বাংলাদেশ-তুরস্কের নির্মীয়মাণ সম্পর্ক by মুহাম্মদ রুহুল আমীন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি তুরস্ক সফর করেন। দুটি ভ্রাতৃপ্রতিম এশীয় দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সুদৃঢ় কাঠামো নির্মাণে এ সফর একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হওয়ার দাবি রাখে। প্রথমেই জানা দরকার, বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে নির্মীয়মাণ সম্পর্ক যৌক্তিকতা সম্পর্কে।
দেশদ্বয় এশিয়ার দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক মণ্ডলে অবস্থিত। এশীয় ইউরোপীয় ভূখণ্ডগত নৈকট্য এবং দুই মহাদেশের ঐতিহ্যগত একতা তুরস্ককে পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের তোরণদ্বার হওয়ার যোগ্যতা দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে আরব বসন্তোত্তর বাস্তবতায় পাশ্চাত্য এবং মুসলিম এশিয়ার মধ্যকার সম্পর্কোন্নয়নে প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালনকারী রাষ্ট্র হিসেবে তুরস্ক আবির্ভূত হয়েছে। দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তোরণদ্বার হিসেবে বাংলাদেশ বিবেচিত এবং এশিয়ায় যথার্থ পাশ্চাত্য স্বার্থ রক্ষায় বাংলাদেশ অন্যান্য মুসলিম এশিয়ার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ স্ট্র্যাটেজিক অবস্থানে অভিষিক্ত। এ পরিপ্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক সময় দ্বিপক্ষীয় সম্মেলন দেশদ্বয়ের সম্ভাব্য সম্পর্ক রক্ষায় বহুমুখী প্রতিশ্রুতি পূরণে বাঙ্ময়। প্রধানমন্ত্রীর তুরস্ক সফর আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সুদূরপ্রসারী সম্পর্ক-কাঠামোর দিকনির্দেশক।
প্রথমত, দেশদ্বয়ের সম্পর্কের ইতিহাসে দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় বৈঠক। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মন্ত্রীবর্গ এবং ব্যবসায়ীদের নিয়ে বিশেষ বিমানে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে শেখ হাসিনার আঙ্কারা গমন এবং অনেক চুক্তির স্বাক্ষর দুই দেশের নির্মীয়মাণ সম্পর্কের সুদৃঢ় কাঠামোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, অর্থনৈতিক কূটনীতির পররাষ্ট্রনীতির দেশ বাংলাদেশ তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক সহযোগিতার সম্পর্ক রক্ষায় নিমন্ত্রণ গ্রহণ করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় বিবেচনার সুযোগ পেয়েছে। গত ১৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিশ্চিত করেছেন যে শিগগিরই দেশ দুটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে। এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে দুই দেশ শুল্কমুক্তভাবে এবং অনেক শুল্ক ও অশুল্ক প্রতিবন্ধকতা (tariff and non-tariff barriers) পেরিয়ে বহুমুখী বাণিজ্যিক লেনদেনের বিমূর্ত যুগে প্রবেশ করবে।
তৃতীয়ত, তুরস্কের প্রথম সারির বাণিজ্যিক গ্রুপ তাসকনের (TUSKON) সদস্যদের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর শেরাটন হোটেলের নিবিড় আলোচনায় বাংলাদেশ এবং তুরস্কের ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের মধ্যে নানা ধরনের বাণিজ্যিক আন্তক্রিয়ার অনন্ত সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে।
চতুর্থত, ইস্তাম্বুলে চলতি মাসে বাংলাদেশের কনস্যুলেট জেনারেল অফিস স্থাপিত হয়েছে। দেশের নির্মীয়মাণ সম্পর্ক কেবল কূটনৈতিক আলাপচারিতার মোড়কে সীমাবদ্ধ না থেকে তা শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর ওপর নির্মিত হবে। খুব শিগগির দুই দেশের বাণিজ্যিক যোগাযোগের ধারাবাহিকতার নতুন অধ্যায় শুরু হতে যাচ্ছে- এ কথা নিশ্চিন্তে বলা যায়।
