শ্রদ্ধা গান কবিতা ও কথামালায় কবি নজরুল স্মরণ- প্রয়াণ বার্ষিকীতে বিভিন্ন কর্মসূচী
অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করে দেশ গড়ার আহ্বানের মধ্য দিয়ে সোমবার পালিত হলো জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। শ্রদ্ধা, গান, কবিতা ও কথামালায় স্মরণ করা হয় বিপ্লব, প্রেম ও সাম্যের প্রতীক অসাম্প্রদায়িক চেতনার এই কবিকে।
তাঁর প্রয়াণ বার্ষিকীতে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচী পালন করা হয়। তবে নানা আয়োজন থাকলেও জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকীতে ছিল না বৃহৎ পরিসরে কোন অনুষ্ঠান। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শুধু বাংলা একাডেমী ও নজরুল একাডেমী ছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষে স্বতন্ত্র কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি। নজরুল সঙ্গীত শিল্পী পরিষদ, নজরুল সঙ্গীত সংস্থা, নজরুল ইনস্টিটিউট, শিল্পকলা একাডেমী কিংবা ছায়ানটের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর ছিল না কোন আয়োজন। আর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে এসব প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ঈদের ছুটির অজুহাত দিয়ে বলা হয়েছে, অনেকেই ঈদের ছুটিতে থাকায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। যদিও ঈদের প্রায় এক সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের কোন আয়োজন না থাকলেও নজরুজলপ্রেমী ও সর্বসাধারণের হৃদয় উৎসারিত শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় উদ্্যাপিত হয়েছে সাহিত্য ও শিল্পের নতুন পথের দিশারী এই কবির প্রয়াণ বার্ষিকী। কবির অসাম্প্রদায়িক ও মানবতাবাদী চেতনার অনুরণন ছিল গোটা জাতির অন্তরে। জাতীয় দৈনিকগুলো গুরুত্ব সহকারে ছেপেছে জাতীয় কবির প্রয়াণ বার্ষিকীর সংবাদ। এছাড়াও বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের পক্ষ থেকে ছিল গান, কবিতা, নাটকসহ নানা আয়োজন।
আবৃত কবির সমাধি
পুব আকাশে সূর্যের রক্তিম আভার দেখা মিলতেই সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদসংলগ্ন কবির সমাধিতে পুষ্পাঞ্জলি নিবেদনের মাধ্যমে শুরু হয় স্মরণের কর্মসূচী। পুষ্পাঞ্জলি নিবেদনের কিছুক্ষণের মধ্যেই বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, কবি-সাহিত্যিক এবং সর্বসাধারণের দেয়া ফুলে ফুলে আচ্ছাদিত হয়ে যায় কবির সমাধি। কবির সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি অনুষ্ঠিত হয় স্মরণসভা ও নজরুলের কালজয়ী গানের পরিবেশনা। শুরুতেই কবি পরিবারের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন কবির পুত্রবধূ উমা কাজী এবং নাতনি খিলখিল কাজী ও মিষ্টি কাজী। এ সময় খিলখিল কাজী বলেন, ‘কবি সাম্যের যে চেতনা দেখিয়েছেন তা থেকে আমরা অনেক দূরে রয়েছি। তার এ চেতনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীকে লালন করতে হবে এবং তা জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।’ কবি পরিবারের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে একে একে শ্রদ্ধা জানায় কাদামাটি সংগঠন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, নজরুল ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, বাংলা একাডেমী, আন্তর্জাতিক নজরুল চর্চা কেন্দ্র (আইএনসিআর), নজরুল সঙ্গীত শিল্পী সংস্থা, নজরুল সঙ্গীত শিল্পী পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, জাতীয়তাবাদী তাঁতী দল, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টস (বাফা), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন জাসাস, নজরুল প্রমীলা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ নজরুল আবৃত্তি পরিষদ, নজরুল একাডেমী, বঙ্গবন্ধু নাগরিক সংহতি পরিষদ, আওয়ামী সাংস্কৃতিক জোট, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ নানা সংগঠন। এছাড়া অনেক নজরুলপ্রেমী ফুল দিয়ে জাতীয় কবিকে শ্রদ্ধা জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে সমাধি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক শাহিদ আক্তার হোসাইন, নজরুল বিষেশজ্ঞ রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক কামাল উদ্দিন প্রমুখ।
