অর্জন- শৃঙ্খলিত প্রমিথিউস ও ড. ইউনূস by মাহবুবুর রহমান
গ্রিক পুরাণের প্রমিথিউস স্বর্গ থেকে আগুন চুরি করে এনেছিলেন মর্ত্যে মানুষের কল্যাণে। স্বর্গের এই মহামূল্যবান সম্পদ অপহরণের জন্য তিনি কঠিন দণ্ডপ্রাপ্ত হন। অভিশপ্ত প্রমিথিউস শৃঙ্খলিত হন, এক বৃহদাকার চিল ঠুকরে ঠুকরে তাঁর হূৎপিণ্ড ভক্ষণ করে চলেছে। অসীম যন্ত্রণায় প্রমিথিউস আর্তনাদ করছেন।
জোয়ান অব আর্ক মধ্যযুগের বীর নায়িকা। আর্কের কৃষকদুহিতা জোয়ান পরাজিত ফরাসি জাতিকে যুদ্ধে জয়ী করে জাতীয় বীর হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছিলেন। অদৃষ্টের কী নির্মম পরিহাস! ফরাসির ধর্মীয় যাজকেরা তাঁকে পরবর্তীকালে ধর্মভ্রষ্টার (হেরেটিক) মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ‘অগ্নিদগ্ধ’ করেন। গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস আড়াই হাজার বছর আগে প্রচলিত ভ্রান্ত আচার ও মিথ্যার বিরুদ্ধে গ্রিসের যুবকদের মধ্যে ন্যায়-নীতি ও যুক্তিবাদ প্রচারের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন। বিশ্ব ইতিহাসে এমন সব ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। আর সমকালীন ইতিহাসে তার আধুনিক সংস্করণ লক্ষ করলাম বাংলাদেশে।
ড. ইউনূস আমাদের জাতীয় বীর, কীর্তিমান মানুষ। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী। এ অর্জন শুধু একজন ব্যক্তির নয়, একটি সংস্থারও অর্জন। এ অর্জন একটি জাতির, এ অর্জন গোটা বিশ্ববাসীরও। ইউনূস আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার। তাঁর অনবদ্য আবিষ্কার দারিদ্র্য দূরীকরণে ক্ষুদ্রঋণ-তত্ত্ব। গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে তিনি এই ক্ষুদ্রঋণ-তত্ত্বের সফল বাস্তবায়ন করেছেন।
ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের জনক ড. ইউনূস তাঁর পকেট থেকে মাত্র ৮৫৬ টাকা দিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরে জোবরা গ্রামে ক্ষুদ্রঋণের সূচনা করেছিলেন। তাঁকে শুরুতে কঠিন সংগ্রাম করতে হয়েছে স্থানীয় ব্যাংকের সঙ্গে, ঋণ ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে। বন্ধকহীন ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থার কথা কেউ এর আগে শোনেনি। সম্পূর্ণ বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত জামিনে এ কাজ শুরু করেছিলেন। তাঁর এ উদ্যোগের ক্ষেত্রে তিনি বেছে নিয়েছিলেন নারীদের, যারা যুগ যুগ ধরে পুরুষশাসিত সমাজে শুধু বঞ্চনার শিকার হয়েছে। তিনি সুপ্ত নারীশক্তির বিশালতা দিব্য দৃষ্টিতে প্রত্যক্ষ করেছিলেন। ড. ইউনূসের জোবরা গ্রামে রচিত ছোট্ট চারা গাছটি আস্তে আস্তে বিশাল মহীরুহে পরিণত হয়। শাখা-প্রশাখায় বিস্তার লাভ করে। সারা দেশের ৬৮ হাজার গ্রাম ছাড়িয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের মহিমা সারা বিশ্বে ঘোষিত হয়। এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা এমনকি যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের চমকপ্রদ সাফল্যে আকৃষ্ট হয় এবং তা সাদরে গ্রহণ করে। ড. ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ-তত্ত্ব পৃথিবীর অর্থনৈতিক মানচিত্রে এক উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার। তিনি বিশ্বকে বোঝাতে সক্ষম হন যে ঋণের অধিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ মানবাধিকারের বিষয়। দরিদ্র মানুষের ঋণলাভের বিষয়টি তিনি মানুষের একটি মৌলিক অধিকার হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং তাঁর বেঁচে থাকার সংগ্রামে, তাঁর ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য তা অপরিহার্য বলে প্রতিষ্ঠা করেন।