পঞ্চমত, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এফবিসিসিআই এবং তুরস্কের ব্যবসায়ীদের সামনে উভয় দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের সম্ভাব্য খাতগুলো উন্মোচন করেন। তিনি গার্মেন্ট ও পাটসহ সীমাবদ্ধ পণ্যের পরিবর্তে আরো অসংখ্য বিষয়ে পারস্পরিক বাণিজ্যের দিকনির্দেশনা দেন। সিরামিক, ওষুধ, চামড়াজাত দ্রব্য, চিংড়ি, হস্তশিল্প, বাইসাইকেল প্রভৃতি পণ্য বাংলাদেশ থেকে আমদানি করার ওপর তুর্কি ব্যবসায়ীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
ষষ্ঠত, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তেল ও গ্যাস উত্তোলনসহ অন্যান্য শক্তি অর্জনের ক্ষেত্রে এ দেশ সম্মিলিত বিনিয়োগ করতে আগ্রহ ব্যক্ত করে। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অভাব মেটানোর ক্ষেত্রে এ সম্ভাব্য চুক্তি দুই দেশের জন্য যুগান্তকারী অবদান বয়ে আনবে। বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কের পাশাপাশি উদীয়মান দ্বিপক্ষীয় মিত্রতা রাজনৈতিক, সামরিক এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে দুই দেশকে পরীক্ষিত বন্ধুত্বে আবদ্ধ করবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
ওই আলোচনার মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত লক্ষ করছি, বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে সম্পাদিত দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনের এক-এক (one to one) আলোচনায় দেশদ্বয়ের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের এক নির্মীয়মাণ কাঠামো তৈরি হতে চলেছে। লক্ষণীয়, এ সম্পর্ক-কাঠামোর মূল ভিত্তি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খুঁটির ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে। অতীতের সব সময়ের চেয়ে বর্তমানে এ নির্মীয়মাণ সম্পর্কের সম্ভাব্যতা বেশি বিবেচিত হচ্ছে। ইতিপূর্বে তুর্কি প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের পর তাঁর আমন্ত্রণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ সমভিব্যাহারে তুরস্ক সফর করলেন। স্পষ্ট যে দুই দেশই নির্মীয়মাণ সম্পর্কের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের রূপরেখা বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বাংলাদেশ ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান ও আদর্শগত চেতনার দ্বারা তুরস্ক-বাংলাদেশ সম্পর্ককে সম্প্রসারিত করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিস্তৃত এলাকায় তুরস্ক ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ ও লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে বাংলাদেশ তার যোগ্যতার ঘোষণা দিয়ে তুরস্ক-বাংলাদেশ সম্পর্কের স্থায়িত্বের নিশ্চয়তা বিধান করতে সচেষ্ট হয়।
দুই দেশের বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের প্রাণবন্ততার জন্য উভয় দেশের বিনিয়োগ সুরক্ষায় বাংলাদেশ ও তুরস্কের পারস্পরিক নিশ্চয়তা নির্মীয়মাণ সম্পর্কের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখায়।
যেসব ব্যক্তি কূটনৈতিক, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক ও অন্যান্য বিশেষ পাসপোর্ট ব্যবহার করতে যোগ্যতাসম্পন্ন, তাঁদের উভয় দেশে ভিসামুক্ত প্রবেশ অবারিত করার ব্যাপারে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তি নিঃসন্দেহে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে দীর্ঘসূত্রতা গ্রন্থিত করবে।
সর্বোপরি, তুরস্ক-বাংলাদেশ শীর্ষ নেতাদের সম্মেলনে মোট সাত ধরনের চুক্তি, সমঝোতা, প্রতিশ্রুতিপত্র স্বাক্ষরিত হয় : ১. দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগের সুরক্ষা চুক্তি, ২. ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার চুক্তি, ৩. কৃষির ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক সহযোগিতার সমঝোতা, ৪. শিক্ষা-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সমঝোতা, ৫. তুরস্কের IJSG-তে যোগদানের প্রতিশ্রুতিপত্র। এ ছাড়া আরো দুটি গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতগুলো দ্বিপক্ষীয় প্রতিশ্রুতি নিঃসন্দেহে তুরস্ক-বাংলাদেশ সম্পর্কের এক স্বর্ণযুগের সূচনা করবে।
