আলবদর ১৯৭১ by মুনতাসীর মামুন
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া এটি এম আজহারুল ইসলামের কথা। রংপুরের ছাত্রসংঘের সভাপতি হওয়ার সুবাদে আলবদরদের কমান্ডার ছিলেন তিনি। পত্রিকার ভাষ্য অনুযায়ী, “আজাহারের নেতৃত্বে দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার বাচ্চু খাঁ ও কামরুজ্জামানের সহযোগিতায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ঝাড়ুয়ারবিল ও পদ্মপুকুরে গণহত্যা চালায়।
তারা রামনাথপুর ইউনিয়নের কিসমত ঘাটাবিলের কোনাপাড়া, ম-লপাড়া, গয়দাপাড়া, কুটিরপাড়া, খিয়ারপাড়া, খলিশা হাজীপুরের পাইকারপাড়া, তেলীপাড়া, বাজারপাড়া, বানিয়াপাড়া ও কামারপাড়ায় গণহত্যা, লুণ্ঠন ও ঘরে ঘরে অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়া রাজাকার, আলবদর বাহিনী রামকৃষ্ণপুরের মাষাণডোবা, সরকারপাড়া, খিজিরেরপাড়া, মধ্যপাড়া, বালাপাড়া, বিত্তিপাড়া, বিষ্ণপুর ইউনিয়নের বুজরুক বাগবাড়, ম-লপাড়া, দোয়ানী হাজীপুর, সর্দারপাড়াসহ অনেক বসতিতে গণহত্যা চালায়। আরেক প্রত্যক্ষদর্শী সাবেক অধ্যাপক মোঃ আফজাল হোসেন প্রামাণিক জানান, ঘটনার দিন পথেঘাটে যেখানে সেখানে মানুষের লাশ পড়ে ছিল। চাপ চাপ রক্তের ওপর উবু হয়ে পড়ে ছিল অনেকেই। ঘরবাড়িগুলোতে জ্বলছিল আগুন। দু’চারজন বৃদ্ধ মানুষ ছাড়া এলাকায় কাউকে দেখা যায়নি। বানিয়াপাড়ার মেনহাজুল বিএসসি, হিন্দুপাড়ার প্রাণকৃষ্ণ স্যারকে হত্যা করা হয়েছে। বাচ্চু খাঁ, কামরুজ্জামান ও আজহারের তা-বলীলায় লাল হয়েছিল ঝাড়ুয়ারবিল ও পদ্মপুকুরের পানি।”( কালের কণ্ঠ ২৪.৮.২০১২)
এ ছাড়াও কারমাইকেল কলেজের ছয়জন শিক্ষক ও একজনের স্ত্রীকে হত্যার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে আজহারের বিরুদ্ধে। এরা কত ভয়ঙ্কর ছিল তার প্রমাণ আজহার গ্রেফতার হওয়ার পর তার বাড়ি বদরগঞ্জ উপজেলার মানুষজন আনন্দ মিছিল বের করে।
যাক, আর উদাহরণ দিয়ে ভারাক্রান্ত করব না।
১৬ ডিসেম্বর থেকেই আলবদররা তাদের নথিপত্রসমূহ ধ্বংস করে বিভিন্ন জায়গায় পালাতে থাকে। এরপর থেকে, যখন যেখানে তাদের সংক্রান্ত প্রমাণাদি ছিল তা সিস্টেমেটিক্যালি ধ্বংস করে ফেলে। মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী সরকারের প্রধান দুর্বলতা হলো তারা কখনও এসব প্রমাণাদি সংরক্ষণের চেষ্টা করেনি। হয়ত তাদের ইতিহাসবোধ নিম্নমাত্রায় এবং ভিশনেরও অভাব। এদের প্রধান চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য গ্রাম্যতা। তার ফল ভোগ করছি আমরা।
এ কারণে আলবদরের একটি তালিকা আমরা প্রণয়ন করতে পারিনি। এমনকী শীর্ষস্থানীয় আলবদরদেরও। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশ কেন্দ্রই প্রথম শীর্ষস্থানীয় আলবদরদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছিল।