শুরুতে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন নজরুল বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় কবি। তাঁকে জাতীয়ভাবে মূল্যায়ন করার দায় আমাদের সবার। নজরুলের অসংখ্য সৃষ্টি-কর্ম ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিভিন্ন জায়গায়। তাঁর লেখনী আমাদের আগামী দিনের প্রেরণা। এগুলোকে সংগ্রহ করে এর সত্যিকারের চর্চা আমাদের জাতীয় জীবনের জন্য একান্ত অপরিহার্য। নজরুলকে উপেক্ষিত করার দায়ভার শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ছেড়ে দিলে চলবে না, দেশের বিভিন্ন মিডিয়াও এর জন্য দায়ী। তারা যদি নজরুলের গানগুলোকে ভালভাবে উপস্থাপন না করে তাহলে তাঁর মূল্যায়ন সম্ভব নয়। রফিকুল ইসলামের বক্তব্য শেষে ঢাবি সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষর্থীরা সম্মেলক কণ্ঠে গেয়ে শোনায় দুটি নজরুলসঙ্গীত ‘দাও শৈর্য, দাও ধৈর্য হে উদার নাথ’ ও ‘রোজ হাশরে আল্লাহ আমার করো না বিচার।’
ঢাবি উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন দিদ্দিক তাঁর বক্তব্যে বলেন, প্রতিবারই নজরুল মৃত্যুবার্ষিকী ও জন্মবার্ষিকীতে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকি। কিন্তু নজরুলের লেখনীর ব্যাপকতা অনেক। আমাদের শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে তাঁর সৃষ্টিকর্মকে সবার মধ্যে যথাযথভাবে ছড়িয়ে দেয়ার ব্যাপারে সচেষ্ট হতে হবে। নজরুলকে নিয়ে এখন অনেক গবেষণা চলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চেষ্টায় ইতোমধ্যে এ বিষয়ে অনেক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আজকের তরুণ প্রজন্মকে নজরুল সম্পর্কে আরও সচেতন হতে হবে। আমি জানি তরুণ প্রজন্ম সৃষ্টিশীল, তাই তারা যেন সব কিছুর মধ্যে নজরুলকেও নতুন করে উপস্থাপন করার চেষ্টা করে। মুক্তিযুদ্ধের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার পেছনে নজরুলের লেখনী আমাদের শক্তি যোগাবে।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক শহিদ আক্তার হোসাইন বলেন, নজরুল ছিলেন শোষণ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধের কবি। আমরা যদি দেশকে শোষণ ও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত করতে চাই, তাহলে নজরুলের আদর্শকে ধারণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
রমজানের ঐ রোজার শেষে গানের ৮০তম বর্ষ উদ্যাপন
কাজী নজরুল ইসলামের মুসলিম জাগরণ ও ঈদ উৎসবের সর্বশ্রেষ্ঠ ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে’ গানটির ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নজরুল একাডেমী। কবি, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিসেবী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নজরুলপ্রেমীসহ অনেকেই শামিল হন এ অনুষ্ঠানে। একাডেমীর শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অতিথি শিল্পীদের সম্মেলক কণ্ঠে কয়েকবার পরিবেশিত হয় গানটি। গান পরিবেশনের ফাঁকে বক্তব্য রাখেন একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক মিন্টু রহমান। গানটির পটভূমি ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে’ গানটি কাজী নজরুল ইসলামের মুসলিম জাগরণ ও ঈদ উৎসবের সর্বশ্রেষ্ঠ গান। ১৯৩২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের প্রাক্কালে কলকাতার হিজ মাস্টার ভয়েজ থেকে এই গানের রেকর্ডটি প্রকাশিত হয়। এতে কণ্ঠ দেন শিল্পী আব্বাস উদ্দীন। রেকর্ডের অপর পিঠের গানটি ছিল ‘ইসলামের ঐ সওদা লয়ে’। ইসলামী বাংলা গানের এই রেকর্ডটি তখন থেকেই বাণিজ্যিকভাবে সফল ও এখন পর্যন্ত জনপ্রিয়। আজ এই গানের ৮০ বছর পূর্ণ হলো। দেশের নজরুলপ্রেমীদের এ একটা বড় অর্জন। আমরা এর জন্য গর্ব বোধ করি। পরিশেষে গানটি পুনরায় পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ হয়।
