উপনির্বাচন থেকে কেন দলটি দূরে থাকবে?- বিএনপির অবস্থান

গত রোববার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আপাতত আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। কেননা, এই মুহূর্তে দেশের অর্থনীতি কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে চলছে। জনজীবনেও রয়েছে নানা সংকট ও অনিশ্চয়তা।


এর ওপর বিরোধী দল হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি দিলে পরিস্থিতি যে আরও নাজুক হবে, তাতে সন্দেহ নেই। বিএনপি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সামনের দুর্গোৎসব, ঈদুল আজহা ও স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার বিষয়টিও বিবেচনায় রেখেছে।
একটি জনমুখী দল যেকোনো কর্মসূচি নেওয়ার ক্ষেত্রে জনগণের সুবিধা-অসুবিধার কথা ভাববে, এটাই স্বাভাবিক। তবে বিএনপি সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সরকার বাধা দিলে তারা কঠোর কর্মসূচি নিতেও দ্বিধা করবে না। আমরা আশা করব, এ ক্ষেত্রে সরকারের আচরণও হবে সংযত ও সহিষ্ণু। তারা এমন কোনো হঠকারী পদক্ষেপ নেবে না, যাতে রাজনৈতিক সংঘাত অনিবার্য হয়ে ওঠে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তাদের বাদ দিয়ে জাতীয় নির্বাচনের উদ্যোগ প্রতিহত করার কথা বলা হয়েছে। রোববার প্রথম আলোতে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনও ছাপা হয়েছিল। আমরা কাউকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করা কিংবা নির্বাচন প্রতিহত করার নামে দেশ অচল করার রাজনীতি সমর্থন করি না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচন হবে সব দলের অংশগ্রহণে ও নির্বিঘ্ন পরিবেশে। একতরফা নির্বাচনের প্রশ্নই ওঠে না।
জাতীয় নির্বাচন কী ধরনের সরকারের অধীনে হবে, তা নিয়ে সরকার ও বিরোধী দল মুখোমুখি। সরকার চাইছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে এ নির্বাচন হোক। আর বিরোধী দলের দাবি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। দুই পক্ষেরই যদি উদ্দেশ্য হয় একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনরায়ের প্রতিফলন ঘটানো, তা হলে আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান কঠিন নয়। কিন্তু তারা যদি নির্বাচনের আগেই রাজপথে শক্তি পরীক্ষার মাধ্যমে জয়ী হতে চায়, তা দেশ ও জনগণের জন্য মঙ্গলজনক হবে না। অতএব, এখনই আলোচনায় বসুন।
আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যখন দুই পক্ষের মধ্যে বাহাস চলছে, তখনই গাজীপুর-৪ আসনের উপনির্বাচন সমাগত। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর ভোট গ্রহণ। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টি তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। বিএনপি প্রথমে উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা বললেও পরে বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের এ সিদ্ধান্ত সমর্থনযোগ্য নয়। দলটি আন্দোলন করছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন করার দাবিতে। কিন্তু বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেই সে দাবি অসার হয়ে যাবে—বিষয়টি তা নয়। এর আগে এই সরকারের অধীনেই একটি উপনির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী জয়ীও হয়েছেন।
সে ক্ষেত্রে বিএনপির এই উপনির্বাচন বর্জন করার যুক্তি নেই। বিএনপির নেতারা যেখানে তাঁদের বাদ দিয়ে ভবিষ্যতে কোনো নির্বাচন হলে তা প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন, সেখানে কেন তাঁরা উপনির্বাচন থেকে দূরে থাকবেন?

No comments

Powered by Blogger.