আমাদের যে স্থির সিদ্ধান্তের দিকে ধাবিত করে তা হলো, বঙ্গবন্ধু তাঁর যোগ্য অনুসারী জাতীয় চার নেতা বিশেষ করে মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের ওপর মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে দূরদর্শী নেতার পরিচয় দিয়েছিলেন। তাজউদ্দীন তাঁর মেধা, প্রজ্ঞা, সর্বোপরি দেশপ্রেমের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করেছেন স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রামে। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর আবদান আকাশছোঁয়া। আজ আমাদের নতুনদের কাছে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা বিশেষ করে তাজউদ্দীন আহমদ সত্য, সুন্দর, নীতি ও দেশপ্রেমের মডেল। আমরা বিশ্বাস করি, তাঁরা কেবলই দিয়েছেন, আমাকে, আমাদেরকে, সবাইকে। জাতি তাঁদের কাছে ঋণী।
জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা, তাঁর পিতার মতোই বিজ্ঞ ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে আরও একটি দুর্লভ নজির সৃষ্টি করলেন। দেশের প্রধানমন্ত্রী, বৃহত্তর রাজনৈতিক দলের সভানেত্রী হয়ে তিনি দেখিয়ে দিলেন শ্রদ্ধেয়, সম্মানিতজনদের প্রতি কিভাবে সম্মান জানানো যায়। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার জন্য যোগ্য মানুষটিকে চিনে নিতে শেখ হাসিনা ভুল করেননি। সিমিন হোসেনকে অনেকটা নিজের হাতে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী করে এটাই প্রমাণ করলেন, পিতার ভালবাসার মানুষগুলোকে তিনি কত যতœসহকারে ভালবাসা দিয়ে অন্তরে লালন করেন। সোহেল তাজ যখন বার বার পদত্যাগ করতে চাইছিলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা যেন শুনেও নীরব থেকেছেন। মনে হয়েছে, সোহেল তাজকে ধরে রাখতে চেয়েছেন, অবুঝ মায়ার বাধনে বেঁধে রাখতে চেয়েছেন। তিনি নিজে জোহরা তাজউদ্দীনের সঙ্গে সাক্ষাত করে আবারও মনে করিয়ে দিলেন, দুর্দিনের বন্ধুকে সুদিনে ভুলতে হয় না। দেশবাসী দেখল, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার পরিবারের বন্ধন কত অটুট। কত আন্তরিক, মধুর। প্রধানমন্ত্রীর এ দিকনির্দেশনা আমাদের সকলের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ। স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষের মনে প্রধানমন্ত্রীর তরফ হতে এমন উজ্জ্বল চমক অত্যন্ত সুখকর বিষয় হিসেবেই প্রভাব ফেলেছে সবার মনে। বঙ্গবন্ধুর কন্যাদের কাছ থেকে জাতি তো এমন বিরল কর্মই প্রত্যাশা করে।
সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর বলিষ্ঠ অনুসারী সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, মনসুর আলী এবং কামরুজ্জামান এটি জীবনের লক্ষ্য হিসেবে স্থির করেছিলেন। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি, ষড়যন্ত্রকারীরা সোনার বাংলাকে শ্মশানে পরিণত করতে গিয়ে হত্যা করেছে জাতির জনককে সপরিবারে। তার সঙ্গে কেন্দ্রীয় জেলখানায় হত্যা করেছে জাতীয় চার নেতাকে। বাঙালী জাতিকে পঙ্গু করতে যা যা করা দরকার সব তারা করেছে। তারা জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে বিভিন্ন গল্প-কাহিনী রচনা করেছে। সৃষ্টি করেছে বিকৃত ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা এ দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় ত্যাগ ও বলীয়ানের আদর্শের প্রতীক। তাঁরা আমাদের অনাগত প্রজন্মের কাছে চেতনাগত শক্তি ও সাহস যোগাবেন অনাদিকাল। কুচক্রিরা সেই চেতনার জায়গাটায় আঘাত করতে সর্বদা সচেষ্ট ছিল, এখনও আছে। ষড়যন্ত্রকারীরা জানে এ শক্তিকে নস্যাত করতে না পারলে তারা শত চেষ্টা করেও বাঙালীর এ দৃঢ় চেতনার জায়গাকে ভাঙতে পারবে না।
সব কিছুর অবসান করলেন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা। তাঁর এ পদক্ষেপ বাঙালীর মূল আদর্শের আস্থার জায়গাটি আরও সুদৃঢ় ও মজবুত হলো। শেখ হাসিনার এ পদক্ষেপ জাতীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ইতিবাচক দৃষ্টান্ত হিসেবে মূল্যায়িত হবে।