পরিশেষে তুরস্ক-বাংলাদেশের নির্মীয়মাণ সম্পর্ক কাঠামো মজবুত, শক্তিশালী ও টেকসই রূপ ধারণ করবে বলে আশা করা যায়- এ ব্যাপারে দুই দেশের পারস্পরিক ইচ্ছা ও প্রতিশ্রুতি পালনে একনিষ্ঠতা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষত, সমুদ্রজয়ী বাংলাদেশের দুই দেশের নির্মীয়মাণ সম্পর্কের গ্যাস ও তেল উত্তোলনসংক্রান্ত বিষয়গুলোতে সমধিক জোর দেওয়া উচিত। তুরস্কের বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের পাঠানোর ব্যবস্থা করা উচিত অতি দ্রুত। তাহলে বঙ্গোপসাগরের বিশাল তেলরাশি ও গ্যাসসম্ভার থেকে বাংলাদেশ প্রভূত পরিমাণে সম্পদ আহরণে সক্ষম হবে।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং চেয়ারম্যান, সিআইডিএস
mramin68@yahoo.com
প্রথমত, দেশদ্বয়ের সম্পর্কের ইতিহাসে দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় বৈঠক। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মন্ত্রীবর্গ এবং ব্যবসায়ীদের নিয়ে বিশেষ বিমানে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে শেখ হাসিনার আঙ্কারা গমন এবং অনেক চুক্তির স্বাক্ষর দুই দেশের নির্মীয়মাণ সম্পর্কের সুদৃঢ় কাঠামোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, অর্থনৈতিক কূটনীতির পররাষ্ট্রনীতির দেশ বাংলাদেশ তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক সহযোগিতার সম্পর্ক রক্ষায় নিমন্ত্রণ গ্রহণ করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় বিবেচনার সুযোগ পেয়েছে। গত ১৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিশ্চিত করেছেন যে শিগগিরই দেশ দুটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে। এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে দুই দেশ শুল্কমুক্তভাবে এবং অনেক শুল্ক ও অশুল্ক প্রতিবন্ধকতা (tariff and non-tariff barriers) পেরিয়ে বহুমুখী বাণিজ্যিক লেনদেনের বিমূর্ত যুগে প্রবেশ করবে।
তৃতীয়ত, তুরস্কের প্রথম সারির বাণিজ্যিক গ্রুপ তাসকনের (TUSKON) সদস্যদের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর শেরাটন হোটেলের নিবিড় আলোচনায় বাংলাদেশ এবং তুরস্কের ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের মধ্যে নানা ধরনের বাণিজ্যিক আন্তক্রিয়ার অনন্ত সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে।
চতুর্থত, ইস্তাম্বুলে চলতি মাসে বাংলাদেশের কনস্যুলেট জেনারেল অফিস স্থাপিত হয়েছে। দেশের নির্মীয়মাণ সম্পর্ক কেবল কূটনৈতিক আলাপচারিতার মোড়কে সীমাবদ্ধ না থেকে তা শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর ওপর নির্মিত হবে। খুব শিগগির দুই দেশের বাণিজ্যিক যোগাযোগের ধারাবাহিকতার নতুন অধ্যায় শুরু হতে যাচ্ছে- এ কথা নিশ্চিন্তে বলা যায়।
পঞ্চমত, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এফবিসিসিআই এবং তুরস্কের ব্যবসায়ীদের সামনে উভয় দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের সম্ভাব্য খাতগুলো উন্মোচন করেন। তিনি গার্মেন্ট ও পাটসহ সীমাবদ্ধ পণ্যের পরিবর্তে আরো অসংখ্য বিষয়ে পারস্পরিক বাণিজ্যের দিকনির্দেশনা দেন। সিরামিক, ওষুধ, চামড়াজাত দ্রব্য, চিংড়ি, হস্তশিল্প, বাইসাইকেল প্রভৃতি পণ্য বাংলাদেশ থেকে আমদানি করার ওপর তুর্কি ব্যবসায়ীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
ষষ্ঠত, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তেল ও গ্যাস উত্তোলনসহ অন্যান্য শক্তি অর্জনের ক্ষেত্রে এ দেশ সম্মিলিত বিনিয়োগ করতে আগ্রহ ব্যক্ত করে। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অভাব মেটানোর ক্ষেত্রে এ সম্ভাব্য চুক্তি দুই দেশের জন্য যুগান্তকারী অবদান বয়ে আনবে। বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কের পাশাপাশি উদীয়মান দ্বিপক্ষীয় মিত্রতা রাজনৈতিক, সামরিক এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে দুই দেশকে পরীক্ষিত বন্ধুত্বে আবদ্ধ করবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
