মার্কিন রাষ্ট্রদূতের যুক্তি যথার্থ নয়-বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধা

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দীর্ঘদিন ধরে শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধার দাবি জানিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিশেষত, দেশের তৈরি পোশাকের বৃহত্তম বাজার যুক্তরাষ্ট্র। উচ্চ হারে আমদানি শুল্ক থাকায় যাঁরা বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি করছেন, তাঁদের আমদানি ব্যয় বেশি পড়ে যাচ্ছে। ফলে বাংলাদেশি পোশাকের দামও বাজারে বেড়ে যায়।


এটা সংগত কারণেই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের সক্ষমতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অথচ আফ্রিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশকে যুক্তরাষ্ট্র শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধা দিয়েছে। কোনো রকম যৌক্তিক কারণ ছাড়াই এই সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না বাংলাদেশকে। ফলে গড়ে বাংলাদেশি পণ্যকে ১৫ শতাংশ হারে শুল্ক দিয়ে সে দেশের বাজারে প্রবেশ করতে হচ্ছে। যেখানে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের মতো ধনী দেশের ক্ষেত্রে গড়ে এই শুল্কহার ১ শতাংশেরও কম।
অথচ গত বৃহস্পতিবার দেশের একটি বাণিজ্য সংগঠনের এক সেমিনারে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি বলে বসলেন, শুল্কমুক্ত সুবিধা দিলে বাংলাদেশ লাভবান হবে না। প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর থেকে আরও জানা যায়, দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা অবশ্য মরিয়ার্টির এই বক্তব্যে আপত্তি জানিয়েছেন। বলেছেন, এটা বিভ্রান্তিকর, হতাশাজনক ও অগ্রহণযোগ্য। কারণ বিভিন্ন গবেষণা থেকে এটা প্রতিষ্ঠিত যে শুল্ক অব্যাহতি পেলে বাংলাদেশের রপ্তানি অন্তত কয়েক কোটি ডলার বাড়বে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক ডেমোক্রেটিক লিডারশিপ কাউন্সিলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৮ সালে বাংলাদেশ ও কম্বোডিয়া থেকে যথাক্রমে ২৫৬ কোটি ও ১২৬ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করা হয়, যার বিপরীতে যথাক্রমে ৩৯ কোটি ২০ লাখ ডলার ও ২১ কোটি ডলার শুল্ক প্রদান করতে হয়েছে। অথচ একই সময়ে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য থেকে যথাক্রমে দুই হাজার ২৩০ কোটি ডলার ও তিন হাজার কোটি ডলারের পণ্য আমদানির বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র উভয় ক্ষেত্রেই আদায় করেছে মাত্র ১৮ কোটি ডলারের শুল্ক।
বস্তুত, মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য থেকে এমনই আভাস মেলে যে তাঁরা বাংলাদেশি পণ্যকে শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধা দিতে আগ্রহী নন। অথচ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বাণিজ্য আলোচনায় স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এই সুবিধা পাওয়ার যোগ্য। তা ছাড়া এটা বাজারসুবিধাও নয়। বরং বলা দরকার, প্রতিযোগিতার সুষমতা। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়াসহ প্রায় সব ধনী দেশ বাংলাদেশকে এই সুবিধা দিয়েছে। একমাত্র ব্যতিক্রম যুক্তরাষ্ট্র।

No comments

Powered by Blogger.