নগরের বিনোদন কেন্দ্র by মোঃ আতিকুর রহমান

শহরের পরিকল্পনা প্রণয়নে যদি বিনোদন অথবা প্রাকৃতিক বিষয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়, সেই সঙ্গে মানুষের মৌলিক প্রয়োজনের বিষয়গুলোকে স্থান দেওয়া হয়, তাহলে তা প্রাণবন্ত শহরে রূপ নেয়। অন্যদিকে নগর পরিকল্পনায় এই বিষয়গুলোর ঘাটতি থাকলে শহরটি পরিণত হয় প্রাণহীন শহরে।


নগরে আমরা কেন উদ্যান বানাই এবং লালন করি_ এ প্রশ্নের একাধিক উত্তর হতে পারে। তবে সাদামাটাভাবে এটুকু বলা যায়, চোখ ও মনের খোরাক জোগাতে, ফুসফুসকে কিছুটা সতেজ বায়ু জোগান দিতে, সর্বোপরি একটি জনবহুল শহরের মানুষকে ভালোভাবে বাঁচিয়ে রাখতে পার্ক ও উদ্যান একটি অত্যাবশ্যকীয় স্থাপনা। ভিন্ন অর্থে বলা যায়, পার্ক ও উদ্যান একটি শহরের অলঙ্কারস্বরূপ। দেড় কোটি মানুষের নগরীতে এমন অলঙ্কার আছে হাতেগোনা। একটি রাজধানীতে সাধারণত যে পরিমাণ পার্ক, মাঠ বা খোলা জায়গা থাকার কথা, এত খোলা জায়গা এই রাজধানীতে নেই। রাজধানীতে ডিসিসি এবং রাজউক ও গণপূর্ত অধিদফতরের তালিকা অনুযায়ী যথাক্রমে ৪৭ এবং ২১ মোট ৬৮টি পার্ক রয়েছে। যার মধ্যে ৩২টির অস্তিত্ব মেলেনি। অবশিষ্ট ২৬টির অবস্থাও খুব নাজুক। রাজধানীতে যে ক'টি পার্ক ছিল, তার বেশ কিছু হয় বিলুপ্ত, না হয় দখল হয়ে গেছে। যে ক'টি পার্ক, উদ্যান বা খোলা স্থান রয়েছে তা নানা সমস্যায় জর্জরিত। নেই বিনোদনের পরিবেশ ও নিরাপত্তা। যত্রতত্র আবর্জনা, মলমূত্র, ভাসমান যৌনকর্মী, মাদকাসক্তদের দখলে চলে গেছে ১২টি পার্ক। এগুলো হচ্ছে বাংলামোটরে পান্থকুঞ্জ পার্ক, ইংলিশ রোডের পার্ক, নিমতলী পার্ক, মুক্তাঙ্গন পার্ক, গুলিস্তান পার্ক, গোলাপবাগ শিশু পার্ক, নাজিরাবাজার পার্ক, সিরাজউদ্দৌলা পার্ক, আরমানীটোলা পার্ক, হাজারীবাগ পার্ক, হাজারীবাগ কসাই পার্ক, রায়েরবাজার পার্ক। রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে ২৪টি পার্ক।
শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ, সুস্থ-সবল জাতি গঠন এবং যুবসমাজকে নানা সামাজিক অপরাধ থেকে দূরে রাখার ক্ষেত্রে পার্ক ও উদ্যানগুলোর ভূমিকা অতুলনীয়। ঢাকা শহরে পর্যাপ্ত পার্ক, উদ্যান না থাকায় শিশুদের খেলাধুলার সুযোগ সংকুুচিত হয়ে পড়েছে। খেলাধুলার মাঠ, পার্ক কিংবা উদ্যানের স্বল্পতা ও শহরে প্রকৃতির অনুপস্থিতি ক্রমেই মানুষকে গৃহকেন্দ্রিক কিংবা টেলিভিশননির্ভর করে তুলেছে। রাজধানীতে পর্যাপ্ত পার্ক ও উদ্যান না থাকায় শিশুদের খেলাধুলার সুযোগ সংকুুচিত হয়ে পড়েছে। টেলিভিশন, কম্পিউটার আর ভিডিও গেম তাদের ভরসার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে, যা তাদের সুষ্ঠু বিকাশের পথে অন্তরায়। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে নানা ধরনের সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি এবং আগামী প্রজন্ম আশানুরূপ অবদান রাখতে ব্যর্থ হতে পারে। দিনে দিনে শহরের পার্ক বা উদ্যানে বিনোদন বা সামাজিক কার্যক্রমগুলোর পরিধি ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। অথচ এই পার্ক বা উদ্যান নগর জীবনে কিছুটা হলেও প্রাণের সঞ্চার করে। এই পার্ক বা উদ্যান পরস্পর দেখাশোনা ও জানার সুযোগ তৈরি করে দেয়। অন্যের সঙ্গে খুব সহজেই যোগাযোগের ক্ষেত্রগুলো তৈরি হলে আমাদের সামাজিক জীবন আরও প্রাণবন্ত হবে, যা একটি শহরকে আন্তরিক এবং বসবাসের উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলে।
শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার সুবিধা এবং নগরবাসীর সুস্থ-সুন্দর বিনোদনের জন্য রাজধানীতে পর্যাপ্ত বিনোদন কেন্দ্র, পার্ক, খেলার মাঠ নিশ্চিত করা না হলে এই নগরের প্রাণচাঞ্চল্য একেবারে হারিয়ে যাবে। কাজেই মানুষের স্বার্থেই এ ধরনের স্থানকে সর্বসাধারণের জন্য উপযোগী করা প্রয়োজন। নগরবাসীর সুযোগ-সুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে পার্ক বা উদ্যানগুলোর পরিবেশ এবং কাঠামোগত উন্নয়ন ঘটালে নগরবাসীর বিনোদন কিংবা প্রকৃতির আস্বাদ গ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে। পার্ক বা উদ্যান বিনোদনের জন্য আকর্ষণীয় করতে সেখানে বিভিন্ন ধরনের জিনিসের সমাগম_ যেমন বসার চেয়ার বা অন্যান্য সুবিধা, শিশুদের খেলার সরঞ্জাম, গাছ কিংবা ফুলের বাগান তৈরি করা যেতে পারে। এর ফলে মানুষের পার্ক বা উদ্যানের কর্মকাণ্ডগুলো আকর্ষণীয় এবং অর্থবহ হয়ে উঠবে, যা মানুষের জীবন এবং মননে প্রভাব ফেলবে। সুতরাং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি শিশু, প্রাপ্তবয়স্ক কিংবা বৃদ্ধ বিবেচনায় পার্ক বা উদ্যানের পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা আবশ্যক।
onatiq88@yahoo.com
 

No comments

Powered by Blogger.