শ্রদ্ধাঞ্জলি-শিল্পের আলো ছড়িয়ে চিরনিদ্রায় শিল্পগুরু by আশীষ-উর-রহমান
মাঝখানে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। পূর্ব পাশে পটুয়া কামরুল হাসান। পশ্চিমের প্রাচীরঘেঁষা সবুজ ঘাসে ঢাকা জায়গা এত দিন খালি পড়ে ছিল। সেখানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন শিল্পগুরু সফিউদ্দীন আহমেদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের উত্তর পাশে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিচত্বরে কবির পাশেই এক সারিতে এখন শায়িত দেশের আধুনিক শিল্প আন্দোলনের তিন অগ্রদূত।
গতকাল সোমবার বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা শেষে শিল্পগুরু সফিউদ্দীন আহমেদকে তাঁর সহকর্মী, অনুজ শিল্পী, ছাত্র ও অনুরাগীরা হূদয়ের নিখাদ শ্রদ্ধায় শেষ বিদায় জানিয়ে রচনা করেছেন অন্তিম শয্যা। যে প্রতিষ্ঠানটি তাঁরা নিজ হাতে গড়ে তুলেছিলেন, তার পাশেই এই তিন পথিকৃৎ চিরনিদ্রায় শায়িত। সেখানে সমবেত সুধীরা বেদনায় ভারাক্রান্ত হলেও একধরনের সান্ত্বনাও বোধ করেছিলেন এই ভেবে, উপযুক্ত স্থানেই শায়িত হলেন শিল্পগুরু। গত শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ২০ মিনিটে ৯০ বছর বয়সে স্কয়ার হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন তিনি। এরপর মরদেহ সেখানেই হিমঘরে রাখা হয়েছিল।
গতকাল সকাল আটটায় শিল্পগুরুর মরদেহ তাঁর ধানমন্ডি ৪ নম্বর সড়কের ২১ নম্বর বাড়িতে (পুরোনো গ্যালারি চিত্রক) আনা হয়। সেখানে স্বজন ও সুহূদেরা তাঁকে শেষ দেখা দেখেন। অত্যন্ত বিনয়ী, মৃদুভাষী, আত্মপ্রচারবিমুখ গৌরবর্ণ মানুষটির চোখ বুজে থাকা দেহ স্বজনদের শোকে মুহ্যমান করে তোলে। অশ্রু চেপে রাখতে পারেননি তাঁরা। বড়ই বিষাদময় হয়ে ওঠে ভোরের আবহ। কেমন যেন মলিন মনে হতে থাকে চারপাশ।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের তত্ত্বাবধানে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে শিল্পগুরুর প্রতি নাগরিক শ্রদ্ধা নিবেদনের ব্যবস্থা করা হয়। বাসভবন থেকে মরদেহ সকাল ১০টায় শহীদ মিনারে আনা হয়। এমন একজন নিভৃতচারী মানুষ তাঁর কর্মের মধ্যে দিয়ে যে কতটা প্রিয়ভাজন, কতটা কাছের হয়ে উঠেছিলেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের কাছে, সেটিই দেখা গেল শহীদ মিনারে। দেশের প্রথম সারির শিল্পী, নবীন শিল্পী ও শিল্প-শিক্ষার্থীরা এসেছিলেন গুরুভক্তি ও শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করতে। এ ছাড়া এসেছিলেন সাহিত্য, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের ছোট-বড় কর্তা, শিশু, অনেক সংগঠন আর বিপুল সাধারণ মানুষ। শহীদ মিনার চত্বর নানা শ্রেণী-পেশার বিভিন্ন বয়সী বিষণ্ন মানুষের উপস্থিতিতে পূর্ণ। সারিবদ্ধভাবে তাঁরা পুষ্পস্তবক নিয়ে ধীরপায়ে এগিয়ে গেছেন গগনশিরীষগাছের তলায় রাখা কফিনের দিকে। মন্তব্য লিখেছেন শোকবইতে।
শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই সংক্ষিপ্ত মন্তব্যে শিল্পগুরুর জীবন ও কর্মের প্রতি আলোকপাত করেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন: শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী, মুস্তাফা মনোয়ার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সাংসদ আসাদুজ্জামান নূর, পররাষ্ট্রসচিব মিজারুল কায়েস, আইটিআই সভাপতি রামেন্দু মজুমদার, কলকাতার শিল্পী দেবব্রত চক্রবর্তী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সম্পাদক নাসির উদ্দীন ইউসুফসহ আরও অনেকে। তাঁরা বলেন, ‘সফিউদ্দীন আহমেদ আজীবন ছিলেন শিল্পনিমগ্ন মানুষ। চিত্রকলাকে সন্তানের মতো ভালোবাসতেন বলেই তা বিক্রি করে অর্থ লাভের বিবেচনা করেননি। আর্ট কলেজ প্রতিষ্ঠায় শিল্পাচার্যের সঙ্গে একত্রে কাজ করেছেন। নিজের শিল্পচর্চাকে কখনো গৌণ হতে দেননি। ছাপচিত্রে তিনি যে নতুন আঙ্গিক সৃষ্টি করেছেন তা অতুলনীয়। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বাংলাদেশের শিল্পকলাকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিয়ে গেছেন। আত্মপ্রচার পছন্দ করতেন না। যেমন শিল্পচর্চায়, তেমন ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত শুদ্ধচারী আমাদের সময়ের এক অতুলনীয় মানুষ।’ শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
