পাঠকের মন্তব্য অনলাইন থেকে- যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে জনগণকে জানানো উচিত

প্রথম আলোর অনলাইনে (prothom-alo.com) প্রতিদিন রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, খেলা, প্রযুক্তি ও ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে পাঠকের মতামত প্রকাশিত হয়। তাঁদের এসব মতামত চিন্তার খোরাক জোগায় অন্যদের। গত কয়েক দিনে বিভিন্ন বিষয়ে পাঠকদের কিছু মন্তব্য ঈষৎ সংক্ষেপিত আকারে ছাপা হলো।


মেডিকেল ও অন্যান্য ভর্তি পরীক্ষা
সরকার এ বছর মেডিকেল কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে পরীক্ষাপদ্ধতি তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সিদ্ধান্তের পক্ষে-বিপক্ষে নানা কথা হচ্ছে। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মুহম্মদ জাফর ইকবাল গতকাল রোববার তাঁর ‘সাদাসিধে কথা’ কলামে এ বিষয়ে নিজের অভিমত তুলে ধরেছেন। এ সম্পর্কে আল-নোমান লিখেছেন: আমিও মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের সঙ্গে একমত। ভর্তি পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত সরকার যদি আগেই জানাত, তবে যেসব শিক্ষার্থী দ্বিতীয়বার মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে, তারা ধোঁকা খেত না।
আবু হেনা মোস্তফা জামাল: মেডিকেল কলেজে জিপিএর ভিত্তিতে ভর্তির প্রক্রিয়াকে আমিও সমর্থন করি। তবে সেটা কেন হুট করে করতে হবে? এর জন্য প্রয়োজন ছিল একটি নীতিমালার। আর শিক্ষার্থীদের আগে থেকেই বিষয়টি জানানো উচিত ছিল। জিপিএর ভিত্তিতে যদি শর্টলিস্টও করা হয়, তবু প্রার্থী হবে ২০-৩০ হাজার। সে ক্ষেত্রে যদি নম্বর দেখা হয়, তবে শুধু দুই হাজার প্রার্থীর নয়, সবার ফল প্রকাশ করতে হবে; না-হলে প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ হবে না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এই প্রক্রিয়া কার্যকর করা যেতে পারে। তবে সবার আগে প্রয়োজন এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার পরিবেশ ও মান নিয়ন্ত্রণ। কারণ, সব কেন্দ্রের পরিবেশ যদি এক রকম না হয়, সে ক্ষেত্রে সেই পরীক্ষার ফলও মেডিকেল, বুয়েট ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির মানদণ্ড হতে পারে না।
আবুল হাসান: গরিব ঘরের ছেলেমেয়েরা ১২টি বছর অক্লান্ত পরিশ্রম ও দিনরাত অধ্যয়ন করে তাদের অসাধারণ মেধার পরিচয় দিল, আর এক ফুৎকারে উচ্চবিত্তরা টাকার মায়াখেলায় মাত্র ছয় মাসের তথাকথিত কোচিং সেন্টারের জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় অসাধারণ (!) এক পরীক্ষা দিয়ে সোনার হরিণ পেয়ে গেল। কেননা, নিম্নবিত্তদের সামর্থ্য নেই কোচিং সেন্টারে পড়ার। তথাকথিত কোচিং সেন্টারগুলোর ব্যবসায় অংশীদার না হয়ে বরং কীভাবে এ ব্যবসা বন্ধ করা যায়, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য।
প্রীতি রাহা: প্রতিদিনের পত্রিকায় আমি মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষাসংক্রান্ত একটি লেখা খুঁজতাম। আজ স্যারের লেখাটি পড়ে অনেক কিছু জানতে ও বুঝতে পারলাম। আমার মতে, যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার অন্তত এক বছর আগে জনগণকে তা জানানো উচিত। এই মূল্যবান লেখার জন্য স্যারকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
বৃহৎ শক্তিকে দিয়ে চাপ প্রয়োগ করছেন মুহাম্মদ ইউনূস
গত শনিবার এক বিবৃতিতে এই অভিযোগ করেছেন দেশের ৫১ জন বিশিষ্ট নাগরিক। শনিবার সন্ধ্যায় অনলাইনে এই বিবৃতি প্রকাশের পর পাঠকের মধ্যে তীব্র নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। গতকালও অনেক পাঠক তাঁদের মতামত জানিয়েছেন প্রথম আলো ডটকমে। পাঠক মাহতাফ হোসেন লিখেছেন: দেশে কত কত সমস্যা; কিন্তু সেগুলো সম্পর্কে তো এসব বুদ্ধিজীবীকে টুঁ শব্দটি পর্যন্ত করতে শুনছি না। তাঁরা শুধু সরকারের সুরে সুর মিলিয়ে সরকারের পক্ষে যায় এমন সব বিষয়ে বিবৃতি দিতে পারেন। আর বিপক্ষে যায় এমন সব বিষয় না দেখার ভান করে মুখে কুলুপ এঁটে থাকেন।
গোলাম ওয়াদুদ: দেশের ৫১ জন বিশিষ্ট নাগরিকের এক যৌথ বিবৃতির দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয়, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ব্যক্তিগত সম্পর্কের সূত্রে বৃহৎ শক্তি ও দাতাগোষ্ঠীকে দিয়ে বাংলাদেশের ওপর নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করার ক্ষমতা রাখেন। আর সেই চাপ প্রতিহত করার ক্ষমতা আমাদের নির্বাচিত সরকারের নেই। তাহলে কার ক্ষমতা বেশি!