একাত্তরের ঘাতক দালালরা কে কোথায় শীর্ষক গ্রন্থে আলবদর হাইকমান্ডের একটি তালিকা ছাপা হয়েছিল, এখানে যা উদ্ধৃত করছি :
ইসলামী ছাত্র সংঘের কেন্দ্রীয় কমিটি (আলবদর হাইকমান্ড)
১। মতিউর রহমান নিজামী, (সারা পাকিস্তান প্রধান), সহসাধারণ সম্পাদক, জামায়াতে ইসলামী।
২। আলী আহসান মুহম্মদ মুজাহিদ ,(পূর্ব পাকিস্তান প্রধান), ঢাকা মহানগর আমীর জামায়াতে ইসলামী। পরিচালক, সাপ্তাহিক সোনার বাংলা।
৩। মীর কাসেম আলী, (প্রথমে চট্টগ্রাম জেলা প্রধান ছিলেন, পরবর্তীতে আলবদর বাহিনীর নেতৃত্বের ৩ নম্বর স্থান লাভ করেন), ঢাকা মহানগরী নায়েবে আমীর, জামায়াতে ইসলামী। পরিচালক, রাবেতা -ই- আলম (বাংলাদেশ), সদস্য (প্রশাসন), ইবনে সিনা ট্রাস্ট।
৪।মোহাম্মদ ইউনুস, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য, জামায়াতে ইসলামী, মহাপরিচালক, বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংক,পরিচালক, ইসলামী সমাজ কল্যাণ সমিতি। সভাপতি, মুসলিম বিজনেসম্যান সোসাইটি।
৫। মোহাম্মদ কামারুজ্জামান (বদর বাহিনীর প্রধান সংগঠক), কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক, জামায়াতে ইসলামী। সম্পাদক, সাপ্তাহিক সোনার বাংলা।
৬। আশরাফ হোসাইন(বদর বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা এবং ময়মনসিংহ জেলা প্রধান) , ঢাকায় ব্যবসা করেন।
৭। মোহাম্মদ শামসুল হক (ঢাকা শহর প্রধান), কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য, জামায়াতে ইসলামী।
৮। মুস্তাফা শওকত ইমরান (ঢাকা শহর বদর বাহিনীর অন্যতম নেতা), স্বাধীনতার পর পরই নিখোঁজ হন।
৯। আশরাফুজ্জামান খান (ঢাকা শহর বদর বাহিনীর হাইকমান্ড সদস্য এবং বুদ্ধিজীবী হত্যাকা-ের ‘চিফ এক্সিকিউটর’ (প্রধান জল্লাদ), , সৌদি আরবে চাকরি করেন।
১০। আ.শ.ম. রুহুল কুদ্দুস (ঢাকা শহর বদরবাহিনীর অন্যতম নেতা), , মজলিশে শূরা সদস্য,জামায়াতে ইসলামী।
১১। সরদার আবদুস সালাম (ঢাকা জেলা প্রধান), কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক, জামায়াতে ইসলামী।
১২। খুররম ঝা মুরাদ,লন্ডনে অবস্থানরত আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত জামায়াত নেতা। বিভিন্ন দেশে জামায়াতীদের তৎপরতা সমন্বয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন।
১৩। আবদুল বারী (জামালপুর জেলা প্রধান), ঢাকায় চাকরি করেন।
১৪। আবদুল হাই ফারুকী (রাজশাহী জেলা প্রধান), দুবাইয়ে ব্যবসা করেন।
১৫। আবদুল জাহের মোহাম্মদ আবু নাসের (চট্টগ্রাম জেলা প্রধান), ঢাকায় সৌদি রাষ্ট্রদূতের ব্যক্তিগত সহকারী এবং গ্রন্থাগারিক।
১৬। মতিউর রহমান খান, (খুলনা জেলা প্রধান), জেদ্দায় চাকরি করেন।
১৭। চৌধুরী মঈনুদ্দীন, (বুদ্ধিজীবী হত্যাকা-ের ‘অপারেশনাল ইনচার্জ), লন্ডন থেকে প্রকাশিত জামায়াতের ‘সাপ্তাহিক দাওয়াত’
পত্রিকার বিশেষ সম্পাদক এবং লন্ডনভিত্তিক জামায়াতীদের মুখপাত্র?
