ছয় মাস পেরিয়ে by তৌহিদা শিরোপা
বয়স পেরিয়েছে ছয় মাস। সাহায্য নিয়ে একটু করে বসার চেষ্টা করা। মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি নতুন খাবার খাওয়া। হাতের কাছে কিছু পেলেই মুখে দেওয়া। দাঁতের মাড়িও শক্ত হতে থাকা। শিশুর মধ্যে এ ধরনের পরিবর্তন সাধারণত ছয় মাস বয়সের পরেই দেখা যায়।
কিন্তু নতুন এই পরিবর্তনের সঙ্গে সন্তানকে যেমন পরিচিত করে তুলতে হবে, তেমনি মা-বাবাকেও এর সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হবে।
এ বিষয়ে কথা বলেন বারডেম হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান তাহমিনা বেগম। তিনি বলেন, ‘ছয় মাস পরে শিশুকে মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি বাড়িতে তৈরি স্বাভাবিক খাবার খাওয়াতে হবে। তা না হলে শিশু অপুষ্টিতে ভুগতে থাকে। নরম করে খিচুড়ি, ভাত-মাছ, মাংস, ডাল, ডিম, সবজি, সুজি, ফল বা তাজা ফলের রস শুরুতে অল্প করে দিতে হবে। যদি শিশু তা খেতে না চায়, তাহলে জোর করা যাবে না। তাই বলে হাল ছেড়ে দিলেও হবে না। পরে আবার চেষ্টা করতে হবে খাওয়ানোর। দেখা গেল একটা খাবার হয়তো দুই দিন আগ্রহ নিয়ে খেয়েছে। এরপর আর খেতে চাইছে না। তখন অন্য কোনো নতুন খাবার খাওয়াতে হবে।’ অনেকে মনে করেন, সারা দিন ধরেই শিশুকে খাওয়াতে হয়। এটি ঠিক নয়। সকাল, দুপুর ও রাতে পরিপূর্ণ খাওয়ার ফাঁকে ফল বা হালকা কোনো খাবার দিতে পারেন। আর মায়ের দুধ তো চলবেই। ঘন ঘন খাওয়ালে শিশু খাবারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। শক্ত খাবার একটু পেস্ট করেও দিতে পারেন।
এই সময়টায় শিশু হামাগুড়ি দেওয়ার, একা উঠে বসার চেষ্টা করে। নাগালের মধ্যে যা পায়, তা-ই সে মুখে দেয়। অনেক সময় নিজের হাতও সারাক্ষণ মুখে দিয়ে থাকে। সে কারণে ওর হাত ও চারপাশের জিনিস সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। লোমশ ধরনের খেলনা না দিয়ে ধুয়ে দেওয়া যায় এ ধরনের খেলনা দিতে পারেন। মাড়ি শক্ত হওয়ার সময়ে শিশুরা কামড়ানোর চেষ্টা করে। সে সময় আপেল, পেয়ারা বা শসার মতো ফল এক ফালি কেটে দিতে পারেন। সেটি সে চিবোতে পারে। অনেক মা-বাবা অবশ্য টিদার দেন। তবে চিকিৎসকেরা মনে করেন, এসব কৃত্রিম জিনিস না দিয়ে প্রাকৃতিক ফল হাতে ধরিয়ে দেওয়া ভালো। তবু দিতে হলে সে ক্ষেত্রে হালকা গরম পানিতে টিদার পরিষ্কার করে শিশুকে দেওয়া উচিত।
বেসরকারি সংস্থা পপুলেশন কাউন্সিলের জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা সিগমা আইনুল। তাঁর ছেলে রায়ানের বয়স এখন সাড়ে আট মাস। তিনি বলেন, ‘ছয় মাস বয়স থেকেই রায়ান হাতে ভর দিয়ে উঠতে শুরু করে (পুশ-আপ)। হাততালি দিতে শিখেছে। বালিশ বা কোনো কিছুর সাহায্য নিয়ে বসতেও পারে। এ ছাড়া বুকের দুধের পাশাপাশি একটু একটু করে ওকে নতুন খাবার খাইয়েছি। শুরুতে শুধু চাল-ডাল দিয়ে খিচুড়ি তৈরি করে খাইয়েছি। পরে এর সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের সবজি যেমন মিষ্টিকুমড়া, পেঁপে দিয়েছি। ডিমের কুসুম, মাছ এসবও ওকে ধীরে ধীরে খাওয়ানো হচ্ছে। প্রতিদিন একই খাবার না দিয়ে একটু বদলে দিলে ওরাও খেয়ে মজা পাবে। নতুন খাবার দিলে প্রথমে শিশুরা মুখ সরিয়ে নেয়। আবার খাওয়াতে হবে। নতুন খাবার দেওয়ার পরে শিশুর হজমের দিকে লক্ষ রাখতে হবে। যদি ঠিকমতো হজম না হয় কিংবা পাতলা পায়খানা হয়, তাহলে কিছুদিন অপেক্ষা করে আবার খাওয়াতে হবে।’
