সুষ্ঠু তদন্ত ও শান্তির স্বার্থে সব পক্ষের সংযম প্রয়োজন-রাঙামাটিতে নাশকতা

পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি শহরে যে বিস্ফোরক হামলাটি হয়েছে, তা ‘গ্রেনেড’ হামলা হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। এ হামলার স্পষ্ট লক্ষ্য ছিল পাহাড়ি ছাত্রপরিষদের কর্মীরা। পার্বত্য জনপদের কেন্দ্রস্থলে এ ধরনের হামলার উদ্দেশ্য যে ওই জনপদকে অশান্ত করে তোলা, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। সরকারসহ শান্তির পক্ষের সব শক্তির উচিত,


এই জঘন্য উসকানিকে নস্যাৎ করে দেওয়া। যারা এর পরিকল্পনা করেছে, যারা বাস্তবায়ন করেছে এবং যারা এ থেকে সুযোগ নিতে চাইছে, তাদের চিহ্নিত করা তাই এ মুহূর্তের প্রধান কর্তব্য। এবং সেই কর্তব্য পালনের মূল দায়িত্ব সরকারেরই।
সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতি-সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্রপরিষদের ২৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানের শেষেই হামলাটি হয়। অটোরিকশায় করে এসে হামলা চালিয়ে চলে যাওয়া দুর্বৃত্তদের কে বা কারা পাঠিয়েছে, সেটাই মূল প্রশ্ন। প্রথম আলোয় প্রকাশিত সংবাদে রাঙামাটির পুলিশ সুপার শক্তিশালী বিস্ফোরক ব্যবহূত হয়েছে বলে জানিয়েছেন। একজনসেনা কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে একে ‘গ্রেনেড হামলা’ বলে অভিহিত করেছেন। তবে সিআইডির তদন্তকারীরা না আসা পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার। রহস্য উদ্ঘাটনের পাশাপাশি আহত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা প্রয়োজন।
পাহাড়ে জনসংহতি সমিতি বনাম ইউপিডিএফ দ্বন্দ্ব রয়েছে। আরও বড় দ্বন্দ্ব রয়েছে বাঙালি বসতকারীদের সঙ্গে আদিবাসী পাহাড়িদের। পাহাড়িদের সব গোষ্ঠীই আবার সেনা উপস্থিতি ও বাঙালি প্রাধান্যের বিরুদ্ধে। সুতরাং, এ রকম বহুপক্ষীয় বিরোধের সুযোগে যে কেউই সংঘাত উসকে দিয়ে ফায়দা নিতে পারে। গ্রেনেডের মতো দুর্লভ সামরিক অস্ত্র সংগ্রহ করা যেহেতু সহজ কাজ নয়, তাই গ্রেনেড কোথা থেকে এল, সেই উৎস খুঁজে বের করা জরুরি।
আমরা আশা করব, তদন্তকাজে তো বটেই, শান্তির খাতিরেও সবাইকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে; পাশাপাশি নিরাপত্তা ও শান্তির স্বার্থে সম্মিলিত প্রয়াস নিতে হবে। পাহাড়ের সমস্যা রাজনৈতিক। রাজনৈতিকভাবেই এর সমাধান খুঁজতে হবে। সহিংসতা বা পাল্টাসহিংসতা কেবল শান্তিবিরোধী পক্ষের হাতকেই শক্তিশালী করবে।

No comments

Powered by Blogger.