এখানে তাদের যে অবস্থান দেখানো হয়েছে তা ১৯৮৭ সালের। এরপর তাদের খোঁজ খবর রাখার প্রয়োজন কেউ অনুভব করেনি। কারণ সমাজ রাষ্ট্রে এরা ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল এবং তাদের পূর্ব ইতিহাস তখন কেউ মনে করতে চাইতেন না ইচ্ছে করেই। কখনও বা ভয়েও। কারণ, প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে আলবদররা তখন স্থান করে নিয়েছিল। এ তালিকা কোন অবস্থাতেই সম্পূর্ণ নয়।
এছাড়াও বিভিন্ন বিবরণে, আত্মজীবনীতে আরও কিছু নাম পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু কেউ কখনও আলবদর, আলশামসদের সুসংবদ্ধ তালিকা প্রণয়ন করেনি।
মনসুর খালেদের আলবদর গ্রন্থে বর্ণিত আলবদরদের বিভিন্ন অপারেশনের বিবরণ থেকে আমি একটি তালিকা প্রণয়ন করেছিÑ
ঢাকা শহর
আসাদুজ্জামান, কমান্ডার, খুররম মাহমুদ, আবু মো: জাহাঙ্গীর, কমান্ডার (নিহত), আবদুল হক, কমান্ডার (নিহত), নূর মোঃ মল্লিক, মোহাম্মদ আলী, আবু নসর ফারুকী, ইকরামুল হক, ফেদাউল ইসলাল, রেজাউল ইসলাম, এফ এম কামাল, মুস্তাফা শওকত ইমরান, হুসাইন খান, মুহম্মদ মাসুম।
চট্টগ্রাম
আবদুল জাহের মুহম্মদ আবু নাসের, আবু জাফর, কমান্ডার, মুহাম্মদ নাঈমুর রহমান, ইফতেখারুল ইসলাম, সলিমুল্লাহ, আবু জাফর, কমান্ডার, এনামুল হক সন্তু, কমান্ডার,সৈয়দ আকরাম হোসাইন,আবু ওসমান, শাহ জামান, আবদুর রহমান, মীর হাসান, মুহম্মদ মনসুর, আবু সরওয়ার।
খুলনা
আহমদুর রহমান, মকবুল আহমদ (নিহত)
রাজশাহী
মজহারুল ইসলাম, মতিনউদ্দিন, আবদুস সালাম।
বগুড়া
মুহম্মদ আবুল হাসান।
রংপুর
মুহাম্মদ আবু আতের, মুহম্মদ আবুল হাসান ইকবাল, মুহাম্মদুর রহমান [নিহত], একরামুল হক [ঐ], মুহম্মদ ইলিয়াস কাজল [ঐ], আবদুস সালাম [ঐ], মুহম্মদ কাবিল [ঐ], মকবুল হামিদ [ঐ], হাসানুর রহমান [ঐ], মুহম্মদ আসলাম [ঐ], কামাল হোসাইন [ঐ], আবদুল লতিফ [ঐ], ওবায়েদ হোসাইন [ঐ], হাফিজুর রহমান [ঐ], আহমদ কামরান [ঐ], শমসের আলী [ঐ], মন্টু [ঐ], আব্বাস [ঐ], দানিশ [ঐ], সোলায়মান [ঐ], মোহসেন আলী [ঐ], এনামুর রহমান [ঐ],আবরী [ঐ]।
কক্সবাজার
আবদুল আউয়াল, সিরাজুল ইসলাম [নিহত, মুখতার আহমদ ফরাজ [ঐ, বশীর আহমেদ [ঐ]।
রাঙ্গামাটি
আনিসুল আলম
ময়মনসিংহ
নাজমুস সাকীব, ইকবাল, সিরাজ, মোহাম্মদ ইউসুফ [নিহত]।
নারায়ণগঞ্জ
নজরুল, কমান্ডার
নরসিংদী
আবু ওসমান
ফরিদপুর
মুহাম্মদ কামাল, শামসুল ইসলাম।
জামালপুর
ইসলামউদ্দীন, আবদুল জব্বার, আবু নযীর, কবীর আহমেদ, মাইনুর রহমান, আবদুল জব্বার, বাবানুল ইসলাম, নূরুল আমীন [নিহত]।
শেরপুর
কামরান, মকবুল আহমদ [নিহত, ফরিদউদ্দিন [ঐ, আবদুস সামাদ [ঐ]।
নাটোর
আবদুল কাইয়ুম, ফারুকুর রহমান, গোলাম আলী মিয়া, আবুল হাশে, আজিজুদ্দি, আবদুল জব্বা, কুরবান, আসগর।
