সনদসর্বস্ব কারিগরি শিক্ষা by মাইনুল এইচ সিরাজী
দেশের কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে যে পরিমাণ প্রায়োগিক দক্ষতা নিয়ে শিক্ষার্থীদের বের হওয়ার কথা, শিক্ষার্থীরা তা অর্জন করতে পারছে না। ডিপ্লোমা ডিগ্রির সনদ পেলেও তাদের কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা অর্জিত হচ্ছে না। বাংলাদেশ ও জার্মানির কারিগরি শিক্ষার্থীদের নিয়ে পরিচালিত এক গবেষণায় এ চিত্র ফুটে উঠেছে।
পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের এক শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের প্রায়োগিক জ্ঞানের সঙ্গে তাত্তি্বক জ্ঞানেরও ভয়াবহ অবস্থা দেখে আমি বিচলিত। এর কারণ শুধু শিক্ষক সংকট নয়। দুটো চিত্র এখানে বর্ণনা করি। পরীক্ষায় গণহারে এবং প্রকাশ্যে নকল প্রবণতা বিদায় নিয়েছে। না, একটু ভুল আছে এ কথায়। বেশিরভাগ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে এখনও একযোগে নকল চলে অবলীলায়। শিক্ষকরা বাধা দিতে ভয় পান। কারণ কোনো কোনো শিক্ষক নকলে বাধা দিয়ে ইতিমধ্যে ক্যাম্পাসের গাছের ডালের মার খেয়েছেন। তবুও অতি সাহসী কেউ যদি শেষ পর্যন্ত নকল ধরেই ফেলেন, সেই নকলবাজের শাস্তি হয় না। কেন হয় না? এর একটা উত্তর হচ্ছে_ রাজনীতি। পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার ফল দেওয়ার ক্ষেত্রে এক আশ্চর্য উদারতার পরিচয় দেয়। উদ্দেশ্য থাকে_ যে কোনো উপায়ে শিক্ষার্থীদের পাস করিয়ে দিতে হবে। এটা করতে গিয়ে দেখা যায়, যে শিক্ষার্থী মাত্র ১০ নম্বরের উত্তর লিখেছে, সেও ২০ পেয়ে পাস করে যাচ্ছে। এসব সংকটের সঙ্গে শিক্ষক সংকট তো আছেই। আমাদের সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২৪টা ক্লাস নেওয়ার কথা। কিন্তু কোনো কোনো শিক্ষককে ৬০টা পর্যন্ত ক্লাস নিতে হয়। অর্থাৎ দিনে ১০টা করে। একটা ক্লাসের ব্যাপ্তি ৪৫ মিনিট। তার মানে সাড়ে সাত ঘণ্টা ক্লাসে থাকতে হয় একজন শিক্ষককে। ক্লাসের প্রস্তুতির কথা বাদই দিলাম; এত ক্লাসের চাপ তিনি সামলাচ্ছেন কীভাবে_ সে বিস্ময়ও না হয় সংবরণ করলাম, কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা তো এসেই যায়_ শিক্ষার্থীরা এতে শিক্ষকদের কাছ থেকে কী পাচ্ছে?
এই যে এতক্ষণ শিক্ষক হিসেবে নিজের পরিচয় দিলাম, এই পরিচয়টাও শুধু আমার নিজের কাছে। অন্যরা, এমনকি শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের কাছেও আমরা প্রশিক্ষক (ইনস্ট্রাকটর) হিসেবে পরিচিত। এখানে কিন্তু সাঁতার, ড্রাইভিং কিংবা সেলাই শেখানো হয় না। আমি পড়াই বাংলা, আমার নামও প্রশিক্ষক। ক্লাসে আমি কী প্রশিক্ষণ দিই_ আমি নিজেই বুঝি না। শিক্ষক হিসেবে আমাদের সামাজিক স্বীকৃতিই নেই; মর্যাদা তো দূরের কথা। ১৯৫৫ সাল থেকেই পলিটেকনিক শিক্ষকরা এই পদবিতে পরিচিত। তখন পলিটেকনিক চালু হয়েছিল শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে। এই পদবিগুলো ট্রেনিং প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য। ১৯৯৬ সাল থেকে পলিটেকনিক শিক্ষকরা তাদের পদবি কনিষ্ঠ প্রভাষক-প্রভাষক-অধ্যাপক কাঠামোতে পরিবর্তন করার দাবি জানিয়ে আসছেন। শুধু কাঠামো পরিবর্তিত হলে উচ্চতর পদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। ফলে পদোন্নতি সহজ হবে। এতে শিক্ষকদের হতাশা দূর হবে, সামাজিক মর্যাদাও প্রতিষ্ঠিত হবে। প্রস্তাবিত চাকরি কাঠামো বাস্তবায়িত হলে সরকারের বাড়তি অর্থ খরচ হবে না। কারণ অধিকাংশ শিক্ষকই টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পেয়ে ইতিমধ্যে উচ্চতর স্কেলে অবস্থান করছেন। ২০১০ সালের ৮ নভেম্বর বাংলাদেশ পলিটেকনিক শিক্ষক সমিতির সম্মেলনে এবং আইইবির ৫২তম কনভেনশনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ওই চাকরি কাঠামো বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি।
ৎ আনুষঙ্গিক বিভাগের শিক্ষক (বাংলা), চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট
এই যে এতক্ষণ শিক্ষক হিসেবে নিজের পরিচয় দিলাম, এই পরিচয়টাও শুধু আমার নিজের কাছে। অন্যরা, এমনকি শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের কাছেও আমরা প্রশিক্ষক (ইনস্ট্রাকটর) হিসেবে পরিচিত। এখানে কিন্তু সাঁতার, ড্রাইভিং কিংবা সেলাই শেখানো হয় না। আমি পড়াই বাংলা, আমার নামও প্রশিক্ষক। ক্লাসে আমি কী প্রশিক্ষণ দিই_ আমি নিজেই বুঝি না। শিক্ষক হিসেবে আমাদের সামাজিক স্বীকৃতিই নেই; মর্যাদা তো দূরের কথা। ১৯৫৫ সাল থেকেই পলিটেকনিক শিক্ষকরা এই পদবিতে পরিচিত। তখন পলিটেকনিক চালু হয়েছিল শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে। এই পদবিগুলো ট্রেনিং প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য। ১৯৯৬ সাল থেকে পলিটেকনিক শিক্ষকরা তাদের পদবি কনিষ্ঠ প্রভাষক-প্রভাষক-অধ্যাপক কাঠামোতে পরিবর্তন করার দাবি জানিয়ে আসছেন। শুধু কাঠামো পরিবর্তিত হলে উচ্চতর পদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। ফলে পদোন্নতি সহজ হবে। এতে শিক্ষকদের হতাশা দূর হবে, সামাজিক মর্যাদাও প্রতিষ্ঠিত হবে। প্রস্তাবিত চাকরি কাঠামো বাস্তবায়িত হলে সরকারের বাড়তি অর্থ খরচ হবে না। কারণ অধিকাংশ শিক্ষকই টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পেয়ে ইতিমধ্যে উচ্চতর স্কেলে অবস্থান করছেন। ২০১০ সালের ৮ নভেম্বর বাংলাদেশ পলিটেকনিক শিক্ষক সমিতির সম্মেলনে এবং আইইবির ৫২তম কনভেনশনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ওই চাকরি কাঠামো বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি।
ৎ আনুষঙ্গিক বিভাগের শিক্ষক (বাংলা), চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট
No comments