চরাচর-বুনো কুকুর এখনো আছে by ইশতিয়াক হাসান
বুনো কুকুর যে কতটা ভয়ংকর আর দুঃসাহসী হতে পারে তার প্রমাণ মেলে বিখ্যাত শিকারি (পরবর্তী সময়ে বন্য প্রাণী সংরক্ষক) কেনেথ এন্ডারসনের শিকার কাহিনীতে। একবার ভারতের নীলগিরি পর্বত এলাকায় শিকারে বেরিয়েছিলেন তিনি। এ সময়ই ঘটনাচক্রে বাঘের সঙ্গে বুনো কুকুরদের লড়াইয়ের একটি দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য হয়ে যায়।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, এ যুদ্ধে শেষমেশ জয় হয়েছিল কুকুর দলেরই। বেশ কয়েকটি কুকুর প্রাণ হারালেও শেষমেশ গোটা বাঘটাকেই খুবলে-কামড়ে খেয়ে ফেলে এরা। পরের দিন ঘটনাস্থল থেকে এন্ডারসনের পাঠানো লোকরা আনতে পারে কেবল বাঘের এক ফালি চামড়া।
দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জঙ্গলে যেসব বন্য প্রাণীর দেখা মেলে তাদের মধ্যে হিংস্রতায় বুনো কুকুরকে টেক্কা দেয় এমন আছে কমই। নামে বুনো কুকুর হলেও চেহারায় এদের কুকুরের চেয়ে শিয়ালের সঙ্গেই মিল বেশি। গায়ের রং লালচে, দেড়-দুই ফুট লম্বা লোমশ লেজটাও লালচে, তবে লেজের সামনের অংশ কালো। সাধারণত বেশ বড় একটা দলে বাস করে। শিকারের সুবিধার জন্য এ দলটি আবার অনেক ছোট ছোট উপদলে ভাগ হয়ে যায়। তবে সংকেত পেলে যে যেখানেই থাকুক, ছুটে আসে সঙ্গীদের সহায়তায়। সম্বর, মায়া হরিণ, বনগরু, শূকর কিছুতেই আপত্তি নেই এদের। কোনো একটা শিকারকে বাছাই করার পর একটা দল ওটাকে তাড়া করে, আর আগেই আগ্রগামী একটা দল ওত পেতে শিকারের জন্য অপেক্ষা করে। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো, শিকার মারা যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে না এরা, জীবন্ত অবস্থায়ই অসহায় প্রাণীটির শরীর থেকে মাংস খুবলে খেতে শুরু করে। সাধারণত নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখে শিসের মতো শব্দ করে। অবশ্য স্বাভাবিক ডাক আর শিকারের সময়ের ডাকের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য থাকে। দিনরাত- সব সময় চলাফেরাতেই অভ্যস্ত এরা । বিশ্রাম নেয় কোনো গর্তের মধ্যে। এখানেই বাচ্চা দেয়। বাচ্চাদের খাওয়াদাওয়া আর যত্ন-আত্তি করে দলের প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যরা। ওজন আধা মণ পর্যন্ত হতে পারে।
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ আর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বনের বাসিন্দা এই বুনো কুকুররা পরিচিত ইন্ডিয়ান ওয়াইল্ড ডগ নামে। তবে বাংলাদেশের বনাঞ্চলে বুনো কুকুর নামেই লোকে চেনে বেশি এদের। ভারতের অরণ্য-অধ্যুষিত এলাকাগুলোর লোকরা ডাকে ঢোল নামে। বন ধ্বংসের কারণে বাংলাদেশের অনেক বন্য প্রাণীর অস্তিত্বই এখন হুমকির মুখে। এর বাইরে নয় এই কুকুররাও। তার পরও পার্বত্য চট্টগ্রাম আর বৃহত্তর সিলেটের কিছু বনে এখনো এদের দেখা মেলে। বন বিভাগের চাকুরে মাহফুজ সাহেব বলেছিলেন, চাকরিজীবনের শুরুর দিকে বুনো কুকুর দেখেছেন বান্দরবানের আলীকদমে। বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ খসরু চৌধুরী বাঘের সন্ধানে গিয়ে বুনো কুকুর দেখেছিলেন আলীকদম ব্রিজের কাছে। এদিকে বছর কয়েক আগে সিলেটের রেমা-কালেঙ্গার বনে ঘুরতে গিয়ে জেনেছিলাম, মাঝখানে একবার ওই বনে আস্তানা গেড়ে বুনো শূকরদের সংখ্যা বেশ নামিয়ে এনেছিল এরা। এক রাতে নাকি একটা বুনো শূকরকে তাড়া করে এনে ফেলেছিল ফরেস্ট অফিসের কাছের এক পুকুরে। পার্বত্য চট্টগ্রামের কাসালং রিজার্ভ, সাঙ্গু-মাতামুহুরী বন, সিলেট বিভাগের রেমা-কালেঙ্গা, লাঠিটিলা, সাগরনালাসহ আরো কিছু অরণ্যে এখনো আছে বুনো কুকুর। সীতাকুণ্ড ইকো-পার্ক এলাকার গহিনে অনেকেই এদের দেখার দাবি করেছেন। তবে এদের আনাগোনা এখন সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে নির্দিষ্ট কিছু বনে। সংরক্ষণের উদ্যোগ না নিলে অচিরেই এসব অরণ্য থেকেও বিলুপ্ত হবে এরা।