ওই আলোচনার মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত লক্ষ করছি, বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে সম্পাদিত দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনের এক-এক (one to one) আলোচনায় দেশদ্বয়ের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের এক নির্মীয়মাণ কাঠামো তৈরি হতে চলেছে। লক্ষণীয়, এ সম্পর্ক-কাঠামোর মূল ভিত্তি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খুঁটির ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে। অতীতের সব সময়ের চেয়ে বর্তমানে এ নির্মীয়মাণ সম্পর্কের সম্ভাব্যতা বেশি বিবেচিত হচ্ছে। ইতিপূর্বে তুর্কি প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের পর তাঁর আমন্ত্রণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ সমভিব্যাহারে তুরস্ক সফর করলেন। স্পষ্ট যে দুই দেশই নির্মীয়মাণ সম্পর্কের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের রূপরেখা বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বাংলাদেশ ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান ও আদর্শগত চেতনার দ্বারা তুরস্ক-বাংলাদেশ সম্পর্ককে সম্প্রসারিত করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিস্তৃত এলাকায় তুরস্ক ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ ও লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে বাংলাদেশ তার যোগ্যতার ঘোষণা দিয়ে তুরস্ক-বাংলাদেশ সম্পর্কের স্থায়িত্বের নিশ্চয়তা বিধান করতে সচেষ্ট হয়।
দুই দেশের বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের প্রাণবন্ততার জন্য উভয় দেশের বিনিয়োগ সুরক্ষায় বাংলাদেশ ও তুরস্কের পারস্পরিক নিশ্চয়তা নির্মীয়মাণ সম্পর্কের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখায়।
যেসব ব্যক্তি কূটনৈতিক, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক ও অন্যান্য বিশেষ পাসপোর্ট ব্যবহার করতে যোগ্যতাসম্পন্ন, তাঁদের উভয় দেশে ভিসামুক্ত প্রবেশ অবারিত করার ব্যাপারে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তি নিঃসন্দেহে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে দীর্ঘসূত্রতা গ্রন্থিত করবে।
সর্বোপরি, তুরস্ক-বাংলাদেশ শীর্ষ নেতাদের সম্মেলনে মোট সাত ধরনের চুক্তি, সমঝোতা, প্রতিশ্রুতিপত্র স্বাক্ষরিত হয় : ১. দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগের সুরক্ষা চুক্তি, ২. ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার চুক্তি, ৩. কৃষির ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক সহযোগিতার সমঝোতা, ৪. শিক্ষা-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সমঝোতা, ৫. তুরস্কের IJSG-তে যোগদানের প্রতিশ্রুতিপত্র। এ ছাড়া আরো দুটি গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতগুলো দ্বিপক্ষীয় প্রতিশ্রুতি নিঃসন্দেহে তুরস্ক-বাংলাদেশ সম্পর্কের এক স্বর্ণযুগের সূচনা করবে।
পরিশেষে তুরস্ক-বাংলাদেশের নির্মীয়মাণ সম্পর্ক কাঠামো মজবুত, শক্তিশালী ও টেকসই রূপ ধারণ করবে বলে আশা করা যায়- এ ব্যাপারে দুই দেশের পারস্পরিক ইচ্ছা ও প্রতিশ্রুতি পালনে একনিষ্ঠতা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষত, সমুদ্রজয়ী বাংলাদেশের দুই দেশের নির্মীয়মাণ সম্পর্কের গ্যাস ও তেল উত্তোলনসংক্রান্ত বিষয়গুলোতে সমধিক জোর দেওয়া উচিত। তুরস্কের বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের পাঠানোর ব্যবস্থা করা উচিত অতি দ্রুত। তাহলে বঙ্গোপসাগরের বিশাল তেলরাশি ও গ্যাসসম্ভার থেকে বাংলাদেশ প্রভূত পরিমাণে সম্পদ আহরণে সক্ষম হবে।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং চেয়ারম্যান, সিআইডিএস
mramin68@yahoo.com
No comments