গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী উড়ালসেতু এলাকা- চরম দুর্ভোগের মধ্যে আরও ৫০ স্থানে গর্ত খোঁড়া হবে! by অরূপ দত্ত

যোগাযোগমন্ত্রীসহ একাধিক মন্ত্রীর নির্দেশ ছিল ঈদের আগেই দ্রুত রাস্তা মেরামত করতে হবে। তা তো হয়ই-নি, এখন জয়কালী মন্দির সড়ক থেকে হাটখোলা, স্বামীবাগ, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী হয়ে কুতুবখালী পর্যন্ত পুরো রাস্তার অবস্থা হয়েছে আরও শোচনীয়। এ অবস্থায় সেবা সংস্থাগুলো আরও রাস্তা খোঁড়ার জন্য তৈরি হচ্ছে।


আরও রাস্তা খোঁড়ার তোড়জোড়: গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী উড়ালসেতু বরাবর আরও অন্তত ৫০টি স্থানে রাস্তা খোঁড়ার অনুুমতি চেয়ে ডিসিসি দক্ষিণকে চিঠি দিয়েছে তিতাস গ্যাস কোম্পানি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে যাত্রাবাড়ী বিবিরবাগ, স্বামীবাগ ও পাগলা পয়েন্ট। এ ছাড়া ছোট ছোট জায়গায় পাইপ যুক্ত করার জন্য তিতাসকে অন্তত ৪৭ স্থানে গর্ত করতে হবে।
ডিসিসি দক্ষিণের প্রধান প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, সোমবার (আজ) স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) ও ঢাকা ওয়াসাও কয়েকটি স্থানে গর্ত খোঁড়ার অনুমতি চেয়েছে। ডিসিসি তাদের রাস্তা না খুঁড়ে ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে কাজ সারা যায় কি না তা খতিয়ে দেখতে বলেছে।
তিতাসসহ চারটি সরকারি সেবা সংস্থা গত ১৫ জুনের মধ্যে খোঁড়ার কাজ শেষ করার কথা বলেছিল। কিন্তু তারা কাজ শুরুই করেছিল ১৪ জুন। পরে দফায় দফায় সময় বাড়িয়ে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত করা হয়।
টাকা গেলেও উন্নতির লক্ষণ কম: ঈদের আগে জয়কালী মন্দির থেকে যাত্রাবাড়ী এবং যাত্রাবাড়ী থেকে তিন দিকে তিন কিলোমিটার রাস্তা মেরামতের জন্য ১৫ কোটি টাকা বাজেট নিয়ে মাঠে নামে ডিসিসি দক্ষিণ। এর মধ্যে বেশ কিছু টাকা খরচও হয়ে গেছে বলে ডিসিসির প্রকৌশল বিভাগ থেকে বলা হয়। কিন্তু অবস্থার দৃশ্যমান উন্নতি নেই। গতকাল রোববার এলাকা ঘুরে রাস্তার চরম দুরবস্থা দেখা গেছে। ঈদের আগে গর্তের মধ্যে ইটের টুকরা, পাথর আর মাটি ফেলে দায়সারাভাবে কাজ সারা হয় বলে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন। এ কয়েক দিনে যাত্রাবাড়ী বিবিরবাগিচা থেকে কাজলা সেতু পর্যন্ত রাস্তায় চলাচল করা আরও দুরূহ হয়ে পড়েছে।
রাস্তার এ অবস্থায় এলাকার যানজট পরিস্থিতি প্রায় আগের রূপ নিয়েছে। লক্ষ্মীপুর থেকে আসা একটি বাসের চালক জানান, কাঁচপুর থেকে সায়েদাবাদ আসতে তাঁর আড়াই ঘণ্টা সময় লেগেছে।
ডিসিসি দক্ষিণের প্রধান প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, জয়কালী মন্দির থেকে যাত্রাবাড়ী হয়ে তিন দিকে প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তা মেরামতের জন্য ১৫ কোটি টাকার বাজেট করা হয়। বৃষ্টির কারণে ঈদের আগে ভালোভাবে কাজ করা যায়নি। এখন বৃষ্টি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে। আপাতত খানাখন্দে ইটের টুকরা ফেলে টুকটাক কাজ সারতে হচ্ছে।
ক্ষণে ক্ষণে অপ্রীতিকর ঘটনা: সড়কের দুর্দশা কেবল যান চলাচলেই বিঘ্ন ঘটাচ্ছে না, রাস্তা ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রতিনিয়ত অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। চলার পথে চরম দুর্ভোগে ক্লিষ্ট মানুষ অল্পতেই অধৈর্য হয়ে পড়ছেন। শনিবার সকালে ইত্তেফাক মোড়ের কাছে একটি প্রাইভেট কার থেকে এর মালিক নেমে এসে এক বাস চালককে পেটাতে শুরু করেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাসটি প্রাইভেট কারের গায়ে রাস্তার কাদা ছিটিয়ে দেওয়াতেই কারের মালিক খেপে গিয়ে ওই কাণ্ড করেন। রাস্তার দুই পাশের দোকানি, পথচারী ও গাড়ি চালকেরা বলেন, এমন ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে। কাদা ছিটিয়ে দেওয়া নিয়ে যানবাহনের মালিক-চালক, পথচারী ও দোকানি সবার মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ, মারামারি পর্যন্ত চলছে। যাত্রীদের অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে। গতকাল বেলা ১২টার দিকে জয়কালী মন্দির সড়কে সহকারী ভূমি কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে এক মহিলা ও তাঁর পাঁচ-ছয় বছরের কন্যাসন্তানকে বাস থেকে নামিয়ে দেন সহযাত্রীরা। তাঁরা মিরপুর যাওয়ার জন্য বাসে উঠেছিলেন। কিন্তু বেহাল রাস্তায় বাসের বেদম ঝাঁকুনির কারণে দুজনই অসুস্থ হয়ে পড়েন। যাত্রাবাড়ীর বাসায় ফিরে যাওয়ার জন্য রিকশা ভাড়া করতে গেলে রিকশাওয়ালারা ভাঙা রাস্তার অজুহাতে ৭০ টাকা ভাড়া হাঁকেন। অথচ এ দূরত্বে সাধারণত ২০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়।

No comments

Powered by Blogger.