ফেনী
ফজলুর রহমান, মুহম্মদ ইলিয়াস, কমান্ডার, রুহুল কুদ্দুস, কমান্ডার, হামিদউদ্দিন [নিহত]।
নোয়াখালী
আবদুল খালেক মিয়া, আবদুর রব [নিহত], নুরুল ইসলাম [ঐ, আবুল খায়ের [ঐ, ওয়াহিদুল হক [ঐ, আবদুল আওয়াল [ঐ, আহমুদুল হক [ঐ, নুরুল করিম [ঐ, হাফেজ মোঃ মহসীন [ঐ]।
চাঁদপুর
মোঃ আবু তাহের [নিহত]
এই আলবদরের বিভিন্ন অপারেশনে পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তা অংশ নিয়েছিলেন, নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বা ইনচার্জ ছিলেন। তাদের একটি তালিকাও প্রস্তুত করেছি খালেদের পূর্বোক্ত গ্রন্থ থেকে। কখনও পাকিদের যুদ্ধাপরাধের বিচার করা গেলে এসব কর্মকর্তাকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যাবেÑ
ঢাকা
ব্রিগেডিয়ার বশীর, লে. কর্নেল আহসান।
নারায়ণগঞ্জ
ক্যাপ্টেন ওমর ফারুক।
চট্টগ্রাম
মেজর জামান দার ২৪ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স, ক্যাপ্টেন পারভেজ সেকান্দার ঐ, ক্যাপ্টেন মনোয়ার খান ঐ, ক্যাপ্টেন আনোয়ারুল হক, ক্যাপ্টেন আবদুল করিম।
ময়মনসিংহ
ক্যাপ্টেন আবদুল কুদ্দুস, ক্যাপ্টেন আহসান।
খুলনা
ব্রিগেডিয়ার মুহম্মদ হায়াত খান।
রংপুর
মেজর গোলাম রসুল ৪৮ পাঞ্চাব, মেজর আফজাল হোসাইন, লেফটেন্যান্ট আলতাফ হোসাইন, সুবাদার খাদেম হোসাইন, কর্নেল মুস্তাফিজ।
ফরিদপুর
মেজর আতা মোহাম্মদ ২৯ বালুচ, ক্যাপ্টেন হেদায়েত উল্লাহ।
জামালপুর
মেজর রিয়াজ হুসাইন, ৩১ বালুচ। মেজর আইয়ুব, মিয়া মহম্মদ হাওলাদার।
ফেনী
ব্রিগেডিয়ার ইসলাম, মেজর বুখারি ও ক্যাপ্টেন ইসহাক, ২৪ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স।
শেরপুর
মেজর আইয়ুব খান, ক্যাপ্টেন এহসান সিদ্দিকী।
আলবদরদের অপারেশন
মনসুর খালেদের বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ আলবদরদের বিভিন্ন অপারেশন। বাংলাদেশে যে সব আলবদরের সঙ্গে তার সাক্ষাত হয়েছিল তাদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এগুলো রচিত হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই আলবদরদের এখানে চিত্রিত করা হয়েছে ‘দেশপ্রেমিক’ হিসেবে। মুক্তিযোদ্ধারা ‘দুষ্কৃতকারী’। আলবদর নিহত হলে ‘শহীদ’। এ সব বিবরণ যে অতিরঞ্জিত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এসব বিবরণের দু’টি বৈশিষ্ট্য
ক. আলবদরদের আদর্শ, নিষ্ঠা, বীরত্ব কাহিনী তুলে ধরা;
খ. প্রতিটি অপারেশনের সঙ্গে জড়িত পাকিস্তানী সেনাবাহিনী, যা আমাদের অনেকেরই জানা ছিল না।
উদাহরণস্বরূপ তাদের দু’একটি অপারেশনের বিবরণ দিচ্ছি খালেদের বই থেকে
ভারত সীমান্ত