তাজউদ্দীন সাহেবের কন্যা, সিমিন হোসেন রিমি ব্যক্তিটি এমন যে, আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি তাদের কাছে অনেকটা জীবন্ত ইতিহাসের মতন। তাঁর কাছে গেলে তিনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে আমাদের সামনে পাঠ করেন একেবারে প্রকৃতরূপে, কোনরূপ ভণিতা ছাড়া। তাঁর সম্পাদিত বইগুলো আমাদের বাংলাদেশের দুর্লভ মুহূর্তে ইতিহাসকে সহজ-সাবলীল ভাষায় জানাতে সাহায্য করে। সবচেয়ে বড় ও সার্থকভাবে তিনি যে কাজটি করেছেন তা হলোÑবাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের মতো এত বড় মাপের একজন মানুষকে পরম মমতায় যথার্থভাবে আমাদের সামনে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। তাজউদ্দীন আহমদ যে কত সাধারণের মধ্যে অসাধারণ নেতা, তা আমরা নতুনরা জানতে পারি সিমিন হোসেন রিমির উদ্যোগে। ব্যক্তি হিসেবে সিমিন হোসেন স্থির ব্যক্তিত্ব, বিনয়ী, সজ্জন, সহযোগিতাপ্রবণ একজন দৃঢ়চেতা রাজনৈতিক মানুষ। বাংলার মাটি ও মানুষ তাঁর গভীর অনভূতিতে আছে। তাঁর গড়া পাঠচক্র তাঁকে পরিচিত করেছে নতুন আঙ্গিকে নতুনদের কাছে।
সিমিন হোসেন রিমি আওয়ামী রাজনীতির মূল আদর্শের চেতনা বিকাশে একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। এবার সরাসরি নির্বাচনে এসেছেন, তাই তাঁকে অভিনন্দন জানাই। আমরা আশা রাখব, তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে হিসেবে তিনি বঙ্গবন্ধুর মূল আদর্শের পথটি ধরেই তাঁর পিতার মতন দেশ ও দশের উপকারে ব্রতী হবেন। তাঁর কাছে দেশ ও জাতির অনেক আশা। বিশেষ করে তরুণরা অনেক কিছু শিখতে চ্্্্্্্্্্্্্্ায়। এখানে একটি বিষয় বলতে চাই, তা হলো প্রায়শই অনেককে বলতে শুনি ‘এখন আর ভাল মানুষের রাজনীতির দিন নেই। শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা তো রাজনীতিতে আসতেই চায় না।’ যাঁরা এমনটা বলেন, বোধকরি তাঁদের বলার ধরনটা এবার কিছুটা হলেও বদলাবে। সিমিন হোসেনের মতো ক্লিন ইমেজের মানুষ রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে আসা মানে, শুদ্ধ রাজনীতি চর্চাই সমাজসেবার উত্তম পথ। এখনও রাজনীতিবিদদের ওপর মানুষ আস্থা রাখে। রাজনীতিবিদরা পারে মানুষের উন্নয়নে, দেশের উন্নয়নে অনেক বড় পরিসরে কাজ করতে। মানুষকে সাহায্য করতে। অবশ্য ব্যক্তিবিশেষ এর ভিন্নতাও দেখা দিতে পারে। সম্পূর্ণ বিষয়টাই নির্ভর করে ব্যক্তির নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির ওপর। তবে এ ক্ষেত্রে দলীয় আদর্শ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এখনও বাংলাদেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক সচেতন মানুষ মনে করেন যে আওয়ামী লীগই একমাত্র দল যেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনানির্ভর সুস্থ, গণতান্ত্রিক ধারায় রাজনীতির চর্”া হয়। তাই স্বাভাবিকভাবেই এ দলের প্রতি মানুষের প্রত্যাশার জায়গাটি অনেক বড়। দেশ, মানুষ, মহান মুক্তিযুদ্ধ এসব বিষয়ের প্রতি যারা দুর্বল তাদের জন্য দলে হতে পারে উপযুক্ত স্থান। বাংলার তাজ, তাজউদ্দীনের কন্যা সিমিন হোসেন রিমির নির্বাচনে আসা নতুনদের মাঝে এমনই ইতিবাচক ইঙ্গিত বয়ে আনবে।
আমরা নিশ্চিত, গাজীপুর-৪ আসনের জনগণ সিমিন হোসেনকে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করবেন। কারণ সিমিন হোসেন রিমি অসাম্প্রদায়িক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, সৎ, নৈতিকতাবোধ সম্পন্ন একজন স্নেহময়ী মানুষ। ব্যক্তিগত লোভ-লালসা-ভোগের রাজনীতি থেকে তিনি সর্বদা দূরে থেকেছেন। শুধুই জনগণের সেবার লক্ষ্যে রাজনীতি করার এমন দুর্লভ মানসিকতাসম্পন্ন নেতার বড্ড প্রয়োজন এখন বাংলাদেশের।
অবশেষে বলতে চাই
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দলের প্রধান হয়ে, শত প্রতিকূলতার মধ্যে থেকে শুদ্ধ রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে সমুন্নত রাখতে আপনার এই যে আন্তরিক প্রয়াস তার জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনা আপনাকে জানাই ধন্যবাদ। সিমিন হোসেন রিমি নতুন এই যাত্রাপথে আপনার প্রতি রইল অনেক, অনেক শুভ কামনা!
লেখক : আইনজীবী ও সমাজকর্মী
Kchowdhury71@gmail.com
No comments