নব্বইয়ের দশকের প্রথমার্ধে আমি তখন মিরপুর সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের কমান্ড্যান্ট। সম্মানিত অতিথি বক্তা হিসেবে ড. ইউনূসকে আমি আমন্ত্রণ জানাই কলেজে শিক্ষারত সামরিক বাহিনীর অফিসারদের বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর বক্তৃতা দেওয়ার জন্য। দেড় ঘণ্টার ক্লাস। আমার মনে আছে, ছাত্রদের পিনপতন নিস্তব্ধতার মধ্যে তাঁর দেড় ঘণ্টার ক্লাস তিন ঘণ্টায় বিস্তৃত হয়। হূদয়গ্রাহী বক্তৃতা সবাই মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনেছে এবং মর্মে মর্মে অনুভব করেছে। ড. ইউনূস কলেজের পূর্ণ অডিটোরিয়ামে একটানা বক্তৃতা দিয়ে চলেছেন। বাংলাদেশের গ্রামীণ দারিদ্র্যের করুণ বাস্তবচিত্র তুলি হাতে যেন শিল্পীর মতো তিনি এঁকে চলেছেন। তিনি দরিদ্র মানুষের ক্ষুদ্রঋণের অধিকারের যৌক্তিকতা এবং তাঁর গ্রামীণ ব্যাংকের সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। আমি কমান্ড্যান্ট থাকাকালে প্রতিবছরই ড. ইউনূস স্টাফ কলেজে অতিথি বক্তা হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছেন। কলেজকে ধন্য করেছেন, সশস্ত্র বাহিনীর অফিসারদের আলোকিত করেছেন।
১৯১৩ সালে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তিনি নোবেল অর্জন করেন সাহিত্যের জন্য। বিশ্বসভায় তিনি বাংলাদেশকে, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে পরিচিত করেছেন, সমাদৃত ও সম্মানিত করেছেন। বাংলায় রেনেসাঁর বিকাশ ঘটিয়েছেন। প্রায় ১০০ বছর পরে বাংলার সন্তান ড. ইউনূস শান্তিতে নোবেল অর্জন করলেন। দারিদ্র্যই মানবতার সবচেয়ে বড় অভিশাপ। দারিদ্র্যই পৃথিবীর সব অশান্তি, অস্থিরতা ও হানাহানির মূল কারণ। ড. ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ-তত্ত্ব পৃথিবীতে স্থায়ী শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্র পদক্ষেপ মোটেই ছিল না। আজ বিশ্বজুড়ে ড. ইউনূসের জয়জয়কার। প্রেসিডেন্ট ওবামা তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠ সম্মানে ভূষিত করেছেন। তেমনি করেছে ফ্রান্স, স্পেন, জার্মানি, জাপানসহ অনেক দেশ। চীনের এক বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর ক্ষুদ্রঋণ ও গ্রামীণ ব্যাংকের গবেষণায় নতুন বিভাগ খুলেছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস উপস্থিত থেকেছেন।
ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় সমকালীন ইতিহাসে ড. ইউনূসও ঘোরতর অন্যায়ের শিকার। অদ্ভুত তাঁর নিয়তি। ইউনূসের গর্বে গর্বিত এই বাংলাদেশেই এখন চলছে তাঁকে নিয়ে মিথ্যা প্রচারণা। তাঁকে বলা হচ্ছে রক্তশোষক, বলা হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদীর এজেন্ট। তাঁর নিজ হাতে তৈরি গ্রামীণ ব্যাংক তাঁর কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তাঁকে ব্যাংকের পরিচালনার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকার অবৈধভাবে নতুন চেয়ারম্যান নিযুক্ত করেছে। চেয়ারম্যানের হাতে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে ম্যানেজিং ডিরেক্টর নিয়োগের। এটি অগণতান্ত্রিক, অবৈধ, অনৈতিক।
উল্লেখ করা প্রয়োজন, গ্রামীণ ব্যাংক কোনো সাধারণ ব্যাংক নয়, সরকারি বা একক ব্যক্তিমালিকানার ব্যাংকও নয়। এ ব্যাংক নোবেল বিজয়ী ব্যাংক। আর এর মালিক তাঁর ৮৩ লাখ ঋণগ্রহীতা নারী। গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালিত হবে তাঁদেরই সিদ্ধান্তে, তাঁদেরই স্বার্থে—এটাই নীতি। ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে সরকার যেন যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে। দেশবাসী ঠিকই জানে, সবই বোঝে। তারা আজ গভীরভাবে চিন্তিত, উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত। ড. ইউনূস সবার কাছে আবেদন জানিয়েছেন গ্রামীণ ব্যাংককে ধ্বংসের এই চক্রান্ত থেকে রক্ষা করার জন্য। জনগণের কাছে আজ এটা পরিষ্কার যে সরকার গ্রামীণ ব্যাংকের কর্তৃত্ব হস্তগত করতে চায়। তাদের কাছে আরও পরিষ্কার যে সরকার ড. ইউনূসের ভাবমূর্তি ধ্বংস করতে চায়।