বাংলা একাডেমীর নজরুল বিষয়ক একক বক্তৃতা
জাতীয় কবির ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিকেলে বাংলা একাডেমীর আয়োজনে একাডেমীর সেমিনার কক্ষে একক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে ‘নজরুল ইসলাম : একটি আদর্শ জীবনীর খোঁজে’ শীর্ষক একক বক্তৃতা করেন অধ্যাপক গোলাম মুরশিদ। স্বাগত ভাষণ দেন একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। সভাপতিত্ব করেন জাতীয় অধ্যাপক মুস্তাফা নূরউল ইসলাম।
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নজরুলের কবিতা আবৃত্তি করেন অধ্যাপক কাজী মদিনা এবং ড. শাহাদাৎ হোসেন নিপু। নজরুলসঙ্গীত পরিবেশন করেন সাদিয়া আফরিন মল্লিক, ড. ফকির শহিদুল ইসলাম, শেলু বড়ুয়া প্রমুখ। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন গৌতম মজুমদার, মোঃ হাসান আলী, আলমাস আলী, ফিরোজ খান ও ইফতেখার হোসেন সোহেল।
আবৃত কবির সমাধি
পুব আকাশে সূর্যের রক্তিম আভার দেখা মিলতেই সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদসংলগ্ন কবির সমাধিতে পুষ্পাঞ্জলি নিবেদনের মাধ্যমে শুরু হয় স্মরণের কর্মসূচী। পুষ্পাঞ্জলি নিবেদনের কিছুক্ষণের মধ্যেই বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, কবি-সাহিত্যিক এবং সর্বসাধারণের দেয়া ফুলে ফুলে আচ্ছাদিত হয়ে যায় কবির সমাধি। কবির সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি অনুষ্ঠিত হয় স্মরণসভা ও নজরুলের কালজয়ী গানের পরিবেশনা। শুরুতেই কবি পরিবারের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন কবির পুত্রবধূ উমা কাজী এবং নাতনি খিলখিল কাজী ও মিষ্টি কাজী। এ সময় খিলখিল কাজী বলেন, ‘কবি সাম্যের যে চেতনা দেখিয়েছেন তা থেকে আমরা অনেক দূরে রয়েছি। তার এ চেতনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীকে লালন করতে হবে এবং তা জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।’ কবি পরিবারের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে একে একে শ্রদ্ধা জানায় কাদামাটি সংগঠন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, নজরুল ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, বাংলা একাডেমী, আন্তর্জাতিক নজরুল চর্চা কেন্দ্র (আইএনসিআর), নজরুল সঙ্গীত শিল্পী সংস্থা, নজরুল সঙ্গীত শিল্পী পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, জাতীয়তাবাদী তাঁতী দল, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টস (বাফা), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন জাসাস, নজরুল প্রমীলা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ নজরুল আবৃত্তি পরিষদ, নজরুল একাডেমী, বঙ্গবন্ধু নাগরিক সংহতি পরিষদ, আওয়ামী সাংস্কৃতিক জোট, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ নানা সংগঠন। এছাড়া অনেক নজরুলপ্রেমী ফুল দিয়ে জাতীয় কবিকে শ্রদ্ধা জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে সমাধি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক শাহিদ আক্তার হোসাইন, নজরুল বিষেশজ্ঞ রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক কামাল উদ্দিন প্রমুখ।
শুরুতে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন নজরুল বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় কবি। তাঁকে জাতীয়ভাবে মূল্যায়ন করার দায় আমাদের সবার। নজরুলের অসংখ্য সৃষ্টি-কর্ম ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিভিন্ন জায়গায়। তাঁর লেখনী আমাদের আগামী দিনের প্রেরণা। এগুলোকে সংগ্রহ করে এর সত্যিকারের চর্চা আমাদের জাতীয় জীবনের জন্য একান্ত অপরিহার্য। নজরুলকে উপেক্ষিত করার দায়ভার শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ছেড়ে দিলে চলবে না, দেশের বিভিন্ন মিডিয়াও এর জন্য দায়ী। তারা যদি নজরুলের গানগুলোকে ভালভাবে উপস্থাপন না করে তাহলে তাঁর মূল্যায়ন সম্ভব নয়। রফিকুল ইসলামের বক্তব্য শেষে ঢাবি সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষর্থীরা সম্মেলক কণ্ঠে গেয়ে শোনায় দুটি নজরুলসঙ্গীত ‘দাও শৈর্য, দাও ধৈর্য হে উদার নাথ’ ও ‘রোজ হাশরে আল্লাহ আমার করো না বিচার।’