শহীদ মিনার থেকে বেলা ১২টায় কফিন নেওয়া হয় তাঁর নিজ হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান চারুকলা অনুষদে। এখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং যাঁরা শহীদ মিনারে নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হতে পারেননি, তাঁরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। উভয় স্থানেই উপস্থিত ছিলেন: অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান খান, বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, শিল্পী আবু তাহের, সমরজিৎ রায়চৌধুরী, সৈয়দ জাহাঙ্গীর, রফিকুন নবী, মনিরুল ইসলাম, মাহমুদুল হক, শহীদ কবির, হামিদুজ্জামান খান, আবুল বারক আলভী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রমুখ। এ ছাড়া বাংলা একাডেমী, শিল্পকলা একাডেমী, জাতীয় জাদুঘর, এশিয়াটিক সোসাইটি, ক্রান্তি, উদীচী, খেলাঘর, কণ্ঠশীলন, ঢাকা আর্ট সেন্টার, বেঙ্গল ফাউন্ডেশন, গ্যালারি চিত্রক, গ্যালারি কসমস, পথনাটক পরিষদ, নৃত্যশিল্পী সংস্থা, গণসংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ, মহিলা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
শিল্পগুরু সফিউদ্দীন আহমেদের জন্ম ১৯২২ সালে ভারতের কলকাতায়। ১৯৪৮ থেকে ’৭৯ পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে ছাপচিত্র বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁর কাজের যৌথ প্রদর্শনী হয়েছে অনেক। তবে দেশে একক প্রদর্শনী দুটি। বেঙ্গল গ্যালারির আয়োজনে ২০০৮ সালে প্রথম একক প্রদর্শনী। পূর্বাপর কাজ নিয়ে ২০১০ সালে দুই পর্বের শেষ প্রদর্শনীটির নাম ছিল ‘শিল্পের অশেষ আলো’। শিল্পগুরুর জীবনপ্রদীপ নির্বাপিত হলো, তবু থেকে গেল তাঁর সৃষ্ট শিল্পের আলো। সেই আলো পথ দেখাবে আগামী প্রজন্মকে।
শোকসভা ও কুলখানি: শিল্পগুরুর স্মরণে আগামী ২৪ মে বেলা ১২টায় শোকসভা হবে চারুকলা অনুষদে। পরদিন ২৫ মে বাদ আসর হবে কুলখানি তাঁর ধানমন্ডির (পুরোনো গ্যালারি চিত্রক) বাসভবনে।
গতকাল সকাল আটটায় শিল্পগুরুর মরদেহ তাঁর ধানমন্ডি ৪ নম্বর সড়কের ২১ নম্বর বাড়িতে (পুরোনো গ্যালারি চিত্রক) আনা হয়। সেখানে স্বজন ও সুহূদেরা তাঁকে শেষ দেখা দেখেন। অত্যন্ত বিনয়ী, মৃদুভাষী, আত্মপ্রচারবিমুখ গৌরবর্ণ মানুষটির চোখ বুজে থাকা দেহ স্বজনদের শোকে মুহ্যমান করে তোলে। অশ্রু চেপে রাখতে পারেননি তাঁরা। বড়ই বিষাদময় হয়ে ওঠে ভোরের আবহ। কেমন যেন মলিন মনে হতে থাকে চারপাশ।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের তত্ত্বাবধানে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে শিল্পগুরুর প্রতি নাগরিক শ্রদ্ধা নিবেদনের ব্যবস্থা করা হয়। বাসভবন থেকে মরদেহ সকাল ১০টায় শহীদ মিনারে আনা হয়। এমন একজন নিভৃতচারী মানুষ তাঁর কর্মের মধ্যে দিয়ে যে কতটা প্রিয়ভাজন, কতটা কাছের হয়ে উঠেছিলেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের কাছে, সেটিই দেখা গেল শহীদ মিনারে। দেশের প্রথম সারির শিল্পী, নবীন শিল্পী ও শিল্প-শিক্ষার্থীরা এসেছিলেন গুরুভক্তি ও শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করতে। এ ছাড়া এসেছিলেন সাহিত্য, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের ছোট-বড় কর্তা, শিশু, অনেক সংগঠন আর বিপুল সাধারণ মানুষ। শহীদ মিনার চত্বর নানা শ্রেণী-পেশার বিভিন্ন বয়সী বিষণ্ন মানুষের উপস্থিতিতে পূর্ণ। সারিবদ্ধভাবে তাঁরা পুষ্পস্তবক নিয়ে ধীরপায়ে এগিয়ে গেছেন গগনশিরীষগাছের তলায় রাখা কফিনের দিকে। মন্তব্য লিখেছেন শোকবইতে।
শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই সংক্ষিপ্ত মন্তব্যে শিল্পগুরুর জীবন ও কর্মের প্রতি আলোকপাত করেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন: শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী, মুস্তাফা মনোয়ার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সাংসদ আসাদুজ্জামান নূর, পররাষ্ট্রসচিব মিজারুল কায়েস, আইটিআই সভাপতি রামেন্দু মজুমদার, কলকাতার শিল্পী দেবব্রত চক্রবর্তী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সম্পাদক নাসির উদ্দীন ইউসুফসহ আরও অনেকে। তাঁরা বলেন, ‘সফিউদ্দীন আহমেদ আজীবন ছিলেন শিল্পনিমগ্ন মানুষ। চিত্রকলাকে সন্তানের মতো ভালোবাসতেন বলেই তা বিক্রি করে অর্থ লাভের বিবেচনা করেননি। আর্ট কলেজ প্রতিষ্ঠায় শিল্পাচার্যের সঙ্গে একত্রে কাজ করেছেন। নিজের শিল্পচর্চাকে কখনো গৌণ হতে দেননি। ছাপচিত্রে তিনি যে নতুন আঙ্গিক সৃষ্টি করেছেন তা অতুলনীয়। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বাংলাদেশের শিল্পকলাকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিয়ে গেছেন। আত্মপ্রচার পছন্দ করতেন না। যেমন শিল্পচর্চায়, তেমন ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত শুদ্ধচারী আমাদের সময়ের এক অতুলনীয় মানুষ।’ শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
শহীদ মিনার থেকে বেলা ১২টায় কফিন নেওয়া হয় তাঁর নিজ হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান চারুকলা অনুষদে। এখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং যাঁরা শহীদ মিনারে নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হতে পারেননি, তাঁরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। উভয় স্থানেই উপস্থিত ছিলেন: অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান খান, বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, শিল্পী আবু তাহের, সমরজিৎ রায়চৌধুরী, সৈয়দ জাহাঙ্গীর, রফিকুন নবী, মনিরুল ইসলাম, মাহমুদুল হক, শহীদ কবির, হামিদুজ্জামান খান, আবুল বারক আলভী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রমুখ। এ ছাড়া বাংলা একাডেমী, শিল্পকলা একাডেমী, জাতীয় জাদুঘর, এশিয়াটিক সোসাইটি, ক্রান্তি, উদীচী, খেলাঘর, কণ্ঠশীলন, ঢাকা আর্ট সেন্টার, বেঙ্গল ফাউন্ডেশন, গ্যালারি চিত্রক, গ্যালারি কসমস, পথনাটক পরিষদ, নৃত্যশিল্পী সংস্থা, গণসংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ, মহিলা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
শিল্পগুরু সফিউদ্দীন আহমেদের জন্ম ১৯২২ সালে ভারতের কলকাতায়। ১৯৪৮ থেকে ’৭৯ পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে ছাপচিত্র বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁর কাজের যৌথ প্রদর্শনী হয়েছে অনেক। তবে দেশে একক প্রদর্শনী দুটি। বেঙ্গল গ্যালারির আয়োজনে ২০০৮ সালে প্রথম একক প্রদর্শনী। পূর্বাপর কাজ নিয়ে ২০১০ সালে দুই পর্বের শেষ প্রদর্শনীটির নাম ছিল ‘শিল্পের অশেষ আলো’। শিল্পগুরুর জীবনপ্রদীপ নির্বাপিত হলো, তবু থেকে গেল তাঁর সৃষ্ট শিল্পের আলো। সেই আলো পথ দেখাবে আগামী প্রজন্মকে।
শোকসভা ও কুলখানি: শিল্পগুরুর স্মরণে আগামী ২৪ মে বেলা ১২টায় শোকসভা হবে চারুকলা অনুষদে। পরদিন ২৫ মে বাদ আসর হবে কুলখানি তাঁর ধানমন্ডির (পুরোনো গ্যালারি চিত্রক) বাসভবনে।
No comments