সাহসের সমাচারঃ ঠেলা খেয়ে মেলা দেখা by আল মাহমুদ
সব সময় লিখতে ইচ্ছা করে না; কিন্তু আমার মতো মানুষের না লিখেও কোনো উপায় নেই। কোনোটা ভেবে লিখি, কখনও না ভেবেই লেখাটা শুরু করে দিই। এই চিন্তাভাবনাহীন লেখালেখির কাছ থেকে আমার পরিত্রাণ নেই। অথচ সব সময় ভাবি যাই লিখি অর্থবহ কিছু রচনা করব। শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠে না। লিখি যখন তখন অর্থ তো কিছু অবশিষ্ট থাকবেই; কিন্তু কার জন্য থাকবে।
লিখে চলেছি একজন অপরিণামদর্শী লেখকের মতো। লিখে কোথাও পৌঁছুতে চাই। অথচ মনের গোপন অন্তরালে একটা বিশ্রামের ব্যবস্থা থাকুক এমন লোভ আমারও আছে। আমি আমার মতো লেখকদের কিছু পরিণামের কথা জানি। সবই খারাপ পরিণাম। তবুও লিখে যেতে হবে কেন? এ প্রশ্নের জবাব হলো থামলেই স্থবিরতা। এই স্থবিরতা কোনো কোনো সময় লেখকের কাম্য হয়ে উঠলেও আমি এর মধ্যে জড়াতে চাই না। আমি লিখতে চাই। ভেবেচিন্তে কিংবা চিন্তা না করে। কোথাও গিয়ে থামতে হবে এটা বাধ্যতামূলক নয়। কী হয় যদি চিন্তাভাবনাহীনভাবে কোথাও লেখাটার ছেদ পড়ে যায়।
আসলে যখন লিখি তখন ভাবি না যে লেখাটাই বড় ব্যাপার। আমি সব সময় জোর দেই আমার উপর, ভাবি আমিই বড় ব্যাপার। আর সবই তুচ্ছ, ক্ষুদ্র এবং সামান্য। সম্ভবত এমন মানসিকতা না হলে লেখালেখিটা অবিশ্রামভাবে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না।
এর মধ্যে অনেক লেখক লেখালেখি ছেড়ে দিয়ে আড়ালে চলে গেছেন। তাদের কথা আমি ভাবি। সম্ভবত তারাও আমাকে নিয়ে ভাবেন যদি আদৌ আমার ব্যাপারে তাদের কোনো আগ্রহ তৈরি হয়ে থাকে। লিখতে লিখতে কোনো একটা আবিষ্কার করব—এটা আমি ভাবি না। তবে কোনো লেখাই বৃথা যায় না। প্রতিটি লেখার বিষয়েই লেখকের স্মৃতি থাকে। আমার আছে।
কত কিছুই তো এ জীবনে লিখে পার হয়ে এলাম। সব সময় মনে হয়েছে কে যেন আমার পেছনে আছে। ঘাড় ফিরিয়ে দেখি না কেউ নেই; কিন্তু কেন এমন মনে হয় আমার সঙ্গে সব সময় কেউ হেঁটে চলেছে। আমি পদশব্দ পাই এবং ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখি কেউ নেই। এ রহস্য লেখক মাত্রেরই আছে। মনে হচ্ছে কেউ যেন আমাকে অনুসরণ করে আসছে। হঠাত্ পেছনে ফিরে দেখি বাতাস ছাড়া কোনো কিছুই নড়ছে না। তবে কি সত্যিই আমার পেছনে কেউ ছিল না? তাহলে আমার মনে এ প্রশ্ন জাগে কেন একজন অনুসরণকারী আছে?
কেন মনে হয় আছে? এই ‘নাই’ আর ‘আছে’র দ্বন্দ্ব বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দ্বন্দ্বের মতো। ধরা যায় না। স্পর্শ করা যায় না। অথচ আমার সঙ্গে হেঁটে আসছে একটা কিছু। প্রশ্ন হলো, কে হেঁটে আসছে? ছায়া না মায়া?
এই দ্বন্দ্ব না থাকলে জগত্ চলে না। অবশ্যই কিছু একটা আমাকে অনুসরণ করে বহুকাল ধরে বহু যুগ ধরে আসছে। এ রহস্যের কোনো কূলকিনারা নেই। আর থাকলেও আজ পর্যন্ত কেউ কূলে পৌঁছুতে পারেনি।
যদি পারত তাহলে মুখ ফিরিয়ে অন্য একটা রহস্যের মুখ দেখতে পেত; কিন্তু ঘুরে দাঁড়ালেই কেবল বাতাসের হা হা শব্দ। এই যে সবটা মানুষ দেখতে পায় না। এটা তার জন্য বড়ই সহায়ক হয়েছে। এতে তারা না দেখে বিশ্বাসের শক্তি অর্জিত হয়েছে। আমি যখন কোনো নারীকে দেখি তখন সবটা তো দেখি না। যখন সামনের দিকটা দেখি তখন তার পেছন দিকটা অদৃশ্য থাকে। অথচ আমি বিশ্বাস করি মেয়েটির একটা পেছন দিকও আছে। অথচ আমাদের চোখ ত্রিমাতৃক নয়। সামনের দিকে দেখলে পেছন থাকে না। আর পেছন দিক থাকলে সামনের দিকটা চোখের আড়ালে থাকে। মোট কথা আমরা কোনো কিছুরই সবটা এক সঙ্গে দেখি না। কেবল আন্দাজ করি। এই আন্দাজ থেকেই বিশ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে।
মানুষের স্বভাবই হলো কোথাও গিয়ে পৌঁছানো। সে স্থির থাকতে পারে না। কারণ তাকে কে যেন ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে যায়। এই ঠেলার মধ্যেই আছে চলার শক্তি। এই শক্তি না থাকলে জীবন চলত না। যেভাবেই হোক জীবনকে চালানোর জন্য ধাক্কা মারতে হয়। ঠেলা খেয়ে জীবন মেলা দেখতে পায়।
লেখক : কবি
No comments