মনে পড়ছে আলেকজান্ডারের সেই কিংবদন্তির উক্তি, ‘বিচিত্র এ দেশ সেলুকাস’। সত্যিই বিচিত্র বাংলাদেশ।
লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান (অব.): সাবেক সেনাপ্রধান।
ড. ইউনূস আমাদের জাতীয় বীর, কীর্তিমান মানুষ। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী। এ অর্জন শুধু একজন ব্যক্তির নয়, একটি সংস্থারও অর্জন। এ অর্জন একটি জাতির, এ অর্জন গোটা বিশ্ববাসীরও। ইউনূস আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার। তাঁর অনবদ্য আবিষ্কার দারিদ্র্য দূরীকরণে ক্ষুদ্রঋণ-তত্ত্ব। গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে তিনি এই ক্ষুদ্রঋণ-তত্ত্বের সফল বাস্তবায়ন করেছেন।
ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের জনক ড. ইউনূস তাঁর পকেট থেকে মাত্র ৮৫৬ টাকা দিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরে জোবরা গ্রামে ক্ষুদ্রঋণের সূচনা করেছিলেন। তাঁকে শুরুতে কঠিন সংগ্রাম করতে হয়েছে স্থানীয় ব্যাংকের সঙ্গে, ঋণ ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে। বন্ধকহীন ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থার কথা কেউ এর আগে শোনেনি। সম্পূর্ণ বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত জামিনে এ কাজ শুরু করেছিলেন। তাঁর এ উদ্যোগের ক্ষেত্রে তিনি বেছে নিয়েছিলেন নারীদের, যারা যুগ যুগ ধরে পুরুষশাসিত সমাজে শুধু বঞ্চনার শিকার হয়েছে। তিনি সুপ্ত নারীশক্তির বিশালতা দিব্য দৃষ্টিতে প্রত্যক্ষ করেছিলেন। ড. ইউনূসের জোবরা গ্রামে রচিত ছোট্ট চারা গাছটি আস্তে আস্তে বিশাল মহীরুহে পরিণত হয়। শাখা-প্রশাখায় বিস্তার লাভ করে। সারা দেশের ৬৮ হাজার গ্রাম ছাড়িয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের মহিমা সারা বিশ্বে ঘোষিত হয়। এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা এমনকি যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের চমকপ্রদ সাফল্যে আকৃষ্ট হয় এবং তা সাদরে গ্রহণ করে। ড. ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ-তত্ত্ব পৃথিবীর অর্থনৈতিক মানচিত্রে এক উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার। তিনি বিশ্বকে বোঝাতে সক্ষম হন যে ঋণের অধিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ মানবাধিকারের বিষয়। দরিদ্র মানুষের ঋণলাভের বিষয়টি তিনি মানুষের একটি মৌলিক অধিকার হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং তাঁর বেঁচে থাকার সংগ্রামে, তাঁর ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য তা অপরিহার্য বলে প্রতিষ্ঠা করেন।
নব্বইয়ের দশকের প্রথমার্ধে আমি তখন মিরপুর সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের কমান্ড্যান্ট। সম্মানিত অতিথি বক্তা হিসেবে ড. ইউনূসকে আমি আমন্ত্রণ জানাই কলেজে শিক্ষারত সামরিক বাহিনীর অফিসারদের বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর বক্তৃতা দেওয়ার জন্য। দেড় ঘণ্টার ক্লাস। আমার মনে আছে, ছাত্রদের পিনপতন নিস্তব্ধতার মধ্যে তাঁর দেড় ঘণ্টার ক্লাস তিন ঘণ্টায় বিস্তৃত হয়। হূদয়গ্রাহী বক্তৃতা সবাই মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনেছে এবং মর্মে মর্মে অনুভব