ইশতিয়াক হাসান
দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জঙ্গলে যেসব বন্য প্রাণীর দেখা মেলে তাদের মধ্যে হিংস্রতায় বুনো কুকুরকে টেক্কা দেয় এমন আছে কমই। নামে বুনো কুকুর হলেও চেহারায় এদের কুকুরের চেয়ে শিয়ালের সঙ্গেই মিল বেশি। গায়ের রং লালচে, দেড়-দুই ফুট লম্বা লোমশ লেজটাও লালচে, তবে লেজের সামনের অংশ কালো। সাধারণত বেশ বড় একটা দলে বাস করে। শিকারের সুবিধার জন্য এ দলটি আবার অনেক ছোট ছোট উপদলে ভাগ হয়ে যায়। তবে সংকেত পেলে যে যেখানেই থাকুক, ছুটে আসে সঙ্গীদের সহায়তায়। সম্বর, মায়া হরিণ, বনগরু, শূকর কিছুতেই আপত্তি নেই এদের। কোনো একটা শিকারকে বাছাই করার পর একটা দল ওটাকে তাড়া করে, আর আগেই আগ্রগামী একটা দল ওত পেতে শিকারের জন্য অপেক্ষা করে। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো, শিকার মারা যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে না এরা, জীবন্ত অবস্থায়ই অসহায় প্রাণীটির শরীর থেকে মাংস খুবলে খেতে শুরু করে। সাধারণত নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখে শিসের মতো শব্দ করে। অবশ্য স্বাভাবিক ডাক আর শিকারের সময়ের ডাকের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য থাকে। দিনরাত- সব সময় চলাফেরাতেই অভ্যস্ত এরা । বিশ্রাম নেয় কোনো গর্তের মধ্যে। এখানেই বাচ্চা দেয়। বাচ্চাদের খাওয়াদাওয়া আর যত্ন-আত্তি করে দলের প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যরা। ওজন আধা মণ পর্যন্ত হতে পারে।
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ আর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বনের বাসিন্দা এই বুনো কুকুররা পরিচিত ইন্ডিয়ান ওয়াইল্ড ডগ নামে। তবে বাংলাদেশের বনাঞ্চলে বুনো কুকুর নামেই লোকে চেনে বেশি এদের। ভারতের অরণ্য-অধ্যুষিত এলাকাগুলোর লোকরা ডাকে ঢোল নামে। বন ধ্বংসের কারণে বাংলাদেশের অনেক বন্য প্রাণীর অস্তিত্বই এখন হুমকির মুখে। এর বাইরে নয় এই কুকুররাও। তার পরও পার্বত্য চট্টগ্রাম আর বৃহত্তর সিলেটের কিছু বনে এখনো এদের দেখা মেলে। বন বিভাগের চাকুরে মাহফুজ সাহেব বলেছিলেন, চাকরিজীবনের শুরুর দিকে বুনো কুকুর দেখেছেন বান্দরবানের আলীকদমে। বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ খসরু চৌধুরী বাঘের সন্ধানে গিয়ে বুনো কুকুর দেখেছিলেন আলীকদম ব্রিজের কাছে। এদিকে বছর কয়েক আগে সিলেটের রেমা-কালেঙ্গার বনে ঘুরতে গিয়ে জেনেছিলাম, মাঝখানে একবার ওই বনে আস্তানা গেড়ে বুনো শূকরদের সংখ্যা বেশ নামিয়ে এনেছিল এরা। এক রাতে নাকি একটা বুনো শূকরকে তাড়া করে এনে ফেলেছিল ফরেস্ট অফিসের কাছের এক পুকুরে। পার্বত্য চট্টগ্রামের কাসালং রিজার্ভ, সাঙ্গু-মাতামুহুরী বন, সিলেট বিভাগের রেমা-কালেঙ্গা, লাঠিটিলা, সাগরনালাসহ আরো কিছু অরণ্যে এখনো আছে বুনো কুকুর। সীতাকুণ্ড ইকো-পার্ক এলাকার গহিনে অনেকেই এদের দেখার দাবি করেছেন। তবে এদের আনাগোনা এখন সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে নির্দিষ্ট কিছু বনে। সংরক্ষণের উদ্যোগ না নিলে অচিরেই এসব অরণ্য থেকেও বিলুপ্ত হবে এরা।
ইশতিয়াক হাসান
No comments