দেশি-বিদেশি মালিক এবং ক্রেতাদের টনক নড়বে কবে?- ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’

পোশাকশিল্পে বাংলাদেশের উত্থান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিচ্ছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশকে বলা হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পোশাক রপ্তানির দুর্গ; অন্যদিকে দেশটিকে বিশ্ববিবেকের কাঠগড়ায়ও দাঁড় করানো হচ্ছে। এরই সর্বশেষ সংযোজন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত দৈনিক পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস-এর ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি।


বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের শ্রমিক অসন্তোষ সরকার ও মালিকপক্ষের টনক না নড়ালেও এই শিল্পের বিদেশি ক্রেতাদের টনক নড়াচ্ছে। নিউইয়র্ক টাইমস-এর প্রতিবেদনটি তারই প্রতিধ্বনি। এতে বলা হয়েছে, ইউরোপ-আমেরিকায় যে জামার দাম ৫০ ডলার, যে শ্রমিক তা বানিয়েছেন, তাঁর সারা মাসের শ্রমের মূল্য তার থেকেও কম। অর্ধাহারি-অনাহারি এই শ্রমিকেরাই উদীয়মান বাংলাদেশের শক্তি। এঁদের বেশির ভাগই নারী হওয়ায়, নারীমুক্তির সংগ্রামের সামনের সারিতেও এঁরা। এঁদের ভালো থাকার ওপরই জাতীয় উন্নতি নির্ভরশীল। অথচ বিনা প্রতিবাদে যাতে এঁদের শ্রম নিশ্চিত করা যায়, সে জন্য রয়েছে উচ্চপর্যায়ের নিরাপত্তা কমিটি, বিশেষ শিল্প পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সার্বক্ষণিক নজরদারি।
তবে খেয়াল করার বিষয়, নিউইয়র্ক টাইমস-এর প্রতিবেদন কিংবা নিকট অতীতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের বাংলাদেশ সফরের সময় উচ্চারিত সতর্কবাণী—সবই বাংলাদেশকে লক্ষ্য করে। নিশ্চয়ই শ্রমিকের বঞ্চনার প্রতিকারের প্রধান দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু বাংলাদেশি শ্রমিকের শোষণ-বঞ্চনা থেকে পাওয়া লাভের একটি অংশ তো পায় সেই সব ক্রেতা দেশের বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড কোম্পানিগুলো। তাদের বিষয়ে নিউইয়র্ক টাইমস এবং মার্কিন আইনপ্রণেতাদের কি কিছুই বলার নেই?
পোশাকশিল্প বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ ভাগের জোগানদাতা। প্রবাসী-আয়ের পর এটাই দেশের প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা আনয়নকারী খাত। এ খাতে নিযুক্ত ৩০ লাখের শ্রমবাহিনীকে সোনার হাঁস ভাবলে ভুল হবে। শ্রমিক বিক্ষোভ নয়, বরং ক্রমাগত শোষণ এবং নিপীড়নই এই খাতকে উত্তপ্ত ও অস্থিতিশীল করে তুলছে।
বিশ্বখ্যাত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ম্যাককেঞ্জির বরাতে নিউইয়র্ক টাইমস বলেছে, ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ পোশাক খাতে চীনকে ছাপিয়ে যেতে পারে। সোনার হাঁস মেরে ফেললে তা হওয়ার নয়—এই বোধোদয়টা সরকার ও পোশাকশিল্পের মালিকদেরও হতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.