বনাঞ্চলে অগ্নিকাণ্ডঃ সরকার উদাসীন!
মধুপুর বনাঞ্চলে দুর্বৃত্তদের লাগানো আগুন নিভতে না নিভতেই পুড়ে গেল কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের চারটি টিলার বন। প্রায় উজাড় বনাঞ্চল শুধু অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হয়নি, যে সব বড় গাছ আগাপোড়া অবস্থায় দাঁড়িয়েছিল তারও বেশিরভাগ কেটে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ যেন লাশের ওপর শকুন পড়ার মতো ঘটনা। শেষ পর্যন্ত যা হওয়ার তাই হয়েছে, রোগী মরার পর ডাক্তার হাজির।
স্থানীয় লোকজনের কাছে জেনে বন কর্মকর্তা ও উপজেলা কর্মকর্তা ঘটনা পরিদর্শন করে ‘রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডের’ কারণ খুঁজে দেখার কথা বলেছেন। গত ১২ মার্চ সন্ধ্যায় এই জাতীয় উদ্যানের বাঘমারা এলাকার আগর বাগানে আগুন লাগে। আগুনের শিখা অন্ধকারে বহুদূর পর্যন্ত দৃশ্যমান হলেও বনকর্মী-কর্মকর্তা বা প্রশাসনের কারও নজরে পড়েনি! তারা কেউই সঙ্গে সঙ্গে অকুস্থলে যাননি। কয়েক ঘণ্টা পর বাঘমারার পাশের তেরঘর টিলায় একইভাবে আগুন লেগে পুড়ে যায় সেখানকার পুরো আগর বাগান। জানা গেছে, এই অগ্নিকাণ্ডে চারটি টিলায় পুড়ে গেছে প্রায় দুই কোটি টাকার মূল্যবান গাছ। আগুন জ্বলতে থাকা অবস্থায় স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে বন বিভাগের ক’জন আগুন নেভানোর উদ্যোগ নেয়। ততক্ষণে পুড়ে গেছে সংরক্ষিত এলাকার প্রায় ৫০ একর বনাঞ্চল। ধারণা করা হচ্ছে, দুর্বৃত্তরা আগুন লাগানোর পর গাছ কাটেনি। গাছ কেটে নিয়ে তারপর আগুন লাগিয়েছে। সম্ভবত তারা বিশেষ কোনো কারণে গাছের গোড়া বা মোথা নষ্ট করতে চেয়েছিল। আগুন লাগায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নতুন বনাঞ্চলের গাছ। কয়েক হাজার নতুন লাগানো শিশু গাছ একেবারে সাবাড় হয়েছে। সবচেয়ে বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, পরদিন সন্ধ্যায় আরেক অগ্নিকাণ্ডে বাঘমারা ক্যাম্প থেকে বাঘমারা যাওয়ার রাস্তার পাশে সেগুন ও জারুল বাগান আগুন লেগে পুড়ে যায়। এসব গাছ লাগানো হয়েছিল ১৯৯৫ সালে।
এ ব্যাপারে সেই পুরোনো অভিযোগই উত্থাপন করা হয়েছে। লাউয়াছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা ও কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিশাল এই জাতীয় উদ্যান তথা বনাঞ্চলে হাতেগোনা লোকবল নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। এ এলাকায় প্রায় দু’তিনশ’ বনদস্যুর আনাগোনা রয়েছে। কিন্তু তাদের প্রতিরোধ করার দায়িত্বে আছেন মাত্র একজন বনকর্মী। বাঘমারার বন কর্মকর্তার অভিযোগ, শ’চারেক বনদস্যু গাছগাছালি কেটে নিচ্ছে। তাদের বাধা দিতে গেলে প্রায়শই কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের হামলার শিকার হতে হয়। তাছাড়া পুরনো আমলের দু’একটি বন্দুক নিয়ে এদের মোকাবিলা করাও সম্ভব হচ্ছে না।
এখন চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর দরকার নেই যে, বাংলাদেশের কোনো বনাঞ্চলই আর সুরক্ষিত নেই। সব সরকারের আমলেই নানাভাবে বন উজাড় প্রক্রিয়া অব্যাহত থেকেছে । খাঁ খাঁ প্রান্তরে পরিণত হয়েছে একদার নিবিড় বনভূমি। বনজবৃক্ষের পাশাপাশি সাবাড় হয়েছে ওষুধি গাছগাছড়াসহ লতাগুল্ম। স্বভাবতই বনভূমি উজাড় হলে নির্বংশ হয় সেখানকার বিস্তর প্রাণী, পাখিরা চলে যায় অন্যত্র। গাছের অভাবে ভূমিধস বেড়ে যায়, ভরাট হয় পার্শ্ববর্তী নদী-জলাশয়, কমে যায় জমির উর্বরাশক্তি। নৈসর্গিক সৌন্দর্যও মলিন হয় চূড়ান্তভাবে। সব মিলিয়ে পরিবেশ-প্রতিবেশ হয়ে পড়ে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।