অনেক সময় শিশুর বিশেষ কোনো খাবারে অ্যালার্জি থাকে। অভিজ্ঞতা থেকে সিগমা বললেন, ‘দুই দিন অপেক্ষা করে দেখতে পারেন নতুন খাবারে শিশুর সমস্যা হলো কি না। খাবার একদম পেস্ট না করে দিয়ে হালকা শক্ত রাখি। যাতে ওর চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাসটা হয়। আমরা যখন খাওয়ার টেবিলে বসি, উঁচু চেয়ার দিয়ে ওকেও পাশে বসাই। হাতে শসা বা আপেল, পেয়ারা এক ফালি দিয়ে দিই। টিদারের চেয়ে এসবই ও পছন্দ করে। এ ছাড়া খেলনা অবশ্যই পরিষ্কার করে দেওয়া হয়। খেলনাগুলো উজ্জ্বল রঙের, বিভিন্ন আকারের হলে ভালো।’
কর্মজীবী মায়েদের জন্য ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটির পর জীবনের আরেকটি অধ্যায় যেন শুরু হয়। সিগমা আইনুল বলেন, ‘ছয় মাস পুরো মায়ের যত্নে সন্তান থাকার পর হঠাৎ নতুন কারও কাছে থাকতে বা নতুন কোনো পরিবেশে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। আমার কাজে যোগ দেওয়ার প্রায় দুই সপ্তাহ আগে থেকে ওকে আমার শাশুড়ির কাছে তিন-চার ঘণ্টা করে রেখেছি, যাতে আমাকে ছাড়া থাকতে পারে। এই ছয় মাস কোন রুটিনে সে চলবে তা নিজেরা আলোচনা করে নিয়েছি। আরেকটি বিষয় হলো, এই বয়স থেকেই ওরা মুখে নানা ধরনের শব্দ করতে থাকে। সে কারণে ওদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। যেমন, চলো, আমরা এখন গোসল করতে যাই, ঘুমাতে যাই, কী খাবে আজ ইত্যাদি। এতে ওদের অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।’
ঢাকার গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিশুবর্ধন ও সামাজিক সর্ম্পক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মোরশেদা বেগম বলেন, ‘সামাজিক বিকাশের জন্য এ সময় শিশুকে মানুষের সামনে আনতে হবে। ও কথা বলতে না পারলেও ওকে পরিচয় করে দিতে হবে সবার সঙ্গে। এ ছাড়া অভিভাবককে বুঝতে হবে শিশু কোন পোশাকে কোন পরিবেশে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। কোন ধরনের পোশাক পরলে শিশুটি খুশি হয় সে ধরনের আরামদায়ক ও উজ্জ্বল রঙের পোশাক পরাতে হবে। সব মিলিয়ে অভিভাবককে বিশেষ করে মাকে ধৈর্যের সঙ্গে শিশুর ছয় মাস পরের এসব পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে।
এ বিষয়ে কথা বলেন বারডেম হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান তাহমিনা বেগম। তিনি বলেন, ‘ছয় মাস পরে শিশুকে মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি বাড়িতে তৈরি স্বাভাবিক খাবার খাওয়াতে হবে। তা না হলে শিশু অপুষ্টিতে ভুগতে থাকে। নরম করে খিচুড়ি, ভাত-মাছ, মাংস, ডাল, ডিম, সবজি, সুজি, ফল বা তাজা ফলের রস শুরুতে অল্প করে দিতে হবে। যদি শিশু তা খেতে না চায়, তাহলে জোর করা যাবে না। তাই বলে হাল ছেড়ে দিলেও হবে না। পরে আবার চেষ্টা করতে হবে খাওয়ানোর। দেখা গেল একটা খাবার হয়তো দুই দিন আগ্রহ নিয়ে খেয়েছে। এরপর আর খেতে চাইছে না। তখন অন্য কোনো নতুন খাবার খাওয়াতে হবে।’ অনেকে মনে করেন, সারা দিন ধরেই শিশুকে খাওয়াতে হয়। এটি ঠিক নয়। সকাল, দুপুর ও রাতে পরিপূর্ণ খাওয়ার ফাঁকে ফল বা হালকা কোনো খাবার দিতে পারেন। আর মায়ের দুধ তো চলবেই। ঘন ঘন খাওয়ালে শিশু খাবারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। শক্ত খাবার একটু পেস্ট করেও দিতে পারেন।
এই সময়টায় শিশু হামাগুড়ি দেওয়ার, একা উঠে বসার চেষ্টা করে। নাগালের মধ্যে যা পায়, তা-ই সে মুখে দেয়। অনেক সময় নিজের হাতও সারাক্ষণ মুখে দিয়ে থাকে। সে কারণে ওর হাত ও চারপাশের জিনিস সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। লোমশ ধরনের খেলনা না দিয়ে ধুয়ে দেওয়া যায় এ ধরনের খেলনা দিতে পারেন। মাড়ি শক্ত হওয়ার সময়ে শিশুরা কামড়ানোর চেষ্টা করে। সে সময় আপেল, পেয়ারা বা শসার মতো ফল এক ফালি কেটে দিতে পারেন। সেটি সে চিবোতে পারে। অনেক মা-বাবা অবশ্য টিদার দেন। তবে চিকিৎসকেরা মনে করেন, এসব কৃত্রিম জিনিস না দিয়ে প্রাকৃতিক ফল হাতে ধরিয়ে দেওয়া ভালো। তবু দিতে হলে সে ক্ষেত্রে হালকা গরম পানিতে টিদার পরিষ্কার করে শিশুকে দেওয়া উচিত।
