এসব বন্ধ করতে কঠোরতম পদক্ষেপ নিন-পাহাড় কেটে প্লট

রাষ্ট্রের প্রাকৃতিক সম্পদ পাহাড়, যা কাটা বেআইনি, তা-ই কেটে কেটে ঘরবাড়ি বানানোর প্লট তৈরি করে বিক্রি করছে কিছু ভূমিদস্যু। কী মগের মুল্লুক! কার জমি কে বিক্রি করে! আরও অদ্ভুত কথা, সরকারি পাহাড়ি ভূমি ব্যক্তির নামে নিবন্ধন করার সুযোগ বা নিয়ম নেই বলে ভূমিদস্যুরা উদ্ভাবন করেছে একটি অ্যাডহক পন্থা।


তারা নিজেরাই এক ধরনের কার্ড তৈরি করে পাহাড়ি জমি হস্তান্তরের দলিল হিসেবে বিক্রি করছে সেসব কার্ড। মজার বিষয়, কিছু টাকাওয়ালা মানুষ কিনছেনও সেসব আইনি ভিত্তিহীন কাগজ। তাঁদের আশা, পাহাড় কাটা সাঙ্গ হলে ওই সব জায়গায় রাস্তাঘাট ইত্যাদি অবকাঠামো গড়ে উঠলে ওই সব প্লট হয়ে উঠবে মহামূল্য ভূসম্পত্তি। সেখানে দালানকোঠা তোলা যাবে, অথবা প্লট বিক্রি করে পাওয়া যাবে মোটা টাকা। আপাতত পাহাড় কাটা সেসব জায়গায় থাকতে দেওয়া হচ্ছে ছিন্নমূল, নিম্ন-আয়ের মানুষদের, যাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। সরকারি জমি জবরদখলের এ এক উৎকৃষ্ট পন্থা। এসব ঘটছে চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ডের জঙ্গল ছলিমপুরে। এ নিয়ে সচিত্র একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে গত শনিবারের প্রথম আলোয়।
এ বিষয়ে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপারের ব্যাখ্যামূলক বক্তব্যটিও অদ্ভুত: অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের দ্রুত উচ্ছেদের তাগিদ দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একাধিক চিঠি পাঠানো হয়েছে, কিন্তু প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তদবিরের কারণে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসছে না। তার মানে দাঁড়াচ্ছে কী? এই ভূমিদস্যুরা এতই প্রভাবশালী যে সরকারের উচ্চপর্যায়ও তাদের ঘোরতর বেআইনি তৎপরতার বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না?
পরিবেশ আইন অনুযায়ী পাহাড় কাটা নিষিদ্ধ, অথচ বছরের পর বছর ধরে পার্বত্য জেলাগুলোতে এই বেআইনি কাজ চলেছে। শুধু সীতাকুণ্ড, হাটহাজারী ও বায়েজিদ থানা অঞ্চলেই গত ১০ বছরে প্রায় আড়াই হাজার একরের পাহাড়ি এলাকা বেদখল হয়ে গেছে। এ বিষয়ে সরকার, প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা—সবই কি অকার্যকর?
আসলে সরকার সচেতন ও আন্তরিক হলে এগুলো বন্ধ করা কঠিন কিছু নয়। প্রভাবশালী ভূমিদস্যুদের কাছে দেশের পরিবেশ রক্ষা, সরকারের নিজের ভূমি রক্ষার দায়দায়িত্ববোধ নিষ্ক্রিয় থাকতে পারে না।
পাহাড় কাটা ও জবরদখল বন্ধ করতে অবিলম্বে কঠোরতম আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হোক।

No comments

Powered by Blogger.