হাইকোর্টের রায়-পরিচালকদের শেয়ার ক্রয়ে এসইসির প্রজ্ঞাপন বৈধ

কম্পানির পরিচালকদের শেয়ার কেনা-সংক্রান্ত এসইসির প্রজ্ঞাপন বৈধ বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। তিন কম্পানির ১৪ পরিচালকের পক্ষ থেকে করা এ-সংক্রান্ত রিট আবেদন খারিজ করে আদালত এ রায় দিয়েছেন। দুদিন ধরে এ-সংক্রান্ত রুলের শুনানি শেষে গতকাল সোমবার বিচারপতি ফরিদ আহমেদ ও বিচারপতি শেখ হাসান আরিফের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।


ফলে গতকালের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতি পরিচালকের ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার ধারণের শর্ত বহাল থাকল।
এদিকে এসইসির বেঁধে দেওয়া সময়সীমা গতকাল শেষ হয়ে যাওয়ায় দুই স্টক এক্সচেঞ্জ তালিকাভুক্ত কম্পানিগুলোর ৫০ শতাংশ পরিচালকের পদ শূন্য হয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) নির্দেশনা অনুযায়ী কম্পানিগুলোর পরবর্তী বার্ষিক সাধারণ সভায় ৫ শতাংশ সাধারণ শেয়ারধারী ওই সব শূন্যপদ পূরণের সুযোগ পাবেন।
গত ২২ নভেম্বর এক প্রজ্ঞাপন জারি করে এসইসি বলে, কম্পানির উদ্যোক্তা, পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ওই কম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ন্যূনতম ৩০ শতাংশ এবং প্রত্যেক পরিচালকের ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার থাকতে হবে। ২১ মের মধ্যে এ শর্ত পূরণ করতে হবে। এই আদেশ চ্যালেঞ্জ করে চারটি রিট আবেদন করেন চার কম্পানির ১৪ জন উদ্যোক্তা, পরিচালক ও একজন পরিচালক হতে ইচ্ছুক ব্যক্তি। এসব রিটের শুনানি শেষে আদালত এসইসিসহ শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের ওপর রুল জারি করেন। এসব রুলের শুনানি শেষ হয় রবিবার। নির্ধারিত দিনে গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় আদালত রায় ঘোষণা শুরু করেন। দুপুর সোয়া ১২টায় রায় ঘোষণা শেষ হয়। রায় প্রদানকালে আদালত বলেন, টুসিসি আইনের আওতায় এসইসির প্রজ্ঞাপন বৈধ। এর আগেও বৈধভাবে টুসিসির আওতায় এসইসি প্রজ্ঞাপন জারি করে এসেছে।
রুলের শুনানিতে এসইসির পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) পক্ষে ছিলেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল হাসান আরিফ এবং বিনিয়োগকারীদের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস ও ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। উদ্যোক্তা পরিচালকদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ও ড. এম জহির।
হাইকোর্টের আদেশের ব্যাখ্যা দিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, সোমবারের মধ্যে পরিচালকদের কেউ ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ না করতে পারলে তাঁর পরিচালক পদ চলে যাবে। আদালতের রায়কে যুগান্তকারী উল্লেখ করে মাহবুবে আলম বলেন, 'একটি ঘরে লোক থাকলে তারাই সেই ঘরটাকে রক্ষা করে। ঘরে কেউ না থাকলে বাইরে থেকে এসে অন্য কেউ নষ্ট করতে পারে। যাতে পরিচালকরা কম্পানিগুলোর ভেতরে থাকতে বাধ্য হন সেজন্যই এসইসির প্রজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল। এই রায়ের ফলে শেয়ারবাজার আরো স্থিতিশীল হবে। এখন আর কেউ ফটকাবাজি করতে পারবেন না বলে আমার মনে হয়।' এসইসির প্রজ্ঞাপনটি পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল করার জন্য জারি করা হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এটা জনস্বার্থে এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে করা হয়েছে। এটা কম্পানির স্বার্থও সংরক্ষণ করে। তাই এতে কারো ক্ষুব্ধ হওয়ার কারণ নেই।'
আদালতের রায়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় ডিএসইর সভাপতি রকিবুর রহমান বলেন, 'ন্যূনতম শেয়ার ধারণের বিষয়ে আদালত যে রায় দিয়েছেন তা পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে ২ শতাংশ শেয়ার থাকার প্রয়োজনীয়তা আদালত অনুভব করতে পেরেছেন।' সিএসইর সভাপতি আল মারুফ খান বলেন, এ রায়ের ফলে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কম্পানিগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।'
গতকাল রায় ঘোষণার পরপরই আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত বিনিয়োগকারীদের সংগঠন পুঁজিবাজার ঐক্য পরিষদের নেতারা আনন্দ মিছিল করেন। তাঁদের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস বলেন, 'এই রায় বিনিয়োগকারীদের পক্ষে হয়েছে। এতে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল হবে। একশ্রেণীর উদ্যোক্তা পরিচালক সব শেয়ার বিক্রি করে বাজারে দুর্দশা ডেকে এনেছেন। তাঁদের আজকের (সোমবার) মধ্যে শেয়ার কিনতে হবে।'
রিটকারী ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্সের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'রায় ঘোষণার পর কম্পানি থেকে ফেয়ারওয়েল নিয়ে চলে এসেছি।' রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আর মামলায় যাব না।'

No comments

Powered by Blogger.