বেসরকারি সংস্থা পপুলেশন কাউন্সিলের জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা সিগমা আইনুল। তাঁর ছেলে রায়ানের বয়স এখন সাড়ে আট মাস। তিনি বলেন, ‘ছয় মাস বয়স থেকেই রায়ান হাতে ভর দিয়ে উঠতে শুরু করে (পুশ-আপ)। হাততালি দিতে শিখেছে। বালিশ বা কোনো কিছুর সাহায্য নিয়ে বসতেও পারে। এ ছাড়া বুকের দুধের পাশাপাশি একটু একটু করে ওকে নতুন খাবার খাইয়েছি। শুরুতে শুধু চাল-ডাল দিয়ে খিচুড়ি তৈরি করে খাইয়েছি। পরে এর সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের সবজি যেমন মিষ্টিকুমড়া, পেঁপে দিয়েছি। ডিমের কুসুম, মাছ এসবও ওকে ধীরে ধীরে খাওয়ানো হচ্ছে। প্রতিদিন একই খাবার না দিয়ে একটু বদলে দিলে ওরাও খেয়ে মজা পাবে। নতুন খাবার দিলে প্রথমে শিশুরা মুখ সরিয়ে নেয়। আবার খাওয়াতে হবে। নতুন খাবার দেওয়ার পরে শিশুর হজমের দিকে লক্ষ রাখতে হবে। যদি ঠিকমতো হজম না হয় কিংবা পাতলা পায়খানা হয়, তাহলে কিছুদিন অপেক্ষা করে আবার খাওয়াতে হবে।’
অনেক সময় শিশুর বিশেষ কোনো খাবারে অ্যালার্জি থাকে। অভিজ্ঞতা থেকে সিগমা বললেন, ‘দুই দিন অপেক্ষা করে দেখতে পারেন নতুন খাবারে শিশুর সমস্যা হলো কি না। খাবার একদম পেস্ট না করে দিয়ে হালকা শক্ত রাখি। যাতে ওর চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাসটা হয়। আমরা যখন খাওয়ার টেবিলে বসি, উঁচু চেয়ার দিয়ে ওকেও পাশে বসাই। হাতে শসা বা আপেল, পেয়ারা এক ফালি দিয়ে দিই। টিদারের চেয়ে এসবই ও পছন্দ করে। এ ছাড়া খেলনা অবশ্যই পরিষ্কার করে দেওয়া হয়। খেলনাগুলো উজ্জ্বল রঙের, বিভিন্ন আকারের হলে ভালো।’
কর্মজীবী মায়েদের জন্য ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটির পর জীবনের আরেকটি অধ্যায় যেন শুরু হয়। সিগমা আইনুল বলেন, ‘ছয় মাস পুরো মায়ের যত্নে সন্তান থাকার পর হঠাৎ নতুন কারও কাছে থাকতে বা নতুন কোনো পরিবেশে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। আমার কাজে যোগ দেওয়ার প্রায় দুই সপ্তাহ আগে থেকে ওকে আমার শাশুড়ির কাছে তিন-চার ঘণ্টা করে রেখেছি, যাতে আমাকে ছাড়া থাকতে পারে। এই ছয় মাস কোন রুটিনে সে চলবে তা নিজেরা আলোচনা করে নিয়েছি। আরেকটি বিষয় হলো, এই বয়স থেকেই ওরা মুখে নানা ধরনের শব্দ করতে থাকে। সে কারণে ওদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। যেমন, চলো, আমরা এখন গোসল করতে যাই, ঘুমাতে যাই, কী খাবে আজ ইত্যাদি। এতে ওদের অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।’
ঢাকার গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিশুবর্ধন ও সামাজিক সর্ম্পক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মোরশেদা বেগম বলেন, ‘সামাজিক বিকাশের জন্য এ সময় শিশুকে মানুষের সামনে আনতে হবে। ও কথা বলতে না পারলেও ওকে পরিচয় করে দিতে হবে সবার সঙ্গে। এ ছাড়া অভিভাবককে বুঝতে হবে শিশু কোন পোশাকে কোন পরিবেশে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। কোন ধরনের পোশাক পরলে শিশুটি খুশি হয় সে ধরনের আরামদায়ক ও উজ্জ্বল রঙের পোশাক পরাতে হবে। সব মিলিয়ে অভিভাবককে বিশেষ করে মাকে ধৈর্যের সঙ্গে শিশুর ছয় মাস পরের এসব পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে।
No comments