মাইনুর রহমান (জামালপুর) বলেন যে, ১২ নবেম্বরের শীতের রাতের কথা বলছি। হিন্দুস্তান আর্মির গেরিলা আক্রমণের জবাব দেয়ার জন্য পাক বাহিনীর ২০০ সিপাহী ও আলবদরের ৪০ জন ক্যাডেট নিয়ে গঠিত একটি আক্রমণকারী দল গারো পাহাড়ের দিকে যাত্রা করল। রাত ১১টার দিকে আমাদের গ্রুপ পাহাড়ী রাস্তার শেষ প্রান্তে পৌঁছল। প্রচ- শীত ছিল, দ্বিতীয়ত ছিল অন্ধকার। তার ওপর বৃষ্টি হচ্ছিল। রাইফেলের ওজন বেড়ে পাথরের মতো হয়ে গিয়েছিল। এ অবস্থায় পথ চলতে চলতে আমরা রাত সাড়ে ৩টার সময় সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতীয় ভূখ-ে ঢুকে পড়লাম। তাদের একটি ফাঁড়ি ঘেরাও করে ফেললাম। এক ঘণ্টা অনবরত লড়াইয়ের পর দুশমন যুদ্ধাস্ত্র ফেলে পালিয়ে গেল। ভারতীয় ফৌজের সাহায্যকারী দল আসতে আসতে আমরা পাকিস্তানী পর্বতমালায় এসে গেলাম। সারাদিন ছিলাম আমার অভুক্ত।
আলবদর আকরাম হোসাইন মনসুরকে জানিয়েছেন, ২৭ আগস্ট চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের পথে তারা মুক্তিবাহিনীর একটি ক্যাম্পের খবর পায়। ২৭ জন আলবদর সেই ক্যাম্প ঘেরাও করে। ২৬ জনকে তারা গ্রেফতার করে। এর মধ্যে ১১ জন হিন্দু, ৩ জন হিন্দুস্তানী সৈনিক, বাকিরা জাতীয়তাবাদী। এ ছাড়াও তারা ৩৮টি রিভলবার, ৪৭টি হেভি মেশিনগান উদ্ধার করে। পাঠক, ৪৭টি হেভি মেশিনগান নিয়ে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনী ঘোরাঘুরি করছেÑ ভাবা যায়!
আলবদরদের সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর এক জায়গায় সংঘর্ষ হলো। মুক্তিবাহিনীতে ছিল বাবা, ছেলে আলবদর বাহিনীতে। যুদ্ধ শেষে দেখা গেল আলবদরের বাবা মারা গেছেন। তখন কী হলো? ‘তরুণ তার বাবার লাশ দেখল। কিন্তু সে কাঁদলও না, চিন্তিতও হলো না। বরং ইমান ও একিনের প্রমাণ দিয়ে সে বলল, তিনি আমার বাবা তা ঠিক, কিন্তু তিনি তো আমার ধর্ম ও জাতির দুশমন। এ গল্প করেছেন ব্রিগেডিয়ার মুহাম্মদ হায়াত খান। তিনি আরও বলেন, তার সঙ্গে তিনি দেখা করে প্রশংসা করলে আলবদর বলে, ‘আমাকে দ্বীনের খাতিরে যে কোন বাতিলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। আমার পথে আমার মা বাধা দিলে তার সঙ্গেও লড়াই করতে হবে।’
মেজর রিয়াদ হোসেনও আরেকটি গল্প বলেছেন। একদিন এক আলবদর এসে তার ভাইকে গ্রেফতারের অনুমতি চায়। কেন? কারণ তার ভাই হিন্দুস্তানীদের সঙ্গে কাজ করছে। সে একজন স্পাই। মেজর বললেন, ‘তুমি জানো স্পাইয়ের শাস্তি কী? মৃত্যুদ-। তাতে তোমার দুঃখ হবে না?’ আলবদর জানাল, না, দুঃখ হবে না, কারণ তার ভাই একজন গাদ্দার। সে ১৩ কোটি মুসলমানের সঙ্গে গাদ্দারী করছে। তার মৃত্যুই উত্তম। যে টিউমার শরীরের জন্য বিপজ্জনক তা কি কেটে ফেলাই উত্তম নয়’? (চলবে)
No comments