সাজেদা চৌধুরীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আমলে নিয়েছে ট্রাইব্যুনাল-২ -মুজাহিদের আবেদন খারিজ

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিচার কার্যক্রম থেকে ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারপতিদের সরে দাঁড়ানোর আবেদন খারিজ করে দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। অপরদিকে জাতীয় সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর বিরুদ্ধে


আদালত অবমাননার অভিযোগ আমলে নিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে তাঁর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। আগামী ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আইনজীবীর মাধ্যমে সাজেদা চৌধুরীকে তাঁর বিরুদ্ধে আনা আদালত অবমাননার অভিযোগের জবাব দিতে বলা হয়েছে। তবে তাঁকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। সোমবার দুটি পৃথক আবেদনের শুনানি শেষে চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবিরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আদেশ দেয়।
বিচারকদের নিরপেক্ষতার প্রশ্ন তুলে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মামলার কার্যক্রম থেকে ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারপতিদের সরে দাঁড়ানোর জন্য রবিবার আবেদন করেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। আসামি পক্ষের আইনজীবীদের আবেদনে বলা হয়, গত ১২ আগস্ট ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, প্রজন্ম ’৭১-এর সভাপতি শাহীন রেজা নূর ট্রাইব্যুনালের (২) তিন বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাত করেন। সাক্ষাত শেষে তাঁরা গণমাধ্যমের কাছে বিবৃতি দিয়েছেন। যুদ্ধাপরাধের দায়ে আটক ১০ নেতার বিচার ২০১৩ সালের মধ্যে শেষ করার আশা প্রকাশ করেছেন। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, প্রজন্ম ’৭১-এর দু’জন ছাড়াও আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সহায়ক মঞ্চসহ মোট চারটি সংগঠনের কয়েক নেতা তাঁদের সঙ্গে ছিলেন।
আবেদনে বলা হয়, শাহরিয়ার কবির এবং শাহীন রেজা নূর আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী। সাক্ষী কর্তৃক এভাবে ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিদের সঙ্গে সাক্ষাতের ফলে বিচারপতিদের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের সন্দেহ দেখা দিয়েছে। আসামির ন্যায়বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিদের আর এ মামলার বিচার কার্যক্রম এবং শুনানিতে অংশগ্রহণ করা উচিত নয়। আবেদনে ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির, সদস্য বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এবং বিচারপতি শাহীনুর ইসলামের প্রতি সরে দাঁড়ানোর এ আবেদন করা হয়। আদালতে শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন, আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক, রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী।
আদেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, শাহরিয়ার কবির এবং শাহীন রেজা নূর আলী আহসান মুজাহিদের বিরুদ্ধে সাক্ষী তা সত্য। কিন্তু তাঁরা আমাদের সঙ্গে সাক্ষাতে মামলার কোন কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করেননি। তারা ট্রাইব্যুনালের বিভিন্ন সমস্যা যেমন অবকাঠামোগত সমস্যা, নিরাপত্তা সমস্যা প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। তাদের এ সাক্ষাতের মাধ্যমে পক্ষপাতিত্ব বা নিরপেক্ষতা লঙ্ঘনের কোন ঘটনা ঘটেনি বা কোন পক্ষের স্বার্থও রক্ষা করা হয়নি।
সাজেদা চৌধুরী
জাতীয় সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আমলে নিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে তাঁর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। আগামী ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আইনজীবীর মাধ্যমে সাজেদা চৌধুরীকে তাঁর বিরুদ্ধে আনা আদালত অবমাননার অভিযোগের জবাব দিতে বলা হয়েছে। তবে তাঁকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ‘গত ২৭ জুলাই রাজধানীতে এক সভায় সাজেদা চৌধুরী বলেছিলেন, রাজাকাররা আইন মেনে একাত্তরে নির্যাতন করেনি। কাজেই এত আইন দেখলে হবে না। আগেই দুয়েকটাকে ঝুলিয়ে দিলে ওদের আইন নিয়ে কপচানি বন্ধ হবে।’ ওই বক্তব্য আদালতের নজরে এনে গত ৫ আগস্ট সাজেদা চৌধুরীর বিরুদ্ধে জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার পক্ষের আইনজীবীরা আদালত অবমাননার অভিযোগ দায়ের করেন। সোমবার শুনানি শেষে ওই অভিযোগ আমলে নিয়ে আদেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল-২।
ট্রাইব্যুনালের আদেশে সাজেদা চৌধুরীকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে আইনজীবীর মাধ্যমে তার ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। ব্যাখ্যা পাওয়ার পর উভয়পক্ষের শুনানির পর পরবর্তী আদেশ দেয়া হবে বলেও আদেশে বলা হয়েছে।
শুনানিতে বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর বলেন, আমরা আদালত অবমাননার বিষয়ে তাঁর বক্তব্য শুনব। এখানে যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তাঁর বক্তব্য শোনা উচিত। আসামিপক্ষের আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, সাজেদা চৌধুরীর বক্তব্যে আদালত অবমাননা হয়েছে। তিনি আদালতকে ডিক্টেড করার চেষ্টা করেছেন। তিনি সরকারী দলের শীর্ষ নেতা ও সংসদ উপনেতা। তাজুল ইসলাম বলেন, সরকারী দলের একজন শীর্ষ নেতার এধরনের মন্তব্যে অভিযুক্তদের ন্যায়বিচার পাওয়া ব্যাহত হবে।
শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল-২ এ উপস্থিত প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলী জনকণ্ঠকে বলেন, যেহেতু জাতীয় সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছে, আবার রাষ্ট্রপক্ষ বা প্রসিকিউটর কেউ এ মামলায় সংশ্লিষ্ট নয় তাই আমি আদালতে বলেছি সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে বিষয়টি অবহিত করলেই ভাল হবে। আদালত সেভাবেই আদেশ দিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.