মনজুর: বিশিষ্ট নাগরিকদের অনেকেই শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। তবে তাঁদের প্রতি অনুরোধ, দয়া করে প্রমাণসহ কথা বলুন। রাজনৈতিক নেতাদের মতো ঢালাও মন্তব্য করবেন না। ড. ইউনূস একজন প্রতিভাবান মানুষ; আমাদের অভাগা দেশকে তিনি বিরল সম্মান এনে দিয়েছেন। আরও দিতে পারতেন, তবে সরকারের অসহযোগিতার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। জাতি হিসেবে আমরা অতি ঈর্ষাপরায়ণ। তবে মনে রাখতে হবে, যে জাতি প্রতিভার সম্মান করে না, তারা প্রতিভাবান নাগরিক পায় না।
সামিউর রহমান: প্রমাণ করুন। এমন বক্তব্য দেওয়ার আগে চিন্তা করতে হয়। গ্রামীণ ব্যাংক যে ভবিষ্যতে সোনালী, রূপালী বা জনতা ব্যাংক হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সোনালী ব্যাংকের তিন হাজার ৫০০ কোটি টাকা লুটে নেওয়া হলো, অথচ বিশিষ্ট নাগরিকেরা বিবৃতি দিতে চান না। কেন?
মঈনুল: বাস্তবতা হলো, ড. ইউনূস আইনি লড়াইয়ে হেরে গেছেন। মানুষ তাঁকে আরও বেশি শ্রদ্ধা করত যদি তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষমতায় থাকার জন্য বাইরের প্রভাবের চেষ্টা বন্ধ করতেন।
মো. লাবিব বিল্লাহ: এই বিশেষ ব্যক্তিদের নামগুলো পড়লাম এটা দেখার জন্য যে, কোনোকালে এঁরা বর্তমান সরকারের কোনো খারাপ কাজের সমালোচনা কখনো করেছিলেন কি না, তা মিলিয়ে নিতে। না, মনে পড়ল না সে রকম কিছু। কারণ কী? হয় এ সরকার খারাপ কোনো কাজই করেনি, অথবা এঁদের চোখে সরকারের খারাপ কাজ ধরা পড়ে না। পড়ে শুধু ড. ইউনূসেরটা।
হাসান: এঁদের অনেককেই ভালো জানতাম ও শ্রদ্ধা করতাম। কিন্তু দেশের কৃতী সন্তান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তাঁদের আচরণে আমি হতভম্ব!
লিটন বিশ্বাস: হায় রে বিশিষ্ট ৫১! কী করুণ ভাগ্য এ জাতির! এই হলো ৪১ বছরের প্রাপ্তি।
বিএনপিকে ছাড়াই নির্বাচন করতে চায় আ.লীগ
প্রথম আলোর প্রধান প্রতিবেদনে গতকাল ক্ষমতাসীন দলের এই ভাবনার কথা তুলে ধরা হয়েছে। এ বিষয়ে টি এলাহি লিখেছেন: এত সব হিসাব-নিকাশ, অথচ তাতে জনগণের কোনো ভূমিকা নেই। আওয়ামী লীগের মতো দল জনগণের মুখোমুখি হওয়ার সাহস হারিয়ে এমন সব কাণ্ডকারখানার অবতারণা করছে, তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। জনমত পক্ষে না থাকলে এগুলোর কোনোটাই ধোপে টিকবে না। গত নির্বাচনে বিএনপির অবস্থা এতটা খারাপ হতো না, যদি তারা কে এম হাসান-ইয়াজউদ্দিনদের নিয়ে এত কূটচাল না খেলত। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব যত তাড়াতাড়ি বাস্তবতা বুঝতে পারবে, ততই মঙ্গল।
ইমাম হোসেন: আওয়ামী লীগ ও এরশাদের পরিকল্পনা দেখে মনে হচ্ছে, আমি ‘আলিফ লায়লা’র গল্প শুনছি। এরশাদ যদি ক্ষমতায় যানও, তাহলে আওয়ামী লীগ পরেরবার ক্ষমতায় যাওয়ার আশায় বসে থাকবে। এর মধ্যের পাঁচ বছর এরশাদ দেশ চালাবেন, আওয়ামী লীগ কোনো আন্দোলন করবে না। এ ভাবনা ‘আলিফ লায়লা’র গল্পকেও হার মানায়।
চা বেচে বিদ্যালয়
শনিবারের বিশেষ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে আবদুল খালেকের কীর্তির কথা। এ সম্পর্কে গাজী দীন মাহমুদ লিখেছেন:
সমাজে এ ধরনের আলো ছড়ানো লোকের বড়ই অভাব। আজকাল ভোগ করার মানুষের অভাব নেই, ত্যাগী মানুষের অভাব। কিছু ভালো মানুষ আছেন বলেই আমাদের সমাজ টিকে আছে।
সৈয়দ হারুন রশীদ: সমাজের আলোকবর্তিকা দানবীর আবদুল খালেক অমর হয়ে থাকবেন, যত দিন ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চারপাশ মানুষের পদচারণে মুখরিত থাকবে।
মিহির কুমার মণ্ডল: পড়তে পড়তে চোখে জল আসছিল; আবার মনে মনে ভালোও লাগছিল যে দেশে এখনো এমন মানুষ আছেন। তাঁদের কাছ থেকে কি আমরা একটু শিক্ষা নিতে পারি না? দাদু, তুমি আরও অনেক দিন বেঁচে থাকো আমাদের মাঝে। কোনোদিন যেন শুনতে না হয় দাদুর স্কুলের জায়গা দখল করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার চেষ্টা হচ্ছে! তাই স্থানীয় সবার প্রতি অনুরোধ, আপনারা দাদুর স্বপ্ন টিকিয়ে রেখে আপনাদেরই মঙ্গল করুন। জয়তু দাদু!"
(পাঠকের মতামত বিস্তারিত পড়তে ও আপনার মতামত জানাতে ভিজিট করুন prothom-alo.com)

No comments

Powered by Blogger.