উল্লেখ্য, যেখানে প্রাকৃতিক ভারসাম্যের জন্য একটি দেশে ২৫ ভাগ বনভূমির দরকার, সেখানে বাংলাদেশে এখন পাঁচ ভাগও নেই। উজাড় বনভূমিতে জবরদখল চলছে, ইটভাটা থেকে শুরু করে বৃহত্ মিল-কারখানা হচ্ছে, চাষাবাদসহ বসতিও গড়ে উঠছে। শুধু বনদস্যু বা দুর্বৃত্তরাই নয়, বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে বনরক্ষী পর্যন্ত এই উজাড় কাজে আগাগোড়া জড়িত আছেন। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে ভূমিদস্যুরা। ভূমিপ্রশাসনের টাউটরা তাদের জবরদখলে নানাভাবে সহায়তা দিচ্ছে। যতই বুলি কপচানো হোক না কেন, সরকার তথা বন মন্ত্রণালয় বনের সুরক্ষায় আক্ষরিক অর্থেই উদাসীন। বন বিভাগে লোকজন কম, তাদের হাতে পুরনো দিনের বন্দুক, বনদস্যুসহ নানা জাতের দস্যুরা বনধ্বংসে নিয়োজিত আর সরকার পরিবেশ রক্ষায় ব্যতিব্যস্ত—এই বৈপরীত্য নিয়ে বনাঞ্চল কী করে টিকে থাকে? প্রকৃত প্রস্তাবে নদী মরছে, বন পুড়ছে, এর বিরুদ্ধে সরকারের ভূমিকা একেবারেই উল্লেখযোগ্য নয়। আমরা এই ঔদাসীন্য-অক্ষমতার অবসান চাই।
এ ব্যাপারে সেই পুরোনো অভিযোগই উত্থাপন করা হয়েছে। লাউয়াছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা ও কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিশাল এই জাতীয় উদ্যান তথা বনাঞ্চলে হাতেগোনা লোকবল নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। এ এলাকায় প্রায় দু’তিনশ’ বনদস্যুর আনাগোনা রয়েছে। কিন্তু তাদের প্রতিরোধ করার দায়িত্বে আছেন মাত্র একজন বনকর্মী। বাঘমারার বন কর্মকর্তার অভিযোগ, শ’চারেক বনদস্যু গাছগাছালি কেটে নিচ্ছে। তাদের বাধা দিতে গেলে প্রায়শই কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের হামলার শিকার হতে হয়। তাছাড়া পুরনো আমলের দু’একটি বন্দুক নিয়ে এদের মোকাবিলা করাও সম্ভব হচ্ছে না।
এখন চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর দরকার নেই যে, বাংলাদেশের কোনো বনাঞ্চলই আর সুরক্ষিত নেই। সব সরকারের আমলেই নানাভাবে বন উজাড় প্রক্রিয়া অব্যাহত থেকেছে । খাঁ খাঁ প্রান্তরে পরিণত হয়েছে একদার নিবিড় বনভূমি। বনজবৃক্ষের পাশাপাশি সাবাড় হয়েছে ওষুধি গাছগাছড়াসহ লতাগুল্ম। স্বভাবতই বনভূমি উজাড় হলে নির্বংশ হয় সেখানকার বিস্তর প্রাণী, পাখিরা চলে যায় অন্যত্র। গাছের অভাবে ভূমিধস বেড়ে যায়, ভরাট হয় পার্শ্ববর্তী নদী-জলাশয়, কমে যায় জমির উর্বরাশক্তি। নৈসর্গিক সৌন্দর্যও মলিন হয় চূড়ান্তভাবে। সব মিলিয়ে পরিবেশ-প্রতিবেশ হয়ে পড়ে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।
উল্লেখ্য, যেখানে প্রাকৃতিক ভারসাম্যের জন্য একটি দেশে ২৫ ভাগ বনভূমির দরকার, সেখানে বাংলাদেশে এখন পাঁচ ভাগও নেই। উজাড় বনভূমিতে জবরদখল চলছে, ইটভাটা থেকে শুরু করে বৃহত্ মিল-কারখানা হচ্ছে, চাষাবাদসহ বসতিও গড়ে উঠছে। শুধু বনদস্যু বা দুর্বৃত্তরাই নয়, বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে বনরক্ষী পর্যন্ত এই উজাড় কাজে আগাগোড়া জড়িত আছেন। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে ভূমিদস্যুরা। ভূমিপ্রশাসনের টাউটরা তাদের জবরদখলে নানাভাবে সহায়তা দিচ্ছে। যতই বুলি কপচানো হোক না কেন, সরকার তথা বন মন্ত্রণালয় বনের সুরক্ষায় আক্ষরিক অর্থেই উদাসীন। বন বিভাগে লোকজন কম, তাদের হাতে পুরনো দিনের বন্দুক, বনদস্যুসহ নানা জাতের দস্যুরা বনধ্বংসে নিয়োজিত আর সরকার পরিবেশ রক্ষায় ব্যতিব্যস্ত—এই বৈপরীত্য নিয়ে বনাঞ্চল কী করে টিকে থাকে? প্রকৃত প্রস্তাবে নদী মরছে, বন পুড়ছে, এর বিরুদ্ধে সরকারের ভূমিকা একেবারেই উল্লেখযোগ্য নয়। আমরা এই ঔদাসীন্য-অক্ষমতার অবসান চাই।
No comments