নেতাদের বিদেশ সংযোগ
বিশ্বায়নের যুগে কোন দেশই আর বিচ্ছিন্ন নয়। অর্থনীতি, বাণিজ্য, সংস্কৃতি প্রভৃতি দিক দিয়ে প্রতিটি রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। নিজস্ব উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্র একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। এই নির্ভরশীলতা বাংলাদেশের রাজনীতিতেও সুস্পষ্ট।
সম্প্রতি বাংলাদেশের কয়েকটি প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের বিদেশ সংযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের সমকালীন রাজনীতির এই বাস্তবতার বিষয়টি অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সাম্প্রতিক বিদেশ সফরে এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে নেতৃবৃন্দের বৈদেশিক যোগাযোগের বিষয়টি এখন মোটেই উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার দশক পর দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি যেমন বদলে গেছে, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও এখন অনেক পরিবর্তন এসেছে। বাংলাদেশের প্রায় ৯০ লাখ বাঙালী এখন নানা ধরনের কর্মসূত্রে বিদেশে অবস্থান করছেন। প্রবাসী বাঙালীদের পাঠানো অর্থ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
যদিও জীবিকার কারণে প্রবাসী বাঙালীরা বিদেশে অবস্থান করছেন; কিন্তু বাংলাদেশ বিষয়ে তাদের আগ্রহের অন্ত নেই। অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দেশের তিনটি দলের সমর্থনে কাজ করছেন; তাঁরা দলের বৈদেশিক শাখা গঠন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানিসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাঙালীরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে সংঘবদ্ধ। বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ বিদেশে গেলে তাঁরা তাঁদের সমর্থনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারী সফরে বিদেশে গেলে তাঁর সম্মানার্থে প্রবাসী আওয়ামী লীগের সমর্থকরা নানা ধরনের অনুষ্ঠান করেন। নানা ইস্যুতে তাঁরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেন। একই বিষয় লক্ষ্য করা যায় বিএনপি ও জাতীয় পার্টির ক্ষেত্রেও। প্রবাসী বাঙালীদের কর্মকা- নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকেও প্রভাবিত করেছে। তবে যেসব দেশে প্রবাসী বাঙালীদের রাজনৈতিক তৎপরতা নেই, সেই দেশগুলোরও বাংলাদেশের রাজনীতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। উদাহরণ হিসাবে বাংলাদেশের দুই বৃহৎ প্রতিবেশী ভারত ও চীনের কথা বলা যেতে পারে। দুটি দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশের সুগভীর ব্যবসায়িক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। এই ঘনিষ্ঠতার প্রভাব দেশের রাজনীতিতেও পড়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পাঁচদিনের ভারত সফরে গিয়েছিলেন। তিনি দিল্লীতে অবস্থানকালে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় ও প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করেন। জানা গেছে, তিনি ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ট্রানজিট, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি, ছিটমহল, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ বন্ধ করাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এরশাদের সাম্প্রতিক এ ভারত সফর নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যথেষ্ট আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কিছুদিন আগে লন্ডন সফরে গিয়ে বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে ব্রিটিশ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। এছাড়া চলতি মাসের শেষ দিকে তিনি ইরানের রাজধানী তেহরানে জোট নিরপেক্ষ শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হবেন।
এসব যোগাযোগ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষায় বিশেষভাবে সহায়ক হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াও আগামী দু’মাসের মধ্যে ভারত ও চীন সফরে যাবেন। তিনি বাংলাদেশের রাজনীতিসহ নানা বিষয়ে ভারতীয় ও চীনা নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করবেন। বাংলাদেশের বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দের বিদেশ সফর যেন বাংলাদেশের জনগণের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনেÑ এটাই সবার প্রত্যাশা। এখন আর বহির্বিশ্ব থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখার উপায় নেই। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন যে নেতৃবৃন্দের বৈদেশিক সংযোগের মূল লক্ষ্য সেটি নিশ্চিত।
No comments