কুড়িয়ে পাওয়া সংলাপ-প্রাপ্তিবিলম্ব পরিহার্য by রণজিৎ বিশ্বাস

মনে করুন, কাউকে আপনি বিশেষ কারো সমান মনে করলেন না।
: মনে করলাম। তারপর? : তারপর, তার মূল্যায়ন আপনি কিভাবে করবেন?
: আমি কিভাবে করব, সে আমার ব্যাপার। তাতে আপনার কী?!


: আমার কিছু নেই। আমি শুধু মিলিয়ে দেখব, অনেক বড় বড় লোক যেভাবে মূল্যায়ন করেন, আপনি সেভাবে করতে জানেন কি না, সেভাবে করাটাকে আপনি মানেন কি না, অথবা সেভাবে করার মতো কোনো প্রক্রিয়া আপনি শিখেছেন কি না।
: আপনার মেলানোর আকাঙ্ক্ষা কতটুকু আমি পূরণ করতে পারব জানি না। তবে একটা কাজ আমি করতে পারি।
: কী কাজ?
: কিভাবে আমি তুলনা করব, সে আমি বলব না, কিভাবে বা কোনো স্টাইলে আমি তুলনা করব না কিংবা তুলনায় সাহস দেখাব না- সেটি বলতে পারি।
: ঠিক আছে, সেটিই বলুন।
: আমি কখনো বলব না- অমুক তমুকের নখের যোগ্যও না।
: আপনি বলবেন না, বলতে চান না বা বলার মাঝে কোনো রুচিসন্ধান করেন না- সে আপনার ব্যাপার এবং যাঁরা তা করেন, সে তাঁদের ব্যাপার।
: অবশ্যই! কোনো সন্দেহ নেই! এভরি বডি ইজ এনটাইটলড টু হিজ কমেন্টস।
: তুলনায় নখটি কেন অমন করে চলে আসে?!
: আসতেই পারে! সংসারে হেন বিষয় নেই যা তুলনায় আসতে পারে না। যেমন নিরপেক্ষতার তুলনায় আমরা পাগলামি ও শিশুত্বকে আসতে দেখেছি!
: দেখেছেন। কিন্তু নিরপেক্ষতার তুলনায় ওই দুটো সুন্দর ও লাগসই বিষয়কে যিনি এনেছেন, তিনি নিজে তো তা আনেননি, বিভিন্ন বোধগম্য কারণে তেমন তো হওয়ারও কথা নয়, নিশ্চয়ই কেউ না কেউ তাকে এই কথাগুলো ব্যবহারের জন্য লুব্ধ করেছেন।
: হতে পারে, না-ও হতে পারে। এ বিষয়ে কোনো গবেষণা এখনো সম্ভবত হয়নি। আমি নিজেও তা হাতে নিইনি।
: তবে নেওয়া দরকার। এটি যার মস্তিষ্কপ্রসূত, তাকে সবার চেনা দরকার। প্রতিভা কখনো অনাবিষ্কৃত থাকা ভালো নয়। তাতে যার যা প্রাপ্য, সে বঞ্চিত হয়। এবং যাকে যা দিতে হবে, তা ঠিক সময়ে বুঝিয়ে দিতে না পারলে অনেক অসুবিধে হয়। অনেক ঝক্কি-ঝামেলা উপস্থিত হয়।
: এগজাম্পল হচ্ছে, যুদ্ধাপরাধী মানবতাবিরোধী কালপ্রিটস্যকালপ্রিট পাশবাতিপাশব ও কীটানুকীটেদের 'প্রাপ্তিবিলম্ব'। যদি যথাসময়ে যথাপ্রাপ্য বুঝিয়ে দিয়ে আমরা তাদের সন্তুষ্ট করতে পারতাম, এখন কোনো আলবদর কমান্ডারের মুখে আমাদের শুনতে হতো না- মুক্তিযুদ্ধ না করলেও বিজয় দিবস থেকে দেশগড়ার কাজে মন দিয়েছি। দেশের মানুষ আমাকে অনেক সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছে। তারা আমার গাড়িতে ও বাড়িতে জাতীয় পতাকা দিয়েছে।
: স্বাধীনতার এই শত্রুর গাড়িতে ও বাড়িতে কারা দিল জাতীয় পতাকা?! কখন দিল?! কোনো মানুষ এমন কাজ করতে পারে নাকি?!
: আপনার এমন প্রশ্নে আমি খুব বিরক্ত হচ্ছি। ভবিষ্যতে আপনার সঙ্গে আমি কোনো সংলাপেই যোগ দেব না।
: আপনার এত ক্রোধের কারণ কী?
: ক্রোধের কারণ হচ্ছে, আপনি সব উদ্ভট ও শিশুতোষ প্রশ্ন করেন।
কখন রক্তের গঙ্গায় প্রাণের প্রবাহে, আত্মার উৎসর্গে ও জায়াজননীকন্যাভগিনীর শুচিতালাঞ্ছনায় পাওয়া পবিত্র এ দেশে পিশাচেরা নাচন-কোদন-লম্ফন-উল্লম্ফন শুরু করল, কার কার অনুগ্রহ আনুকূল্য ও প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সমর্থন পেল আপনি জানেন না?! কখন স্বাধীনতার শত্রুরা ও জাতির জনকের স্বঘোষিত হত্যাকারীরা নায়ক হয়ে গেল, দেশেবিদেশে সসম্মান পুনর্বাসিত হলো এবং কার হাতে এসব মহৎ কাজ হলো, আপনি জানেন না?!
: জানব না কেন! দেশের সব মানুষ যা জানে, গণমাধ্যমে কাজ করার পরও আমি তা জানব না- এসব আপনি ভাবেন কী করে! আমি খুব অপমান বোধ করছি।
: আপনি যা-ই মনে করুন, স্বাধীনতার দুশমন, বাইচান্স-মুক্তিযোদ্ধা এবং সাম্প্রদায়িক ও ছদ্মসাম্প্রদায়িক লোকেদের অ্যাকটিভিটিজ এমন বোকাবোকা ও সরলসরল প্রশ্ন আর করবেন না। আমার ভালো লাগে না।
লেখক : শ্রমজীবী কথাসাহিত্যিক

No comments

Powered by Blogger.