করেছে। ড. ইউনূস কলেজের পূর্ণ অডিটোরিয়ামে একটানা বক্তৃতা দিয়ে চলেছেন। বাংলাদেশের গ্রামীণ দারিদ্র্যের করুণ বাস্তবচিত্র তুলি হাতে যেন শিল্পীর মতো তিনি এঁকে চলেছেন। তিনি দরিদ্র মানুষের ক্ষুদ্রঋণের অধিকারের যৌক্তিকতা এবং তাঁর গ্রামীণ ব্যাংকের সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। আমি কমান্ড্যান্ট থাকাকালে প্রতিবছরই ড. ইউনূস স্টাফ কলেজে অতিথি বক্তা হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছেন। কলেজকে ধন্য করেছেন, সশস্ত্র বাহিনীর অফিসারদের আলোকিত করেছেন।
১৯১৩ সালে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তিনি নোবেল অর্জন করেন সাহিত্যের জন্য। বিশ্বসভায় তিনি বাংলাদেশকে, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে পরিচিত করেছেন, সমাদৃত ও সম্মানিত করেছেন। বাংলায় রেনেসাঁর বিকাশ ঘটিয়েছেন। প্রায় ১০০ বছর পরে বাংলার সন্তান ড. ইউনূস শান্তিতে নোবেল অর্জন করলেন। দারিদ্র্যই মানবতার সবচেয়ে বড় অভিশাপ। দারিদ্র্যই পৃথিবীর সব অশান্তি, অস্থিরতা ও হানাহানির মূল কারণ। ড. ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ-তত্ত্ব পৃথিবীতে স্থায়ী শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্র পদক্ষেপ মোটেই ছিল না। আজ বিশ্বজুড়ে ড. ইউনূসের জয়জয়কার। প্রেসিডেন্ট ওবামা তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠ সম্মানে ভূষিত করেছেন। তেমনি করেছে ফ্রান্স, স্পেন, জার্মানি, জাপানসহ অনেক দেশ। চীনের এক বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর ক্ষুদ্রঋণ ও গ্রামীণ ব্যাংকের গবেষণায় নতুন বিভাগ খুলেছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস উপস্থিত থেকেছেন।
ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় সমকালীন ইতিহাসে ড. ইউনূসও ঘোরতর অন্যায়ের শিকার। অদ্ভুত তাঁর নিয়তি। ইউনূসের গর্বে গর্বিত এই বাংলাদেশেই এখন চলছে তাঁকে নিয়ে মিথ্যা প্রচারণা। তাঁকে বলা হচ্ছে রক্তশোষক, বলা হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদীর এজেন্ট। তাঁর নিজ হাতে তৈরি গ্রামীণ ব্যাংক তাঁর কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তাঁকে ব্যাংকের পরিচালনার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকার অবৈধভাবে নতুন চেয়ারম্যান নিযুক্ত করেছে। চেয়ারম্যানের হাতে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে ম্যানেজিং ডিরেক্টর নিয়োগের। এটি অগণতান্ত্রিক, অবৈধ, অনৈতিক।
উল্লেখ করা প্রয়োজন, গ্রামীণ ব্যাংক কোনো সাধারণ ব্যাংক নয়, সরকারি বা একক ব্যক্তিমালিকানার ব্যাংকও নয়। এ ব্যাংক নোবেল বিজয়ী ব্যাংক। আর এর মালিক তাঁর ৮৩ লাখ ঋণগ্রহীতা নারী। গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালিত হবে তাঁদেরই সিদ্ধান্তে, তাঁদেরই স্বার্থে—এটাই নীতি। ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে সরকার যেন যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে। দেশবাসী ঠিকই জানে, সবই বোঝে। তারা আজ গভীরভাবে চিন্তিত, উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত। ড. ইউনূস সবার কাছে আবেদন জানিয়েছেন গ্রামীণ ব্যাংককে ধ্বংসের এই চক্রান্ত থেকে রক্ষা করার জন্য। জনগণের কাছে আজ এটা পরিষ্কার যে সরকার গ্রামীণ ব্যাংকের কর্তৃত্ব হস্তগত করতে চায়। তাদের কাছে আরও পরিষ্কার যে সরকার ড. ইউনূসের ভাবমূর্তি ধ্বংস করতে চায়।
মনে পড়ছে আলেকজান্ডারের সেই কিংবদন্তির উক্তি, ‘বিচিত্র এ দেশ সেলুকাস’। সত্যিই বিচিত্র বাংলাদেশ।
লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান (অব.): সাবেক সেনাপ্রধান।
No comments