দাস প্রথা ঘরে ঘরে! by সোহায়েল হোসেন সোহেল
৩ মে, ২০১২। একটি দৈনিকের শেষের পাতার একটি খবরে চোখ পড়ল_ 'যে পৈশাচিকতা পশুত্বকে হার মানায়।' সঙ্গে একটা মেয়ের করুণ মুখচ্ছবি। পিঠ তার গরম ইস্ত্রির ছেঁকায় জর্জরিত। বঁটি-দায়ের আঘাতে দুই ভাগ হওয়া সেলাই করা মাথা। বাবা-মা হারা মেয়েটির নাম রেখা। বয়স ৮।
চাঁদপুর জেলার পূর্ব বড়ালী গ্রামের হতদরিদ্র কৃষক আতর আলীর (নানা) অভাবের সংসারে ছিল রেখার বসবাস । নানা তার আদরের নাতনির জন্য কাজ ঠিক করলেন পাশের বাড়ির আবুল কালাম মিজির কোটিপতি মেয়ে বদরুন নাহারের ঢাকার বাসায়। কাজে ঢোকার প্রথম দিন থেকেই রেখাকে করতে হতো বাড়ির সব কাজ। সময় বেঁধে দিত তার মালিক। পাঁচ মিনিটের মধ্যে কয়েক বালতি জামা-কাপড় ধোয়া, দু'মিনিটের মধ্যে চা তৈরি করে আনা, প্রতিদিন তিন বার ভাত রান্নাসহ আরও অনেক কাজ। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারলে তার ওপর চালানো হতো অত্যাচারের স্টিম রোলার। কাজের মধ্যে কোনো প্রকার ত্রুটি পেলে রেখাকে পেটানো হতো। জামা-কাপড় ধুতে দেরি হলে বাথরুমের কমোডে তার মুখ চুবিয়ে ধরত গৃহকর্ত্রী। ভাত রান্নায় দেরি হলে দেওয়া হতো গরম খুন্তির ছেঁকা। চায়ে মিষ্টি কম হলে গরম চা ছুড়ে মারা হতো তার ওপর। একদিন জামা-কাপড় ইস্ত্রি করতে না পারায় পাষণ্ড গৃহকর্ত্রী গরম ইস্ত্রি চেপে ধরে রেখার পিঠের ওপর। মাংস পোড়া গন্ধ বের হলে তবে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে রেখার ওপর এমন অমানুষিক, বর্বরোচিত অত্যাচার করা হয়েছে।
এমন হাজারো রেখা আজ আমাদের সমাজে অবহেলিত, নির্যাতিত, অত্যাচারিত। তারা ধনী পরিবারে যায় কাজের জন্য। দু'বেলা দু'মুঠো ভাত খেয়ে কোনো রকমে বাঁচার আশায়। সারাদিন থালা-বাসন ধোয়া, ঘর পরিষ্কার, কাপড় কাচা, ইস্ত্রি করা, বাজার করা, রান্না করা; এমনকি টয়লেট পরিষ্কারের কাজটা পর্যন্ত তাদের করতে হয়। মাঝেমাঝে মনিবের সন্তুষ্টির জন্য তাদের এমন কঠিন কাজ করতে হয়, যা তাদের বয়স এবং শারীরিক শক্তির জন্য নিরাপদ নয়। অথচ মুখ বুজে সে কাজও তারা করে যায়। এত কিছুর পরও জোটে না বাড়ির মালিকের একটু ভালো ব্যবহার। কথায় কথায় মারধর, অকথ্য ভাষায় গালাগাল তো আছেই। আবার কাজের মেয়েটি যদি পূর্ণবয়স্ক হয়, তাহলে কোনো কোনো মনিব যৌন নিপীড়ন করতেও পিছপা হয় না।
আমরা কি সেই দাসপ্রথার অন্ধ বেড়াজাল থেকে এখনও বের হতে পারিনি? সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে রেখাদের জন্য আমাদের কি কিছুই করার নেই? রেখাদের চাওয়া তো আমাদের কাছে খুব বেশি নয়। শুধু দু'বেলা দু'মুঠো ভাত, পরনের এক টুকরো কাপড়, ঘুমানোর মতো একটু জায়গা আর একটু ভালোবাসা। এটাও কি দিতে পারব না আমরা? যদি নিজেরা সচেতন হই, নিজের পরিবারের কাজের মেয়ের প্রতি একটু সহানুভূতি দেখাই, ভালোবাসার হাতটা যদি একটু বাড়িয়ে দিই, তাহলে রেখারাও দেখতে পারে বেঁচে থাকার স্বপ্ন।
ৎ শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
sohelrumcj@gmail.com
এমন হাজারো রেখা আজ আমাদের সমাজে অবহেলিত, নির্যাতিত, অত্যাচারিত। তারা ধনী পরিবারে যায় কাজের জন্য। দু'বেলা দু'মুঠো ভাত খেয়ে কোনো রকমে বাঁচার আশায়। সারাদিন থালা-বাসন ধোয়া, ঘর পরিষ্কার, কাপড় কাচা, ইস্ত্রি করা, বাজার করা, রান্না করা; এমনকি টয়লেট পরিষ্কারের কাজটা পর্যন্ত তাদের করতে হয়। মাঝেমাঝে মনিবের সন্তুষ্টির জন্য তাদের এমন কঠিন কাজ করতে হয়, যা তাদের বয়স এবং শারীরিক শক্তির জন্য নিরাপদ নয়। অথচ মুখ বুজে সে কাজও তারা করে যায়। এত কিছুর পরও জোটে না বাড়ির মালিকের একটু ভালো ব্যবহার। কথায় কথায় মারধর, অকথ্য ভাষায় গালাগাল তো আছেই। আবার কাজের মেয়েটি যদি পূর্ণবয়স্ক হয়, তাহলে কোনো কোনো মনিব যৌন নিপীড়ন করতেও পিছপা হয় না।
আমরা কি সেই দাসপ্রথার অন্ধ বেড়াজাল থেকে এখনও বের হতে পারিনি? সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে রেখাদের জন্য আমাদের কি কিছুই করার নেই? রেখাদের চাওয়া তো আমাদের কাছে খুব বেশি নয়। শুধু দু'বেলা দু'মুঠো ভাত, পরনের এক টুকরো কাপড়, ঘুমানোর মতো একটু জায়গা আর একটু ভালোবাসা। এটাও কি দিতে পারব না আমরা? যদি নিজেরা সচেতন হই, নিজের পরিবারের কাজের মেয়ের প্রতি একটু সহানুভূতি দেখাই, ভালোবাসার হাতটা যদি একটু বাড়িয়ে দিই, তাহলে রেখারাও দেখতে পারে বেঁচে থাকার স্বপ্ন।
ৎ শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
sohelrumcj@gmail.com
No comments