ঢাবি উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন দিদ্দিক তাঁর বক্তব্যে বলেন, প্রতিবারই নজরুল মৃত্যুবার্ষিকী ও জন্মবার্ষিকীতে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকি। কিন্তু নজরুলের লেখনীর ব্যাপকতা অনেক। আমাদের শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে তাঁর সৃষ্টিকর্মকে সবার মধ্যে যথাযথভাবে ছড়িয়ে দেয়ার ব্যাপারে সচেষ্ট হতে হবে। নজরুলকে নিয়ে এখন অনেক গবেষণা চলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চেষ্টায় ইতোমধ্যে এ বিষয়ে অনেক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আজকের তরুণ প্রজন্মকে নজরুল সম্পর্কে আরও সচেতন হতে হবে। আমি জানি তরুণ প্রজন্ম সৃষ্টিশীল, তাই তারা যেন সব কিছুর মধ্যে নজরুলকেও নতুন করে উপস্থাপন করার চেষ্টা করে। মুক্তিযুদ্ধের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার পেছনে নজরুলের লেখনী আমাদের শক্তি যোগাবে।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক শহিদ আক্তার হোসাইন বলেন, নজরুল ছিলেন শোষণ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধের কবি। আমরা যদি দেশকে শোষণ ও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত করতে চাই, তাহলে নজরুলের আদর্শকে ধারণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
রমজানের ঐ রোজার শেষে গানের ৮০তম বর্ষ উদ্যাপন
কাজী নজরুল ইসলামের মুসলিম জাগরণ ও ঈদ উৎসবের সর্বশ্রেষ্ঠ ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে’ গানটির ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নজরুল একাডেমী। কবি, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিসেবী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নজরুলপ্রেমীসহ অনেকেই শামিল হন এ অনুষ্ঠানে। একাডেমীর শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অতিথি শিল্পীদের সম্মেলক কণ্ঠে কয়েকবার পরিবেশিত হয় গানটি। গান পরিবেশনের ফাঁকে বক্তব্য রাখেন একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক মিন্টু রহমান। গানটির পটভূমি ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে’ গানটি কাজী নজরুল ইসলামের মুসলিম জাগরণ ও ঈদ উৎসবের সর্বশ্রেষ্ঠ গান। ১৯৩২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের প্রাক্কালে কলকাতার হিজ মাস্টার ভয়েজ থেকে এই গানের রেকর্ডটি প্রকাশিত হয়। এতে কণ্ঠ দেন শিল্পী আব্বাস উদ্দীন। রেকর্ডের অপর পিঠের গানটি ছিল ‘ইসলামের ঐ সওদা লয়ে’। ইসলামী বাংলা গানের এই রেকর্ডটি তখন থেকেই বাণিজ্যিকভাবে সফল ও এখন পর্যন্ত জনপ্রিয়। আজ এই গানের ৮০ বছর পূর্ণ হলো। দেশের নজরুলপ্রেমীদের এ একটা বড় অর্জন। আমরা এর জন্য গর্ব বোধ করি। পরিশেষে গানটি পুনরায় পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ হয়।
বাংলা একাডেমীর নজরুল বিষয়ক একক বক্তৃতা
জাতীয় কবির ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিকেলে বাংলা একাডেমীর আয়োজনে একাডেমীর সেমিনার কক্ষে একক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে ‘নজরুল ইসলাম : একটি আদর্শ জীবনীর খোঁজে’ শীর্ষক একক বক্তৃতা করেন অধ্যাপক গোলাম মুরশিদ। স্বাগত ভাষণ দেন একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। সভাপতিত্ব করেন জাতীয় অধ্যাপক মুস্তাফা নূরউল ইসলাম।
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নজরুলের কবিতা আবৃত্তি করেন অধ্যাপক কাজী মদিনা এবং ড. শাহাদাৎ হোসেন নিপু। নজরুলসঙ্গীত পরিবেশন করেন সাদিয়া আফরিন মল্লিক, ড. ফকির শহিদুল ইসলাম, শেলু বড়ুয়া প্রমুখ। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন গৌতম মজুমদার, মোঃ হাসান আলী, আলমাস আলী, ফিরোজ খান ও ইফতেখার হোসেন সোহেল।
No comments